নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভোরের শরীরে এখনও লেগে আছে রাত্রির দগদগে ক্ষত

শ. ম. দীদার

কার্ণিশ ভাঙ্গা জানালার ফাঁক দিয়ে রাতের আকাশের যেটুকু অংশ দেখা যায়, অইটাই আমার পৃথিবী।

শ. ম. দীদার › বিস্তারিত পোস্টঃ

তোরাব আলী সিকদার, শুক্কুরবারের নামাজ ও রবীন্দ্রনাথ

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৪

১। তোরাব আলী সিকদার, বিয়াল্লিশ। নারুলী কৃষিফার্ম, বগুড়া। জানালার শার্শি ডিঙিয়ে আশ্বিনের রোদ হোমটেক্সের বিছানার চাঁদরটা ভিজিয়ে দিল। গত ক’দিন ধরে গরমটা বেশ তেড়ে এসেছে। একেবারে লানতের মতন।
২। স্নানে যাবার আগে তোরাব আলী সিকদার লোবান জ্বালালো। স্নান সেরে আঁতর সুরমা মেখে ধবধবে শাদা পাঞ্জাবী গায়ে চড়িয়ে সোজা মসজিদে। দীর্ঘ বছর পর। শেষ কবে মসজিদে গিয়েছিলেন মনে করতে পারলেন না।
৩। ইমাম সাহেব খুতবা পাঠের পূর্বে, যথারীতি বয়ান দিচ্ছেন। থেকে থেকে সমস্ত শক্তি জড়ো করে চীৎকার দিচ্ছেন। আরবী ভাষায় কী কী সব বলেন; কখনো নাঁকি সুরে, কখনো হেঁড়ে গলায়, সব আরবী বাক্যের শেষে তিনি শুধুমাত্র বাংলা ভাষায় বলেন, জোরে বলুন- আল্লাহু আকবার অথবা জোরে বলুন- সুবহানাল্লাহ কিংবা নাউজুবিল্লাহ। আর মুসল্লিরা কোন কিছুই না বুঝে ইমাম সাহেবের হুকুম তামিল করছিলেন। শব্দের তীব্রতা কম হলে, বলে উঠেন আরো জোরে। তোরাব আলী সিকদার বেনামাজী। আল্লাহওয়ালা বান্দা না। ইমাম সাহেবের ৪৫ মিনিটের সমস্ত বক্তব্য থেকে আল্লাহ, আল্লাহ্‌র রাসূল, হযরত ইব্রাহীম আর হযরত ইসমাঈল ছাড়া আর কিছুই বুঝে নাই। কারণ উনি যা বাংলায় বলছিলেন তাও আরবী বা ফার্সি উচ্চারণে অথবা সুরেলা গলায়। তয় আরেকটা জিনিস বুঝলেন কুরবানি। তার মানে সব ধর্মেই বলি দেবার ব্যাপরটা আছে। সন্দেহ ঢুকে গেল তোরাব আলী সিকদারের মনে।
৪। এবার খুতবা পর্ব। খুতবার মাঝখানে তোরাব আলী সিকদার পাশের মুসল্লিকে জিজ্ঞেস করলেন, ভ্রাত; কোথাও কী আগুন লেগেছে? মুসল্লির কপাল কুঁচকে গেলেও তিনি প্রত্যুত্তরে বললেন, না তো ভাই! কেন? তোরাব আলী সিকদার বললেন; ইমাম সাহেব যেমনে খুতবা পড়ছেন মনে তো হচ্ছে, হয় কোথাও আগুন লেগেছে, অথবা তিনি সুনামির পুর্বাভাস পেয়েছেন। এমনও হতে পারে, ইমাম সাহেবের হাগু পেয়েছে। মুসল্লি নাখোশ হয়ে গেল।
৫। যথারীতি নামাজ শেষ। মোনাজাত বাদ খিঁচিয়ে উঠা মেজাজ নিয়ে তোরাব আলী সিকদার বাসায় চলে এলো।
৬। আশ্বিনের শেষ বিকেল। তোরাব আলী সিকদার দীর্ঘদিন ধরে বইয়ের তাকে তুলে কোরআন শরীফটা, যেটা তার চাচা অষ্টম শ্রেণিতে থাকতে উপহার দিয়েছিলেন, বের করলেন।
৭। আমি একে আরবী ভাষায় কোরআন রূপে অবতীর্ণ করেছি,যাতে তোমরা বুঝতে পার; ৪৩:৩
এমনি ভাবে আমি আপনার প্রতি আরবী ভাষায় কোরআন নাযিল করেছি,যাতে আপনি মক্কা ও তার আশ-পাশের লোকদের সতর্ক করেন...; ৪২:৭
আমি যদি একে অনারব ভাষায় কোরআন করতাম,তবে অবশ্যই তারা বলত,এর আয়াতসমূহ পরিস্কার ভাষায় বিবৃত হয়নি কেন? কী আশ্চর্য যে, কিতাব অনারব ভাষায় আর রসূল আরবী ভাষী! ...; ৪১:৪৪
তোরাব আলী সিকদার বুঝলেন ওয়াজ নছিহত মাতৃভাষায় হওয়া জরুরী; কারণ নবী ছিলেন আরবীয় আর তাঁর দেশের লোকসকলও আরবী ভাষাভাষি আর দ্বীনের প্রচারের জন্য মাতৃ ভাষার প্রয়োজন ছিল। যদি নবীজি মিয়ানমারে আসতেন, তাহলে কোরআনের ভাষা হত বার্মিজ। যে জাতির নিকটই নবী প্রেরণ করা হয়েছে,তাদের সকলকেই মাতৃভাষায় প্রেরণ করা হয়েছে।
৮। তোমরা কুরআনকে তারতীলের সাথে অর্থাৎ ধীর স্থীরভাবে তিলাওয়াত কর/ অথবা তদপেক্ষা বেশী এবং কোরআন আবৃত্তি করুন সুবিন্যস্ত ভাবে ও স্পষ্টভাবে...৭৩:৪
৯। কোরআন অধ্যয়ন পর্ব শেষ করে ইমন চক্রবর্তী ল্যাপটপে গাইতে শুরু করলেন-

