নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এই ছেলেটা, নাম কি রে তোর?আমি বললাম, “ফুসমন্তর !”

পার্থিব পার্থ

এক গ্লাস অন্ধকার হাতে নিয়ে বসে আছি। শুন্যতার দিকে চোখ, শুন্যতা চোখের ভেতরও–

পার্থিব পার্থ › বিস্তারিত পোস্টঃ

চক্ষে তোমার তৃষ্ণা, তৃষ্ণা আমার বক্ষ জুড়ে

২৮ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ৮:৩৮


গাঢ় সবুজ পাহাড় ঘেরা বনানীর নিঃঝুম প্রান্তরে পাশাপাশি হেঁটে যাচ্ছিলাম আমরা। কাছেই কলকল ঝর্নার মৃদু রিনরিনে সুর। এ মায়াবী পরিবেশে লাবন্যকে লাগছিলো অপার্থীব স্বর্গীয় অপ্সরীর মত। আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলাম ওর দিকে। আমি কখনও নিজের কাছে লুকোছাপা করতে শিখিনি। জীবনটাকে খুব খোলামেলা মুক্ত ভাবনাতেই উপভোগ করতে চেয়েছি আমি সবসময়।

কিন্তু লাবন্যের লাবন্যকে ছাঁপিয়ে চাপা কষ্ট বা নিজেকে অবদমিত রাখার কঠোর গোপন চর্চাটা খুব চোখে পড়ে আমার। সত্যি বলতে এ অফিসে জয়েন করার প্রথম দিনটি থেকেই চোখে পড়েছিলো আমার এই মেয়েটিকে । আর ওকে চোখে পড়ার বা ওর দিকে বিশেষ নজর যাবার কারণই ছিলো ওর অপরুপ বিষন্নতা মাখা তৃষিত দুই চোখ। আজ এই মায়াময় গোধুলীর অপূর্ব সন্ধায় লাবন্যকে দেখে সেই মুগ্ধতায় হঠাৎ আবারও থমকলাম। চলতে চলতে আমার হঠাৎ থেমে যাওয়া দেখে লাবন্যও থেমে দাঁড়ালো। উৎসুক চোখে দাঁড়িয়ে রইলো ঠিক আমার মুখোমুখি। আমি বললাম,
-লাবন্য তুমি কি জানো তুমি একটা চমৎকার মেয়ে! তবে তোমার মাঝে এক অদ্ভুত চাঁপা আকাঙ্খার বেদনা আছে, যা তোমার তৃষিত নয়নে ঢেকে রাখতে পারো না তুমি।
লাবন্য স্থির দাঁড়িয়ে রইলো। আমি বললাম,
- কি তোমার বেদনা, বলবে আমায়?
লাবন্য একই ভাবে তাকিয়ে রইলো। কোনো উত্তর দিলো না। পাহাড়ী বিকেলের চারিপাশ ছাপিয়ে তখন নামছিলো সন্ধ্যা । কাছেই বুনো কামিনী ঝোঁপের মাতাল করা গন্ধে ডুবে যাচ্ছিলাম আমরা। আমি কোনোরকম ভনিতা না করেই বললাম,
- লাবন্য আমি তোমাকে স্পর্শ করতে চাই।
লাবন্য কিছুক্ষন স্তম্ভিত হয়ে তাঁকিয়ে রইলো আমার দিকে। এ নির্জন বনানীতে অন্য কেউ হলে বিশেষ করে কোনো মেয়ে হলে হয়তো একটু ভড়কে যেত বা ভয়ও পেত কিন্তু লাবন্যর চোখে কোনো ভয় বা ভীতির চিহ্ন ছিলোনা। সে স্থির বিষন্ন চোখ মেলে তাকিয়ে রইলো আমার দিকে। আমি আবারও বললাম,
- আমি কি তোমাকে স্পর্শ করতে পারি?
স্থির শান্ত শীতল চোখ দুটো না সরিয়েই খুব আস্তে কিন্তু পরম দৃঢ়তায় জবাব দিলো লাবন্য,
-না
ওর দৃঢ়তা, স্থিরতা, বিষন্ন কিন্তু তৃষিত চোখের চাওনিতে কিছুক্ষন দগ্ধ হতে দিলাম আমি নিজেকে। আমার চাউনীতে সে কি বুঝলো জানিনা, আমি খুব ঠান্ডা মাথায় বললাম,
-দেন, ক্যান আই ফিল ইউ?
লাবন্যর চোখে দারুন বিস্ময়! সাথে সেই লুকিয়ে রাখা তৃষ্ণা যা আমার নজর এড়াতে পারেনি কখনও।
ও দ্বিগুন ঠান্ডা গলায় বললো।
-কিভাবে?
- যেভাবে তুমি চাও....
- আমাকে আমি কাউকে স্পর্শ করতে দেইনা।
- কেনো?
- আমার ভয় লাগে...
- আমি তোমার সকল ভয় কে দূর করে দিতে চাই
- না
- তুমি কি চাও না আমি তোমাকে অনুভব করি?
লাবন্য কয়েক সেকেন্ড নীরব হয়ে রইলো, তারপর বললো,
- চাই
- কিভাবে?
- তুমি শুধু আমাকে দেখতে পারো। আমাকে ছুঁতে পারবেনা তুমি....



