নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নীরবে নির্জনে যন্ত্র-অরণ্যে

আপাতত রেস্টে আছি! :)

স্নিগ

আমি একদিন মারা যাব, এই সত্যটা নিয়ে আমার খুব বেশি আক্ষেপ নেই। তবে, আমার মৃত্যুর পর আরও অসংখ্য অসাধারণ সব বই লেখা হবে, গান সৃষ্ট হবে, চলচিত্র নির্মিত হবে।কিন্তু আমি সে সব পড়তে, শুনতে কিংবা দেখতে পারবো না।এই সত্যটা আমাকে খুব যন্ত্রণা দেয়।

স্নিগ › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্বপ্নের নায়ক

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ ভোর ৪:৫২

১৯৭১ সালে শুধু বাংলাদেশের ঐতিহাসিক জন্ম হয়নি, মুক্তিযুদ্ধের সেই সালে জন্ম নিয়েছেন এক নায়ক। যার কর্মজীবন হয়ে আছে ইতিহাস। সালমান শাহ শুধু এক অভিনেতা কিংবা শিল্পী নন, তিনি নিজেই এক প্রতিষ্ঠান। মাত্র সাড়ে তিন বছরে তিনি অনন্য এক ভাবমূর্তি তৈরী করেছিলেন। তার ছায়ায় চাপা পড়ে, অন্য কোন নায়কই তার সমকক্ষ হতে পারেননি।

সালমান শাহের আসল নাম শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন। জন্ম হয়েছিল সিলেটে। মিডিয়ায় পদচারণা শুরু “কথার কথা” নামে এর ম্যাগাজিনের অনুষ্ঠানের এক মিউজিক ভিডিওর মাধ্যমে। কাকতালীয়ভাবে “নামটি ছিল তার অপূর্ব” শিরোনামের সেই মিউজিক ভিডিওর বিষয় ছিল, সম্ভাবনাময় এক তরুণের অকাল মৃত্যু। পরবর্তীতে তিনি “পাথর সময়” নামে একটি ধারাবাহিক নাটক ও মিল্ক ভিটা, কোক ও ফান্টার বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ করেন।

সালমান শাহ’র জীবনে নাটকীয় মোড় এনে দেয় “কেয়ামত থেকে কেয়ামত” ছবিটি। শেক্সপীয়ারের রোমিও-জুলিয়েট-এর থিম নিয়ে ইন্ডিয়ার মনসুর খান নির্মাণ করেন “Qayamat Se Qayamat Tak”। দুই নবাগত আমির খান ও জুহি চাওলার সে ছবির সাফল্য দেখে প্রযোজনা সংস্থা “আনন্দমেলা” ছবিটির কপিরাইট কিনে নেয়। রিমেক করার দায়িত্ব পড়ে সোহানুর রহমান সোহানের উপর। ছবিটির জন্য পরিচালক নতুন দুটি মুখ খুঁজছিলেন। সেই জন্য সালমান শাহ আর মৌসুমীকে বেছে নেন। ছবিটি ঈদুল ফিতরে মুক্তি পেয়ে সুপার হিট ব্যবসা করে। আর ছবির কল্যাণে রাতারাতি তারকা বনে যান সালমান-মৌসুমী জুটি। তাদের পরবর্তী ছবি ছিল শিবলি সাদিক পরিচালিত অন্তরে অন্তরে। দর্শক এটিকেও সাদরে গ্রহণ করে। তবে, এর পরেই এই জুটির মাঝে দ্বন্দ্ব তৈরী হয়। ফলে সালমান আর মৌসুমী একসাথে ছবি করা বন্ধ করে দেন। এই জুটি পরে আর মাত্র দুটি ছবিতে অভিনয় করেন- দেন মোহর ও স্নেহ।

মৌসুমীর সাথে জুটি ভেঙে যাবার পর সালমান নতুন নায়িকার সন্ধানে নামেন। কারণ ইন্ডাস্ট্রীর তখনকার প্রতিষ্ঠিত সব নায়িকাই তার চেয়ে সিনিয়র ছিলেন। সালমান নবাগত শাবনূরের সাথে “শুধু তুমি” নামে একটি ছবি করেন। এটিও ব্যবসাসফল হয়। সবাই বুঝতে পারে সালমান বক্স অফিসের পয়মন্ত হয়ে এসেছেন। সালমান-শাবনূর জুটি বেঁধে তুমুল উদ্যমে অভিনয় শুরু করেন। সালমান তার ক্যারিয়ারের অর্ধেকের বেশি (১৪টি) ছবি করেছেন শাবনূরের সাথে। এই জুটি উপহার দিয়েছে তোমাকে চাই, সুজন সখী, চাওয়া থেকে পাওয়া, স্বপ্নের পৃথিবী, স্বপ্নের ঠিকানা, স্বপ্নের নায়কের মত রোম্যান্টিক ছবি।

