নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একজন বাজেট ট্রাভেলার।

সারাফাত রাজ

পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর স্থান হচ্ছে বান্দরবান আর আমি একজন পরিব্রাজক।

সারাফাত রাজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রিয় ভ্রমণসঙ্গী ও পুরানো ঢাকা (তিন-তৃতীয়াংশ)

২০ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ৯:৫৪



প্রিয় ভ্রমণসঙ্গী ও পুরানো ঢাকা (এক-তৃতীয়াংশ)
প্রিয় ভ্রমণসঙ্গী ও পুরানো ঢাকা (দুই-তৃতীয়াংশ)
অন্য পর্বগুলো

ইংলিশম্যান মিটফোর্ড ঢাকাকে সত্যিকারভাবে ভালোবেসে ফেলেছিলেন। ১৮৩৬ সালে লন্ডনে মারা যাবার আগে তিনি তার সকল সম্পদ ১ লক্ষ ৬৬ হাজার রুপি ঢাকাবাসীর জন্য উইল করে গিয়েছিলেন। কিন্তু এত বিপুল সম্পদ তার আত্মীয়-স্বজনেরা হাতছাড়া করতে চায়নি। তারা মামলা ঠুকেছিলো এই সম্পত্তি পাবার জন্য। কিন্তু তারা সুবিধা করতে পারেনি। ১৮৫০ সালে লন্ডনের আদালত ঢাকাবাসীর পক্ষে মামলার রায় দিয়েছিলো। এই টাকায় ঢাকাতে তৈরী করা হয় হাসপাতাল। নাম রাখা হয় মিটফোর্ড হাসপাতাল।

আগে এখানে একটা ওলন্দাজ কুঠি ছিলো। তৎকালীন নূতন ঢাকাও শুরু হয়েছিলো এখান থেকে। ১৮৫৪ সালে ওলন্দাজ কুঠি, একটা মসজিদ আর একটা পুরানো স্মৃতিস্তম্ভ ভেঙ্গে মিটফোর্ড হাঁসপাতাল ভবন নির্মাণ শুরু হয়েছিলো। সুদৃশ্য ভবন নির্মাণ শেষে ১৮৫৮ সালে এটার উদ্বোধন করা হয়।




১৮৭৩ সালে ইংরেজ সরকার সিধান্ত নেয় যে ঢাকাতে একটা মেডিকেল স্কুল স্থাপন করা হবে। বিভিন্ন পর্যালোচনা মোতাবেক ১৮৭৫ সালে মিটফোর্ড হাসাপাতালে মেডিকেল স্কুল স্থাপন শেষে ক্লাস শুরু হয়।এবং মজার ব্যাপার হচ্ছে যে এখানে তখন বাংলা ভাষায় মেডিকেল শিক্ষা প্রদান করা হতো। বিখ্যাত বিপ্লবী বিনয় বসু এই মিটফোর্ড মেডিকেল স্কুলেরই ছাত্র ছিলেন। এখানেই তিনি হত্যা করেছিলেন কুখ্যাত পুলিশ ইন্সপেক্টর জেনারেল লোম্যানকে।

১৯৬২ সালে মেডিকেল স্কুলটি কলেজে রুপান্তরিত করা হয় এবং এর নাম রাখা হয় সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ।


মিটফোর্ড হাসপাতালের মধ্য দিয়ে আমি আর সোহেল ভাই পার হয়ে এলাম। এসে নামলাম মিটফোর্ড রোডে। এগিয়ে চললাম চকবাজারের দিকে।



আমাদের গল্প তখন ইন্দিরা গান্ধীতে এসে ঠেকেছে। সোহেল ভাই বলে চলেছেন..... নেহেরু পরিবারটির আদিবাদ কাশ্মীরে। তারা বিখ্যাত পন্ডিত সম্প্রদায়। সুদৃশ্য একটা নহরের পাশে বসবাস করায় তাদের বংশের নাম হয়ে যায় নেহেরু। মতিলাল নেহেরু ছিলেন একজন ইংরেজ বিরোধী, ইংরেজ সরকারের রোষানল থেকে দূরে থাকতে তিনি উপস্থিত হন উত্তরপ্রদেশে। এলাহাবাদে জন্মহয় তার সন্তান জহরুলাল নেহেরুর। জহরুলাল নেহেরুর সন্তান হচ্ছে ইন্দিরা।

