নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একজন বাজেট ট্রাভেলার।

সারাফাত রাজ

পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর স্থান হচ্ছে বান্দরবান আর আমি একজন পরিব্রাজক।

সারাফাত রাজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মন্দাকিনী

২৫ শে জুন, ২০১৭ দুপুর ১:০৩



উত্তর ভারতের হিমালয় সিরিজের অন্য পর্বগুলো

মন্দাকিনী নামটি ভাবলেই আমার চোখের সামনে এক ঝগড়াটে মহিলার ছবি ভেসে ওঠে। মনে হয় যেন এই মহিলা সারাদিন ধরে সারা গ্রামের মানুষের সাথে কোমরে আচল বেধে ঝগড়া করে বেড়ায়। তার ভয়ে পুরো গ্রামের মানুষ সবসময় তটস্থ হয়ে থাকে। মন্দাকিনীর স্বামী বেচারার জন্য আমার বেশ কষ্ট হয়। অবশ্য ঝগড়াটে মন্দাকিনী যেমন তার স্বামীকে যম-যন্ত্রনা দেয় সময়ে সময়ে তেমনি সোহাগও করে।


মন্দাকিনী একটি নদীর নাম। আর সবসময়েই নদী ও নারী সমার্থক শব্দ।


মন্দাকিনী নদীর হিন্দু শাস্ত্রীয় নাম হচ্ছে স্বর্গগঙ্গা নদী। এই নদীর উৎপত্তি উত্তরাখন্ডের ১২,৫০০ ফুট উপরে চোরাবারি গ্লেসিয়ার থেকে। সেখান থেকে কিছুদূর নেমে আসার পর তার সাথে মিলেছে দুগ্ধ-ফেনিত-শোভিত দুধগঙ্গা নদী। দুধগঙ্গা বিলীন হয়েছে মন্দাকিনীর সাথে। আর তারপর আরেকটু এগিয়ে যাওয়া মন্দাকিনীর সাথে এসে মিলেছে নদী স্বরস্বতী। নদীগুলো এখানে এতো ছোট, মাত্র কয়েক ফুট চওড়া। লাফ দিয়েই নদী পার হওয়া যায়।


স্বরস্বতীর সাথে মিলিত হবার পরেই মন্দাকিনী নেমে গেছে গভীর খাদে। এই খাদটা এতোটাই গভীর যে দেখলে ভয় লাগে। খাদের ভিতর দিয়ে হেলিকপ্টার উড়ে যায়। খাদের পাশ দিয়ে হেঁটে যাবার সময় নীচে উঁকি দিয়ে দেখা যায় যে ছোট ছোট যন্ত্রদানব ফড়িং উড়ে যাচ্ছে। পায়ের নীচে হেলিকপ্টারের ওড়াউড়ি, ব্যাপারটা বেশ রোমাঞ্চকরই বটে।


প্রায় ২৫ কিলোমিটার গভীর খাদ ধরে ছুটে চলার পর শোনপ্রায়াগে এসে মন্দাকিনী মিলেছে বাসুকিগঙ্গা নদীর সাথে। বাসুকিগঙ্গা তার সবটুকু ঢেলে দিয়েছে মন্দাকিনীকে। আর পুরুষ্ট মন্দাকিনী দৃপ্তভাবে এগিয়ে চলেছে আরো সামনে।


আর তারপর আরো যখন ৭০ কিলোমিটার গেল তখন রুদ্রপ্রয়াগে এসে মৃত্যু হলো মন্দাকিনীর। সে মৃত্যু বড় আনন্দের, বড় গৌরবের। সুন্দরী অলকানন্দাতে এসে ঝাপিয়ে পড়েছে মন্দাকিনী। আচ্ছা এই বিসর্জনকে কি বলা যাবে! মৃত্যুর মাধ্যমে আরো ঐশ্বর্যশালী হয়ে ওঠা!


দেবপ্রয়াগে সুন্দরী অলকানন্দা আর কিশোর ভাগিরথীর সঙ্গমে জন্ম নিয়েছে বিখ্যাত গঙ্গা। এই গঙ্গায় মন্দাকিনীর অবদান কি কম নাকি!



চোরাবারি গ্লেসিয়ারের দিকে



কেদারনাথে যাবার পায়ে হাঁটা পথ



ডান পাশের মন্দাকিনীতে বাম পাশ থেকে এসে মিলেছে স্বরস্বতী



স্বরস্বতী নদী



মন্দাকিনী নদী



ডানে স্বরস্বতী বামে মন্দাকিনী আর পিছনে দূরে দুধগঙ্গা



গভীর খাদে মন্দাকিনী



যন্ত্রফড়িংয়ের ওড়াওড়ি



পথের পাশে গভীর খাদে মন্দাকিনী



মন্দাকিনীর গিরিখাদ



দ্যা হিমালিয়ান ডগ। ভাগ্যিস এই কুত্তাগুলো সহসা ডাকাডাকি করে না। এগুলো খুবই চুপচাপ প্রাণী।



