নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভোরের শরীরে এখনও লেগে আছে রাত্রির দগদগে ক্ষত

শ. ম. দীদার

কার্ণিশ ভাঙ্গা জানালার ফাঁক দিয়ে রাতের আকাশের যেটুকু অংশ দেখা যায়, অইটাই আমার পৃথিবী।

শ. ম. দীদার › বিস্তারিত পোস্টঃ

ষাটোর্ধদের তরফ থেকে কুড়িটি মূল্যবান নছিহত; ১১ নম্বরটাই আসল

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:৪৯

অভিজ্ঞতার আলাদা একটা মূল্য সবসময় থাকে, সবখানে, সবার কাছে।
আচ্ছা, আপনার কোমর বয়েসি ছোকরারা যদি আপনার হাঁটু জড়ায়ে ধরে বলে, আমারে আদেশ দেন-গুরু; তো কী ধরণের নছিহত আপনি তাদের দিবেন?
সম্প্রতি, এমনই একটা প্রশ্ন ষাট বছরেরও অধিক অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের কাছে করা হয়েছিল। প্রশ্নটা খুব শাদামাটা। কিন্তু উত্তরগুলো আপনাকে চোখের ভেতরের মণির ভেতরের মণি দ্যাখতে সাহায্য করবে। নাভির দিকে তাকালে নাড়ি-ভূঁড়ির ভেতরে যে সুড়ঙ্গ, তার ভেতরের কোমল বর্জ্য দ্যাখতে পাবেন।
সময় গ্যালে সাধন হবে না, মমিন। সুতরাং গুরুজনদের এইসব পরামর্শগুলো শুনুন। সাঁঝন হবার আগেই বাত্তি জ্বালান। কাজে দিবে।
১। লোকে সদা বলে, নিশ্চিতভাবে এমন চাকরি করবেন, যা করতে আপনি ভালোবাসেন। কিন্তু এটা সত্যি একটা প্রলাপ বকমবাজি ছাড়া আর কিচ্ছু না! সঠিক কামলাগিরি হচ্ছে সেটা, যেটা করতে আপনার কিছুদিন ভালোলাগে, কোনরূপ আপত্তি ছাড়া বেশিদিন চালিয়ে নিতে পারেন আর মাস শেষে বাড়িভাড়া, গ্যাস-বিদ্যুৎ আর ইন্টারনেটের বিলটা কাপ-ঝাপ শুরু হবার আগেই চুকিয়ে দিতে পারেন। দুনিয়াতে কোন চাকরিটা আছে যেটা প্রতিদিন করতে আপনার ভালোলাগে?
২। চোখের পলকেই দ্যাখবেন বেলা ডুবো ডুবো। সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই দ্যাখবেন গালে বলিরেখা। চামড়া কুঁচকানো। জুলপিতে পাঁক। সুতরাং, তরুণ বয়সে কাপল বেডের আয়োজন মোটেও শোভন নই। যতক্ষণ পারেন, বাঁচতে হবে। মানে বেঁচে থাকা। যেখানে পারেন, যান। টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া। মিশর থেকে আলেকজান্দ্রিয়া। আপনার সামর্থ থাকুক। না থাকুক। তল্পি-তল্পা গোছান আর দৌড় মারেন যেখানে যাবার মতন সামর্থ আছে। অন্ততঃ কলমাকান্দা’র গারো পাহাড়! আপনারে ছনু-পাউডার, আলতা-চিরুণির অনুরোধ করার মতন যদি কেউ না থাকে, খবরদার কোন ছ্যাতা-ন্যাতা কিনবেন না। কিচ্ছু কিনবেন না। পাখিদের উড়াউড়ি। পিঁপড়েদের সংসার। ঝরা পাতাদের শব্দ। পাহাড়ের কোমলতা দ্যাখুন। দুনিয়াটা দ্যাখুন। পরে সময় পাবেন না। কোন এক ফকফইক্কা চান্নি রাইতে বাইর অইয়া পড়লেই হয়!
৩। জীবনকে এতো গুরুত্ব দেওনের কাম নাই। এতো সিরিয়াসলি নেওনের মতন এটা এমন কিছু না। আপনি না পরিকল্পনাকারি, না বাস্তবায়নকারি। আপনি মহাপরিকল্পনার খুব ক্ষুদ্র অংশ মাত্র। এমনকী যখন দ্যাখছেন হাতভর্তি শুণ্যতা আর চারিদিকে হাজার বছরের অরব অন্ধকার, তখনো এটা ভেবে হাসুন, যে, জীবন কতটা হাস্যকর!
৪। মাঝ রাতে একজনরে ফোন দিয়া কইলেন, দোস্ত খুব সমস্যায় আছি। একটু আসবি? আসার সময় তোর সিগারেটের প্যাকেটটা নিয়া আসিস। সে দৌড়ায়া দৌড়ায়া চলে আসলে। জিজ্ঞেস করলে- কী অইছে। সিগারেট খাইতে ইচ্ছা করছিল। আমার শেষ। তাই! সে হাইসা কইল- মাদা**ত! সে আসলেই বন্ধু। বাকি সব পরিচিতজন মাত্র।
৫। আপনার জীবনের সবচে’ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি তাঁরা, যারা তাঁদের জীবন আপনার সাথে ভাগাভাগি করার জন্য একমত। তাঁদের বিশ্বাস ভাঙবেন না।
৬। চোখের সামনেই আপনার সন্তান থির থির করে বড় হয়ে যাচ্ছে। যতদূর পারেন তাদের বেশি করে সময় দিন।
৭। জগতে এমন কাউরেই আপনি পাবেন না, যে মরার সময় বলেছে, জীবনে অনেক কাজ করলাম! সুতরাং, পরিশ্রম করুন। কিন্তু পরিবার, বন্ধু-বান্ধব এমনকী নিজের জন্যও অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কাজকে ভাগ করবেন না।