-চুল খুলে দাও লাবন্য। আমি খুব কাছ থেকে দু নয়ন ভরে দেখতে চাই তোমাকে....
লাবন্য চুলে হাত দিলো না। শুধু খুব অদ্ভুৎভাবে মাথাটা একটু পিছে নিয়ে নাড়িয়ে দিলো। খোঁপা ভেঙ্গে সারা পিঠে ছড়িয়ে পড়লো এক ঢাল ঝিলমিলে রেশমী চুল। আমি ওর খুব কাছাকাছি চলে এলাম। লাবন্য ঘোরগ্রস্তার মত অবিচল দাঁড়িয়ে রইলো। আমি ওর চারপাশে চক্রাকারে ঘুরে এলাম। নাক ডুবালাম ওর চুলে খুব কাছে থেকে কিন্তু কথা রাখলাম। কোথাও যেন স্পর্শ না লাগে। গভীর শ্বাস নিলাম। বুনো কামিনীর গন্ধে মৌ মৌ করছিলো চারপাশ। কিন্তু তাকেও হারিয়ে দিয়ে লাবন্যর চুলের এক আদি মাতাল গন্ধ প্রবিষ্ঠ হলো আমার হৃদপিন্ডের সম্পূর্ণ প্রকোষ্ঠ জুড়ে। আহহ!

শিউরে উঠলো লাবন্য। আমি ওর মদির চুলের সুঘ্রান গভীর শ্বাস টেনে চোখ মুদে ফেলার মুহুর্তে দেখলাম, লাবন্য তার আগেই মুদে ফেলেছে তার বিস্ময় ভরা দীঘল কালো চোখ দুটি। তিরতির করে কাঁপছিলো ওর নাকের পাটা। ঠোঁটের উপর জমে ওঠা বিন্দু বিন্দু ঘামের ফোটা। আমার চোখ বন্ধ করা আর হলো না। আমি পরম আনন্দ নিয়ে তাকিয়ে রইলাম সে অপূর্ব সৌন্দর্য্যের দিকে। উপভোগ করছিলাম সেই নৈস্বর্গিক বনভূমিতে এক অচেনা বনদেবীর অজানা রূপ! খুব ইচ্ছে হলো ছুঁয়ে দিতে ওর নাকের পাটায় জমে থাকা স্বেদ বিন্দুটুকু। আমি অবাক বিস্ময়ে দেখছিলাম ওর ভীতা হরিনীর মত অজানা আকাংঙ্খার কেঁপে ওঠা শিহরণ। তবুও ওকে ছুয়ে ফেলিনি আমি।

