নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শাকরানের রাফখাতা

ছবিকর

Doctor, Photo-enthusiast, Movie-buff, Music-addict, Pluviophile, Poetry-lover, Cat-Person, Nyctophile, Traveloholic

ছবিকর › বিস্তারিত পোস্টঃ

রবীন্দ্রনাথ ও আমি

০৮ ই মে, ২০১৫ রাত ১০:১৮

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে আমার পরিচয় সেই প্রথম শ্রেণীতে থাকতে ‘ছুটি’ কবিতার মাধ্যমে-

“মেঘের কোলে রোদ হেসেছে, বাদল গেছে টুটি, আজ আমাদের ছুটি ও ভাই, আজ আমাদের ছুটি ।"



শুধু আমি কেন, এদেশের অধিকাংশ ছেলে-মেয়েদের সাথেই রবীন্দ্রনাথের পরিচয় সম্ভবত এ কবিতাটির মাধ্যমে। তখনো টেক্সট বইয়ের বাইরে আউটবই সেভাবে পড়া হয়নি। পাঠ্যবইয়ের মাঝেই রবি ছিলেন সীমাবদ্ধ। এরপরে ক্লাস টু তে পেলাম, “আমাদের ছোটো নদী চলে বাঁকে বাঁকে. বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে।” ক্লাস থ্রি-তে পেলাম ‘মাঝি’, ক্লাস ফোরে সেই সুদীর্ঘ ‘বীরপুরুষ’, ক্লাস ফাইভে “বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর”।



এভাবে প্রতিটা ক্লাসেই এক একটি কবিতার মাধ্যমে রবির কাছে আসা।





বাড়ল বয়স, বয়ঃসন্ধিক্ষণ তখন। টুকটাক লেখালেখিও শুরু করেছি। আব্বা আমার লেখার প্রতি আগ্রহ দেখে বললেন, কিছু লিখতে হলে এর আগে প্রচুর পড়তে হবে, আর বাংলা লিখতে হলে তো রবীন্দ্রনাথ আবশ্যক। তখন শুরু হল বই পড়ার অভ্যাস। বাসায় আগে থেকেই তাঁর কাব্যসঙ্কলন, গীতবিতান, গীতাঞ্জলী, গল্পগুচ্ছ- এসব ছিল আব্বার সংগ্রহে। গোগ্রাসে পড়তে শুরু করলাম একটার পর একটা।





ক্লাস সেভেনে পড়ি তখন। মনে আবেগের বেগ, চোখে রঙ্গিন চশমা, দুনিয়া তখনো মজাদার। যা পড়ি, তাই ভালো লাগে। মুগ্ধ হই রবীন্দ্রনাথে। ক্লাস সেভেনে স্কলারশিপের টাকা দিয়ে নিজেই কিনে ফেললাম, রবীন্দ্রনাথের উপন্যাসসমগ্র। ধীরে ধীরে উপন্যাসের জগতে ডুবে গেলাম। একে একে ‘বৌ-ঠাকুরাণীর হাট’, 'ঘরে বাইরে', 'যোগাযোগ', 'রাজর্ষি', 'দুই বোন'- শেষ করে এসেছি। 'নৌকাডুবি' শুরু করলাম। তখনো মুভি-সিরিজের সাথে সেভাবে পরিচয় হয়নি। এজন্য উপন্যাসে ঝড়ে নৌকাডুবির পরে টুইস্টে ভালো মত ধাক্কা খেলাম জীবনের প্রথমবার। সেই ধাক্কা হজম করতে পারিনি অনেকদিন।





এরপর রবির এপিক উপন্যাস ‘গোরা’ শুরু করলাম। গোরার ব্যক্তিত্ব অনুকরণ করতে চেষ্টা করতে লাগলাম আপনাআপনি। ক্রমে ক্রমে ধরলাম ‘চোখের বালি’, প্রেমে পড়লাম বিনোদিনী’র। ‘শেষের কবিতা’য় অমিত-লাবন্যের ব্যক্তিত্বের কনফ্লিক্টে পড়ে টিনএজ মন হতবাক হয়ে গেল। প্রেমে ব্যক্তিত্বের সংঘাতের সাথে পরিচয় হল এর মাধ্যমেই। অমিতের গলায় নিজে নিজেই বলতে থাকলাম, ফ্যাশনটা হল মুখোশ আর স্টাইলটা হল মুখশ্রী ।

আমার কাছে এ উপন্যাসটি শেষ হইয়াও হয়না শেষ। সেবারের পরে আরো কয়েকবার শেষের কবিতা পড়েছি। প্রতিবারই নতুন নতুন স্বাদ পেয়েছি।