সোহেল ভাইকে আমি সংযোজন করলাম, এটা ভাবতেই ভালো লাগে যে রবীন্দ্রনাথ তার প্রিয় ছাত্রী ইন্দিরার নাম দিয়েছিলেন প্রিয়দর্শিনী। ইন্দিরা প্রিয়দর্শিনী নেহেরু।

সোহেল ভাই তখন ইন্দিরা প্রিয়দর্শিনী নেহেরু থেকে ইন্দিরা গান্ধী হয়ে ওঠার কাহিনী বললেন। অক্সফোর্ডে পড়ার সময় যে মেয়েটি তার বাবার কাছে ১০০ টি চিঠি লিখেছিলো। যার প্রতিটিতেই একটি কথা লেখা ছিলো, বাবা আমি ফিরোজকে ভালোবাসি। ফিরোজকে বিয়ে করেই ইন্দিরার গান্ধী হয়ে ওঠা.....

চকবাজার যাবার পথটি প্রচন্ড ঘিঞ্জি। এতো স্থবির পথ আমি ঢাকার আর কোথাও দেখিনি। দুনিয়ার এমন কোন বস্তু নেই যা বোধহয় এখানে পাওয়া যায় না। আর তার ফলাফল হচ্ছে যে এখানকার রাস্তাতে হাটাও যায় না। সারাদিন ব্যাবসায়ীরা পাইকারী মালপত্র কিনতে এখানে আসছে। এইসব মালপত্র পরিবহনের কাজে ট্রাক বা পিকাপ সহজে ঢুকতে পারে না। তার ফলে রিক্সা, ঠেলাগাড়ি এবং মানুষের মাথায় ঝাকা মূলত এই তিনটি জিনিসই ব্যাবহার হয় মালপত্র পরিবহনের জন্য। এই পথে হাটতে গেলেও বিশাল জ্যামের সম্মুখে পড়তে হয়। সরু পথটার দুদিকে বিশাল বিশাল বিল্ডিং। অবাক বিস্ময়ে আমি ভাবি যে এই বিল্ডিংগুলি বানানোর সময় যন্ত্রাংশ এনেছে কিভাবে!!



অবশেষে আমরা পৌছে গেলাম চকবাজারে।

চকবাজার
চারশো বছরের পুরানো এই চকবাজার। মোঘল সেনাপতি মানসিংহ বাংলার বিদ্রোহ দমনে এসেছিলেন। কিছুদিন আগে পরিত্যাক্ত হয়ে যাওয়া কারাগারটিতে তিনি মোঘল দুর্গ স্থাপন করেছিলেন। দুর্গের প্রয়োজনেই গড়ে উঠেছিলো এই বাজারটি। একসময় এখানে দাস কেনা-বেচা হতো। এটিই ছিলো শহরের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা। নূতন বরকে বিয়ের সময় চকবাজারের চারদিকে এক চক্কর, দুই চক্কর অথবা সাত চক্কর দেয়া রেওয়াজ ছিলো। তবে এখন এই প্রথা বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

সোহেল ভাইকে অনুরোধ করলাম, আচ্ছা আপনাকে যদি আমন্ত্রন জানাই তাহলে কি আপনি একটা মজার জিনিস খাবেন? ভাই বললেন, অবশ্যই খাবো, চলো সেখানে। আমরা তখন চকবাজারের একটা বিখ্যাত লাচ্ছির দোকানে ঢুকলাম।



বরফের কুচি মেশানো দু’গ্লাস ঠান্ডা লাচ্ছি যখন পরিবেশন করা হলো সেটা দেখতেই ভালো লাগছিলো। বুঝতে পারলাম যে এতোক্ষন রোদে হাটাহাটি করে আমরা বেশ ক্লান্ত হয়ে গেছি। গ্লাসের দিকে তাকিয়ে থাকলেও অনেকখানি ক্লান্তি দূর হয়ে যাচ্ছে। সোহেল ভাই লাচ্ছির গ্লাসে প্রথম চুমুক দিয়ে বিস্ময়ের সাথে ছোট একটা চিৎকার করে উঠলেন, আরে!! এটাতে মধু দিয়েছে নাকি!!!

