নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নীরবে নির্জনে যন্ত্র-অরণ্যে

আপাতত রেস্টে আছি! :)

স্নিগ

আমি একদিন মারা যাব, এই সত্যটা নিয়ে আমার খুব বেশি আক্ষেপ নেই। তবে, আমার মৃত্যুর পর আরও অসংখ্য অসাধারণ সব বই লেখা হবে, গান সৃষ্ট হবে, চলচিত্র নির্মিত হবে।কিন্তু আমি সে সব পড়তে, শুনতে কিংবা দেখতে পারবো না।এই সত্যটা আমাকে খুব যন্ত্রণা দেয়।

স্নিগ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভালোবাসা জিন্দাবাদ : নতুন আশা বেঁচে থাক

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৪ ভোর ৪:৫৭

দেবাশীষ বিশ্বাস পরিচালিত বহুল প্রতীক্ষিত চলচ্চিত্র ভালোবাসা জিন্দাবাদ। শুভ-আইরিন জুটির প্রথম ছবি মুক্তির আগেই বিভিন্ন কারণে আলোচনার জন্ম দিয়েছিল। দেবাশীষ “ভালোবাসা ডট কম” ও “শ্বশুড়বাড়ি জিন্দাবাদ” নামে দুটো কাজ করেছিলেন। নতুন ছবিতে এই দু’টোর ফিউশন দেখতে হবে কিনা সেই আশঙ্কা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা দেখতে হয়নি।

মেঘা (আইরিন) বড়লোক বাবার অতি আদরের মেয়ে। সুলতান মীর্জা (সাদেক বাচ্চু) তার মেয়ের কোন ইচ্ছাই অপূর্ণ রাখেন না। কিন্তু মেয়েকে কারও সঙ্গে মিশতেও দেননা মীর্জা সাহেব। মেঘাকে সারাক্ষণ ঘিরে রাখে তার বাবার পোষা একদল বডিগার্ড। মেঘার সঙ্গে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে সৌরভ (শুভ)। সৌরভের হাত ধরে মেঘা আবিষ্কার করে নতুন এক পৃথিবীর সৌরভ। একসময় সৌরভকে ভালোবেসে ফেলে মেঘা। কিন্তু, মেঘার বাবা কিছুতেই এ সম্পর্ক মেনে নেবেন না। আর সৌরভও মেঘার বাবার আশীর্বাদ ছাড়া বিয়ে করবে না। শুরু হল সৌরভ আর মেঘার লড়াই। ভালোবাসাকে জেতাবার লড়াই।

ভালোবাসা জিন্দাবাদ ছবিটির কাহিনী বিন্যাস, সংলাপ, পরিচালনা করেছেন দেবাশীষ বিশ্বাস। ছবিটির গল্প খুব দুঃখজনকভাবে তেলেগু ছবি বানি (Bunny)-এর সঙ্গে মিলে যায়। প্রায় প্রতিটি দৃশ্যই সেই সিনেমা থেকে নেওয়া। (তবে, নায়িকার নানাবাড়ির অংশটুকু বাদ দেওয়া হয়েছে)। ইতোমধ্যে কলকাতায় সেই ছবিটি রিমেক করা হয়েছে। রাজ চক্রবর্তী পরিচালিত “চ্যালেঞ্জ” নামের সেই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন দেব আর শুভশ্রী। ঢালিউডেও এই গল্প বেশ কদর পেয়েছে। একই গল্প নিয়ে সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত “কথা দাও সাথী হবে” ছবিতে ছিলেন শাকিব খান ও অপু বিশ্বাস। গত কোরবানির ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত “কি প্রেম দেখাইলা” ছবির প্রথমার্ধের গল্পও বানি থেকে অনুপ্রেরণা নিয়েছে (মজার কথা হল, এই ছবিতেও সাদেক বাচ্চু ছিলেন। তিনি কি টের পাননি, একই গল্পের দু’টো ছবিতে অভিনয় করছেন?)

ছবির বেশিরভাগ সংলাপ দুর্বল ছিল। সবল সংলাপগুলো আবার চ্যালেঞ্জ থেকে ধার করা। আর শেষ অ্যাকশন দৃশ্যর “পেরেক ঠোকার” সংলাপটাও চেনা ঠেকলো। জিতের “দিওয়ানা” সিনেমায় বোধকরি এমন কোন সংলাপ শুনেছি। দক্ষিণী ছবিগুলো অনেক গতিময় থাকে। স্বাভাবিকভাবেই, এই ছবির স্ক্রীপ্টও গতিময় ছিল।

