নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যেমন ইচ্ছে লেখার আমার ব্লগের খাতা।

Never argue with idiots. They bring you down to their level and then beat you with experience

সন্দীপন বসু মুন্না

অন্য সবার মতোই জীবনে স্বপ্ন ছিল অনেক। তবে আপাতত বাসা টু অফিস টু ক্লাস টু ঘুম। এক সময়ের স্বপ্ন গল্পকার হওয়া আজ গল্পের মতোই লাগে। বাংলার সাহিত্যাকাশে আজ দুর্যোগের ঘনঘটা ! ;) ;) তারপরও ভাবি...এই বেশ ভালো আছি... সামু বা অন্যান্য ব্লগ সাইটগুলোতে প্রায়ই ঘোরঘুরি হয়। অনেক কিছুর পরও এই বিলাসিতাটুকু বাদ দিতে পারিনি। তবে শৌখিন ব্লগ লেখালেখি আপাতত বন্ধ। তবুও কাজের খাতিরে লেখাগুলো দিয়ে আপলোড চলছে-চলবে (একই সাথে পাঠকের বিরক্তি উৎপাদনও সম্ভবত!)। ছবিসত্ত্ব: গুগল ও ইন্টারনেটের অন্যান্য ইমেজ সাইটস। যোগাযোগ - ফেইসবুক: https://www.facebook.com/sandipan.Munna ইমেইল: sbasu.munna এট্ gmail.com

সন্দীপন বসু মুন্না › বিস্তারিত পোস্টঃ

রাজা প্রতাপাদিত্যের ঈশ্বরীপুরে

০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:২২


এককালে যেখানে ছিল একটি রাজ্যের রাজধানী সেখানে আজ বন জঙ্গল। এখানে-সেখানে ভগ্নস্তূপ, ছোট ছোট কিছু নামফলক। কে বলবে এক সময় এ স্থানটি ছিল সমৃদ্ধ জনপদ। যেখানে শোনা যেত, অশ্বের হ্রেষা, সৈন্যদের ঢাল তলোয়ারের ঝনঝনানি। এখন স্থানটিতে শুধুই বাতাসের ফিসফিস আর পুরনো দালানকোঠার আড়ালে ঘুরে-ফিরে সেসব দিনের স্মৃতি। এ স্মৃতিবহুল স্থানটির নাম ঈশ্বরীপুর। যশোরের রাজা প্রতাপাদিত্যের রাজধানী। বর্তমানে এলাকাটি বংশীপুর নামে পরিচিত। সাতক্ষীরা শহর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার গেলে শ্যামনগর। এ উপজেলা সদর থেকে সুন্দরবনের দিকে সোজা ৫ কিলোমিটার এগিয়ে গেলেই বংশীপুর বাজার। যার কিছু দূরেই সুন্দরবন। যশোরের রাজা প্রতাপাদিত্যের স্মৃতিবিজড়িত এ এলাকার অনেক ইমারত এখন পোড়াবাড়ি। পঞ্চদশ শতকে যে জনপদ ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এখন সেই এলাকা পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে, অতীত স্মৃতিতে। অতীতের স্মৃতি হিসেবে এখনও এখানে রয়েছে টাঙ্গা মসজিদ, যশেশ্বরী কালীমন্দির, দুর্গ, হাম্মামখানা, বারো ওমরাহ কবর, বিবির আস্তানাসহ নগর প্রাচীরের কিছু অংশ এবং ঐতিহাসিক শাহি মসজিদ।

