নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শাকরানের রাফখাতা

ছবিকর

Doctor, Photo-enthusiast, Movie-buff, Music-addict, Pluviophile, Poetry-lover, Cat-Person, Nyctophile, Traveloholic

ছবিকর › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রসঙ্গঃ জাতীয় সঙ্গীত, একটি রবীন্দ্রসঙ্গীত, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ‘ক্ষ’ ব্যান্ড, মিডিয়ার কারসাজি ও আমার সোনার বাংলা...

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:৫০

ছোটবেলায় যখন আইডিয়াল স্কুলে ক্লাস ওয়ান কি টু তে পড়তাম, এসেম্বলি হত ক্লাস শুরুর পূর্বে। এসেম্বলির শেষভাগে হত জাতীয় সংগীত গাওয়া। তখন তো বাচ্চা বয়স। গাইতে হত, তাই গাইতাম। ঠিক বুঝতাম না, ‘আমার সোনার বাংলা’র তাৎপর্য। ভাইয়ারা স্টেজ এর উপরে উঠে গাইতেন। আমরা ঠোঁট মিলাতাম। এখন একটু বড় হয়েছি। স্কুল লাইফের সেই স্মৃতিগুলো এখন নস্টালজিক করে তুলে। এরপর বহুদিন কেটে গেছে। নটরডেম পেরিয়ে, শেরেবাংলা মেডিকেলের উঠানে জীবনের এ পর্যায়ে এসে একত্রে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়াটা খুব মিস করি। আমি হলফ করে বলতে পারি, গত এক বছরে মাত্র কয়েকটিবার জাতীয় সঙ্গীতের সেই সুর শোনার সৌভাগ্য হয়েছে। তার বেশ কয়েকবারই স্টার সিনেপ্লেক্স এ মুভি দেখার পূর্বে। সেজন্য, যখন একদিন ফেসবুকে ফ্রেন্ডের দেয়া লিঙ্ক এ ‘ক্ষ’ ব্যান্ডের গাওয়া ‘আমার সোনার বাংলা’ পাই, ক্ষুধার্তের মত শুনলাম ও ডিএল করলাম।



এখন আসি, কন্টেম্পরারি প্রসঙ্গে। ফেসবুকে, সাইটে, ব্লগে অনেকে আজ কাদা ছোড়াছুড়ি করছে ব্যান্ডটিকে। কেউ বলছে, রাষ্ট্রদ্রোহিতা। কেউ বা জাতীয় সঙ্গীতের বিকৃতি। ভাই, লেখার ক্ষমতা থাকলেই ‘ক্ষ’ ব্যান্ডটির বিরুদ্ধে বিরূপ মতামত দিবেন, এটা কি ঠিক? কথা হল, আমাদের জাতীয় সঙ্গীত নিয়ে দেশি-বিদেশি কিছু মানুষ রিসার্চ করছে, এটা খারাপ কিছু নয়। তাছাড়া ওরা তো জাতীয় সংগীত হিসেবে এটা গায়নি। গেয়েছে রবীন্দ্রসঙ্গীত হিসেবে। ব্যান্ডটির ভাষ্যমতে তো এটাই বুঝা যায়। এখন নিন্দুকের কথা হল, কেন রবীন্দ্র সঙ্গীত নিয়ে যোগ-বিয়োগ গবেষণা হবে? আশ্চর্য তো!! মানুষ কিন্তু আজাইড়া জিনিস নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট বা রিসার্চ করবে না। ইভা রহমানের গান নিয়ে কি রিসার্চ হবে? এটা রবীন্দ্রসঙ্গীত বলেই তো এসব হবে। আমি সবসময়ই সঙ্গীতের প্রগতির পক্ষের মতবাদী। প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে সাউন্ড সিস্টেম, বাদ্যযন্ত্র এগুলোর প্রভূত উন্নতি ঘটছে। যুগের সাথে তাল মেলাতে ওগুলো তো ইউস করতেই হবে। এখন কথা হচ্ছে, জগতে কোন কিছুই পরম ধ্রুব নয়। নয় রবীন্দ্রসঙ্গীতও। মেটাল ম্যানিয়াক প্রজন্মের কাছে, যদি একটু ভিন্নভাবে ক্লাসিক সঙ্গীতগুলো উপস্থাপন করা না হয়, তাহলে, আস্তে ধীরে কি রবীন্দ্রসঙ্গীত তার সর্বজনীন ও সার্বজনীন প্রভাব হারাতে থাকবে না? আমার কাছে তো, বেসুরো নব্যপ্রজন্মের কিছু কিছু গান থেকেও রবীন্দ্রসঙ্গীতের আধুনিকায়িত ভার্শন বেশি গ্রহণযোগ্য। বুঝতে হবে, রবীন্দ্রসঙ্গীত কিছু উন্নাসিক মানুষের পৈতৃক সম্পত্তি নয় যে, এটা নিয়ে রিসার্চ করা যাবে না। রবীন্দ্রজগতই তো গবেষণার আধার। হয়ত, স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বেঁচে থাকলে, উনি নিজেও এটার বিরোধিতা করতেন না। কিভাবে বললাম? ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়। যখন কল্লোল যুগের ‘পঞ্চপান্ডব’ রবীন্দ্রধারার কাব্যের ছায়া থেকে বাংলা সাহিত্যকে মুক্তি দিয়ে উল্টোদিকে স্রোত প্রবাহে রত, তখন রবীন্দ্রনাথ নিজেই তাঁর সীমাবদ্ধতা বুঝতে পেরে, লিখে ফেলেন ‘কণিকা’ কাব্য- যেটা এখনো আধুনিকধারার বাংলা কাব্যের পথিকৃৎ হিসেবে সর্বস্বীকৃত। হুম, এজন্য বলি, রবীন্দ্রনাথ কী ভাবতেন আজ বেঁচে থাকলে, তা সহজেই অনুমেয়। সেজন্য আমার মতে, যে রবীন্দ্রসঙ্গীতের আসল ভার্সন শুনতে ইচ্ছুক, সে ওটা শুনুক। আর যে না, সে নতুন ভার্সন শুনুক। শুনে মন ভরাক। জুড়াক তার প্রাণ। প্যারেলালি সব ভার্সন ই থাকুক, বাজুক, শুনুক। কী ক্ষতি তাতে?



