নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সপ্ন

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী

কিছুই না

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী › বিস্তারিত পোস্টঃ

অ্যান্ড দেন ইট হ্যাপেন্ড

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:০৯


গাড়ি ঘুরে গেল। ড্রাইভার বুদ্ধি করে মূল রাস্তার পাশে একটা ফাঁকা জায়গায় গাড়িটা রেখেছিলেন। সিদ্ধান্ত হওয়ার সাথে সাথেই তিনি গাড়ি ঘুরিয়ে ফেললেন। টাঙাইলের কাছাকাছি এলাকা থেকে ঢাকার দিকে ফিরে আসতে শুরু করলাম। ঠিক কোন এলাকায় ঘটনাটা ঘটেছিল, নির্দিষ্ট করে বলতে পারব না, আমার ধারণা আমরা তখন চন্দ্রা থেকে ঘণ্টা খানেকের দূরত্বে ছিলাম।
এই পুরো বচসা চলাকালীন আমার পাশের সিটের অপরূপাটি একবার গান বন্ধ করেছিলেন। সুপারভাইজার যখন যাত্রীদের উদ্দেশ্যে জানাচ্ছিলেন, গাড়ি নিয়ে কি করতে চান, সেই সময়ে। সব শুনে আবার কানে হেডফোন লাগিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলেন। সুপারভাইজার সাহেব এখন টাকা সংগ্রহ করছেন। আমার কাছে এলেন। সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে সহযাত্রীটির সাথে আলাপের। উনাকে ঘুমন্ত দেখে হয়তো সুপারভাইজার আমাকে জানাতে পারেন, উনাকে যেন ডেকে দিই।
সে আশার গুড়ে বালি পড়ল। সম্ভবতঃ হেড ফোনের আওয়াজ কম ছিল আর মেয়েটি জেগেই ছিল, তাই কাছাকাছি আসতেই সে চোখ খুলে তাকাল। আমি যখন টাকা দিচ্ছি, সেও তখন নিজের হ্যান্ড ব্যাগ থেকে টাকা বের করল। এক হাজার টাকার নোট। আশায় আছি, যদি ভাংতি না থাকে তবে আমি অফার দিব টাকা ভাঙ্গিয়ে দেয়ার। আমার কাছে পাঁচশ, একশ, সব ধরনের নোটই আছে। সে ঘটনাটাও ঘটল না। ভাংতি মেয়েটির কাছেই ছিল। সুপারভাইজার ছোট নোট দিতে বলায় সে বের করে দিল।
নাহ, আজকে লাক বেজায় বিট্রে করছে। এমন তো কখনো হয়নি। আজকে কি হল? এখন বিকেল পাঁচটা হবে। আমাদের বাসটা রওয়ানা দিয়েছিল তিনটার দিকে। যখন ফিরে আসবার সিদ্ধান্ত হয় তখন সময় আনুমানিক ছটা হবে। আর এখন সময় সাতটা হবে। তবে গাড়ি বেশ দ্রুতই এগিয়ে যাচ্ছে। আরিচা রোডে আর কিছুক্ষণের ভেতরেই উঠব।
এরপরে ভয়ানক ঘটনাটা ঘটল। আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। প্রায় ঘণ্টা খানেক সম্ভবতঃ ঘুমিয়েছিলাম। কারণ যখন ঘুম ভাঙ্গে তখন দেখি আমরা আরিচা রোডে। কোন জ্যাম নেই। এমনকি তেমন গাড়ি ঘোড়াও বেশ কম। আসলে যমুনা ব্রিজ হওয়ায় এই রাস্তার ওপর লোড বেশ অনেকটাই কমে যায়। ফলাফল হচ্ছে, গাড়ি বেশ দ্রুত চলতে থাকল। ঘুম ভেঙ্গে পাশে ফিরে দেখি অপরূপাটির চোখ খোলা। গান শোনাও স্থগিত। বেশ অবাক হয়ে বাইরে দেখছে। আর অবাক হওয়ার কারণ হচ্ছে বাইরে তখন নেমেছে অঝোর ধারার বৃষ্টি।
