নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নীরবে নির্জনে যন্ত্র-অরণ্যে

আপাতত রেস্টে আছি! :)

স্নিগ

আমি একদিন মারা যাব, এই সত্যটা নিয়ে আমার খুব বেশি আক্ষেপ নেই। তবে, আমার মৃত্যুর পর আরও অসংখ্য অসাধারণ সব বই লেখা হবে, গান সৃষ্ট হবে, চলচিত্র নির্মিত হবে।কিন্তু আমি সে সব পড়তে, শুনতে কিংবা দেখতে পারবো না।এই সত্যটা আমাকে খুব যন্ত্রণা দেয়।

স্নিগ › বিস্তারিত পোস্টঃ

শুনতে কি পাও!: দ্য সাউন্ড অফ সাইলেন্স

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ ভোর ৪:৫৩

“শুনতে কি পাও!” এর অর্জনের কথা শুনতে শুনতে সবারই অল্প-বিস্তর মুখস্থ হয়ে যাবার কথা। লিপজিগের উদ্বোধনী ছবি থেকে সিনেমা দ্যু রিল-এর গ্রাঁপি জয়ের কথাও কারও অজানা নয়। এমন সিদ্ধি যে ছবির, কোন কারণেই সেটাকে এড়িয়ে যাবার কথা না। তাই প্রথম সুযোগেই ছবিটা দেখার লোভ সামলাতে পারলাম না।

২০০৯ সালের “আইলা” চলে যাবার কয়েক বছর পরেও, তার ধাক্কা সামলাতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছে সবাইকে। এমনই এক আইলা দুর্গত গ্রাম সুতারখালি। সেই গ্রামের ১০০ পরিবারের এক পরিবারকে আমরা দেখতে পাই “শুনতে কি পাও”-তে। জলোচ্ছ্বাসে আর সবার মত রাখী-সৌমেনের ঘরও ডুবে গিয়েছে। তারা ঠাঁই নিয়ে ভেড়িবাঁধে। শুরু নতুন এক জীবন। যে জীবনের প্রতিটি স্তরেই রয়েছে নতুন ভীতি, নতুন আশংকা। কিন্তু সব বাধাকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যেতে চায় তারা।

সময়ের পরিক্রমায় পাল্টায় অনেক কিছু। রাখী নিজে স্কুলে পড়ায়। আর স্বপ্ন দেখে কলেজে ভর্তি হবার। ঋণ নিয়ে সংসারের প্রয়োজনগুলো মেটাবার চেষ্টা করে। কিন্তু স্কুলে রাখী যে দেশপ্রেমের শিক্ষা দেয়, বাস্তবে দেশের কাছ থেকে তেমন কিছু না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়ে তারা সবাই। ভারতে যাবার কথাও ভাবে। কিন্তু সৌমেন রাজি হয় না। নিজের সব কিছু ছেড়ে যেতে সে রাজি নয়। কিন্তু সরকার যে দূর থেকে শুধু কথা বলেই খালাস। রিলিফের ভিড়ে বিরক্ত, পানির অভাবে তৃষ্ণার্ত দুর্গতদের ক্ষোভের আঁচটা পাওয়া যায় সন্ধ্যার চায়ের আড্ডায়।

তবু জীবন থেমে থাকে না। পূজা আসে, খেলার আসর বসে, চলে নারীদের স্মৃতি রোমন্থন। পুরো ছবি জুড়েই ফিরে আসে মোবাইল ফোন নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর অভিমানের আদান-প্রদান। এই অভিমান যেন শ্রেণী নির্বিশেষে বাংলার প্রতিটি ঘরেই খুঁজে পাওয়া যায়।

ছবির সর্বোপরি টেকনিক্যাল মান অসাধারণ। বিশেষ করে সম্পাদক ও শব্দগ্রাহক দারুণ মুনশিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন। তুলনামূলকভাবে চিত্রগ্রহণ যেন অনেক সময় ছবির অন্য সেক্টরগুলোর সঙ্গে তাল মেলাতে পারেনি। এমন মানসম্মত প্রোডাকশনে গুটিকয়েক জার্ক আর প্যানিং কিছুটা ছন্দপতন ঘটালেও, বাকিটা সময় ক্যামেরা দারুণ দৃষ্টিসুখকর মুহূর্ত উপহার দিয়েছে। হয়ত হ্যান্ডিক্যামে ধারণ বলেই কিছু কিছু জায়গায় অতৃপ্তি থেকে যায়। কিন্তু ক্যামেরার কাজে সততাটা ঠিকই টের পাওয়া যায়। সবচেয়ে ভাল লেগেছে, শুনতে কি পাও! কখনও শব্দ দিয়ে এবং কখনও নীরবতা দিয়ে দর্শদের প্রয়োজনমত মেসেজ দিয়েছে।

বাঁধ তৈরি করে সব গুছিয়ে আনার পরে, আবারও ঝড় ফিরে। শুরু হয় আরেক গল্প। রাখী, সৌমেন, রাহুল কোন বিচ্ছিন্ন চরিত্র নয়। এরা সারা বাংলাদেশের প্রতিনিধি। বাংলাদেশের সংগ্রামী মানুষদের কষ্টযাত্রাহতবাক করে দেওয়ার মত। প্রকৃতি বারবার উপকূলের বাসিন্দাদের জীবন তছনছ করতে চেয়েছে, কিন্তু পারেনি। প্রকৃতির এই রুদ্ররোষের সামনে তারা কখনোও মাথা নোয়ায়নি। আমরা ড্রয়িংরুমে বসে টেলিভিশনের পর্দায় তাদের ছবি দেখলেও, তাদের নীরব কান্না-সরব আর্তি শুনতে পাইনি। শুনতে পাইনি প্রতিনিয়ত জীবনকে নতুন আদল দেবার রূপকথা।

“শুনতে কি পাও!” ডকুমেন্টারি নাকি ফিকশন তা নিয়ে তর্ক চলতেই পারে। ছবি দেখতে দেখতে মনে হল, ডকুমেন্টারিও না ফিকশনও না; এটা আসলে ফিউশন। সর্বোপরি, প্রামাণ্যচিত্র আর চলচ্চিত্রের বেড়া ডিঙিয়ে আসলে এ এক নির্ভেজাল জীবনচিত্র। যে জীবন বিপর্যয় আর বিপদসঙ্কুল হলেও সংগ্রামের, অভাবের হলেও গৌরবের। তাই ‘শুনতে কি পাও’ রাখী-সৌমেন-রাহুল সর্বোপরি আইলা দুর্গত মানুষের বেঁচে থাকার লড়াইয়ের চিত্র, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে হার না মানার চিত্র, হাজার বছর ধরে চলে আসা বাংলাদেশি মানুষের সংগ্রামী মানসকিতার এক অসামান্য চালচিত্র। “শুনতে কি পাও!” এর আওয়াজ ফুরানোর আগেই কামার-সারা জুটি এনেছেন আরেক গৌরবের সংবাদ। ‘শঙ্খধ্বনি’র সাফল্যর শব্দ শুনতে আমরা সবাই “কান” পেতে রয়েছি।



মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.