এখন আসি, মিডিয়ার প্রসঙ্গে। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম যে সংবাদটি করেছে, ওটা দেখে স্বভাবতই আশ্চর্য হয়েছি। সাইটটি বিশিষ্ট কয়েকজন রবীন্দ্রসঙ্গীত গবেষক ও শিল্পীর বরাত দিয়ে অনেক কিছুই লিখেছে। কিন্তু আবার কয়েকজায়গায় পড়লাম, উনারা নাকি যা বলছেন, তা বিকৃত করে প্রকাশ করেছে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম। আশ্বস্ত হলাম, তাহলে বিশিষ্টজনদের মতিভ্রম হয়নি। যে জাতি গুণীদের কদর জানে না, যে দেশে গুণী জন্মায় না। খাঁটি সত্য কথা। কষ্টের ব্যাপার হল, হলদে সাংবাদিকতা তো থাকবেই। দুর্নীতি যেমন আছে। যেমন রয়েছে দারিদ্র্য । কোন এক রচনায় পড়েছিলাম, এক ফুল থেকে মৌমাছি আহরণ করে মধু, আর মাকড়শা বিষ। তাই, মাকড়শারূপী মানুষ আছে, ছিল, থাকবে। তাদের জানাই সাধুবাদ। “নিন্দুকেরে বাসি আমি সবার চেয়ে ভালো।”



মনে রাখতে হবে, “What doesn’t kill you, makes you stronger.” এখন তাই কথা হল, এই মাকড়শাদের কামড়াকামড়িতে লাভ হল কার? Any press is good press. পূর্বে ‘ক্ষ’ ব্যান্ডটির নাম শুনেছিলেন কয়জন? কিংবা গানটি? কয়জনই বা দেখেছিলেন ভিডিওটি? কিন্তু এখন সেটা প্রতিনিয়ত বাজছে, ডাউনলোড হচ্ছে, শেয়ার করছে মানুষ। লেখা হচ্ছে ব্লগ। কয়জনই বা গায়িকা সহিনিকে চিনতেন। এখন কী অবস্থা তার? চলুন, তার নিজের ভাষ্যেই শুনি,



“I am posting this status update to thank every single one of you who has made it a point to defend me, my band, and/or our music. I am currently swamped with messages, friend requests, etc., so please forgive me if it takes me a while to get back to you. This issue is not about one band or one song…you have stood up for an artist’s right to create, which results in a very different future from one that is forcefully imposed.”



‘ক্ষ’ ব্যান্ডের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টার ফলে রবীন্দ্রসঙ্গীত হিসেবে ‘আমার সোনার বাংলা’র আবেদন যে শতধিক বেড়েছে, তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। সাথে সাথে জাতীয় সঙ্গীতের প্রতি অন্তরের মাঝে লুকিয়ে থাকা ভালবাসা, স্কুলজীবনের এসেম্বলির স্মৃতি, আমাদের দেশের গানের প্রতি বিদেশিদের দৃষ্টিভঙ্গি- সবকিছুই আন্দোলিত হয়েছে আবার নতুনভাবে। পরোক্ষভাবে দেশপ্রেমই তো চাগিয়ে ওঠাতে পারল ব্যান্ডটি, এটাই তাদের সার্থকতা নয় কি?



