নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একটা নির্দিষ্ট গন্ডীর মাঝেইথাকতে চাই।।

সচেতনহ্যাপী

সচেতনহ্যাপী › বিস্তারিত পোস্টঃ

অভিনব................নির্মম প্রতিশোধ

২৫ শে জুন, ২০১৪ রাত ২:৫৯

আজ এক হতভাগ্য পিতা এবং তার সুপুত্রদের গল্প বলবো। বাস্তব এবং এরা এখানেই আছে বলে আমি তাদের ছদ্মনাম ব্যাবহার করছি।

কাদের আমার রুমেই শেয়ার করে থাকে। পেশায় চালক। নিজের গাড়ী তাই রোজগারও মন্দ না। কখনো ৮০/৯০ হাজার কখনো বা কম-বেশী। ওর বড়ভাইটা আমাদের পাশের বিল্ডিংএই থাকে। আর ছোট ভাইটা থাকে সৌদীতে। পিতাও কোন একসময়ে কুয়েতেই থাকতো। বড়ছেলেকে আনার পর জব্বার সাহেব মানে পিতা দেশে চলে যান। তারপর জায়গা-জমি বিক্রী করে বাকি দুই ছেলেকেও প্রবাসে পাঠান একটু স্বচ্ছলতার আশায়। কিন্তু বেচারার দূর্ভাগ্য,তার সেই আশা পুরন হলো না। ছেলেরা তো রোজগার করে টাকা চিনতে শিখলো। শুধু শিখলো না পিতা-মাতার আশা ও কষ্টের অনুভূতিটাকে অনুভব করতে।

এক এক করে তিনভাই ই বিয়ে করলো,কিন্তু জনমদুখী মায়ের কষ্ট আর ঘুচলো না। তাকে এই ৫৫/৬০বছরেও রেঁধে জব্বার সাহেব এবং নিজের পেট ভরার ব্যাবস্থা করতে হয়। কারন তিন ছেলেই নিজেদের বউদের যার যার শ্বশুরবাড়িতে রেখেছে। নিজেদের বাড়ীতে তারা আসে কয়েকদিনের জন্য বেড়াতে!!

জব্বার সাহেবের রোজগার বলতে শুধু একটা ছোট পুকুর আর সামান্য জমি।যা থেকে বছরের খোরাকী মানে চাল পাওয়া যায়। পুকুর থেকে ভাগ্যক্রমে কিছু মাছ। বাকী সব কিনে খেতে হয়। বাধ্য হয়েই উনাকে হাত পাততে হয় ছেলেদের কাছে। কিন্তু তাতেই পুত্রধনদের রাগ। কেন এতো টাকা লাগে? কি করবে? দরকার হলে ধান বেচে ফেল। তিন ছলেরই একই সুর। আমি একদিন কাদেরকে বললাম,বূদ্ধ পিতা-মাতার কোন সাহায্যে তো আসছোই না, সামান্য কয়টা টাকা দিয়ে হলেও তো তাদের সাহায্য করতে পার। বাড়ীআলা আর সিনিয়র বলে হয়তো মুখের উপর কড়া কথা বলতে না পেরে বললো দেখা যাক। এটা প্রায় ৭বছর আগের কথা। তারপর তিনভাই পরামর্শ করে ২হাজার করে ৬হাজার টাকা বরাদ্ধ করলো। তাও এদের হিসাবে অনেক বেশী। আর এই টকাও তিনজেরই বউদের কাছ থেকে জব্বার সাহেব অথবা তার স্ত্রীকে যেয়ে আনতে হবে। আরো কত ঘটনা যে এই টাকা দেওয়া নিয়ে ঘটেছে তা লিখতে ইচ্ছে করছে না। তবে একটু মনোমালিন্য হলেই এটা দেওয়া বন্ধ হয়ে যেতো। বাপ ধমকি দিতেন জমি বিক্রী করে দেবো। ছেলেরা তখন করতো গালাগালি। বিশেষ করে কাদের গালাগালিতো আমি নিজেই শুনেছি। একদিন সহ্য করতে না পেরে বললাম,তোমার বাপ তার জায়গা-জমি বিক্রী করে তোমাদের বিদেশে পাঠিয়েছে,সেই ঋনটাতো অন্ততঃ শোধ করো। আর তার সম্পত্তি যদি উনি বেচতেই চান তাহলে তোমরা আটকাবে কি করে?? জবাব কি হতে পারে,পাঠকরা একটু ভেবে দেখুন তো?? অবাক করা জবাব গ্রামের লোকদের বলে দেবো বাপের মাথায় গোলমাল দেখা দিয়েছে আপনারা কেউ তার কাছ থেকে জমি কিনলে আমরা মানবো না। বাস্তবেও তাই করেছে। তিনজনের শ্বশুরবাড়ীর লোকজন এবং কিছু হাত করা আত্মীয় এটাই পুরো গ্রামে রটিয়ে দিল।

