নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

https://www.facebook.com/shusmitashyamaofficial

স্বাগতম

সুস্মিতা শ্যামা

লেখাটা আমার প‌্যাশন। তবুও লিখি খুব কম। তখনই লিখি যখন আর না লিখে কোন উপায় থাকে না। মাথাটা যখন ভার হয়ে যায়, চিন্তাগুলো প্রসববেদনার মত কষ্ট দেয়, তখন লিখতে বসি। লিখে কিছু পরিবর্তন করার আশা করি না। নিজের ভাবনাগুলো নিজের কাছে আর একটু ভাল করে প্রকাশ করার জন্য লিখি। আমারর চরিত্রগুলোর আনন্দ-বেদনা আর বদলের সঙ্গী হবার জন্য লিখি।\nআমার সবচাইতে বড় পরিচয়- আমি সিরিয়াস পাঠক। আপাতদৃষ্টিতে অসামাজিক। নিজেকে মাঝে মাঝে ভীষণ বিরক্তিকর বলে মনে হয়; ঠিক তখনই মনে পড়ে, ঈশ্বর/আল্লাহ/সৃষ্টিকর্তা বড় ভালবেসে আমায় তৈরি করেছেন। তিনি আমার হাজার খামতি সত্ত্বেও আমাকে সঙ্গ দিয়ে চলেছেন। একথাটা ভাবলে নিজেকে বা অন্যকে ভালবাসতে বা ক্ষমা করতে আর অসুবিধা হয় না। \nআমার ফেসবুক ঠিকানা: https://www.facebook.com/shusmitashyamaofficial

সুস্মিতা শ্যামা › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমি কিংবদন্তীর কথা বলছি

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:৪৩

গীতায় এক জায়গায় শ্রীকৃষ্ণ বলেছিলেন, "যে দু:খে অধীর হয় না, আনন্দে আপ্লুত হয় না, কষ্টে ভেঙ্গে পড়ে না- সেই হল স্থিতধী।" বেশিরভাগ মানুষই উপন্যাসে স্থিতধী মানুষের গল্প পড়েন, বিখ্যাত লোকের জীবনীগ্রন্থে তাদের বর্ণনা পড়েন। কিন্তু আমি স্থিতধী মানুষ নিজের চোখে দেখেছি। তার ছায়ায় বড় হয়েছি।
ফেইসবুকে আমার কোন একটা প্রোফাইল পিকচারে একবার বহু মানুষ কমেন্ট করতে শুরু করেছিল। হঠাৎই এক অপরিচিত প্রশ্ন করে বসলেন, " আজিজ চেয়ারম্যান আপনার কে হয়?"
অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন সন্দেহ নেই। কিন্তু উত্তরটা আমার জন্য বড় গর্বের, বড় আনন্দের। আব্দুল আজিজ আমার নানা।
একবার আমি উঠোনে দাঁড়িয়ে আছি। নানা তখন কলতলা থেকে গোসল সেরে এক হাতে লাঠি নিয়ে গটগট করে হেঁটে তার ঘরের দিকে যাচ্ছেন। হঠাৎই থমকে দাড়িয়ে পড়লেন এক ভিখারিণীকে দেখে। সেই ক্ষীণকায়া ভিখারিণী মহিলা উঠোনে দাঁড়িয়ে আমার খালামণির জন্য অপেক্ষা করছেন। কারণ খালা তার জন্য খাবারের ব্যবস্থা করছেন।
নানা বললেন, "এই শরীর নিয়ে রোদে রোদে ঘুরছ! বসতে পারছ না কোথাও? নাও, লাঠিটা ধর! "
নিজের লাঠিটা ভিখারিণীর হাতে দিয়ে নির্বিকারচিত্তে দোতলায় উঠে গেলেন।
খুবই ছোট্ট ঘটনা। কিন্তু আমার চোখে একটা বিরাট দৃষ্টান্ত হয়ে থাকল। পরিবারের গণ্ডি ছাপিয়ে কীভাবে এবং কী কারণে এই লোকটি গোটা এলাকার নেতা হয়ে উঠেছিলেন সেটা ওই মুহুর্তে আমার কাছে স্পষ্ট হয়ে গেল।
তার মধ্যে আমি কখনো কোন পক্ষপাতিত্ব দেখি নি। অসংখ্য গরীব আর অসহায় মানুষের ভরসার আশ্রয়স্থল ছিলেন তিনি। নিজের সন্তানের মৃত্যুর মুহুর্তেও নিজের যন্ত্রণাকে গোপন করে আমাদের সবাইকে সান্ত্বনা দিয়েছেন। দিনশেষে একা নিজের ঘরে কেঁদেছিলেন। তাকে কেউ কোনদিন দু:খে ভেঙ্গে পড়তে দেখে নি।

