নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিজের সম্পর্কে তেমন কিছু জানিনা . . .

পলক শাহরিয়ার

Life is too short to be wasted in finding Answers. Enjoy the Questions!

পলক শাহরিয়ার › বিস্তারিত পোস্টঃ

গুলশান ট্রাজেডিঃ ফুল বাগানে রক্তস্রোত ও পরবর্তি ডিজিটাল বাংলাদেশ......

০৫ ই জুলাই, ২০১৬ ভোর ৪:১৮

গত দু'দিনে গুলশান ট্রাজেডি বিষয়ে আমরা যাহা জানিতে পারিলাম:-

সরকারঃ দেশে আইএস থাকার প্রশ্নই আসেনা এমনকি প্রকৃত জংগীও নাই।
বিরোধী দলঃ এটা সরকারের জঙ্গি জঙ্গি খেলা আর ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার নীল নকশা।
জামাতঃ এই ঘটনা ইন্ডিয়া,আমেরিকা আর ইসরায়েলের ইসলাম ধ্বংসের ষড়যন্ত্র।
আওয়ামি লীগঃ জঙ্গিরা পাকি রাজাকার আর শিবির। এরা দাড়ি কামিয়ে জামাত-বিএনপির এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছে।
প্রকৃত মুসলমানঃ যেহেতু তারা তারাবি নামাজ পরে নাই তাই তারা প্রকৃত মুসলমান না।
ডিজুস আপু সমাজঃ এরা কি কিউট! ফেসটা কত নিষ্পাপ। পুরাই ক্রাশড্। দেখে মনেই হয়না এরা এমন কাজ করতে পারে।
পরিবারঃ তাদের নিখোঁজ হওয়া পুলিশকে জানানো হয়েছিল। গুম,খুন,নিখোঁজ এই শব্দগুলো বিরোধী দলের কবি,সাহিত্যিক ও নেতাদের আবিষ্কার বলে পুলিশ তা মোটেও আমলে নেয়নি।
বন্ধুবান্ধবঃ নিশ্চয় বলিউড নায়িকা শ্রদ্ধা কাপুরের সাথে পরের মুভিতে দেখা যাবে। এত টেনশনের কি আছে!

এই সব দেখিয়া শুনিয়া মাথায় গিট্টু লাগিয়া গেল। অতঃপর এই সিদ্ধান্তে উপনিত হইলাম যে, কতিপয় কিউট জঙ্গি সরকার, বিএনপি, জামাত, ভারত, পাকিস্তান,আমেরিকা ও ইসরায়েলের সম্মিলিত চক্রান্তে ব্রেইন ওয়াশড হয়ে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে বেড়াতে যায়। সেখানে এতগুলো বিদেশি বিধর্মীকে একসাথে দেখে মাথা খারাপ হয়ে যায় তাদের। বেহেশতে যাবার জন্য তাদের মন আনচান করে ওঠে। জিহাদের প্রস্তুতি নেয় তারা। ওদিকে পুলিশ জঙ্গিদের সাথে আসল বন্দুকযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। তবে সেই বন্দুক যুদ্ধ 'কথিত' না হয়ে সত্যিকারের হবার কারনে কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা আহত, নিহত ও শহীদ হন। তবে এতকিছুর পরও কতিপয় পুলিশবিদ্বেষী জনগন তাদেরকে অত্যাচারী ও দূর্নীতিবাজ প্রমানে ব্যস্ত হয়ে ওঠে। এদিকে সেই রেস্টুরেন্টে জঙ্গিরা এর পরে সুরা পাঠ বিষয়ক কুইজের আয়োজন করে। কুইজে ফেল করার অপরাধে বিশ জনকে মেরে ফেলা হয়। হিজাব পরিহিত আপুদের আর ইসলাম শিক্ষা বিষয়ে জিপিএ ৫ পাওয়া ছাত্রদের 'মোস্ট ভ্যালুড জিম্মির' সম্মান দিয়ে সসম্মানে মুক্তি দেয় জঙ্গিরা। আর সেখানে দেশি বিদেশী নাগরিকদের নাজায়েজ পোশাক দেখে তারা মাইন্ড করে তারা। শুধু তাই না জঙ্গিরা জিম্মিদের রাতের খাবার ও সেহেরী দিতে পারশিয়ালিটিও করে।এদিকে কাউন্টার অ্যাটাকের স্ট্র্যাটেজি ঠিক করতে যৌথ বাহিনীর রাত কাবার হয়ে যায়। ঘটনা শুরু হওয়ার মাত্র ১২ ঘন্টা পর সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথবাহিনী সাজোয়া যান নিয়ে লুকিয়ে থাকা জংগীদেরকে বীরত্বের সাথে গুলি করে হত্যা করে। জঙ্গিদের লাশের হিসাবের অংক মেলাতে রেস্টুরেন্টের কুক এর লাশ বসানো হয়। এর পরেও হিসাব না মেলায় হিসাবশাস্ত্রের সাহায্য নেয়া হয়। হিসাব মেলানোর সুবিধার্থে একজন জঙ্গিকে Miscellaneous অ্যাকাউন্ট তথা গোজামিল হিসেবে রাখা হয়। সরকার একে অভূতপূর্ব সফল অপারেশন বললেও নিন্দুকেরা অবশ্য এই অপারেশনকে প্রেগন্যান্ট মহিলার অপারেশনের সাথে তুলনা করে। এরকম যে, মাকে বাঁচানো গেলেও বাচ্চা মারা গেছে আর মা'র সুস্থ শিশু জন্মদানের ক্ষমতা চিরতরে নষ্ট হয়ে গেছে।
পরে ভাইরাল হওয়া যুদ্ধক্ষেত্রের এক ভিডিওতে রহস্যময় এক ন্যাড়া মাথার লোকের আবির্ভাব হয়। তাকে জঙ্গি অথবা নির্দোষ প্রমানের বিষয়ে পাবলিকের গবেষনা ফেসবুকে এখনও চলমান আছে। আর এ বিষয়ে পুলিশের ফলাফল শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এখনও আলোর মুখ দেখেনি। এদিকে লাইট,ক্যামেরা,অ্যাকশন নিয়ে ইস্যুখাদক বাংলার মিডিয়া ঘটনাস্থলে ঝাঁপিয়ে পরে। পরবর্তিতে সেই যুদ্ধ লাইভ প্রচার করতে না পেরে সরকারের উপর গোস্যাও করে। অন্যদিকে এই ঘটনা ফেসবুকে বেশকিছু অসাধারন প্রতিভাবান গোয়েন্দা, সর্ববিষয়ে পন্ডিত, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও নিরাপত্তা গবেষকের জন্ম দেয়। বাঙালী জাতি এই অভূতপূর্ব রোমাঞ্চকর ঘটনায় আগের সব ইস্যু ভুলে গিয়ে নতুন ইস্যু নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে কি-বোর্ডে,চায়ের কাপে আর ইফতারের থালায়।