সরে এসে ওর মুখোমুখি দাঁড়ালাম ....খুব আস্তে বললাম,
-চোখ মেলো লাবন্য।
লাবন্য চোখ মেললো না। ওর বদ্ধ চোখের পাতা কাঁপছিলো আমার দুচোখের খুব কাছাকাছি। খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো ঠোঁট দিয়ে ছুঁয়ে দিতে ওর ইষৎ লালচে আভার চোখের পাতা। কিন্তু নিজেকে সম্বরণ করেছি আমি। লাবন্যের ইচ্ছের বিন্দুমাত্র অসন্মাননা চাইনা আমি। লাবন্য চোখ মুদেই দাঁড়িয়ে রইলো। কতক্ষন জানা নেই। আমি দুষ্টুমী করে ফু দিলাম ওর চোখের পাতায়। ধীরে ধীরে চোখ মেললো লাবন্য। চমকে উঠলাম আমি! দেখলাম ওর চোখ ভর্তি জল। টলমল করা দুচোখের পাতা ফের বন্ধ করে ফেললো লাবন্য। টুপ করে ঝরে পড়লো দু ফো'টা মুক্তোর মত অশ্রুবিন্দু। পায়ের নিচের সবুজ ঘাসের জমিনে মিলিয়ে গেলো তা এক নিমেষে।

হঠাৎ আমার বুকের ভেতরে এক অজানা অনুভুতি। আমার ইচ্ছে হচ্ছিলো এই মেয়েটার সব দুঃখ কষ্ট, ব্যাথা, বেদনা তিল তিল করে শুষে নিতে। শুষে নিতে ওর চোখের শেষ বিন্দু জলের কণটুকু। যেন কোনো দুঃখ কখনও ওকে আর না ছুঁতে পারে।
আমি আস্তে করে ডাকলাম,
-লাবন্য
চোখ নিচু করে তাকিয়ে ছিলো লাবন্য। আমার ডাকে চোখ তুলে তাকালো সে আমার চোখে। ওর চোখের পাপড়িতে জমে থাকা জল। আবারও মুগ্ধ হলাম! আমি আবার হারালাম। আমার চোখ ওর ফুলে থাকা ঠোঁটে গিয়ে স্থির হলো। কি এক অজানা অভিমান ছেয়ে আছে ওর দু ঠোঁটের ভাঁজে। ইচ্ছে হয় অভিমানটুকু মুছে দিতে এক লহমায়। আমি নিশ্চিৎ জানি এই অভিমান নিশ্বেষ করে দিয়ে আমি খুব সহজেই বুনে দিতে পারি সেখানে ভালোবাসার বীজ মন্ত্র। কিন্তু ওকে ছোঁবার অনুমতি নেই আমার।

আমি বললাম,
- লাবন্য চোখ মোছো। তোমাকে পরিপূর্ণরুপে দেখতে চাই আমি।
আমাকে খুব অবাক করে লাবন্য সরিয়ে দিলো ওর আঁচল। ওর এক হাতে ধরা হালকা সবুজ শাড়ির আঁচল আর পিছনে গাঢ় সবুজ পাহাড়ের ক্যানভাসে লাবন্য ফুটে উঠলো এক চিত্রার্পিতা হয়ে। ওর লো কাট সাদা সবুজ মিশেলের জামার উপত্যকায় দুলছিলো একটি ছোট্ট সোনালী প্রজাপতি। সরু চেইনে ঝোলানো লকেট। আমি মুগ্ধ হয়ে দেখছিলাম ওকে। যে স্বর্ণ কারিগর বানিয়েছিলো এই সোনার প্রজাপতিকে তার জীবন সার্থক। সার্থক এই সোনালী ছোট্ট প্রজাপতিটির নিস্প্রান দেহ। অপরূপ মুগ্ধতায় প্রানহীন দেহেও প্রান পেয়েছে সে। তাই ঝলমল করে দুলছে আনন্দে এই গোধুলী লগনে এই দেবী প্রতিমার গলে।

আমার চোখ নেমে যায় উন্মুক্ত মৃগনাভীর পরে। যার একটু নীচেই বাকানো কটিদেশ ঘিরে বাঁধা ছিলো শাড়ির কুঁচিগুলি। ধবধপে জমিনের উপর কালো কুচকুচে ছোট্ট তিলটি কি পরম মমতায় বিধাতা সেটে দিয়েছেন ঐ স্বর্নালী কটিদেশে। আমি আর সহ্য করতে পারিনা। দুহাতে মুখ ঢেকে নতজানু বসে পড়ি লাবন্যের পায়ের কাছে।

সেই অভয়ারন্যে প্রকৃতির সাথে আমি নিজেকে সমর্পণ করে ফেলি এ দেবী প্রতিমার কাছে।

মন্তব্য ২০ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (২০) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ৮:৫১

তার আর পর নেই… বলেছেন: গল্পটা মোটামুটি লেগেছে। কিন্তু নামটা সুন্দর!