ইতিহাস কথা কয়
ইতিহাস অনুসারে, নবাব সোলায়মানের পুত্র নবাব দাউদ শাহের স্বাধীনতার চেতনা থেকেই কালক্রমে এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যশোর রাজ্যের রাজধানী। ১৫৭৩ সালে সিংহাসনে বসেন দাউদ শাহ। তার দুই বাল্যবন্ধু শ্রীহরিকে ‘বিক্রমাদিত্য’ এবং জানকিকে ‘বসন্ত রায়’ উপাধি দিয়ে তিনি তাদের মন্ত্রী পদে নিযুক্ত করেন। বর্তমানে সুন্দরবনঘেরা এ এলাকার জলদস্যু, মগ, পর্তুগিজদের লুটতরাজ এবং অত্যাচার দমনের জন্য নবাব দাউদ শাহ বিক্রমাদিত্য ও বসন্ত রায়কে দায়িত্ব দেন। বসন্ত রায় সাতক্ষীরায় এক গ্রামে এসে ঘাঁটি গাড়েন। এ কারণে এখানকার নাম হয় বসন্তপুর। বিক্রমাদিত্যকে দেয়া হয় অন্য এলাকার দায়িত্ব।
বিক্রমাদিত্যের পুত্র প্রতাপাদিত্য পিতার জীবদ্দশায় আরও একটি রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ নেন। এ সময়ে নবাব দাউদ শাহের সঙ্গে বিরোধ দেখা দেয় দিল্লির সম্রাট আকবরের। সম্রাট আকবর নবাব দাউদ শাহকে শিক্ষা দেয়ার জন্য বিরাট এক রণতরী ও সৈন্যবহর নিয়ে যুদ্ধে চলে আসেন। ইতিহাসবিদদের মতে, ওই নৌবহরের নেতৃত্বে ছিলেন স্বয়ং সম্রাট আকবর। সম্রাট আকবর ও নবাব দাউদ শাহের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয় ‘রাজমহল’ নামক স্থানে। দীর্ঘ যুদ্ধে নবাব দাউদ শাহ পরাজয় অবশ্যম্ভাবী বুঝতে পেরে গোপনে তার সমুদয় ধনসম্পদ পাঠিয়ে দেন রাজা প্রতাপাদিত্যের কাছে। এ বিপুল ধনসম্পদ নিয়ে পরে প্রতাপাদিত্য ঈশ্বরীপুরে তৈরি করেন এক বিলাসবহুল রাজধানী। এক স্থানের ‘যশ’ (সম্পদ) অন্যস্থানে এনে রাজ্য গড়ার কাহিনী লোকমুখে ফিরতে ফিরতে এ এলাকার নাম হয় যশোহর বা যশোর। রাজা প্রতাপাদিত্য নিজেকে ‘স্বাধীন রাজা’ হিসেবে ঘোষণা দেন ১৫৯৯ সালে। ১৬১২ সালে সুবেদার ইসলাম খাঁর সঙ্গে যুদ্ধে নিহত হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রতাপাদিত্য ঈশ্বরীপুরে নির্মাণ করেন বহু ইমারত ও দুর্গ । বহিঃশত্র“ থেকে রাজ্য রক্ষা করার জন্য তিনি মুকুন্দপুর থেকে কালীগঞ্জ থানা হয়ে আশাশুনি থানা পর্যন্ত ‘গড়’ খনন করেন। ইতিহাসের স্মৃতিবিজড়িত ঈশ্বরীপুরের অনেক স্থান এখনও জঙ্গলাকীর্ণ ও পরিত্যক্ত। তবে কালের সাক্ষী হয়ে আজও এখানে অবশিষ্ট আছে অনেক কিছুই। সম্রাট আকবর যুদ্ধে পাঠিয়েছিলেন তার প্রিয় ১২ ওমরাহকে। যুদ্ধে নিহত হওয়ার পর তাদের এখানে একই সঙ্গে দাফন করা হয়। ইট দিয়ে বাঁধানো জঙ্গলাকীর্ণ এ কবরস্থানকে স্থানীয়রা বলেন, বারো ওমরাহর কবর। এ কবরের এক একটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১২ থেকে ১৪ হাত। এ স্মৃতিচিহ্নটিও এখন ধ্বংসের পথে। এ কবরের পাশেই রয়েছে ৫ গম্বুজবিশিষ্ট ঐতিহাসিক শাহি মসজিদ। সম্প্রতি প্রতœতত্ত্ব বিভাগের নিয়ন্ত্রণে এ মসজিদের সংস্কার হয়েছে। মসজিদ থেকে আরও কিছুদূর গেলে চোখে পড়ে যশোরেশ্বরী কালীমন্দির। অনেকে এ মন্দিরকে যশোরেশ্বরী দেবীর মন্দির বলে থাকে। এ মন্দিরের একটু দূরেই রয়েছে ভাঙাবাড়ির মতো দেখতে একটি ভবন। স্থানীয়ভাবে এটি ‘হাবসিখানা’ বলে পরিচিত। অনেকের মতে, এখানে আফ্রিকা থেকে আনা ক্রীতদাসদের রাখা হতো এবং একইসঙ্গে সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের শাস্তি দেয়া হতো। আবার অনেকের মতে, এটি ছিল নাগরিকদের øানাগার। ঐতিহাসিক স্মৃতিচিহ্ন দেখতে, অতীত জানতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন এলাকায় লোকসমাগম হলেও রাজা প্রতাপাদিত্যের রাজধানীর স্মৃতিচিহ্নের কাহিনীগুলো জানার কোনও ব্যবস্থা নেই।
কথিত আছে, দেবী যশোরেশ্বরী যশোর-রাজবংশের ভাগ্যদেবতা। তাই রাজা প্রতাপাদিত্য তার রাজধানী গড়েছিলেন এই ভাগ্যদেবতাকে ঘিরে যশোরেশ্বরীপুরে (বর্তমান ঈশ্বরীপুর)। প্রাচীন ভারত তথা উপমহাদেশের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, যে কোন রাজার উত্থান-পতনের সঙ্গে সঙ্গে রাজ্য ও রাজধানীর উত্থান-পতন হয়েছে। সপ্তদশ শতকের শুরুতে প্রতাপাদিত্যের পতন হলে এ অঞ্চলে প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দেয়। এর আশপাশ আস্তে আস্তে জলাকীর্ণ ও জঙ্গলাকীর্ণ হয়ে উঠে।

