নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রতি যুগে একদল সত্যের অনুসারী থাকে। আমি সে দলে আছি।

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া)

সকল মানুষের মধ্যে কিছু কিছু ভুলত্রুটি আছে যা মানুষ নিজে বুঝতে পারে না, সেই ভুলগুলো ধরিয়ে দেয়া এই অধমের দায়িত্ব

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) › বিস্তারিত পোস্টঃ

কোষা নৌকা ও আমাদের জীবন এবং বাস্তবতা

১৯ শে জুলাই, ২০১৬ সকাল ১০:৩২



বাংলাদেশের চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল বলে খ্যাত শরীয়তপুরের এমন কোন মানুষ নেই যে জীবনে কোষা নৌকা দিয়ে স্কুলে, বাজারে বা আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যায়নি। অনেক বয়স্ক লোক আছে যাদের এই নৌকা নিয়ে সুখ ও দু:খ স্মৃতি জড়িয়ে আছে। নতুন বধুরা কোষা নৌকা করে বর্ষা মৌসুমে নাওড় যেত। সাথে বর থাকলে একটু আধটু দুষ্টামিও হত। আমাদের ছোটবেলা পর্যন্ত এই নৌকার আধিক্য থাকলেও বতর্মানে তাদের সংখ্যা সংকুচিত হয়ে আসছে। বর্ষা শেষ হলে ডোবা, হাজা-মাজা পুকুরে দু’একটি নৌকাকে কেঁদে কেঁদে মরতে দেখা যায়।

তবে,

শরীয়তপুর জেলার বিশেষ বিশেষ কয়েকটি হাট-বাজারে কোষা নৌকা বিক্রির ধুম পড়ে যায় বর্ষার সঙ্গে সঙ্গে। সদর উপজেলার বুড়িরহাট ও সুবচনি বাজার, নড়িয়া উপজেলার ভোজেশ্বর বাজার, জাজিরা উপজেলার কাজীরহাট, ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখীপুর ও গোসাইরহাটের ইদিলপুর বাজারে বর্ষা মৌসুমে কয়েক হাজার কোষা বিক্রি করা হয়। এর মধ্যে সদরের বুড়িরহাট বাজারের প্রায় ২০০ বছরের পুরনো ঐতিহ্য রয়েছে কোষা নৌকা বিক্রির হাট হিসেবে। এক সময় জেলার বাইরে থেকে অনেক লোক বড় বড় ঘাসি নৌকা (পালতোলা মালবাহী নৌকা) ভাড়া করে বুড়িরহাটে আসত কোষা নৌকা কিনতে। তারা একেকটি ঘাসি নৌকার ভেতরে, ছাদে ও এর সঙ্গে বেঁধে ৮০ থেকে ৯০ মাইল দূরে বরিশালসহ দেশের অনেক এলাকায় কিনে নিয়ে যেত। বুড়িরহাটের সেই ঐতিহ্য এখনও স্বদম্ভে টিকে রয়েছে। এখন বাইরের লোক না এলেও জেলার অভ্যন্তরে প্রচুর কোষা ন্যেকা বিক্রি করে বুড়িরহাটের বিক্রেতারা। পাপরাইল, চন্দনকর, ছয়গাঁও, পাটানিগাঁও আটেরপাড়া, মাকসাহার, ঘোড়ারঘাট, বিঝারি, ডুবিসায়বর ও ডুবুলদিয়া গ্রামে কাঠ মিস্ত্রিরা বর্ষা শুরু হওয়ার সাথে সাথেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন কোষা নৌকা বানানোর জন্য।

