নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শিয়াল মামা

শিয়াল মামা › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুক্তিযোদ্ধার শেষ ইচ্ছা

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১:২৪

২২শে জুলাই ২০৭২ সাল। বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রীর অস্থির পায়চারি চলছে ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে। উল্লেখ্য যে হাসপাতালটি এশিয়ার প্রথম ৫টি উন্নত হাসপাতালের একটি। আর বাংলাদেশ! সে তো এখন উন্নত দেশের কাতারে।

প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রীর অস্থির পায়চারির মূল কারণ হল, বাংলাদেশের শেষ জীবিত মুক্তিযোদ্ধা, রমিজ মিয়া গুরুতরভাবে অসুস্থ।
রমিজ মিয়ার বয়স ১৯৭১ সালে ১৭ বছর ছিল। আর আজ তাঁর বয়স হল ১১৮ বছরের কিছু বেশী। বিগত কয়েক দশক ধরে রাষ্ট্রের একটি শীর্ষ মেডিকেল বোর্ড তাঁর স্বাস্থ্যের দেখভাল করেন। তাঁর শরীরের বেশ কয়েকটি অঙ্গ ত্রিমাত্রিক প্রিন্টার থেকে বানিয়ে নেয়াও বটে।

মুক্তিযোদ্ধা রমিজ মিয়া ১৯৭১ সালে বালক অবস্থায় শত্রু পাকিস্তানিদের বিপক্ষে সম্মুখ যুদ্ধ করেছেন। দেশ স্বাধীন করেছেন। দেশ স্বাধীনের অর্ধশতক পেরনো পর্যন্ত দেশকে দেখেছেন বিপর্যস্ত।

কিন্তু দেশ থেমে থাকেনি, দুর্বার গতি ফিরে পেয়েছে সময়মতই। সেই কবিতার মতোই।

"সাবাস বাংলাদেশ!
এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়
জ্বলে পুড়ে ছারখার
তবু মাথা নোয়াবার নয়।"

রমিজ মিয়া গতকাল থেকে কোমাতে। তাঁর শরীরের কোন কিছুই যেন ঠিকমত কাজ করছেনা। কৃত্রিম হৃৎপিণ্ড, কৃত্রিম ফুসফুস কোনটিই যেন সাড়া দিচ্ছেনা আর।

সাধারণত ৯০ বৎসর বয়স হলেই পৃথিবীর নাগরিকদের পরামর্শ দেয়া হয় যে মঙ্গল বা ইউরোপা উপগ্রহে অবসর কাটাবার জন্য। সেখানের স্বল্প মধ্যাকর্ষণযুক্ত পরিবেশ, বৃদ্ধ মানুষদের জন্য খুবই আরামদায়ক। পৃথিবীতে যার ওজন ৬০ কেজি, মঙ্গলে তাঁর ওজন সাকুল্যে ২৩ কেজি। রমিজ মিয়া বাংলাদেশে ছেড়ে যেতে রাজি হননি।

প্রধানমন্ত্রী গতকাল থেকে হাসপাতালে। তিনি বাসভবনেও ফেরত যাননি। প্রেসিডেন্ট আজ ভোর থেকেই হাসপাতালে। খুবই চাপের মধ্যে আছেন তাঁরা।

'স্যার, মেডিকেল বোর্ডের প্রধান এর কক্ষে দয়া করে আসবেন?' প্রেসিডেন্ট কে বললেন এক চৌকস সেনা কর্মকর্তা।
কক্ষে প্রধানমন্ত্রী আগেই উপস্থিত ছিলেন।

'সম্ভবত আমাদের রমিজ স্যারকে চলে যেতে দিতে হবে। তিনি হয়ত আর পারছেন না। তাঁর মন এবং শরীরের মধ্যে আর কোন সংযোগ নেই। প্রকৃতি সত্যিই চায় তাঁকে এবার ফিরিয়ে নিতে।' প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর চোখে চোখ রেখে বললেন মেডিকেল বোর্ডের প্রধান।

চেয়ারে যেন এলিয়ে পরলেন প্রধানমন্ত্রী, কি জবাব দেবেন তিনি জনগণকে?