কিন্তু বাশের চেয়ে কঞ্চি বড় হলেও মূলটা মাটিতে পোরা থাকে বাঁশেরই। জব্বার সাহেব দেন-দরবার করে পেরে উঠতে না পেরে ধরলেন ভয়ংকর এক বাকা পথ। তিনি হ্যান্ডনোটে গোপনে বিভিন্নজনের কাছ থেকে চড়াসুদে ঋন নিয়ে চলতে শুরু করলেন। কেউ জানলো না,দেখলো না,বুঝলোও না যে প্রতিরোধের ভাঙ্গন।

তারপর গত দুইমাস আগে হঠাৎ করে ষ্ট্রোকে তিনি মারা গেলেন। ছেলেরা শুনলো,কিন্তু কারোরই সময় হলো না দেশে যেয়ে বাপের কবরে একমুঠো মাটি দেবার। ফোনে জানিয়ে দিল তোমরা দাফন-কাফন সম্পন্ন করে ফেলো। আর বিপত্তির শুরু এই দাফনের সময়েই। প্রায় ২০/২৫জন ভদ্রলোকের স্বাক্ষর করা হ্যান্ডনোট এনে দাবী করলো আমাদের টাকার ব্যাবস্থা না করে দাফন করা যাবে না। বাধ্যহয়েই সব আত্মীয়-স্বজন অঙ্গীকার করলো যে,ছেলেরা কেউ নেই,ওরা এলেই সবার টাকা ফেরত দেবার ব্যাবস্থা করা হবে। দাফন সম্পন্ন হলো।

তারপর হিসাব করে দেখা গেল জব্বার সাহেব প্রায় ২৩ লক্ষ টাকা ঋন রেখে গেছেন। সবার মাথায় হাত। ছেলেদের ফোন করে জরুরীভিত্তিতে দেশে নেওয়া হলো। তারপর অনেক বিচার,শালিস করে সব মিলিয়ে ১৪ লক্ষ টাকায় রফা হলো। বিক্রয় করতে হলো বাপের জমির একটা বিরাট অংশ। তাতেও শেষ হলো না। বাকীটা কিস্তিতে দেয়ার অঙ্গীকার করেই তিন ছেলে যার যার কর্মস্থলে ফিরে এলো।

কথায় আছে অল্পশোকে কাতর আর অধিকশোকে পাথর। তাই কাদের ও তার বড়ভাইয়ের মুখে আর কথা নেই।আমি দেখি আর ভাবি সন্তান হিসাবে নিজের দায়িত্ব আর কর্তব্য পালন করলে আজকের এই বিপদ হতো না। যা ওদের জন্য ছিল ফরজ। আর শত সালাম ও শ্রদ্ধা জানাই সেই অদেখা,অচেনা জব্বার সাহেবকে। একেই বলে প্রতিশোধ,অনাচারের বিরুদ্ধে।।

বিঃদ্রঃ এতো কিছুর পরও বৃদ্ধা মা একাই বাড়ীতে পরে আছে স্বামীর স্মৃতি নিয়ে।একদিন হয়তো উনারও ঠাই হবে নচিকেতার বৃদ্ধাশ্রমে। বউরা যার যার বাপের বাড়ীতে। ধীক এইসব কুপুত্রদের।

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে জুন, ২০১৪ ভোর ৪:১২

জনসাধারণের মধ্যে একটি মলিন পট্টবস্ত্র বলেছেন: বাস্তব গল্পটা পড়ে মন খারাপ হয়ে গেলো।

২৫ শে জুন, ২০১৪ রাত ৯:১৬

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: এখনো ওরা পিতার মৃত্যুর চেয়ে ঋনের কথাই বলে আগে।

২| ২৫ শে জুন, ২০১৪ দুপুর ১২:৩৫

রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: আর শত সালাম ও শ্রদ্ধা জানাই সেই অদেখা,অচেনা জব্বার সাহেবকে। একেই বলে প্রতিশোধ,অনাচারের বিরুদ্ধে।।

২৫ শে জুন, ২০১৪ রাত ৯:১৮

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: এইসব "সুপুত্রদের" বিরুদ্ধে যথাযোগ্য প্রতিশোধ।।

৩| ২৫ শে জুন, ২০১৪ দুপুর ১২:৫৪

আহসানের ব্লগ বলেছেন: ধিক :(

২৫ শে জুন, ২০১৪ রাত ৯:১৯

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: শুধু একটা না শতধীক।।

৪| ২৫ শে জুন, ২০১৪ বিকাল ৩:৩১

আজীব ০০৭ বলেছেন: মন খারাপ হয়ে গেলো।

২৫ শে জুন, ২০১৪ রাত ৯:২১

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: আর আমার সাথে যখন কথা বলে তখন গায়ে আগুন ধরলেও চুপ করে থাকতে হয়,ভদ্রতার খাতিরে।।