শরীয়তপুরের নিম্নাঞ্চলে কোষা নৌকা ব্যবহার করা হচ্ছে আবহমান কাল থেকে। বর্ষার পানি যখন খাল-বিল ও বাড়ির আশপাশে থৈ-থৈ করে তখন কোষা নৌকাই হয়ে উঠে এখানকার মানুষের একমাত্র বাহন।
ফলে এ অঞ্চলে কোষা নৌকা নির্মাণে দক্ষ কারিগরের সৃষ্টি হয়। আর এই কোষা বেচাকেনার জন্য এ জেলায় বেশ কিছু প্রসিদ্ধ হাট-বাজার গড়ে উঠে। যার মধ্যে সদর উপজেলার বুড়িরহাট হচ্ছে সবচেয়ে বিখ্যাত। প্রতিবছর বর্ষা শুরুর সঙ্গে সঙ্গে শরীয়তপুর জেলার বিশেষ কয়েকটি হাটবাজারে নৌকা বিক্রির ধুম লেগে যায়। সদর উপজেলার বুড়িরহাট ও সুবচনি বাজার, জাজিরার কাজীর হাট, ভেদরগঞ্জের সখিপুর, গোসাইরহাটের দাসের জঙ্গল বাজার ও নড়িয়া উপজেলার ভোজেশ্বর বাজারে বর্ষা মৌসুমে কয়েক হাজার কোষা নৌকা বিক্রি হয় হয় বলে জানা যায়।
এর মধ্যে নৌকা বেচাকেনার হাট হিসেবে জেলার সবচেয়ে প্রসিদ্ধ হাট হচ্ছে বুড়িরহাট। এই হাটের ঐতিহ্য শতবর্ষের। বুড়িরহাট থেকে শুধু স্থানীয়রাই নয়, দেশের অন্যান্য অঞ্চল বিশেষ করে বরিশাল, চাঁদপুর, মাদারীপুর ও মুন্সিগঞ্জের ক্রেতারা এসেও কোষা নৌকা কিনে নিয়ে যায়।
তবে রাস্তাঘাট বৃদ্ধি ও নদ-নদীতে পানি কমে যাওয়ায় বর্তমানে নৌকার ব্যবহার অনেক কমে গেছে। ফলে নৌকার চাহিদাও আগের মতো আর নেই। এতে নৌকার নির্মাণ শ্রমিক তথা কারিগরদের সুদিনও আর নেই। তবে এ জেলার নিম্নাঞ্চলে কোষা নৌকার ব্যবহার হয় বলে এখানকার কারিগররা এখনো কোনভাবে টিকে রয়েছেন।
জৈষ্ঠ্য মাসের শুরু থেকেই কোষা তৈরির কাজ শুরু করেন। জারুল, গোয়ারা, পউয়া ও উড়িয়া আম কাঠের একেকটি কোষা তৈরিতে দুই/তিন দিন সময় লাগে। প্রতি মঙ্গলবার বুড়িরহাটে কোষা বিক্রি হয়।
ভালো কাঠ না থাকায় কড়ই ও চাম্বুল কাঠ দিয়ে কোষা তৈরি করছেন অনেক মিস্ত্রী। তারা রাত দিন পরিশ্রম করে ২ জনে ৩/৪টি কোষা তৈরি করতে পারে।
একটি কোষা তৈরি করলে এক হাজার থেকে বারশ’ টাকা মজুরি পাওয়া যায়। এতে ভাল আয় হলেও চাহিদা কমে যাওয়ায় অনেক মিস্ত্রিই তেমন কাজ করতে পারেন না।
স্থানীয় কৃষকদের ভাষ্যমতে, বর্ষাকালে তাদের বাড়ির চারদিক পানিতে তলিয়ে যায়। তখন কোষা ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়া যায় না। হাট-বাজার করা, ধান-পাট কাটা, গবাদি পশুর খাদ্য সংগ্রহ করা, মাছ ধরা, ছেলে মেয়েদের স্কুলে পাঠানোসহ অনেক কাজই তারা কোষার সাহায্যে করে থাকেন।
এখন বিভিন্ন অঞ্চলে পানি কমে যাওয়ায় এবং ভালো কাঠ পাওয়া যায় না বলে কোষা বানানো অনেক কমে গেছে। তবুও বুড়িরহাটে প্রত্যেক মৌসুমেই কোষা উঠে অন্যান্য এলাকার চেয়ে অনেক বেশি। তাই বুড়িরহাট এখনো কোষা নৌকার হাট বলেই অধিক পরিচিত।


যাবেন নাকি এক বার- কবি, ব্যারিষ্টার ও গীতিকার অতুল প্রসাদ সেন, সাবেক উপদেষ্টা এম আজিজুল হক, সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচিব আতাউল হক, ভাস্কর্য শিল্পী আব্দুর রাজ্জাক, সূর্য দীঘল বাড়ি বলে খ্যাত উপন্যাসিক আবু ইসহাক, পাকিস্তান রেডিওর বিশিষ্ট শিল্পী গীতা দত্ত, বাংলাদেশের প্রথম এম.এ গুরুপ্রসাদ সেন, স্বাধীনতা সংগ্রামী পুলিন বিহারী দাস, বাঙলার বিশিষ্ট রাজা- রাজবল্লভ সেন, ডাক্তার গোলাম মাওলা এর জন্ম স্থান শরীয়তপুরে।কোষা নৌকায় চড়ে তাদের স্মৃতি মন্থর করতে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১:২০

সুমন কর বলেছেন: লেখা ভালো লাগল। +।

১৯ শে জুলাই, ২০১৬ দুপুর ২:৩৮

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: ধন্যবাদ,

সুমন দ্যা

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.