আইডিয়ালে থাকতে বাংলার বস ফজলুল হক খান স্যার, রোকনুজ্জামান রতন স্যার, শাখাওয়াত হোসেন সোহেল স্যার, ‘তত্ত্ব’এর রশীদ স্যারের পাল্লায় পড়ে রবীন্দ্রনাথকে বুঝতে শুরু করলাম। কলেজে উঠে লিজেন্ড মুখতার স্যার, প্রমীলা ম্যাডামরা তাঁকে চিনালেন নতুন করে। ‘ছুটি’ গল্পে কিশোর ফটিকের ট্র্যাজিক মৃত্যু কাঁদিয়েছে আমাকে। ‘সোনার তরী’তে ‘শূন্য নদীর তীরে রহিনু পড়ি’ পংক্তিটি পড়লেই নিজের একাকীত্ব প্রবল হয়ে উঠত। রবিঠাকুর যে মনের অজান্তেই আমার চিন্তাচেতনা গ্রাস করে ফেলেছেন, কে জানত!! তবে, এক্ষেত্রে বলতেই হয়, ব্যক্তি রবীন্দ্রনাথকে ভালোভাবে চিনলাম কিন্তু সুনীলের 'প্রথম আলো' উপন্যাস পড়ে। চিনলাম প্রতাপশালী পরিবারে বেড়ে ওঠা রোমান্টিক প্রেমিক পুরুষকে।





কলেজের শেষ দিকে মোবাইলের যুগ চলে এল। হাতে হাতে তখন mp3 গান বাজানোর মত সেট। নিজের নোকিয়ায় ভরে ফেললাম রবীন্দ্রনাথের গানগুলো। একে একে পুরনো যুগের সুবীর সেন, হেমন্ত, রেজওয়ানা বন্যা, মিতা হক, লোপামুদ্রা মিত্র থেকে শুরু করে হালের শাহানা বাজপেয়ি, বাপ্পা, আবিদ, এমনকি শিরোনামহীন পর্যন্ত শুনে ফেললাম। ধীরে ধীরে রবিগানের সাগরে ডুব দিলাম সুযোগ পেলেই। ‘পুরানো সেই দিনের কথা’ শুনে যেমন নস্টালজিক হয়ে যাই, ‘আনন্দধারা বহিছে ভুবনে’ শুনলে কেমন যেন প্রশান্তি হত মনে। তেমনি ‘তুমি কোন কাননের ফুল’ শুনে রোমান্স উঠত জেগে। ঠিক এমন এক বর্ষণমুখর দিনে ‘এসো নীপবনে ছায়াবিথী তলে এসো কর স্নান, নবধারা জলে” গানটি শুনে নিজেই লিখে ফেললাম আমার প্রথম লেখা ‘বৃষ্টিবেলা’ গল্প। এভাবে রবীন্দ্রনাথের গানগুলো মিশে গেল জীবনের সাথে।

যখন ‘আমার সোনার বাংলা’ শুনি, এখনো চোখে পানি চলে আসে, গায়ের লোম যায় দাঁড়িয়ে।

দেশপ্রেম না জেগে উপায় আছে?







শেষ করার আগে ছোট্ট একটা ঘটনা লিখে শেষ করব,

একদিন এক ব্যক্তি সাহিত্য আসর শেষে কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে বললেন,

“দাদা, আপনি কী সুন্দর লিখেন, কত সহজে সব বুঝে যাই, মজা পাই। রবিবাবু কী লিখেন, কিছুই বুঝিনা।”

জবাবে শরৎ বললেন, “আমরা লিখি সাধারণ মানুষের জন্য। আর রবীন্দ্রনাথ লিখেন আমাদের জন্য।”





রবিঠাকুর এভাবেই লিখে গেছেন আমাদের লেখকদের জন্য, ছাপ রেখে গেছেন অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর বেড়ে ওঠায়, মৃত্যুর পরেও প্রেরণা হয়ে আছেন অসংখ্য কথাশিল্পীর।

রবীন্দ্রনাথ আমার শৈশব-কৈশোরে ছিলেন, তারুণ্য-যৌবনে আছেন, বার্ধক্যেও বেঁচে থাকবেন....



শুভ জন্মদিন, গুরু..





০৮ ০৫ ১৫



ফেসবুক লিঙ্কঃ Click This Link

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই মে, ২০১৫ রাত ১০:২৪

উর্বি বলেছেন: ভালো লাগল

০৮ ই মে, ২০১৫ রাত ১০:৪৮

ছবিকর বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ০৯ ই মে, ২০১৫ দুপুর ১২:১১

মঞ্জু রানী সরকার বলেছেন: খুব সুন্দর লেখা

৩| ০৯ ই মে, ২০১৫ বিকাল ৩:০৩

অর্ণব প্রধান বলেছেন: ভাল লাগলো ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.