দোকান থেকে যখন বের হচ্ছি সোহেল ভাইয়ের ভাবভঙ্গি দেখে আমি তাকে একটা ধাক্কা দিলাম। তারপর কাউন্টারের দিকে টাকা বাড়িয়ে দিয়ে সোহেল ভাইকে বললাম, ভাই আজকে আপনি আমার অতিথি।

পুরো চকবাজার খাবারের গন্ধে ম ম করছে। ঢাকার বিখ্যাত খাবারের অনেকগুলিই এখানে পাওয়া যায়। রমজান মাসে চকবাজারের ইফতার তো জগৎবিখ্যাত। যদিও আমার কখনো চকবাজারের ইফতার ভালো লাগেনি।



একটা সিগারেটের দোকানদারকে গিয়ে সোহেল ভাই বড় কাটরা যাবার গলিটা জিজ্ঞাসা করলেন। আমি হেসে ফেললাম। সোহেল ভাই হাসির কারন জানতে চাইলে বললাম, একবার দিল্লীতে গুরুদুয়ারা যাবার পথ জিজ্ঞাসা করায় এক দোকানদার আমাকে বলেছিলো যে “আমি কি তোমার চাকর নাকি যে পথ বাতলে দেব”। সোহেল ভাই শুনে হেসে বললেন যে দুনিয়ার সবজায়গাতেই সবধরনের মানুষ থাকে।

সরু একটা গলি দিয়ে বড়কাটরার দিকে এগিয়ে গেলাম। দুপাশে দোকান, মাঝখানে সরু পথ। দূর থেকে বড়কাটরার ধংশাবশেষ দেখতে পাচ্ছি।



বড়কাটরা
১৬৪৪ সালে শাহ শুজার আমলে তার প্রধান স্থপতি আবুল কাসেম ক্লান্ত পথিকদের বিশ্রামের জন্য সরাইখানা হিসাবে নির্মাণ করেছিলেন এই ভবনটি। ভবনটির রক্ষণাবেক্ষণ ও বিভিন্ন ব্যয় নির্বাহের জন্য তৈরী করা হয়েছিলো ২২ টি দোকান। ভবনটির মাঝখানে ছিলো তিনতলা উচু ফটক। ফটকের দুপাশে দ্বোতলা ঘরের সারি। এটি ছিলো তৎকালীন ঢাকার সবচেয়ে মনোরম অট্টালিকা।



আহারে!! বড়কাটরাকে যে কি ভয়ঙ্করভাবে দখল করা হয়েছে। ভাঙ্গাচুরা ফটকটি কোন রকমে টিকে আছে। বড়কাটরা দখল করে অসংখ্য দোকানপাট, বাড়ি এবং একটি মাদ্রাসা তৈরী করা হয়েছে। আমি আর সোহেল ভাই বেশ খানিকক্ষন ধরে বড় কাটরার উপরে ওঠার পথ খুজে বের করার চেষ্টা করলাম। কিন্তু সেগুলো এমনভাবে দখল হয়েছে যে আমরা সেরকম কোন পথই খুজে পেলাম না।

বিফল মনরথে এগিয়ে গেলাম ছোট কাটরার দিকে। চম্পাতলি সড়ক দিয়ে এগিয়ে যেতে হয়। বেশ খানিকক্ষন খোজাখুজির পর পেলাম ছোটকাটরা।

ছোটকাটরা
ঢাকায় সুবেদার হয়ে আসার পর শায়েস্তা খা ছোট কাটরা নির্মাণকাজ শুরু করেছিলেন ১৮৬৩/৬৪ সালে। বড় কাটরার পরিকল্পনার সাথে ছোটকাটরার তেমন কোন অমিল নেই, কিন্তু আকারে ছোট বিধায় এটির নাম হয়ে যায় ছোটকাটরা।ইংরেজ আমলে ছোট কাটরার বেশ কিছু পরিবর্তন সাধিত হয়।১৮১৬ সালে ঢাকার প্রথম ইংরেজি স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো এখানে।



