নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

brotoweb.wordpress.com/

ব্রতশুদ্ধ

ব্রতশুদ্ধ › বিস্তারিত পোস্টঃ

"ওড টু জয়"

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৬ রাত ৯:১২

টিকটক, টিকটক, টক টক
বিরামহীন ভাবে বেজে চলা শব্দটাই কেবল আমার কানে ভেসে আসছে এই মূহুর্তে। ওটা নিশ্চিত বাইরের একলা দাঁড়িয়ে থাকা সেগুন গাছটার বুকে আপন মনে গর্ত খুঁড়ে চলা কোন এক কাঠঠোকরার সৃষ্ট আওয়াজ। গত রাতে যখন ঘরে ঢুকেছিলাম তখন আকাশে কোন মেঘের গর্জন ছিলোনা। এখনো নেই। গরমের উত্তাপ প্রমান করছে বৃষ্টি আসন্ন হলেও খুব শীঘ্র তার অনুভুতি পাওয়া হচ্ছে না আমার।
হ্যাঁ আমার, আমি কেবল আমারটা নিয়েই চিন্তিত তবে অন্যদেরটা নিয়েও আমি ভাবি। সেই ভাবনা যেমন মাঝে মধ্যে দেয় প্রশান্তি আবার মাঝে মধ্যে বুকের ভেতরের পাজরে ভূ-কম্পন সৃষ্টি করে চলে নির্বাক পরশ্রীকাতরতা।

টকটক।। টকটক।।

-কে???
- বারুদ।
-মানে যেটা এখন আর জ্বলে না??
- হাহাহা, দরজাটা তো খুলবি নাকি???
-একটু অপেক্ষা কর।
-ওকে মাই লর্ড।

ব্যাটার নাম শতদ্রু। কোন এক আন্দোলনে নিজেকে যোগ্য বলে প্রমান করবার পর ওর দলের লোকজন নাম দিয়েছিলো বারুদ। আর আমি ওকে এমনিতে সফোক্লিস বলে ডাকি।
দরজাটা খুলতে একটু সময় লাগল। দরজাটা খোলার পর আমার ডান হাতটা ধরে সফোক্লিস নিয়ে গেল ডায়নিং টেবিলটার ওখানে। একটা মৃদু বেলি ফুলের সুগন্ধ আসছিলো নাকে। মেয়েলি পারফিউমের গন্ধ।
-সফো??
-হোয়াট মাই লর্ড?
- একটা বেলী ফুলের গন্ধ পাচ্ছি???
-বৎস আমি যে একা নই।
-ওহ। দেন?
-মিট মাই নিউ ফ্রেন্ড লোলা।
- হাই লোলা।
লোলা, কথা বলতে পারে না । তবে কানে শোনে। গলার স্বরটা খানিকটা নামিয়ে বলল সফোক্লিস।
চেয়ারটা টানার শব্দটা পেলাম। ওতে সফো বসেছে। তাও বুঝতে পারলাম। তারপর খানিকক্ষনের জন্য নিশ্চুপ থেকে সফো জিজ্ঞেস করলো
- আচ্ছা টম, বেলিফুলের গন্ধটা কেমন??
- ভাল।
- বেলি ফুলের গন্ধটা কি তোকে উদ্বেলিত করে??
-জানি না।
- আচ্ছা এই ঘরে একটা নারীর উপস্থিতি কি তোকে নারভাস করছে??

চাপা একটা হাঁসি দিলাম। যেন আমি সত্যিই নার্ভাস।
(আবার খানিকটা নীরব থেকে।)
-আচ্ছা টম।
- কি?
- এই মেয়েটা যদি নির্বাক না হয়ে সবাক হত তাহলে কি তুই আরো বেশি নার্ভাস হোতি?