সুন্দরী অলকানন্দাতে ঝাপিয়ে পড়ার আগে মন্দাকিনী। পাহাড় কেটে গাড়ির রাস্তা।



কেদারনাথ পিক


এই কয়েকফুটের মন্দাকিনীই ২০১৩ সালে ফুলে ফেপে উঠেছিলো। সে দুর্যোগে কেদারনাথ মন্দিরের প্রাঙ্গন ও এর আশেপাশের কমপক্ষে ৬০ টি গ্রাম পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়। মারা গিয়েছিলো ৬ হাজারেরও বেশি মানুষ, নিখোঁজ ২৫ হাজারের বেশি।


মন্দাকিনী ও দুধগঙ্গা

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে জুন, ২০১৭ দুপুর ১:২৪

রুবাইয়াত শোভন বলেছেন: এবার তাহলে উত্তরাখণ্ড হয়ে যাক পুরোপুরি। B-) B-) B-)

২৫ শে জুন, ২০১৭ দুপুর ১:৩৩

সারাফাত রাজ বলেছেন: তাহলে এবার উত্তরাখণ্ড যাচ্ছেন?

আমাকে ট্যাক্স দিতে হবে কিন্তু। আগেরবার ফাকি দিয়েছেন। ;)

২| ২৫ শে জুন, ২০১৭ দুপুর ১:৫৫

তাওহিদ হিমু বলেছেন: এবার শুধই নদীর কথা শুনালেন। ছবিগুলো দারুণ এসেছে। ইদের আগের উপহার হিসেবে এটা পড়তে পেলাম।

২৫ শে জুন, ২০১৭ দুপুর ২:০০

সারাফাত রাজ বলেছেন: ভাই, উত্তরাখণ্ড জুড়েই অসংখ্য নদী। এই নদীগুলো অদ্ভুত সুন্দর। পাহাড়ি নদীর জন্ম নেয়া দেখতে এতো ভালো লাগে তা বলার মতো নয়। আর এই নদীগুলোর পাশ ঘেষেই হাইওয়ে। সেই হাইওয়েতে পাহাড় ধসে ধসে পড়ছে। পাশাপাশি গভীর গিরিখাদ দিয়ে বয়ে চলেছে নদী। রাস্তাগুলো পেচিয়ে পেচিয়ে উঠেছে সিড়ির মতো। অধিকাংশ জায়গাতেই ১০ থেকে ১২ ধাপের রাস্তা। সবকিছু মিলিয়েই অসাধারণ রোমাঞ্চকর।

সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।
:)

৩| ২৫ শে জুন, ২০১৭ দুপুর ২:০৩

শাশ্বত স্বপন বলেছেন: ঝরণা বা ছড়া, নদীর মত েতা নয়

২৫ শে জুন, ২০১৭ দুপুর ২:০৫

সারাফাত রাজ বলেছেন: পাহাড়ি নদীগুলো অধিকাংশই তো এমনই হয়। এই মূল ধারার সাথে এসে মিশেছে শত শত জলধারা।

৪| ২৫ শে জুন, ২০১৭ দুপুর ২:১০

বিজন রয় বলেছেন: আপনার দেখি হিন্দুশাস্ত্র সম্পর্কে বেশ জানা আছে।

আপনার ভাষাজ্ঞান বা ভাষাপ্রয়োগ অনেক আভিজাত্যের। যেখানে যেরকম ভাষা ব্যবহার করলে লেখা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে আপনি তেমন সব ভাষার জানেন।

আচ্ছা এই বিসর্জনকে কি বলা যাবে! মৃত্যুর মাধ্যমে আরো ঐশ্বর্যশালী হয়ে ওঠা! ...........চমৎকার।

ভারতীয় উপমহাদেশে নদীগুলোর নাম সত্যিই সুন্দর, অমায়িক আর চিত্তাকর্ষক।

আপনাকে কিন্তু আর ছাড়ছি না!!!

২৮ শে জুন, ২০১৭ সকাল ৯:৩৩

সারাফাত রাজ বলেছেন: ভাই, আমার হিন্দুশাস্ত্র সম্পর্কে জানার পরিধি খুবই কম। আসলে হয়েছিলো কি, কেদারনাথ মন্দির থেকে নেমে আসার সময় মন্দিরের এক পুরোহিতের সাথে আমার পরিচয় হয়েছিলো। আমরা ১৯ কিলোমিটার পথ একসাথে হেঁটে এসেছিলাম। তারপর গাড়িতে চড়া। মজার ব্যাপার হচ্ছে সে আমার গাড়িভাড়াও দিয়ে দিয়েছিলো।

