নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নীরবে নির্জনে যন্ত্র-অরণ্যে

আপাতত রেস্টে আছি! :)

স্নিগ

আমি একদিন মারা যাব, এই সত্যটা নিয়ে আমার খুব বেশি আক্ষেপ নেই। তবে, আমার মৃত্যুর পর আরও অসংখ্য অসাধারণ সব বই লেখা হবে, গান সৃষ্ট হবে, চলচিত্র নির্মিত হবে।কিন্তু আমি সে সব পড়তে, শুনতে কিংবা দেখতে পারবো না।এই সত্যটা আমাকে খুব যন্ত্রণা দেয়।

স্নিগ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুন্না বদনাম হলো যেভাবে

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ ভোর ৪:৫৫

অনেকেই যখন সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত বাংলা চলচ্চিত্রগুলোর ব্যবসায়িক দুরবস্থা দেখে হতাশ হয়েছিলেন, চারিদিকে যখন “শাকিব খান ফুরিয়ে গেছে” রব উঠেছে তখনই মুক্তি পেলো বদিউল আলম খোকন পরিচালিত “নিষ্পাপ মুন্না”। শাকিব খানের তো বটেই, ২০১৩ সালের সর্বাধিক ব্যবসাসফল ছবির স্বীকৃতি পেয়েছে।

নিষ্পাপ মুন্না চলচ্চিত্রের নাম ভূমিকায় ছিলেন শাকিব খান। মুন্নার জন্ম হয় জেলে। তাকে জন্ম দিয়েই মারা যায় তার মা। জেলার আলীরাজ স্ত্রী রেহানা জলির কোলে তুলে দেন শাকিব খানকে। এক ছেলে আর মেয়ের পাশাপাশি নিজের সন্তানের মতোই তিনি লালন করতে থাকেন শাকিব খানকে। কিন্তু একদিন আলীরাজ বাসায় ফিরে আবিষ্কার করেন তার ছোট ভাই রক্তাক্ত হয়ে পড়ে আছে। তাকে ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে মুন্না। ১২ বছরের জেল হয়ে যায় মুন্নার। জেল থেকে বের হয়ে ঘটনাক্রমে আবারও আলীরাজের বাসায় উঠে মুন্না। মুন্নার ছোট দুই ভাই বোন এখন বড় হয়েছে। ভাই আরজু পুলিশের চাকরি নিয়েছে। পরিচয় লুকিয়ে সে বাসায় থাকতে শুরু করে শাকিব খান। কিন্তু এক সময় তার পরিচয় ফাঁস হয়ে যায়। সবাই ধরে নেয় ইন্সপেক্টর আরজুকে খুন করার গোপন মিশন নিয়ে এসেছে মুন্না। মা রেহানা জলির প্রবল আপত্তি স্বত্বেও আরেকবার ঘরছাড়া হতে হয় মুন্নাকে। মুন্না গিয়ে আশ্রয় নেয় এক গ্যারেজে। সেই এলাকার কিছু চাঁদাবাজ সন্ত্রাসীকে শায়েস্তা করে সকলের মন জিতে নেয় মুন্না। সাহারা শাকিবের প্রতিবেশী, পুলিশ কমিশনারের অফিসে চাকরি করে করে। ধীরে ধীরে তাদের সম্পর্ক ভালোবাসায় রূপ নেয়। অন্যদিকে মিশা সওদাগরের শ্যলককে গ্রেফতার করে নেবার সময় ইন্সপেক্টর আরজুর কাছ থেকে তাকে ছিনিয়ে নেয় মিশার গুন্ডাবাহিনী। নিরুপায় আরজু শাকিব খানের কাছে গিয়ে সাহায্য চায়। শাকিব খান আসামীকে উদ্ধার করে আদালতে সোপর্দ করে। বিচারে তার ফাঁসি হয়। মিশাকে স্বামী হারানোর প্রতিশোধ নিতে বলে বোন নাসরিন। উন্মত্ত মিশা গিয়ে চড়াও হয় শাকিব খানের বোন সাথীর বিয়ের অনুষ্ঠানে। সংঘাতের এক পর্যায়ে সাথীর তরবারির আঘাতে প্রাণ হারায় মিশা। শাকিব খান খুনের দায় নিজের মাথায় তুলে নেবার সিদ্ধান্ত নেয়। এই পর্যায়ে এসে আমরা জানতে পারি, শাকিব খান আলীরাজের ভাইকে খুন করেনি। আত্নরক্ষার্থে তাকে খুন করেছিলেন রেহানা জলি (কারণটা অনুমান করে নিন)। নিজের মাকে বাঁচাতে সে খুনের জন্য জেল খাটে শাকিব খান। মুন্না প্রতিবারই পরিস্থিতির শিকার হয়েছে। সে ছিলো বরাবরই নিষ্পাপ। এর পর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে শাকিব খানের বের হবার মাধ্যমে শেষ হলো খোকনের মুন্না কাহিনী।