গানটা শুনছিলাম। চক্ষে আমার তৃষ্ণা ……

২৮ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ৮:৫৯

পার্থিব পার্থ বলেছেন: ধন্যবাদ। :)

২| ২৮ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ৯:০১

বনমহুয়া বলেছেন: পার্থ।
তৃষ্ণা তোমার বক্ষ জুড়ে।

২৮ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ৯:০২

পার্থিব পার্থ বলেছেন: চক্ষে তোমার তৃষ্ণা!

৩| ২৮ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১০:৫০

বনমহুয়া বলেছেন: পার্থ। তোমার গল্পের এই লাবন্য কে?

২৮ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১১:৩০

পার্থিব পার্থ বলেছেন: আমার হৃদয়ে তার স্পর্শ লেগে আছে! যা কখনোই কেউ আমার কাছ থেকে কেড়ে নিতে পারবে না! এমন কেউ। :)

৪| ২৮ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১১:৪৩

বনমহুয়া বলেছেন: :P

২৮ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১১:৪৫

পার্থিব পার্থ বলেছেন: :P

৫| ৩০ শে মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৩:০০

শায়মা বলেছেন: এইটা আমার প্রিয় প্রিয় প্রিয় গান। মানে শিরোনামটা।
তার আর পর নাইকেও সেদিন শুনালাম।

তাই এই শিরোনাম আমার অনেক পছন্দ হয়েছে। আর লেখাটা পড়ে ভাবছি.......

কি বলা যায় !

কি বলা যায়!!!!! :P

২৪ শে এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫৯

পার্থিব পার্থ বলেছেন: ধন্যবাদ।

:)

৬| ০৯ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১২:১৫

বনমহুয়া বলেছেন: পার্থ তারপর লাবন্যের আর খবর নাই কেনো?

২৪ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৮:০১

পার্থিব পার্থ বলেছেন: খবর আছে।

কিন্তু আমার খবর নাই! :P

৭| ০৯ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:৪০

বনমহুয়া বলেছেন: পথ বিজন, তিমির সঘন, কানন কন্টক, তরু গহন,আঁধারা ধরণী[link||view this link]


২৪ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৮:০৩

পার্থিব পার্থ বলেছেন: কোথায় যাব?

৮| ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৮:০৩

বনমহুয়া বলেছেন: কেনো নাই?

তোমার না মধুচন্দ্রিমা নিয়ে লেখার কথা ছিলো?

২৪ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৯:২৩

পার্থিব পার্থ বলেছেন: এখনো চলছে!

আমি ঘোরের মধ্যেই আছি! :P

৯| ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৮:৩২

বনমহুয়া বলেছেন: সেই রাতে রাত ছিলো চন্দ্রিমা
গান ছিলো মধুকরী পাখাতে,
সব ভালো লাগছিলো তুমি ছিলে তাই
খুব কাছে তোমাকে পাওয়াতে।

২৪ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৯:২৮

পার্থিব পার্থ বলেছেন: সে রাত ছিল ঝড়ের মত
সে রাত ছিল শান্ত
তোমার চোখের আলোর মাঝে
আমার হৃদয় প্রান্ত!

১০| ১৭ ই মে, ২০১৬ রাত ১১:৪১

বনমহুয়া বলেছেন: হৃদয় আমার শূন্য বিরান ভূমি,
ঘুম ভাঙ্গলেই যখন দেখি-
পাশেতে নেই তুমি।

১১| ২১ শে জুন, ২০১৬ রাত ১:০৮

বনলতা-সেন বলেছেন: মুগ্ধতার অপরূপ বহিঃপ্রকাশ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.