৮। আপনার জীবন হয়তো খুব দীর্ঘ অথবা খুব সংক্ষিপ্ত হবে। কে জানে? জীবনের ব্যপ্তি যাই হোক, বিশ্বাস করেন, যৌবনকাল হচ্ছে জীবনের সবচে’ গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই সময়ই জামার আস্তিনে লুকানো থাকে প্রেম, শার্টের বোতামে আটকানো বুকের মধ্যে থাকে সুগভীর কোমলতা। এই সময়টাকে ভালোবাসুন।
৯। যদি খুব আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন, শুধুমাত্র এই মুহুর্তটার কথায়ই ভাবুন। শুধুমাত্র এই মুহুর্তের সৌন্দর্যকে উপভোগ করুন। এই মুহুর্তে সান্ত্বনা দিচ্ছে সেই বিষয়টার স্বাদ আস্বাদন করুন। একটা গভীর নিঃশ্বাস নিন। আর বলুন- শান্তি।
১০। বাইপাস সার্জারি করা, ডায়াবেটিক রোগীর মতই খাওয়া-দাওয়া করুন। ব্যায়াম করুন। যাতে আপনি ও দুটো’র কোনটাই না হন।
১১। ওয়ান টাইম। সবই পাইবেন, এই দুনিয়াডা দ্বিতীয়বার পাবেন না। চুপ কইরা ঘুমান। জাগনর কাম নাই। এইডা চিন্তাও করার দরকার নাই যে, আপনি ষাটোর্ধ্ব আর যা করার স্বপ্ন আপনি দ্যাখতেন তা করতে পারলেন না! আফসোস করা যাবে না!
১২। এখন যেটা বলতে চাইছি, আপনার কাছে খুব হাস্যকর মনে হবে। কিন্তু এটা অন্যান্যগুলোর মতই অতীব গুরুত্বপূর্ণ। আর সেটা হচ্ছে, নিয়মিত ফ্লস করবেন। দাঁতের যত্ন নিন। দাঁতের ব্যাথা খুব ছ্যাঁচ্চোড় কিছিমের।
১৩। এইযে, এতক্ষণ ধরে যা বললাম এগুলো উপনিষদও না, গসপেলও না। অন্যের পরামর্শকে বেদবাক্য ভাব্বার কোন কারণ নেই। হ্যাঁ, গুরুজনদের কাছে পরামর্শ চাইতে পারেন। আপনার অবস্থা আপনিই ভালো জানেন। সিদ্ধান্তটাও আপনিই ভালো নিবেন। মূলতঃ আপনার প্রতি আমাদের পরামর্শ হচ্ছে আপনার নিজের পরামর্শটাই নিজে গ্রহণ করবেন।
১৪। চেয়ার-টেবিল-সোফাসেট-আলমারি-আয়না-কাপড়-চোপড় এগুলো নিতান্তই বস্তুবিশেষ। এইসব বস্তুগত বিষয়াদির উপর নিমজ্জিত না থেকে সময় এবং অভিজ্ঞতার উপর মগ্ন থাকুন। সময় সবচে’ মূল্যবান বিষয়।
১৫। চোখের সকেট, পায়ের গিঁট, হাতের কব্জি, যে সমস্ত অস্থিসন্ধির খাঁজগুলি আজকে আপনি ভাঙলেন, বিশ্বাস রাখুন কালকেই তারা আপনার উপর প্রতিশোধ নিবে। আপনি যদি এটা ভেবেও থাকেন, না, ঔষধ-পথ্য, বৈদ্য-কবরেজ সব ঠিকঠাক করে দিয়ে গেছেন!
১৬। বলি কী, ছোট ছোট বিষয়গুলির প্রতি আপনার মুগ্ধতা থাকুক। হাতের কাছের খুব ছোট্ট বিষয়েরও প্রশংসা করুন। দুঃখিত, বোঝাতে পারি নাই! এই ধরেন, আজকালকার বিকৃতবুদ্ধির ছোকরাগুলা মটরবাইকের জন্য জনকের বুকে ছোরা বসায়া দেয়! যেটা না হলেও চলে সেটা এদের এখনই চাই। কিন্তু জীবনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মুহুর্তগুলিকে উপভোগ করতে জানে না! এই অদ্ভূত সুন্দর মাথা নষ্ট করা দুনিয়াটাতে আমরা কেউই চিরদিন থাকবো না। সুতরাং এখানে প্রতিটা মুহুর্তই গুরুত্বপূর্ণ। কাজের মধ্যেই ডুবে থাকুন, এর মধ্যেই আনন্দ খুঁজুন। কাউকে মেসেজ পাঠানোর চে’ ফোনটা হাতে নেন আর যে কাউকেই কল দেন। মা কে ফোন দেন। কোন জরুরি বিষয় ছাড়াই, কোন কারণ ছাড়াই কথা বলুন। ভাল্লাগবে।
১৭। ভুলেও কর্জের মধ্যে থাকবে না। পানি, বিদ্যুৎ, ঘর ভাড়া, লোন যাই হোক শোধ করে দেন। কী জানি কালকেই হয়তো ইস্তফা দিয়ে দিতে পারেন! আপনাকে ও!
১৮। ঈর্ষা, সন্দেহ, পরশ্রীকাতরতা সম্পর্ক বিনষ্ট করে। বিশ্বাস করুন। বিশ্বাস রাখুন। আপনি যদি বিশ্বাস না করেন, আপনাকে কে করবে?
১৯। খুব বড় কিছু করার বা হবার স্বপ্ন দ্যাখেন? অসম্ভব মনে হয়? তবুও চেষ্টা করুন। এই সময়ই। যখন আপনার বয়স বাড়বে অথবা অন্যের প্রতি দায়িত্ব বেড়ে যাবে, তখন সেটা আরো বেশি অসম্ভব হয়ে পড়বে।
২০। প্রথমবার কারো সাথে দেখা হল? থামুন। অনুধাবন করুন যে আপনি আসলেই এই ব্যক্তি সম্পর্কে কিছুই জানেন না। আমরা সাধারণত দেখি লিঙ্গ, বর্ণ, ধর্ম, বয়স। এসবই ভুলে যান। আপনি কিছুই জানেন না। এইসব পক্ষপাত সুলভ ধারণা আমরা যেগুলো ছোটবেলা থেকেই চর্চা করে আসছি, এগুলোর ছাঁচে ফেলে একজন ব্যক্তিকে কোন একটা শ্রেণি কাঠামোতে সংজ্ঞায়িত করার ফলে আপনি আপনার জীবন যেমন সীমাবদ্ধ করছেন তেমনি অন্যকেও খুব ক্ষুদ্র করে ফেলছেন।