তবে শুধুমাত্র পিওর রোম্যান্টিক ইমেজে আটকে থাকেননি সালমান। বেশ কিছু ভিন্ন ধারার ছবিও করেন। এর মাঝে উল্লেখযোগ্য হল : বিক্ষোভ ও বিচার হবে। পলিটিক্যাল ড্রামা বিক্ষোভ পরিচালনা করেন মহম্মদ হান্নান। আর অ্যাকশন ধর্মী ছবি বিচার হবে’র পরিচালক ছিলেন শাহ আলম কিরণ। বিচার হবে ছবিটির গল্প ও সংলাপ লিখেছিলেন অভিনেতা রাইসুল ইসলাম আসাদ। দুটো ছবিতেই নায়িকা ছিলেন শাবনূর।

শাবনূর নির্ভরতা এড়াতে এবং শাবনূরের সঙ্গে তাকে জড়িয়ে গুজবে বিরক্ত হয়ে সালমান অন্য নায়িকাদের সঙ্গে ছবি করার সিদ্ধান্ত নেন। এই সময়ে তিনি যেমন আনন্দ অশ্রুর মত ত্রিভুজ প্রেমের গল্পে (শাবনূর ও কাঞ্চির বিপরীতে) অভিনয় করেছেন, তেমনি কিছু ফ্যামিলি ড্রামাও করেছেন। বিশেষভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে শিবলি সাদিক পরিচালিত মায়ের অধিকার (শাবনাজের বিপরীতে) আর মালেক আফসারী পরিচালিত এই ঘর এই সংসারের কথা (বৃষ্টির বিপরীতে)। এই ঘর এই সংসারের প্রযোজক ছিলেন অভিনেতা খলিল। এই ছবিটিকে নারায়ণ ঘোষ মিতা’র “এতটুকু আশা”-এর পরে বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম সেরা ফ্যামিলি ড্রামা হিসেবে গণ্য করা হয়। এই ঘর এই সংসার ছবিটি পরে কলকাতাতে রিমেক করা হয়। সালমান শাহের চরিত্রটি করেছিলেন প্রসেনজিৎ চক্রবর্তী।

শাবনাজের সঙ্গে তিনটি চলচ্চিত্র বাদেও, সালমান নায়িকা লিমার সঙ্গে দুইটি এবং মডেল শিল্পীর ও অকাল প্রয়াত শামার সঙ্গে একটি করে ছবিতে অভিনয় করেন। সে ছবিগুলো কম-বেশি ব্যবসা করলেও, কখনোই সালমান-শাবনূর জুটির গ্রহণযোগ্যতাকে অতিক্রম করে যেতে পারেনি। শুধু শাবনূর নন, সালমানের সঙ্গে আরও দুজন মানুষের ক্যারিয়ার গড়ে উঠেছিল: সঙ্গীতশিল্পী আগুন ও খলনায়ক ডন। অভিনয়ের পাশাপাশি সালমান শাহ প্লেব্যাকও করেছিলেন। “প্রেমযুদ্ধ” ছবিতে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের সুরে “তুমি আমার জীবনে এক স্বপ্ন” শীর্ষক এক গানে কণ্ঠ দেন সালমান। এছাড়া বেশ কয়েকটি নাটকেও অভিনয়। এর মাঝে শমী কায়সারের বিপরীতে অভিনীত ‘নয়ন’ নাটকটি তুমুল জনপ্রিয়তা লাভ করে।

১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সালমানের অকস্মাৎ মৃত্যু সংবাদে সারা দেশ স্তম্ভিত হয়ে যায়। তার মৃত্যু হত্যা নাকি আত্মহত্যা তা আজও নিশ্চিত করে জানা যায়নি। পুরো ঘটনাটিই রহস্যাবৃত। সালমান শাহ চির বিদায় নিয়েছেন ১৭ বছর আগে। এতদিন পরেও তার নামটি এক দীর্ঘশ্বাস হয়ে আছে। তার মৃত্যুর পর মধ্যবিত্ত দর্শকেরা সেই যে অভিমান করে হল ছাড়ল, তারা আজও ফেরেনি।



মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.