৫| ২৫ শে জুন, ২০১৪ বিকাল ৫:০৭

শাহ আজিজ বলেছেন: সহায় সম্পত্তি নিজ নামে রাখা উত্তম । মরে গেলে সন্তানরা তো পাবেই ওয়ারিশ হিসাবে । রেজিস্ত্রি ওয়াসিয়াত করে যাবেন যে মৃত্যুর পর কে কোথা হতে কতটুকু পাবে । কোন সন্তান যদি ব্যাবসা কাজে দাবি করে তবে হেবা কবলা করে তার অংশ খারিজ করবেন । জব্বার সাহেব উচিত কাজ করেছিলেন নিরুপায় হয়ে । আরও উচিত ছিল কোন এতিমখানায় দান করে যাওয়া । ওদের বিপদ এখন প্রতি পদে পদে ।

২৫ শে জুন, ২০১৪ রাত ৯:২৬

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: আপনার সাথে একমত। ব্যক্তিগত ভাবে আমি এই ধরনের উইল করে রেখেছি যে,আমি বা স্ত্রী যতদিন বেচে থাকবো সম্পত্তির মালিকানা আমাদেরই থাকবে। দু'জনেই মারা গেলে তখন সন্তান পাবে।।
এত বিপদের পরও ইতরদের হুশ নেই। মার অবস্থাতো এখনো বদলায় নাই।।

৬| ২৫ শে জুন, ২০১৪ বিকাল ৫:৩৩

আমি ইহতিব বলেছেন: প্রতিশোধটা চরম হয়েছে। এমন সন্তানরা এরকম ঘটনার স্বীকার হবারই যোগ্য।

২৫ শে জুন, ২০১৪ রাত ৯:২৮

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: কে কি মনে করবেন জানি না, কিন্তু আমি খুব খুশী এই প্রতিশোধে।

৭| ২৬ শে জুন, ২০১৪ রাত ১:৪৬

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ভালো শিক্ষা!

বাবা-মা কেন যে সন্তানের কাছে বোঝা হয়ে যান এইটাই রহস্য। এই কুলাঙ্গারগুলা কেন ভাবে না যে, একদিন তারাও বুড়ো হবে।

২৭ শে জুন, ২০১৪ রাত ১:০৫

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: নূতনদের স্থান ছেড়ে দিতে হবে,প্রাকৃতিক নিয়মেই। আমরা এটা মানিও। কিন্তু তাই বলে তো বঞ্চনা আর অবহেলার শিকার হওয়া তো মেনে নেওয়া যায় না।। "এদের" পরিনতিও একই লিখন নিয়ে অপেক্ষায় আছে।
ধন্যবাদ জুলিয়ান ভাই।।

৮| ২৮ শে জুন, ২০১৪ দুপুর ১২:২০

মুনতাসির নাসিফ (দ্যা অ্যানোনিমাস) বলেছেন: ব্লগে ছিলাম না বেশ কদিন, তাই দেরীতে দেখা....

চমৎকার বর্ণনায় এবং সুন্দর উপস্থাপনায় মুগ্ধপাঠ্য ...
ভালোলাগা(+) জানিয়ে গেলাম...
শুভকামনা নিরন্তর ...

কেমন আছেন হ্যাপী??

২৯ শে জুন, ২০১৪ রাত ১:৫৭

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: সবার আগে আমার বাড়িতে আসার জন্য ধন্যবাদ। ভাল আছি ভাই।
আর প্রশংসা এতটা পাবার যোগ্য আমি নই। মনের খেয়ালে যে ভাষা আসে,তাতেই লিখে যাই।
আর বিশ্বকাপ শুরু হবার পর সবাই একটু অনিয়মিত,ঠিক না?

৯| ০২ রা জুলাই, ২০১৪ রাত ৮:২২

আকরাম বলেছেন: পড়লাম। আপনার সব লেখাই পড়া হয়।
চমৎকার লেখা।
এমন কুলাংগার সন্তানদের এরকম শিক্ষাই প্রয়োজন!
আল্লাহ এই বাবাকে বেহেশত নসীব করুন।

০৪ ঠা জুলাই, ২০১৪ রাত ১২:৪৫

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: অনেকদিন পর যে আকরাম ভাই! ভাল আছেন তো।
আপনাদের উৎসাহেই আমার যত লেখা। তবে পড়ি বেশী।
এমন কুলাংগার সন্তানদের এরকম শিক্ষাই প্রয়োজন!
আল্লাহ এই বাবাকে বেহেশত নসীব করুন। একমত। এখন লেগেছে মার পিছনে। আপডেটে জানতে পারলাম তিনভাই ১৫০০টাকা করে পান-সুপারী খাবার জন্য মাকে দিচ্ছে। সাথে উপরি হিসাবে হতভাগিনীর কপালে জুটছে গালি-গালাজও।
কুয়েতের হোটেলে খেতে গেলে এই ৫০০টাকায় একবার খাওয়া যাবে তাও মধ্যমানের হোটেলে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.