সোহেল ভাই আর আমি ছোটকাটরা দেখে হতভম্ব হয়ে গেলাম। বড়কাটরার তুলনায় ছোটকাটরার অবস্থা আরো ভয়াবহ। সোহেল ভাইকে একটা কিংবদন্তির কথা বললাম। শায়েস্তা খার আমলে যখন ১ টাকায় আট মন চাল পাওয়া যেত তখন শায়েস্তা খা নাকি ছোটকাটরায় একটা দরজা তৈরী করে তালাবদ্ধ করে রেখেছিলেন। যদি আর কখনো কেউ তার শাসনামলে চালের দাম কমাতে পারে তবে সে এই দরজা খোলার অনুমতি পাবে। মজার ব্যাপার হচ্ছে আরো কয়েকবছর পর শায়েস্তা খা যখন আবারো ঢাকার সুবেদার নিযুক্ত হয়েছিলেন তখন তিনিই আবার চালের দাম কমাতে পেরেছিলেন। ফলস্বরুপ তিনিই সেই বন্ধ দরজা খোলার অধিকারী হয়েছিলেন।



ছোটকাটরা ছেড়ে আমরা বুড়িগঙ্গার দিকে হাঁটা শুরু করলাম। আমাদের গল্প তখন সিরাজউদ্দৌলায় এসে পৌছেছে। সোহেল ভাই শুনিয়ে চলেছেন নবাব মুর্শিদকুলি খার কাহিনী। যার সাথে বেইমানি করেছিলো সিরাজউদ্দোলার নানা আলীবর্দি খান। মুর্শিদকুলি খার মৃত্যুর পর আলীবর্দি খান দখল করেছিলো সিংহাসন আর মুর্শিদকুলি খার পরিবারকে নির্বাসন পাঠিয়েছিলো ঢাকার জিঞ্জিরার প্রাসাদে। মুর্শিদ কুলি খার পরিবার নাকি আলীবর্দি খানকে অভিশাপ দিয়েছিলো যে এই অন্যায়ের জন্য তার পরিবারকেও একই পরিস্থিতি বরণ করতে হবে।

ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস। কিছুদিনের মধ্যে আলীবর্দি খানের পরিবারকেও ঠিক একই ভাগ্য বরণ করতে হলো। আলিবর্দি খানের দৌহিদ্র নবাব সিরাজউদ্দোলা ইংরেজদের সাথে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে ছদ্মবেশে পালিয়ে যাবার সময় ধরা পড়ে। তার মৃত্যু হয় মুহাম্মদী বেগের হাতে। আর সিরাজের স্ত্রী-কন্যাকে নির্বাসন দেয়া হয় ঢাকার জিঞ্জিরার সেই প্রাসাদে যেখানে মুর্শিদকুলি খানের পরিবারকে নির্বাসন দেয়া হয়েছিলো।

আমি আর সোহেলভাই এখন জিঞ্জিরার সেই প্রাসাদটা দেখতে যাচ্ছি।

সোয়ারিঘাট থেকে নৌকায় উঠলাম কেরানীগঞ্জ যাবার জন্য। বুড়িগঙ্গায় নৌকাতে চড়ার সময় নবাব সিরাজউদ্দোলার খালা ঘোষেটি বেগমকে নৌকা ডুবিয়ে হত্যা করেছিলো মীরন । ঘোষেটি বেগম নাকি মৃত্যুর আগমুহূর্তে মীরনকে অভিশাপ দিয়ে বলেছিল যে তোর মৃত্যু হবে বজ্রাঘাতে। সোহেল ভাইকে সে কথা বলতেই তিনি বললেন যে মীরনের মৃত্যু হয়েছিলো তাবুতে আগুন লেগে।


বুড়িগঙ্গায় নৌকা চেপে নদী পার হচ্ছি। ছোটবেলায় পড়েছিলাম যে পানির কোন রঙ নেই। কিন্তু বুড়িগঙ্গাকে দেখে সেকথা কে বলবে!! কুচকুচে কালো রঙের পানি, আর সাথে প্রচন্ড দুর্গন্ধ। পাশ দিয়ে যখন অন্য কোন নৌকা যাচ্ছে তখন তার আলোড়নে কালো পানিতে সাদা ফেনার সৃষ্টি হচ্ছে। দুর্গন্ধের মাত্রা তখন বেড়ে যাচ্ছে আরো বহুগুনে। আহারে বুড়িগঙ্গা!!!