একসাথে সাতটি পদক্ষেপ পাশাপাশি ফেললে নাকি বন্ধুত্ত্ব হয়ে যায়। আর তারসাথে আমি পুরো ১৯ কিলোমিটার হেঁটে এসেছিলাম। শুধুই তো হেঁটে আসা নয়। হিন্দুশাস্ত্রের বিভিন্ন আলোচনা তখনই হয়েছিলো। আমিও আমার ধর্ম সম্পর্কে যতোটুকু জানি তাকে জানিয়েছিলাম। তিনি আমাকে সূর্য প্রণামের শ্লোক শুনিয়েছিলেন, আমি তাকে ইসলামী গজল শুনিয়েছিলাম। তো এই কথোপকথোনেই হিন্দু শাস্ত্র সম্পর্কে যা জানা।

আভিজাত্যের ভাষাপ্রয়োগ ব্যাপারটি আমার জন্য বিব্রতকর। আমি সবসময়ই কঠিন শব্দ এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করি। আমি চাই যে আমার লেখা সবচেয়ে সহজ ও সাবলিল হোক। যেন পড়তে গেলে কারো চোখপীড়ার কারণ না হয়।

ভারতীয় উপমহাদেশে নদীগুলোর নাম সত্যিই সুন্দর, অমায়িক আর চিত্তাকর্ষক। এরপরেই নাম সুন্দরের দিক দিয়ে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশের ট্রেনের নাম আর সিনেমাহলগুলোর নাম। অন্তত আমার তাই মনেহয়। :)


ভাই, শুভকামনা জানবেন।

৫| ২৫ শে জুন, ২০১৭ রাত ৮:০৪

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: আপনার দারুন বর্ণনা যেন চোখের সামনে ভাসিয়ে রেখেছিল মন্দাকিণীর পথ চলা :)

++++++++++

২৮ শে জুন, ২০১৭ সকাল ১০:০৬

সারাফাত রাজ বলেছেন: হা হা
অনেক অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই।
মন্দাকিনী সত্যিই খুব সুন্দর, কিন্তু আমি আসলে অলকানন্দার ফ্যান।
তবে অলকানন্দার চাইতে মন্দাকিনীর পথচলা বেশী রোমাঞ্চকর।

++++++++++ এর জন্য অতিরিক্ত ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন ভাই।

৬| ২৫ শে জুন, ২০১৭ রাত ১০:৫৫

রঞ্জন সরকার জন বলেছেন: শুধুই নদীর বর্ণনা। ভাল লাগল।

২৮ শে জুন, ২০১৭ সকাল ১০:১৮

সারাফাত রাজ বলেছেন: উত্তরাখন্ডে ছোট-বড় অসংখ্য নদীর জন্ম। তার কতোগুলো দেখার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। যার বহিপ্রকাশ এই লেখাগুলো।

ভালো থাকবেন।

৭| ২৮ শে জুন, ২০১৭ বিকাল ৩:২৯

ডঃ এম এ আলী বলেছেন: ধন্যবাদ, মন্দাকিনীর পথচলার ছবি ও প্রাসঙ্গিক ক্ষেত্রে বিবরণ ভাল লাগল ।
শুভেচ্ছা রইল ।

০৩ রা জুলাই, ২০১৭ সকাল ১০:৫৯

সারাফাত রাজ বলেছেন: ভাই, আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
আরো কয়েকটি নদী নিয়ে পোস্ট দেবার ইচ্ছা আছে। আশাকরি আপনাকে সেসময়ও পাশে পাবো।

ভালো থাকবেন ভাই। শুভকামন জানবেন।
:)

৮| ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৭ দুপুর ২:২৪

মোস্তফা সোহেল বলেছেন: যাক অবশেষে পড়তে পারলাম।
ছবি ভাল লেগেছে। তবে এবার বর্ননাতে ফাকি দিয়েছেন।
আশা করি সামনে মন ভরিয়ে দিবেন।

০৫ ই জুলাই, ২০১৭ দুপুর ১:১৮

সারাফাত রাজ বলেছেন: আশাকরি ভালো আছেন।
এটা একটা ফাকিবাজি পোস্ট ছিলো অবশ্য। ;)
বড় করে নূতন একটা পোস্ট দিয়েছি। আশাকরি সেটা পড়বেন।

৯| ০১ লা আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ১:২৭

জে আর সিকদার বলেছেন: উত্তর প্রদেশের ভ্রমন স্মৃতিগুলো মনে পরে গেল। আমার সংগ্রহে ছবি নেই! ছবি গুলো মন ভারি করা আনন্দ দিল। চমৎকার লেখার জন্য কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ।

০৩ রা অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৩:৩৯

সারাফাত রাজ বলেছেন: লেখা ভালো লাগার জন্য অনেক ধন্যবাদ ভাই।

আমার তো আপনার উত্তর প্রদেশ ভ্রমণের গল্প শুনতে ইচ্ছা করছে । আশাকরি সময় করে লিখবেন।

শুভকামনা জানবেন।
:>

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.