আমি স্যারের মস্তিষ্কে ক-০০৪ করতে চাই। বললেন প্রেসিডেন্ট।

চমকে উঠলেন মেডিকেল বোর্ডের প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী।

ক-০০৪ হল মস্তিষ্কের একপ্রকার স্ক্যান, যা দিয়ে মস্তিষ্কের সমস্ত চিন্তাধারা পড়ে ফেলা যায়। আইনগতভাবে এটি শুধুমাত্র অপরাধী বা মস্তিষ্ক-বিষয়ক রোগীদের উপর প্রয়োগ করা হয়।

'কেন জানতে পারি?' বললেন মেডিকেল বোর্ডের প্রধান।

'তিনি যেহেতু কোমাতে আছেন, ক-০০৪ এর মাধ্যমের আমি তাঁর কাছে জানতে চাইব যে তিনি মৃত্যুবরণ করতে চান কিনা। তাঁর লাইফ সাপোর্ট খুলে ফেলার নির্দেশ দেবার মতো দুঃসাহস আমার নেই।' বললেন প্রেসিডেন্ট।

ক-০০৪ এর ব্যবস্থা করা হল।

রমিজ মিয়া কোমাতে স্বপ্ন দেখছেন। স্বপ্নগুলো একটি ত্রিমাত্রিক মনিটরে দেখা যাচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু!
স্বাধীন বাংলার পতাকা!
যুদ্ধ! এইতো রমিজ মিয়া পজিশন নিচ্ছে। এই-তো সে গুলি করছে।
মা! রমিজ মিয়ার মা!
আবার যুদ্ধ!
লাশ! শতশত লাশের মিছিল!
কুকুর খাচ্ছে লাশ। মানুষ কাঁদছে। মানুষ পালাচ্ছে।
যুদ্ধ!
মিছিল! বিজয় মিছিল!

মনিটর বার বার সাজেস্ট করছে সাউন্ড অন করার। সাউন্ড অন করা হল।

গগণ বিদারী স্লোগান!!
জয় বাঙলা!!!
জয় বাঙলা!!!
জয় বাঙলা!!!

মেডিকেল বোর্ডের প্রধান বার বার ক-০০৪ এর মাধ্যমে রমিজ মিয়াকে কিছু জিজ্ঞেস করতে চাইলেন। কিন্তু কোন প্রতিক্রিয়া আসল না।
প্রেসিডেন্ট একসময় সায় দিলেন লাইফ সাপোর্ট খুলে ফেলার জন্য।

ক্ষণিকের জন্য মনিটর ও সাউন্ড বন্ধ হয়ে গেল।

পরক্ষনেই মনিটর চালু না হলেও স্পিকারে রমিজ মিয়ার ভরাট কণ্ঠস্বর শোনা গেল।
"ধন্যবাদ সৃষ্টিকর্তা! আমার শেষ ইচ্ছা আমার বাংলাদেশ যেন থাকে দুধে ভাতে।"

মনিটর চিরক্ষনের জন্য নিভে গেল।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ২:৪২

শিখণ্ডী বলেছেন: ভিন্ন মাত্রার গল্প। বেশ!

২| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:২৬

ধ্রুবক আলো বলেছেন: গল্পটা সুন্দর হইছে, খুব ভালো লাগলো... তবে শেষের দিকটা আরেকটু আকর্ষনীয় করতে পারতেন!
শুভ কামনা রইলো.....
গল্পে ++

৩| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:৪০

শিখণ্ডী বলেছেন: এখানে মনে হয় চাঁদগাজীর মন্তব্য দেখেছিলাম। গেল কোথায়?

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:৫১

শিয়াল মামা বলেছেন: নোটুন করে পোসট দেয়া। আগেরটা ডিল

৪| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:৩৯

কালীদাস বলেছেন: অন্যরকম সায়েন্স ফিকশন। মন্দ না কনসেপ্টটা।
ক্যারি অন :)

৫| ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ ভোর ৬:৫৪

ওবায়দুল ইসলাম কমল বলেছেন: ক-০০৪ এ আরো কিছু দেখার সুযোগ থাকলে ভাল লাগত।

৬| ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ৭:৩৬

রিফাত হোসেন বলেছেন: ++কালীদাস বলেছেন: অন্যরকম সায়েন্স ফিকশন। মন্দ না কনসেপ্টটা।
ক্যারি অন :)

৭| ১০ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ৯:০৫

খায়রুল আহসান বলেছেন: বেশ ইন্টারেস্টিং ফিকশন!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.