নৌকায় করে কেরানীগঞ্জ এসে নামলাম। এখানেই কোথাও প্রাসাদটি। কয়েকজনকে জিজ্ঞাসা করা হলো, কিন্তু কেউই ঠিকমতো বলতে পারলো না। বিভিন্ন অলিগলি দিয়ে যাওয়া হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত আমরা বোধহয় কিছুটা বিরক্ত হয়ে গেলাম। ওখানকার এক দোকানদার বললো যে তারা শুনেছে এখানে একসময় পুরানো বাড়িঘর ছিলো। সেগুলো ভেঙ্গেচুরে এইসব বহুতল ভবন তৈরী করা হয়েছে। পুরো এলাকাটাই নাকি সেই ধংসস্তুপের উপরে গড়ে উঠেছে।

সোহেল ভাই কিন্তু হাল ছাড়লেন না। শেষ পর্যন্ত এক বয়স্ক ব্যাক্তি আমাদের জানালেন যে সেই প্রাসাদের একটা অংশ এখনো টিকে আছে। তিনি সেখানে যাবার পথ দেখিয়ে দিলেন। সরু একটা গলিপথ দিয়ে আমরা এগিয়ে গেলাম। খুব বেশিদিন হয়নি এই এলাকার নূতন বাড়িগুলো তৈরী হয়েছে। এতো সরু গলি কেন তা কে জানে। রিক্সা তো দূরে থাকুক কেউ তার সাইকেল নিয়েও এই গলি দিয়ে যেতে পারবে না।



একজন বয়স্ক ভদ্রমহিলা জানতে চাইলেন আমরা কোথায় যেতে চাই। আমাদের গন্তব্য শুনে তিনি আমাদের কিছুদূর এগিয়ে নিয়ে গেলেন। একটা বাড়ির দরজা দেখিয়ে বললেন যে এই বাড়ির মধ্যে পুরানো প্রাসাদের ধ্বংসস্তূপ আছে।

অন্যের বাড়ির মধ্যে বিনা অনুমতিতে ঢুকতে খারাপ লাগে। তবুও সাহস নিয়ে ঢুকে পড়লাম। কতোগুলো কুকুর আমাদের দেখে ঘেউঘেউ করা শুরু করলো। নূতন কয়েকতলা ভবন, মাঝখানে উঠোন। উঠোনের এক কোনে ভাঙাচুরা কতগুলো কাঠামো। এই কাঠামোগুলো জুড়ে আবর্জনার স্তুপ। হঠাত আমার মনে হলো এখানে না এলেই বোধহয় সবচেয়ে ভালো হতো।



এখনো ভাবলে আমার এতো মন খারাপ হয় যে এই স্থাপনাটি নিয়ে আমার আর কিছু বলতে ইচ্ছা করছে না। শুধু অনেকগুলো দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসে বুক থেকে।





চলে এলাম এখান থেকে। হাটতে হাটতে এগিয়ে চলেছি। আর নৌকায় উঠবো না। বাবুবাজার ব্রীজ দিয়ে হেঁটে নদী পার হবো। জিঞ্জিরা প্রাসাদের ধংসাবশেষের রেশ মনজুড়ে রয়েছে। ব্যাথিত হয়েছি। জাতি হিসাবে কি আমরা প্রচন্ড পরিমানে ধংসপ্রিয়!!!