নিষ্পাপ মুন্না সারাদেশে ৬৮টি হলে মুক্তি পেয়েছিলো। তুমুল ব্যবসা করেছে ছবিটি। প্রতিটি হলে গড়ে ৮০ শতাংশের উপরে অকুপ্যান্সি ছিলো। ছবিতে শাকিব খানের অভিনয়ের পরিবর্তন চোখে পড়ার মতো। তার শরীরী ভাষায় অনেক উন্নতি হয়েছে। এছাড়া ছোট ছোট এক্সপ্রেশনগুলো নজর কেড়েছে। সাহারার অভিনয় অনেক বেশি সাবলীল ও জড়তামুক্ত ছিলো। তবে, সাহারা চুল রং না করলেই ভালো। সোনালী চুলে তাকে একদমই মানায় না। মেক-আপ আর গানের দৃশ্য পোশাক নির্বাচনে আরও রুচিশীল হতে হবে। এখানে একটি ব্যাপার বলা দরকার।দর্শক মহলে শাকিব-অপুর চেয়ে শাকিব-সাহারা জুটির গ্রহণযোগ্যতা বেশি। তাছাড়া তাদের রসায়নটাও জমে ভালো। পাশা চরিত্রে মিশা সওদাগর বরাবরের মতও অনবদ্য ছিলেন। আর আলাদা করে বলতে শাকিবের বোনের চরিত্রে অভিনয় করা সাথীর কথা। পুরো ছবিতে তার অভিনয় সবচেয়ে সুন্দর ও স্বাভাবিক ছিলো। তাকে দারুণ সম্ভাবনাময় লেগেছে।

ছবিতে গান ছিলো পাঁচটি, যার সুর করেছেন আলী আকরাম শুভ। গানগুলো খুবই সাধারণ মানের ছিলো। দৃশ্যায়ন ছিলো একদমই গৎবাঁধা। বিশেষ করে আইটেম সংটি ছিলো হতাশাজনক। বিপাশা করিমকে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার গ্যাংনাম নাচতে দেখলাম। এছাড়া গানটার প্রথম অংশের চিত্রায়নে ভারতীয় চলচ্চিত্র ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দে’র “কোকাকোলা”-এর প্রভাব ছিলো সুস্পষ্ট।