আমার খালামণি আর মামাদের আচরণ দেখে তাদের মাঝে মাঝে ভিন্ন গ্রহের প্রাণী বলে মনে হয়। অত্যন্ত বেশি ভদ্র, বেশিমাত্রায় সমাজসেবী। অনেকের চোখে আমার নানাজানের এই সন্তানগুলো বোকা-এরা নিজের ভাল বোঝে না। এরা ভিক্ষুককে হাত ধরে বসায়, বাবা চাচা বলে ডাকে। কোন অভুক্ত মানুষকে চোখের সামনে দেখে নিজের মুখে খাবার তুলতে পারে না।
কথা সত্যি। এরা বেশ অস্বাভাবিক।
একটা ঘটনা বলি।'৯৬-৯৭ সালের দিকে আমাদের রামপুরা এলাকায় চোরের উপদ্রব বেড়ে গেছে। আমাদের পুরো বিল্ডিং অতিষ্ঠ। কারো সার্টিফিকেট খোয়া গেছে। কারো জামাকাপড়, কারোর টাকা,গয়না। সবাই ওত পেতে আছে। অত:পর এক শেষ রাতে চোর বাবাজী ধরা পড়লেন। আমরা সবাই পড়িমরি চোর দেখতে ছুটলাম।
গিয়ে দেখি, অলরেডি মাইর শুরু হয়ে গেছে। আরো অনেকে সিরিয়ালে আছেন এবং কিউতে দাঁড়িয়েই দাঁড়িয়েই মুখের এক্সারসাইজ করে নিচ্ছেন। কেউ পায়ের স্যান্ডেল খুলে, কেউ হাতে, কেউ ঝাঁটা নিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অনেকে আবার ওর গায়ের গোপন তাবিজ খুঁজে দেখতে ব্যস্ত। তাবিজের কারণে নাকি মাইর গায়ে লাগে না। অনির্বচনীয় সব গালাগালির সাউন্ড ইফেক্ট তো আছেই।
ঠিক সেই সময়, আমার নানাজানের অষ্টম সন্তান, আমার টুটুল খালামণি ভীড়ের মধ্যে উঁকি দিয়ে বললেন , "আচ্ছা, ভাইয়া, আমাদের বাসায়ও কি আপনিই চুরি করেছিলেন?" উপস্থিত জনতা এক মুহুর্তের জন্য হতভম্ব হয়ে গেল। আমাদের বাড়িওয়ালা ভদ্রলোক হো হো করে হেসে উঠলেন।
এর পর থেকে খালার সাথে দেখা হলেই উনি এই লাইনটা বলে উঠতেন, "আপনি আমাদের বাসায় চুরি করেছিলেন?, টুটুল, চোরকে কেউ আপনি বলতে পারে এটা আমার মাথাতেও আসে না। আমার জীবনে শোনা সেরা জোক!"
ইয়েস, এরা চোরকেও আপনি বলে। এলাকার নেতৃত্ব দেয়। এই সব সন্তান সন্ততি আর নাতি নাতনীদের মধ্যে কেউ আজ জাজ, কেউ রাজনৈতিক নেতা, কেউ বা নিছকই ভবঘুরে টাইপ সমাজসেবী, কেউ প্রবাসী। কিন্তু এরা প্রত্যেকে গুরুজনকে সম্মান করে- সেই গুরুজন সমাজের যে শ্রেনীরই হন না কেন। কেন করে? কারণ এরা আজিজ ডাইনেস্টির অন্তর্ভুক্ত। আমার খালুরা বলেন, তাদের বুকটা নাকি গর্বে ভরে যায় আজিজ চেয়ারম্যানের জামাই হিসেবে এলাকায় পরিচয় দিতে গেলে।
আমাকে যদি কেউ জিজ্ঞেস করে আমার জীবনের সেরা প্রাপ্তি কী? আমি বলব, আজিজ চেয়ারম্যানের নাতনী হয়ে জন্ম নেয়াটা। ১৯ ফেব্রুয়ারি আমার নানার অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকী। সৃষ্টিকর্তার কাছে তার আত্মার শান্তি কামনা করি।

মন্তব্য ১৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ২:০০

বিদ্রোহী বাঙালি বলেছেন: আপনার নানা আজিজ চেয়ারম্যানের অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকীতে আমার বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি রইলো।