অনেকদিন পর কোন ছবিতে ক্যামেরার এত বিরক্তিকর কাজ দেখলাম। আজগর আলী কোনও কারণ ছাড়াই প্রচুর ক্লোজ শট নিয়েছেন। ফ্রেমিং এর অবস্থাও তথৈবচ। চরিত্রগুলোর মাথার উপরে অনেক জায়গা ফাঁকা রেখে শট নেওয়া হয়েছে। কালার কারেকশনের কাজ ভাল হয়নি। হাতিরঝিলের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার ছবিকে একঘেয়ে করেছে। আইরিন-শুভ দুজনেই বললেন তারা কলেজে পড়েন, অথচ তারা শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস করলেন। সাদেক বাচ্চু “এগ্রিকালচার” ডিপার্টমেন্টে খুঁজে কেন “এগ্রিকালচারাল বোটানি” ডিপার্টমেন্টে ঢুকলেন বুঝলাম না। শুভ তার প্রিন্সিপাল আর কাবিলার দলকে অফিস রুমে আটকে রেখেছিলেন। প্রিন্সিপাল তো চাইলেই পিওনকে ডেকে বের হতে পারতেন। করলেন না কেন, কে জানে! ক্যাম্পাসের দৃশ্যগুলো দেখে মনে হল, পুরো ভার্সিটিতে মোটে দশজন স্টুডেন্ট পড়ে। এতটা জনবিরল করার দরকার ছিল না।

অভিনয়ের হিসেবে সবচেয়ে এগিয়ে থাকবেন শুভ। প্রধান চরিত্রে এটাই তার প্রথম কাজ। শুভ সূচনা করেছেন শুভ। আগের দু’টো ছবিতে কাজ দেখানোর তেমন সুযোগ পাননি। কিন্তু ভালোবাসা জিন্দাবাদ ছবির নিউক্লিয়াস ছিলেন তিনি। পুরো ছবিটাই এগিয়েছে তার চওড়া কাঁধের ওপর ভর করে। নাচের দৃশ্যে মুগ্ধ হওয়ার মত পারফর্ম্যান্স ছিল তার। অ্যাকশন দৃশ্যেও শুভ আলো ছড়িয়েছেন। শুভর অভিনয়ও ভালো হয়েছে। অ্যাটিচুড আর কমিক টাইমিং-ও নিখুঁত ছিল। দর্শকদের তালিও পেয়েছেন বেশুমার। তবে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাকে আরও পরিপক্বতা অর্জন করতে হবে। প্রথম ছবি হিসেবে আইরিন নজর কেড়েছেন। বাংলা ছবির স্ক্রীনে এতটা গ্ল্যামারাস আর স্মার্ট নায়িকা খুব কমই এসেছে। তবে আইরিনের লিপসিঙ্কে বেশ ত্রুটি লক্ষ্য করা গেল। ডাবিং আর গানের দৃশ্যে আরও উন্নতি করতে হবে। নাচের সময় আইরিনকে বেশ আড়ষ্ট লাগলো। তবে, এসবই ঠিক করে নেওয়া যাবে। নায়িকা চরিত্রে আইরিন নতুন এক সম্ভাবনার সৃষ্টি করেছেন। শুভ আর আইরিনের মাঝে জমজমাট এক রসায়ন ছিল। সাদেক বাচ্চুও দারুণ অভিনয় করেছেন। অনেক মাপা অভিনয় পাওয়া গিয়েছে তার কাছ থেকে। পদ্মলোচন চরিত্রে অভিনয় করা কাবিলার কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। কাবিলা তো কখনোই খারাপ অভিনয় করেন না। অন্যদের কাজ গড়পড়তা ছিল।

ছবির সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন শওকত আলী ইমন। সবকয়টি গানই ছিল শ্রুতিমধুর। টাইটেল সঙের কিয়দংশ কলকাতার “ইডিয়ট” ছবির “পাগলী তোকে রাখবো বড় আদরে” গানের সুর নিয়ে করা। “কবিতা”, “জানে খোদা”, “আলাপন” গানে শান, পারভেজ, পৃথার গায়কী দারুণ লেগেছে। প্রতিটা গানের কোরিওগ্রাফি দুর্দান্ত ছিল। এই ছবির সবচেয়ে শক্তিশালী দিক হলো সুরেলা গান আর গানগুলোর দৃষ্টিনন্দন চিত্রায়ন। দেশীয় লোকেশন সুন্দরভাবে ব্যবহার করেছেন পরিচালক। দুয়েকটি মুদ্রা “ভজো গৌরাঙ্গ” বা “তুই বর্ষা বিকেলের ঢেউ” সহ পরিচিত কয়েকটি গানকে মনে করিয়ে দিলেও, ছবির নাচগুলো সুন্দর হয়েছে।

ভালোবাসা জিন্দাবাদ পরিচ্ছন্ন এক ছবি। কিন্তু তার চেয়েও বড় কথা হল, এমন ছবির মাধ্যমে নতুন এক দর্শকশ্রেণী তৈরী করা সম্ভব। মধ্যবিত্ত দর্শক আজ হলবিমুখ। কোনও জাদুমন্ত্রে তারা শাকিব খান আর অপু বিশ্বাসের ছবি দেখতে আসবে, এমন উচ্চাশাও অযৌক্তিক। এই দর্শক-শ্রেণীকে আকর্ষণ করতে প্রয়োজন নতুন মুখ। শুভর মত মাসকুলার নায়ক, আইরিনের মত সুন্দরী নায়িকারা এক্ষেত্রে ট্রাম্প কার্ড হয়ে উঠতে পারেন। চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের তাই আরও মনোযোগী হয়ে ভাবা দরকার এই নতুন রত্নগুলোকে তারা কিভাবে কাজে লাগাবেন। সবার সম্মিলনেই বাংলা ছবি আবার জিন্দা হয়ে উঠতে পারবে।



মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.