সিড়ি বেয়ে ব্রীজে উঠলাম। গোধূলীর হলুদাভ আলো কৃষ্ণবর্না বুড়িগঙ্গাকেও সুন্দরী করে তুলেছে। নৌকাতে করে যাত্রী পারাপার হচ্ছে। অন্যদিকে সদরঘাট। বড়বড় লঞ্চ বাধা রয়েছে সেখানে।



এতো দূর থেকেও ভোঁ ভোঁ হর্নের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। বেশ লাগছে দেখতে। হঠাত করে অনুভব করলাম যে, সোহেল ভাই আমার একজন প্রিয় ভ্রমণসঙ্গী হয়ে উঠেছেন।



অধিকাংশ তথ্য শ্রদ্ধেয় লেখক মুনতাসীর মামুনের ঢাকা সম্পর্কিত বিভিন্ন লেখালেখি থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। তার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা। তার লেখাগুলোই ঢাকাকে গভীরভাবে ভালোবাসতে শিখিয়েছে।

অন্য পর্বগুলো

মন্তব্য ২৪ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (২৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ১০:৩৮

জগতারন বলেছেন:

আপনার লিখা এ ব্লগটি খুবই সুন্দর প্রাঞ্জলভাষায় লিখেছেন যা পাঠে সুখ-আন্দন অনুভব করলাম।
শেষে লেখক মুনতাসীর মামুনের ঢাকা সম্পর্কিত বিভিন্ন লেখালেখি থেকে যে তথ্য সংগ্রহ করা করেছেন এবং তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন যা আপনার সরল ও আন্তরীক মনের পরিচয় বাহন করে।
আসলে প্রত্যেকটি লেখক একে অপরের লিখা থেকে তথ্য সংগ্রহ করে থাকে, তবে প্রত্যেকটি লিখার ভালো মন্দ ও এর প্রাঞ্জলতা নির্ভর কোন নিদৃষ্ট বিষয় ভিত্তিক লেখকের আন্তরীক মন ও উপলব্ধির উপর।
আমার সুধু জানতে ইচ্ছা করে- লেখক মুনতাসীর মামুনের ঢাকা সম্পর্কিত বিভিন্ন লেখালেখিতে হয়তো তিনি বিভিন্ন জনের লিখা থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন, তিনি কি তা উল্লেখ করেছিলেন কোথায় থেকে তিনি তথ্যগুকি সংগ্রহ করেছিলেন?

২৪ শে মার্চ, ২০১৭ সকাল ১০:৪১

সারাফাত রাজ বলেছেন: অনেক অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া। :)

মুনতাসীর মামুনের জন্ম পুরানো ঢাকায়। স্বাভাবিকভাবেই তিনি পুরানো ঢাকা নিয়ে অনেক বেশি জানেন, কারণ ঢাকার প্রতি তার প্রচুর ভালোবাসা দেখা যায় লেখাগুলোতে।

মুনতাসীর মামুন তার লেখায় যে তথ্য সংগ্রহ করেছেন সেগুলোর পূর্ণ রেফারেন্স তিনি দিয়েছেন। তার ৩০০ পাতার বইয়ে পুরো ৭ পাতা জুড়ে রেফারেন্স দেখেছি।

ভালো থাকবেন ভাইয়া। অনেক শুভকামনা জানবেন। B-)

২| ২১ শে মার্চ, ২০১৭ সকাল ৯:০২

সাদা মনের মানুষ বলেছেন: আগেরগুলো দেখা হয় নাই, তবে আপনার এমন চমৎকার ইতিহাস সমৃদ্ধ লেকা এবং ভ্রমণ আমার মনটাকে উথাল পাথাল করে দিচ্ছে, ইচ্ছে করছে এখনি বেড়িয়ে পড়ি। শুভ কামনা সব সময়।

২৪ শে মার্চ, ২০১৭ সকাল ১০:৪৬

সারাফাত রাজ বলেছেন: আশাকরি এতো দিনে ৩ পর্বই দেখা হয়ে গেছে।
আরো আশাকরি আপনি খুব দ্রুতই ক্যামেরা হাতে বেরিয়ে পড়েছেন। আপনার তোলা পুরানো ঢাকার অসাধারণ ছবিগুলো দেখার অপেক্ষা করছি।
শুভকামনা জানবেন সবসময়। আপনার মালয়েশিয়ার গল্প শুনতে চাচ্ছি।

৩| ২১ শে মার্চ, ২০১৭ সকাল ৯:০৩

সাদা মনের মানুষ বলেছেন:

২৪ শে মার্চ, ২০১৭ সকাল ১০:৪৭

সারাফাত রাজ বলেছেন: ভাই, লাল চায়ের কাপে লাল রঙের ওটা কী পানীয়? :#)