মূল লিখাটাঃ Click This Link

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:০৭

মোটা ফ্রেমের চশমা বলেছেন: দারুন কিছু কথা। লেখার ভঙ্গি ভালো লেগেছে।

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:১১

শ. ম. দীদার বলেছেন: ভালোলাগার জন্য ধন্যবাদ। কথাগুলো ভালো লেগেছিল। মূল বিষয় ঠিক রেখে নিজের মত করে অনুবাদ করলাম।
ভালো থাকবেন।

২| ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:১৫

মোটা ফ্রেমের চশমা বলেছেন: আসলে আমি বলতে চেয়েছিলাম যে আপনার অনুবাদের ধরনটা ভালো লেগেছে। প্রাঞ্জল ভাষায় মূল্যবান কথা গুলো লিখতে পেরেছেন।

শুভকামনা রইল।

৩| ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:১৮

প্রামানিক বলেছেন: কথাগুলো সুন্দর।

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:২৭

শ. ম. দীদার বলেছেন: ধন্যবাদ।

৪| ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:২৭

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ভালো লাগলো। আমি ষাটোর্ধ বিধায় উপদেশগুলোর মর্মার্থ নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে বুঝতে পারছি।

ধন্যবাদ শ, ম, দীদার।

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:৩৫

শ. ম. দীদার বলেছেন: অভিজ্ঞতার আলাদা একটা মূল্য সবসময় থাকে, সবখানে, সবার কাছে।
আপনাদের অভিজ্ঞতায়ই আমাদের পরিণত করে। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ হয়তো কমই করি।
ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য। অনেক ভালো থাকুন, অনেক।

৫| ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০৩

আজিব দুনিয়ার মানুষ। বলেছেন: লেখককে ধন্যবাদ সুন্দর একটি পোস্ট দেয়ার জন্য।

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১৪

শ. ম. দীদার বলেছেন: সুন্দর মন্তব্যের জন্য কৃতজ্ঞতা। ভালো থাকুন।

৬| ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:৩৬

শাকিল মান্নান বলেছেন: এত মাতো কিতা?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.