জাতীয় সঙ্গীতের কাজই হচ্ছে, জাতিসত্তার পরিচয় তুলে ধরে দেশপ্রেম জাগ্রত করা। ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ পল্টন ময়দানে স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় সংগ্রাম পরিষদের ইশতেহারে আমাদের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে নির্বাচিত ১৯০৫ সালের রচিত এই রবীন্দ্রসঙ্গীত কোন ক্ষেত্রে বা পটভূমিতে, কোন গানের সুর নিয়ে রচিত হয়েছিল, সেটা নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে। থাকুক। কিন্তু এটা তো সঠিক, গানটা যখন মন দিয়ে শুনি, মনের মাঝে দেশের প্রতি ভালোবাসা না জেগে পারে না। চোখের কোণায় চিকচিক করে অঠে আবেগাশ্রু। সেটা ‘জীবন থেকে নেয়া’ ছবির ‘আমার সোনার বাংলা’ই হোক, বিটিভির রাত বারটার সমাপণী অথবা স্টার সিনপ্লেক্স এর ইন্সট্রুমেন্টাল ‘সোনার বাংলা’ই হোক অথবা ‘ক্ষ’ ব্যান্ডের হৃদয় নিংড়ানো ‘আমার সোনার বাংলা’ই হোক। আমার আপত্তি নেই তাতে।



আমার দেশের গান আজ বাজছে দিকবিদিক। দেশে-বিদেশে, কিংবা ফেসবুকে-ইউটিউবে-সাউন্ডক্লাউডে। বাজছে আকাশে, বাতাসে, আমার প্রাণে...



“চিরদিন তোমার আকাশ, তোমার বাতাস,

আমার প্রাণে,

ওমা, আমার প্রাণে বাজায় বাঁশী...

সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি...”

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:৫৮

নাজিম-উদ-দৌলা বলেছেন: ভাল বলেছেন।

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:০৯

ছবিকর বলেছেন: ধন্যবাদ,
কিপ ইন টাচ...

২| ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:১৫

ছবদার ডাক্তার বলেছেন: গান বিনোদনের একটা মাধ্যম। তা ব্যান্ডের গান হোক বা রবীন্দ্র সঙ্গীত হোক। রবীন্দ্রনাথ বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে এ গান লেখেন নি। আমরা এটাকে বেছে নিয়েছি। এ গান নিয়ে গবেষণা ও ভিন্ন সুরে গাইলে সমস্যা কোথায় আমি বুঝছিলাম না! ভালো লিখেছেন।

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:৫৭

ছবিকর বলেছেন: সহমত...আমার কাছেও সেটা বোধগম্য হয়না।তাই এ লেখা... ধন্যবাদ...
কিপ ইন টাচ...

৩| ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:২৬

আলাপচারী বলেছেন: think alike

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:৫৭

ছবিকর বলেছেন: ধন্যবাদ...
কিপ ইন টাচ...

৪| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:১১

রুদ্র মানব বলেছেন: হুম

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ২:০৫

ছবিকর বলেছেন: ভাল...কিপ ইন টাচ

৫| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:২০

কসাই মনজু বলেছেন: ভালো বলেছ বন্ধু। ( গ্রুপ ৭ বলে মেট বলে তুমি বলছি,মাইন্ড করো না। )

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ২:০৬

ছবিকর বলেছেন: ধন্যবাদ...না ভাই, মাইন্ড করিনি। ভালো আছ নিশ্চয়ই...
কিপ ইন টাচ

৬| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:২২

অপরিচিত অতিথি বলেছেন: khaw band mane ki brother?

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ২:০৮

ছবিকর বলেছেন: বলেন কি ভাই? আপনি তো এখনো আইয়ামে জাহেলিয়াতে পইড়া আছেন। ক্ষ ব্যান্ডের নাম শুনেন নাই?? সার্চ দেন নেট এ...পাইয়া যাবেন।
কিপ ইন টাচ...

৭| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:৩১

ফ্রাস্ট্রেটেড বলেছেন: মনের কথাগুলি বলে দিয়েছেন অমি রহমান পিয়াল।

জাতীয় সঙ্গীত আমাদের পাচ বছরের শিশুরাও গায়, স্কুল কলেজে গাওয়া হয় অ্যাসেম্বলিতে। বাংলাদেশের সব জেলায় উচ্চারণ শুদ্ধ নয়, তারা সেই আঞ্চলিক টান নিয়েও গানটা গায়, কিন্তু জাতীয় সঙ্গীত হিসেবেই গায়, সেই গাওয়ায় এর প্রতি কোনো অশ্রদ্ধা থাকে না। ‘ক্ষ’ যেই দরদ দিয়ে গান গেয়েছে তার তুলনা মেলা ভার।

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ২:০৯

ছবিকর বলেছেন: ওটাই ত ভাই, আম গাছেই সবাই ঢিল মারে,
কেওড়া গাছে তো মারে না...
কিপ ইন টাচ...

৮| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:৫৪

ফকির মজুমদার বলেছেন: আমার কথাগুলো ছবদার ডাক্তার সাহেবের কথায় এসে গেছে। ধন্যবাদ

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩০

ছবিকর বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকেও ।কিপ ইন টাচ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.