সফো?? ইজ দ্যার এনিথিং রং ???
- নাথিং জাস্ট আস্কিং।
(আবার কিছুক্ষণ চুপ থেকে)

- আচ্ছা টম??
- কি রে বাবা???
-আচ্ছা তুই কি বেলি ফুলের গন্ধটা এখনও পাচ্ছিস??
- পাচ্ছি।। তবে গন্ধের তীব্রতা একটু কমেছে আগের থেকে।
- হুম।। স্বাভাবিক ব্যাপার।
-হুম।
চা খাবি??? (আমি জিজ্ঞেস করলাম সফোক্লিসকে)

-খাওয়া যায়। তবে তাতে বেশি পরিমাণে চিনি দিবি।
- ওকে। আর মিস লোলার টায়???
- লোলা চা, কফি খায় না। তাতে নাকি ত্বক কালো হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে।

মিনিট দশেক বাদে দুকাপ চা এনে রাখলাম ডায়নিং টেবিলটায়।

একবার কাপে চুমুকের শব্দ শুনতে পেলাম।
-ওয়ান্ডারফুল।
-ধন্যবাদ (বললাম আমি)
-আচ্ছা টম??
- বল।
- মানুষের সংজ্ঞা কি??
- যার মান আর হুশ আছে??
- ধ্যাত। তুইও স্টেরিওটাইপ সংজ্ঞাটায় আটকে গেলি?? ওকে ফরগেট ইট। লোলার কিছু কাজ আছে ওকে সাহায্য করতে হবে আমার। রাতে আসছি। তোর বাসায় থাকতে হবে। ভাড়াটিয়া ভাড়ার জন্য হন্যি হয়ে খুঁজছে।
- উফ। তোর পুরনো স্বভাবটা আর গেলো না।

কথা না বাড়িয়ে সফোক্লিস আর লোলা বিদায় নিল।

দুপুরের খাবারটা সেরে নেবার পর একটু বিশ্রাম করছিলাম। আবার কাঠঠোকরাটার আওয়াজটা শুনতে পেলাম। ব্যাটা মনে হয় আজ সেগুন গাছটার বুকটায় একটা টানেল বানানোর চিন্তা করছে।

হঠাত একটু ঠান্ডা হাওয়া অনুভূত হল। ঝম ঝম বৃষ্টি নেমে এল। জানালার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। দু-একটা ফোঁটা আমাতেও ঝরলো।

লোলা কথা বলে না। কিন্তু লোলার গায়ে বেলি ফুলের পারফিউমটা এখনও আমার নাকে লেগে আছে। বেলি ফুলের গন্ধ আর বৃষ্টির ফোঁটা একটা অদ্ভুত রোমান্টিক পরিবেশের সৃষ্টি করেছিল। খানিকটা ফিলসফিক্যালও করে তুলেছিল আমায় পরিবেশটা।
আমি দৃষ্টিহীন গত পাঁচ বছর ধরে। হয়তো লোলা তার চেয়েও বেশি সময় ধরে নির্বাক। হয়তো লোলা কোনদিন কথাই বলেনি। হয়তো পৃথিবী দৃষ্টি দিয়ে আমার মনটাকে কলুষিত করতে চায় নি। হয়তো লোলার ক্ষেত্রেও তাই। জীবন মানে কি শুধুই কিছু কথা বলা?? শুধুই কিছু রঙকে দেখা?? আমার আত্মবিশ্বাস আছে , আমি জানি দৃষ্টিহীন এই আমি একটা ধারালো যন্ত্রণা পুরে দিতে পারি কুচক্রিদের অন্তরমহলে। আমার আত্মবিশ্বাস আছে, আমি আশা জাগানিয়া কথা বলে বাঁচতে শেখাতে পারি হাজারো স্তিমিত ধমনীর যুব-যুবতীদের।

যদিও আমি সন্দিহান লোলা আদৌ আমার ঘরে এসেছিল কি না। ওটা সফোর নেহাৎই মশকরা হতে পারে কিংবা কোন পাগলামো। তবে আমি জানি সফো অনেক ভাল মনের মানুষ। হয়তোবা লোলা সফোক্লিস এর সেই দিক , যা নির্বাক হয়ে পড়ে আছে আছে দীর্ঘদিন। হয়তো সফোক্লিস নিজেই সেই বেলি ফুলের পারফিউম নিজের গায়ে মেখে বোঝাতে চেয়েছে তার সেই নির্বাক দিকটার সুন্দর দিকটাকে।
সফো এমনই। ও এমন প্রায়শই করে থাকে।
বৃষ্টিটা থেমে গেল। হয়তো মিনিট ৫ একের ভেতর কাঠঠোকরা টা আবার সেগুনের বুকে টানেল নির্মানে ব্যস্ত হয়ে যাবে। আমিও বিথোভেন এর 'ওড টু জয়' শুনবো বলে মনঃস্থির করলাম।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.