আমিও খানিকটা হতবাক হয়ে গেলাম। কতদূরে এসেছি? গাড়িটা থেমে আছে। আবার জ্যামে পড়লাম নাকি? বাংলাদেশে বৃষ্টি মানেই জ্যাম। আমার আপত্তি নাই। যাত্রী আর সুপারভাইজারের নিশ্চিন্ত ভাব দেখে মনে হল না, তেমন সমস্যার কোন ঘটনা ঘটেছে। আগেরবার পাশের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়েছিলাম, এবার সামনের উইন্ডস্ক্রিনের ভেতর দিয়ে বাইরে তাকালাম। এবার থেমে থাকার কারণ বুঝলাম। আমরা আরিচা পৌঁছে গেছি। সামনে সারি সারি ট্রাক। অর্থাৎ এখন আমরা ফেরিতে ওঠার সিরিয়ালে আছি। সম্ভবতঃ এই মুহূর্তে ঘাটে কোন ফেরি নেই। গ্রেট।
একটু নেমে যে সামনে হেঁটে আসব, তার উপায় নেই। বেশ কয়েকজনকে অবশ্য নামতে দেখলাম। সম্ভবতঃ প্রকৃতির ডাক। কিছু একটা মাথায় দিয়ে রাস্তার পাশেই সেরে ফেলছে। আমার খুব জোরে লাগেনি। নামব কি না ভাবছি, এমন সময় ঝালমুড়ি ওয়ালা উঠল। গলায় একটা ঢাউস সাইজের চারকোনা বাক্স। সামনের দিকে কাঁচ। সেখানে রাখা আছে চানাচুরগুলো। বাকী সব ভেতরে। ওগুলো দেখানো জরুরী না। খদ্দেরদের মূল আকর্ষণ চানাচুর। সেটা যে আছে, এই তথ্যটা দেয়ার জন্যই সম্ভবতঃ সামনের আর পাশের অংশে কাঁচ। সৌন্দর্যও কারণ হতে পারে। বৃষ্টি সম্ভবতঃ বেশ খানিকক্ষণ ধরেই হচ্ছে। একেবার চুপচুপে না হলেও বেশ খানিকটা ভিজেছে। সম্ভবতঃ বৃষ্টির প্রোটেকশানের কিছু সাথে রাখেনি। একটা গামছা আছে, গাড়িতে উঠেই গামছা দিয়ে মাথা মুছে নিল। বৃষ্টির জন্য তো আর আজকের ব্যাবসা নষ্ট করা যায় না। সো মাস্ট গো অন।
এদের ফর্মুলা সম্ভবতঃ দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িতে ঢুঁ মারা। যা বিক্রি হয়। এধরনের হকার টাইপ লোক উঠলে দেখেছি, একেবারে মিস হয় না। কেউ না কেউ কিছু না কিছু কেনেই। সে ডোন্ট মাজন হোক আর ঢোল কোম্পানির মলম হোক। এই বাসেও যথারীতি বিক্রি শুরু হল। সামনের দিকের দুএকজন নিল। দুই সিটের মাঝের জায়গায় দাঁড়িয়ে বেশ দক্ষ হাতে ঝালমুড়ি বানাতে লাগল। ইচ্ছে করছিল, কিন্তু সাহস হল না। রাস্তার খাবার খেলে পেট খারাপ হওয়া আমার জন্য প্রায় অবধারিত একটা ব্যাপার।
আমাদের সিট টা ছিল মাঝামাঝি। ঠিক আমার সামনের সিটে বসা যাত্রীটি অর্ডার করেছিলেন ঝালমুড়ির, তাই আমার খানিকটা সামনে দাঁড়িয়েই ছেলেটা মুখরোচক খাবারটি বানাচ্ছে। আর আমি লোলুপ দৃষ্টিতে সেটা দেখছি। সংযমের বাঁধ ভাঙ্গি ভাঙ্গি করছে। ঠোঁট নিশপিশ করছে। বলতে চাইছে, বেশি করে ঝাল আর চানাচুর দিয়ে দশ টাকার মাখাও। এমন সময় শুনতে পেলাম
— আমাকেও দাও। দশ টাকার। ঝাল আর চানাচুর একটু বেশি দিবা
আওয়াজটি নারী কণ্ঠ। নিঃসন্দেহে আমার না। হতভম্ব ভাবটা কাটবার পরে বুঝলাম, অর্ডারটি প্লেস করেছেন আমার পাশে বসা অপরূপাটি। এই প্রথম পাশে বসা সহযাত্রীটির গলার আওয়াজ শুনলাম। এমন স্মার্ট দর্শী নারী রাস্তার তৈরি ঝালমুড়ি খাচ্ছে? তার ওপর এমন ফেরিঘাটে। অবাক হয়ে তাকালাম। মেয়েটির তেমন কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। ঝালমুড়ি প্রস্তুতকারক ছেলেটি সামনের যাত্রীটিকে তাঁর অর্ডার সরবরাহ করে অপরূপার জন্য মুড়ি, চানাচুর আর বাকী সব জিনিসপত্র মাখতে শুরু করে দিল। খারাপ না। সমস্যা হলে চিকিৎসক হিসেবে পারফর্ম করার সুযোগ পাব।