পরিচালনায় ছবির প্রথমার্ধ চলনসই হলেই, দ্বিতীয়াংশ চরম অবহেলার শিকার হয়েছে। স্ক্রীপ্টের কোনো বালাই ছিলো না। এজন্য অসম্ভব দৃষ্টিকটু কিছু কটিনিউয়িটি এরর হজম করতে হয়েছে। সাহারা পুলিশ কমিশনারের অফিসে চাকরি করেন। তাকে কখনোই পুলিশের পোশাকে দেখা যায়নি। এছাড়া এক সংলাপ থেকে আমরা জানতে পারি, তার বয়স ১৮। তার চাকরি নিয়ে বিভ্রান্তি এতে আরো বাড়লো। বেশ কিছু দৃশ্যে সাহারাকে একটা টয়োটা প্রিমিও গাড়িতে চড়ে আসতে দেখা যায়। ১৮ বছর বয়সে তিনি এমন কি চাকরি পেলেন, যার কারণে অফিস থেকে তাকে এমন গাড়ি দেওয়া হলো, সেটা বোঝা গেলো না। যদি এটা সাহারার ব্যক্তিগত গাড়ি হয় তবে খটকা আরো বাড়ে। যথেষ্ট বিত্তবান হবার পরেও, তাহলে সাহারা কেন নিম্নবিত্ত এলাকায় গ্যারেজের উপরে অবস্থিত এক রুমের ছোট একটা বাসা ভাড়া নিয়ে থাকবেন?

বদিউল আলম খোকন মনে হয় ফরাসী পরিচালক জ্য লুক গঁদারের ভক্ত। ছবিতে বিক্ষিপ্তভাবে জাম্প কাটের ব্যবহার অন্তত এমনটা ভাবতেই বাধ্য করেছে। যেমন, জেলখানায় শাকিব খান আফজাল হোসেনকে বলেন, জেল থেকে মুক্তি পেয়েই তিনি যেনো শকিব খানের সাথে যোগাযোগ করেন। পরবর্তীতে শাকিবের সাথে আফজালকে কাজ করতে দেখা যায়।আফজাল কখন মুক্তি পেলেন, কিভাবে সাকিবের সাথে যোগাযোগ হলো সে প্রশ্নের উত্তর আমরা পাই না। শাকিবের ভাই আরজু শাকিব খান, সাহারা সহ গ্যারেজের সবাইকে বাসায় আমন্ত্রণ জানালেও, বাসায় শুধু শাকিব খান কেন গেলেন তাও বোঝা গেলো না। ক্লাইম্যাক্সে শাকিব খানকে পুলিশ গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। পরের দৃশ্যে আমরা শাকিব খানকে জেল গেট থেকে বের হতে দেখি। শাকিব খানের কি বিচার হলো, কয় বছরের শাস্তি পেলেন, সে দৃশ্যকে লাফ দিয়ে পেরিয়ে গিয়েছেন পরিচালক। বেশ কিছু অ্যাকশন দৃশ্যে সম্পাদক ওয়্যারগুলোকে এডিট করতে ভুলে গিয়েছেন।

ছবির কিছু সংলাপ ওপার বাংলার মিঠুন চক্রবর্তীর ছবি থেকে নেওয়া। দুটো উল্লেখ করছি, “মারবো এখানে, লাশ পড়বে দশ মাইল দূরে”….”আমি খবর পড়ি না, খবর দেখি না, খবর শুনি না; খবর তৈরি করি।”

সব মিলিয়ে এতটা অযত্ন দেখে খারাপই লেগেছে। মুন্না নিষ্পাপ হতে পারে, দর্শকরাও কিন্তু কোনো পাপ করেনি। তারা সারাজীবন কিন্তু টাকা খরচ করে এমনতরো ছবি দেখবে না। এখন সময় সাবধান হওয়ার। বদিউল আলম সাহেবেকে তো কেউ “দ্য গডফাদার” পর্যায়ের মাস্টারপিস বানাতে বলেনি। কিছুটা সময় নিয়ে, খেয়াল করলে খোকনের “মুন্না” ছবি হিসেবে দারুণভাবে উৎরে যেতো। নিষ্পাপ মুন্নার ব্যবসায়িক সাফল্য বলে দেয়, দর্শক হলে এসে ছবি দেখতে চায়। তাদের এই আগ্রহ, ভালোবাসাকে অমর্যাদা না করাটাই শ্রেয়।



মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.