৪| ২১ শে মার্চ, ২০১৭ সকাল ৯:৪৮

মোস্তফা সোহেল বলেছেন: আপনার বর্ননায় মুগদ্ধ না হয়ে পারি না। কি ভাল কি ভাল। আজকাল কম লিখছেন কিন্তু।

২৪ শে মার্চ, ২০১৭ সকাল ১০:৫২

সারাফাত রাজ বলেছেন: হা হা হা হা

অনেক অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই। B-)
লেখা পড়ে মুগ্ধ হন? নাকি মুগ্ধতা নিয়েই পড়তে আসেন? ;)

আমি বরাবরই কম লিখি। তবে ইদানিং বুঝি আরো কম হয়ে গেছে। চেষ্টা করবো আরো সংখ্যা বৃদ্ধি করার।

ভালো থাকবেন। আরো লেখালেখি করবেন আপনি।
ভালো কথা, আপনার কাছে বোধহয় খাওয়া পাওনা আছে। তাইনা? B-))

৫| ২১ শে মার্চ, ২০১৭ সকাল ১১:৪৩

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: ভ্রমন ব্লগ কিভাবে লেখা উচিত - সেই বিষয়ে আপনি একটি ক্লাস নিতে পারেন। দারুন সুখপাঠ্য এই পোস্টটিতে আমার প্রতিনিয়ত চলার পথের বর্ণনা উঠে এসেছে। খুব ভালো লাগল।

২৪ শে মার্চ, ২০১৭ সকাল ১১:০০

সারাফাত রাজ বলেছেন: ভাই যে কি বলেন!!!! :P
সত্যিই যদি সেরকম কোন ক্লাস হয়, আর সেই ক্লাসটা যদি জুন আপু নেন তাহলে আমি সেই ক্লাসের ১ নম্বর ছাত্র হতে চাই।

ভাই, আপনি এত্তো ভালো লেখেন, আপনি কেন পুরানো ঢাকা নিয়ে লেখেন না? আমার মনেহয় আপনি সবচাইতে ভালো লিখবেন পুরানো ঢাকার খাবার নিয়ে। সেই লেখা হবে অস্থির অস্থির অস্থির।

ভাই, নিরাশ কইরেন না। B-))

৬| ২১ শে মার্চ, ২০১৭ দুপুর ১:৫৩

টারজান০০০০৭ বলেছেন: ভালো লাগলো।বই লেখেন।

২৪ শে মার্চ, ২০১৭ সকাল ১১:০১

সারাফাত রাজ বলেছেন: ওরে ভাইরে!! বই লেখার সাহস নাই। :D

ভালো থাকবেন সবসময় ভাই।

৭| ২১ শে মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৫:৪২

আরাফআহনাফ বলেছেন: জাতি হিসাবে কি আমরা প্রচন্ড পরিমানে ধংসপ্রিয়!!! সন্দেহের কি অবকাশ আছে?

আমাদের নিজেদের অস্তিত্ব বিলীন করতে পারঙ্গম আমরা সবাই, আর তা করি চরম উৎসাহে, সাড়ম্বরে!
হা ধিক ! ! !

আপনার সাথেই আছি - লিখতে থাকুন।

শুভ কামনা সবসময়ের।

২৪ শে মার্চ, ২০১৭ সকাল ১১:০৪

সারাফাত রাজ বলেছেন: খুবই কষ্টদায়ক অনুভূতি ভাই।

পুরানো ঢাকার এতোগুলো স্থাপনার মধ্যে সবচেয়ে ভালো আছে মিটফোর্ড হাসপাতালটি। আর সবচাইতে সৌভাগ্যবান স্থাপনাটি বোধহয় নবাব বাড়ি। তবে তার চারপাশের অবস্থা ভয়াবহ।

কবে যে আমাদের সুবুদ্ধি হবে!!!!!

শুভকামনার জন্য কৃতজ্ঞতা। ভালোবাসা জানবেন।

৮| ২২ শে মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৫:০৬

মধ্য রাতের আগন্তক বলেছেন: তিন- তৃতীয়াংশ " ব্যাপারটা কি ?