সমাজের শত শত অমানুষের ভিড়ে আপনার নানা এবং তাঁর সন্তানদের মতো ভদ্র ও মানবিক মানুষের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। অথচ এই ধরণের মানুষের মুখ চেয়েই আমরা আশাবাদী হয়ে উঠতে চাই, ঘুরে দাঁড়াতে চাই।

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১০:৫০

সুস্মিতা শ্যামা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনার সদয় মন্তব্যের জন্য। ভাল থাকবেন।

২| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১০:৫০

মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন: //অলরেডি মাইর শুরু হয়ে গেছে। আরো অনেকে সিরিয়ালে আছেন এবং কিউতে দাঁড়িয়েই দাঁড়িয়েই মুখের এক্সারসাইজ করে নিচ্ছেন।//


//"আচ্ছা, ভাইয়া, আমাদের বাসায়ও কি আপনিই চুরি করেছিলেন?" উপস্থিত জনতা এক মুহুর্তের জন্য হতভম্ব হয়ে গেল।//


-হাহাহাহা



আজিজ চেয়ারম্যানের প্রতি শ্রদ্ধা এবং তার নাতনির জন্য অফুরন্ত শুভেচ্ছা....

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:২৭

সুস্মিতা শ্যামা বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ। :)

৩| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১০:৫৫

মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন:






আমার বাবার নাম আজিজ, মৃত্যুবরণ ১৯৮৯, ৫ ফেব্রুয়ারি।
স্বভাবের সাথে অনেকটাই মিল আছে।









শুনুন আপনি মাঝে মাঝে আমাকে মামা বলে ডাকতে পারেন.... 8-|

B-) B-)

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:৩০

সুস্মিতা শ্যামা বলেছেন: হাহাহা! আসলেই অনেক মিল তো! আপনার এই মন্তব্যটা আমি আমার মাকে পড়ে শুনিয়েছি। আমার মা আপনাকে সাদরে তার ভাই হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছেন।
অতএব, মামা, আপনাকে আমাদের পরিবারে আন্তরিক অভ্যর্থ্যনা জানাচ্ছি।
খুব, খুব ভাল থাকুন।

৪| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:৩১

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: আজিজ চেয়ারম্যানের আত্নার শান্তি কামনা করছি । স্থিতধি হওয়া সত্যি বিশাল একটা ব্যাপার । ওটা অর্জন করতে পারলে জীবন স্বার্থক ।

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:৩১

সুস্মিতা শ্যামা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
আসলেই স্থিতধী হতে পারলে জীবন সার্থক।

৫| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:২৪

দিশেহারা রাজপুত্র বলেছেন: //"আচ্ছা, ভাইয়া, আমাদের বাসায়ও কি আপনিই চুরি করেছিলেন?" উপস্থিত জনতা এক মুহুর্তের জন্য হতভম্ব হয়ে গেল।//
!:#P

আপনার নানার আত্মার শান্তি কামনায়।
ভালো থাকবেন।

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:৩৪

সুস্মিতা শ্যামা বলেছেন: ঘটনাটা আমার অনেক ছোটবেলায় ঘটেছে। কিন্তু মনে পড়লে এখনো আমার হাসি পায়। আমার জীবনে দেখা প্রথম চোর। এবং সেদিনই প্রথম জেনেছিলাম, চোরেরাও আমাদের মতই দেখতে হয়। তার আগে আমার ধারণা ছিল, ওদের কুলোর মত কান, আর ভাটার মত চোখ হয়। ঠাকুদার ঝুলিতে পড়া সেই রাক্ষসটার মত।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
ভাল থাকবেন।

৬| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৫:১৬

নবাব চৌধুরী বলেছেন: শ্রদ্ধায় মাথা নোয়ালাম,উনার আত্বার মাগফেরাত কামনা করি।অনুপ্রেরনা হয়ে থাকলো আপনা এই লেখা।এমনই যেন হতে পারি।

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:৩৬

সুস্মিতা শ্যামা বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
প্রত্যেকটা মানুষ যদি ক্যারিয়ারে পিছনে না ছুটে এভাবে একজন ভাল মানুষ হতে চাইত, তাহলে জীবনটা অনেক সুন্দর হতে পারত।
ভাল থাকবেন।

৭| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৩:৪১

মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন:





=p~ =p~ =p~ =p~


অসম্ভব মজা পেয়েছি। আমার আপন কোন বোন নেই। তাই মামা হতে মন চায় বৈকি....

আপনার মাকে তার ব্লগার ভাইয়ের সালাম দেবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.