অবশেষে প্রস্তুত হল খাদ্যটি। একটি কাগজকে ঘুরিয়ে কোন বানিয়ে সেটায় ঢালতে লাগল ছেলেটি। দেখে বেশ লোভ হচ্ছিল। কি আর হবে, একটু ডায়ারিয়াই তো? ওষুধ খেয়ে নেব। ঝালমুড়ির ঠোঙ্গাটি হস্তান্তরের পরে আমি সজোরে আমার সংযমের বাঁধ ভাঙলাম। ঝালমুড়ি ওয়ালার কাছে আমার অর্ডার প্লেস করলাম। জানালাম
— আমাকেও দাও। চানাচুর বেশি, ঝালও বেশি।
অপরূপা ব্যাপারটা লক্ষ্য করল না। ব্যাপার কি? আমি কি এতোই ফ্যালনা? আমার কোন কিছুর দিকেই তো দেখি এই মহিলার কোন নজর নাই। এতো দেমাগের কি আছে? নাহ রাগ করা যাবে না। ধৈর্য রাখতে হবে। ভাগ্যের ওপরও আমার অগাধ বিশ্বাস আছে। জীবনে কখনও মিস হয়নি। এবারও হবে না। দেখা যাক। মনে মনে অবশ্য কিছুটা অভিমান হচ্ছে, 'সমস্যা হোক খালি'।
ওদিকে শুরু হয়ে গেল চানাচুর তৈরির প্রক্রিয়া। আমি একবার সেই প্রক্রিয়া আরেকবার অপরূপাকে দেখছি। একবার ভাবলাম জিজ্ঞেস করি, ভাল হয়েছে? ভাবনাটা বাদ দিলাম। এমন সস্তা স্টাইলে আলাপ করার চেষ্টা করলে, ব্যাপারটা বুমেরাং করবে। দারুণ ভাব গম্ভীর কোন স্টাইল ট্রাই করতে হবে। সেটা কি হবে, পরে ভেবে দেখব। আপাততঃ ঝালমুড়িতে মনোযোগ দিই।
হাত যেন ব্যাবহার না করতে হয়, তাই একটা শক্ত কাগজ আলাদা দিয়ে দিয়েছিল। সেটা দিয়ে খেতে গিয়ে কিছু মুখে ঢুকছে, আর কিছু বাইরে পড়ছে। পাশে তাকিয়ে দেখলাম। উনি এতো ঝামেলায় যাননি। হাতে ঢালছেন আর খাচ্ছেন। কাজটা আমি করলে একটু খ্যাত খ্যাত দেখাতো, কিন্তু ওকে দেখাচ্ছে না। সাবলীলভাবেই কাজটা করছে। মনে হচ্ছে কাজটা প্রায়ই করে।
বাসের আর কেউ তেমন আগ্রহী হল না। আর কয়েকবার চিৎকার করে ঝালমুড়িওয়ালা নেমে গেল। এবার উঠল বই বিক্রেতা। সে অবশ্য একটু আগেই উঠেছে। সামনের দিকে বই দেখাচ্ছিল। ঠিক বই বিক্রেতা না, কক্টেল টাইপ। বই আছে, সাথে কিছু পত্রিকাও। সাথে একটা ঝোলাও আছে। সেখানে সম্ভবতঃ বেশ কিছু স্টক আছে। আকর্ষণীয় বইগুলো হাতে রেখেছে আর কম আকর্ষণীয় কিংবা প্রদর্শন যোগ্য না, এমন বইগুলো ঝোলার ভেতরে।
বৃষ্টির জন্য প্রায় সব বইই পলিথিন দিয়ে ঢেকে রেখেছে। বাসের দুই সারি সিটের ভেতর দিয়ে এগিয়ে আসছে আর যাত্রী দের দিকে তাকিয়ে জানতে চাইছে, নেবে কি না। চেহারা দেখে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, কোন ধরনের বইয়ের কথা জানাবে। তেমন বিক্রি হচ্ছে না। তাই বেশ দ্রুতই এগিয়ে আসছে। আমার কাছাকাছি চলে আসল। এরপরে মাথা নিচু করে বেশ রহস্যময় গলায় বলল
— মামা, লাগবে? ভাল কালেকশান আছে।
চলবে

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:৩২

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: ঈদ মোবারক!

টানটান উত্তেজনায় শুরু .. চমকে শেষ :)

++++++

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:২৩

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ২:১৮

সোহানী বলেছেন: শেষ পর্যন্ত কি গরুর হাটে নিবেন....... ;)

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ২:৪৫

আহমাদ যায়নুদ্দিন সানী বলেছেন: দেখা যাক

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.