২৪ শে মার্চ, ২০১৭ সকাল ১১:০৭

সারাফাত রাজ বলেছেন: ভাই, এটা ঠাট্টা করে লেখা। ৩ পর্বের শেষাংশ এটা, এজন্যই এমন নাম।
ব্যাকারণগত ভাবে বোধহয় "তিন- তৃতীয়াংশ" শব্দটি অশুদ্ধ।

৯| ২৩ শে মার্চ, ২০১৭ সকাল ১১:২৩

মধুমিতা বলেছেন: ..... অসাধারণ।

২৪ শে মার্চ, ২০১৭ সকাল ১১:০৮

সারাফাত রাজ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ভাই। :)

১০| ২৪ শে মার্চ, ২০১৭ সকাল ১১:০৯

জুন বলেছেন: ঢাকার শাহবাগে দৃষ্টিকটু নকশায় যাদুঘর ভবনটি যখন তৈরী হচ্ছিল তখন প্রথমেই গেটের ভেতরে প্রবেশ করতেই হাতের বা দিকে বৃটিশ আমলে তৈরী ছোটখাট এক দৃষ্টনন্দন প্রাচীন হলুদ রঙ এর স্থাপনা গুড়িয়ে দেয় । ওটা থাকলে কি মহাভারত অশুদ্ধ হতো সেট কতৃপক্ষই ভালো বলতে পারবে সারাফাত রাজ ।
এসব দেখলে আর আপনার পোষ্টের মাধ্যমে যা জানলাম তাতে কি পরিমান হতাশ হই তা বলার নয় ।
+

২৪ শে মার্চ, ২০১৭ সকাল ১১:২২

সারাফাত রাজ বলেছেন: আপু বোধহয় এই ভবনটির কথা বলছেন

১১| ২৪ শে মার্চ, ২০১৭ সকাল ১১:৫৯

জুন বলেছেন: না সারাফাত রাজ । আপনি যে ছবিটি দিয়েছেন তা পুরোনো যাদুঘরের । আমি বলেছি নতুন যেটা শাহবাগে বানালো সেখানে রাস্তা থেকে যে গেট দিয়ে আপনি প্রবেশ করবেন তার বা দিকে । বাউন্ডারী দেয়াল থেকে দুইহাত ভেতরে । মাথামোটা না হলে ওটা কেউ ভাংগে !!

০৩ রা এপ্রিল, ২০১৭ বিকাল ৫:২১

সারাফাত রাজ বলেছেন: আপু আমরা বোধহয় সবচাইতে দুর্ভাগ্যবান জাতি, যারা নিজেদেরকে ধ্বংস করতে বেশ পছন্দই করি।

১২| ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৪৫

জুন বলেছেন: আপনি হয়তো জানেন তারপর ও বলছি এই চক শব্দটি আরবী souk /souq শব্দ থেকে এসেছে সারাফত রাজ। এর অর্থ খোলা আকাশের নীচে খোলা ময়দানে গড়ে ওঠা বাজার । নীচে মিশরের বিখ্যাত খান- ই- খলিলি সুক মার্কেট অর্থাৎ ওদের চক বাজারের একটি ছবি দিলাম নিজ হাতে তোলা :)

১৫ ই মে, ২০১৭ দুপুর ১:১৯

সারাফাত রাজ বলেছেন: প্রথমেই দুঃখপ্রকাশ করছি এতোদিন পরে আপনার মন্তব্যের জবাব দিতে পারার জন্য।

আপু, চক ব্যাপারটি সত্যিই আমি জানতাম না। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

আপনার তোলা মিশরের ছবিটা দেখে ওখানে যেতে ইচ্ছা করছে। মিশরের এই বাজারটি নাকি অনেক পুরানো? অনেক আগে মাসুদ রানার একটা সিরিজে এই বাজারের বর্ণনা পড়েছিলাম। তখন থেকেই এই জায়গাটা দেখার ইচ্ছা, আপনার ছবিটা সেই ইচ্ছা আরো জাগিয়ে তুললো।

আপু, আপনি কি দিল্লীর মীনা বাজার সম্পর্কে কিছু জানাতে পারবেন? তাহলে খুশি হতাম।
শুভেচ্ছা জানবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.