দেখার মতো আর যা কিছু
যশোরেশ্বরী মন্দির
শ্যামনগরের হাম্মামখানার ৩০ গজ পূর্বে ঈশ্বরীপুর গ্রামে অবস্থিত প্রতাপাদিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি ‘যশোরেশ্বরী মন্দির’ । পশ্চিমদিকের প্রবেশ পথের ডাইনে নাটমন্দির ও বামে যে নহবতখানা ভাঙাচোরা অবস্থায় টিকে আছে তা আজও স্বাক্ষ্য দেয় অতীতের জৌলুসের। এক গম্বুজের যশোরেশ্বরী মন্দিরের মাপ ৪৮ ফুট ৬ ইঞ্চি এবং ৩৮ ফুট ৬ ইঞ্চি।

হরিচরণ রায়চৌধুরীর জমিদারবাড়ি
ঈশ্বরীপুর থেকে ৪ কিলোমিটার উত্তরে আছে জমিদার হরিচরণ রায়চৌধুরীর জমিদারবাড়ি। জমিদারবাড়ির কম্পাউন্ডেই আছে জোড়া শিব মন্দির। মন্দিরের দেয়ালে টেরাকোঠার কাজ আজও দর্শনার্থীদের নজর কাড়ে। বিশাল এ রাজবাড়ি বর্তমানে পরিত্যক্ত অবস্থায়। তবুও জমিদারবাড়ির উত্তরপাশের স্থায়ী পূজা প্যান্ডেল, নহবতখানা, দক্ষিণপাশের জোড়া শিবমন্দির এগুলো দেখতে পর্যটকরা আসেন দূরদূরান্ত থেকে। প্রতাপাদিত্যের শাসনামলে ঈশ্বরীপুর থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে গোপালপুরে নির্মিত হয়েছিল আরও চারটি মন্দির। এর সবই এখন ধ্বংসের পথে।
সাতক্ষীরা-কালীগঞ্জ সড়ক ধরে শ্যামনগর যাওয়ার পথে ‘দুদলি’ নামক স্থানে ছিল জাহাজঘাট। এ দুদলি নামকরণেরও ইতিহাস রয়েছে। এখানে ছিল যশোর রাজ্যের রাজধানীর নৌবাহিনীর সদর দফতর। রাজা প্রতাপাদিত্যের নৌবাহিনীর প্রধান ফরাসি নাবিক ‘ফ্রেডারিক ডুডলির’ নামানুসারে এলাকার নামকরণ হয় দুদলি। কালের আবর্তে এখানকার চিহ্নটি মুছে গেছে। এই ঐতিহাসিক স্থানটির অনেক অংশই আজ দখল হয়ে গেছে ।
ইতিহাস বিজড়িত আজকের জঙ্গলাকীর্ণ সুন্দরবন দেখে বিশ্বাস না হলেও এ কথা সত্য, এক সময় এখানে ছিল একটি রাজ্যের রাজধানী। ছিল জনবসতি। রাজা-বাদশাহের পদচারণায় মুখর থাকত এ জনপদ। ইতিহাস ও ভগ্ন পুরাকীর্তির কিছু চিহ্ন এখনও অতীত স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রেখেছে।


লেখাটি প্রথম প্রকাশিত হয় দৈনিক যুগান্তরে ২০১১ সালে। সফট কপি বা লিংক নাই- হার্ড কপি আমার কাছে আছে।

যুগান্ত থেকে লেখাটি নিয়ে প্রকাশ করে টুরিস্টগাইড যার লিংক - যুগান্তরের লিংক

পরে অবশ্য বাংলাদেশ প্রতিদিনের এক লেখক লেখাটি নিজ দায়িত্বে ছবিসহ মেরে দিয়েছেন- যার লিংক
View this link

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:২৭

মিতক্ষরা বলেছেন: সরকার এইসব প্রত্নতাত্বিক সম্পদ সংরক্ষন করে না কেন?

২| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:৩৫

প্রামানিক বলেছেন: ভাল লাগল ইতিহাস জেনে। শুভেচ্ছা রইল।

৩| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:৫৩

আমিনুর রহমান বলেছেন:




সুন্দর ফিচার। ইতিহাস জানতে পারলাম। বাংলাদেশ প্রতিদিনের লিঙ্কটা কাজ করছে না। তবে আপনার এই লেখা একটা অনলাইন পত্রিকায়ও দেখলাম অন্য একজনের নামে প্রকাশ করেছে।

৪| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:২৪

ঢাকাবাসী বলেছেন: ভাল জিনিস জানলুম।

৫| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ২:৩৮

আহলান বলেছেন: এক কথায় চ ম ৎ কা র লাগলো পড়ে ....

৬| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৩:২৯

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: দারুন একটা লেখা। ধন্যবাদ ব্লগে শেয়ার করার জন্য। আরো কিছু ছবি দিলে ভালো লাগত।

৭| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৬

তুষার কাব্য বলেছেন: চমত্কার...ভালো লাগলো ইতিহাস নির্ভর পোস্ট...

৮| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৩০

আলম দীপ্র বলেছেন: চমৎকার ! তথ্যবহুল !
ধন্যবাদ !

৯| ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১:২৬

মহান অতন্দ্র বলেছেন: বেশ বড় ইতিহাস । তবে ভাল লাগলো ইতিহাস জেনে। শুভকামনা অনেক।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.