‘মোহমেঘে তোমারে দেখিতে দেয় না।
অন্ধ করে রাখে, তোমারে দেখিতে দেয় না।
... ... ... ...
তুমি আপনি না এলে কে পারে হৃদয়ে রাখিতে।
আর-কারো পানে চাহিব না আর, করিব হে আমি প্রাণপণ–
ওহে তুমি যদি বলো এখনি করিব বিষয় -বাসনা বিসর্জন।
দিব শ্রীচরণে বিষয়– দিব অকাতরে বিষয়–
দিব তোমার লাগি বিষয় -বাসনা বিসর্জন।

হঠাৎ কলেজের এক স্যারের কথা মনে পড়ে গেল তোরাব আলী সিকদারের। যে নিজেকে নাস্তিক বলেই দাবী করতেন, কিন্তু রবীন্দ্রনাথের এই গানটা তাকে প্রায়ই ভাবিয়ে তুলত এবং বিড়বিড় করে রবীন্দ্রনাথের চরণতলে নিজেরে সঁপে দিতেন।

আশ্বিনের সন্ধ্যা। কালো হয়ে আসছে আকাশ। দুনিয়ার সব বৃষ্টি বুঝি আজকেই ঝরে পড়বে। তোরাব আলী সিকদারের মনে হল, যারা নিজেদের নাস্তিক হিশেবে দাবী করে তাঁরা বেশিরভাগই সংশয়বাদী। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথও সংশয়ের মধ্যে হাবুডুবু খাইছেন।

১০। কিছুদিন পরেই কোজাগরী পূর্ণিমা। এমনি এক গৃহত্যাগী জোছনায় অশোকদা’ প্রাণ বলি নিতে নিতেই বের হয়া পড়লেন। তোরাব আলী সিকদার গৃহত্যাগ করবেন না। গডো’র জন্য অপেক্ষা করবেন।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:৩৪

সাদী ফেরদৌস বলেছেন: বেশ ভালো লিখেছেন , একটা কথা , রবীন্দ্রনাথ কিন্তু নাস্তিক ছিলেন না ।

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:২৯

শ. ম. দীদার বলেছেন: ভাই, আমি কিন্তু বলিনি যে, রবীন্দ্রনাথ ঈশ্বরে বিশ্বাসী ছিলেন না, এমন কী তিনি তাঁর সময়ে একেশ্বরবাদ বিশ্বাসে বিশ্বাসীদের মধ্যে সব থেকে অগ্রগামী ছিলেন। আমি শুধু বলতে চেয়েছিলাম, তাঁর মতন একজন ঋষিপুরুষ ও কখনো কখনো সন্দিহান হয়ে পড়েছিলেন। সন্দিগ্ধ ছিলেন। অনেকে তাঁর বিত্ত-বৈভব নিয়ে কথা বলেন। কিন্তু একজন মানুষ কতোটা তীব্র কাতর হয়ে উঠতে পারলে, কতোটা মানবিক বোধে আক্রান্ত হলে এমন অত্মসমর্পণ করতে পারেন-

আর-কারো পানে চাহিব না আর, করিব হে আমি প্রাণপণ–
ওহে তুমি যদি বলো এখনি করিব বিষয় -বাসনা বিসর্জন।
(দিব শ্রীচরণে বিষয়– দিব অকাতরে বিষয়–
দিব তোমার লাগি বিষয় -বাসনা বিসর্জন।)

আবার দেখেন এই কথাও লিখলেন-
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না।
কেন মেঘ আসে হৃদয়-আকাশে, তোমারে দেখিতে দেয় না।
( মোহমেঘে তোমারে দেখিতে দেয় না।
অন্ধ করে রাখে, তোমারে দেখিতে দেয় না। )
ক্ষণিক আলোকে আঁখির পলকে তোমায় যবে পাই দেখিতে
ওহে ‘হারাই হারাই’ সদা ভয় হয়, হারাইয়া ফেলি চকিতে।

আমার আসলে মূল বক্তব্য ছিল- খুতবা মাতৃভাষায় হওয়াটা জরুরী কী না।
যাইহোক, সকৃতজ্ঞ ধন্যবাদ অবশ্যই দেওয়া উচিত, আপনার মূল্যবান মতামতের জন্য।

২| ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৪১

শায়মা বলেছেন: ওয়েটিং ফর গডো!!!!!!! :)


না বুঝে কোনো কিছুতেই লাভ নেই।:(

যেমন আমি কঠিন লেখা অল্প অল্প বুঝি তবুও পড়ি। ঠিক তেমনি না বুঝে কোরান পড়ি বা ইমাম সাহেবের কথা শুনি পড়েছি সেটাই মনের সান্তনা!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.