অন্যদিকে চিপা দিয়ে কয়েকজন হতভাগা বাবা-মা আর স্ত্রী-সন্তানের আর্তনাদ আকাশে বাতাসে প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিরে আসে....

এতসব ভয়ঙ্কর ঘটনার আড়ালে অনন্য ত্যাগের মাধ্যমে ফায়াজ নামের এক তরুন আমাদের ন্যাশনাল হিরো হয়ে গেলেন। সাথে সাথেই দুনিয়ার সর্ববিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রিধারী অনলাইন পোর্টালের কিছু বিশ্ব সেরা সাংবাদিক তাদের জ্ঞানগর্ভ গবেষনায় নতুন নিউজ প্রসব করে বসল, "দেখুন, নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারবেন না। ফায়াজ ইজ নট ন্যাশনাল হিরো, হি ইজ ন্যাশনাল জিরো। তার সাথে থাকা আমেরিকান বান্ধবীরা আসলে মহিলা জঙ্গি। বাংলাদেশকে ড্রোন উড়ানোর মাঠ বানাতে এসবই আমেরিকার কুটচাল।" অনুমানের উপর ভিত্তি করে, আবছা ভিডিও দেখে আমরাও সাথে সাথে তাকে জঙ্গি বানিয়ে দিলাম। কেউ আবার দরিদ্র অসহায় বাবুর্চির জন্যে মায়াকান্না করতে শুরু করল!
যাকগে, বাদ দেন। আমার মত আপনার ঘিলুতেও গিট্টু লেগে যেতে পারে। এতসব হিসাবের মধ্যে না গিয়ে চলুন পুলিশের কাছে সেই কিউট জঙ্গিদের নাম শুনে আসি। আকাশ, বিকাশ, ডন, রিপন , বাধন। এক্কেবারে ছন্দ মিলানো কবিতা যেন। এ যুগের ছন্দের যাদুকর হিসেবে সেই পুলিশ অফিসারকে কি সত্যন্দ্রনাথ দত্ত পদক দেয়া যেতে পারে না। মেয়ে জঙ্গী হইলে কি তাদের নাম এমন হতো; হেনা, শাবানা , লুনা, মুনা, টিনা?

মনটা ভারি বিষন্ন ছিল। জাতির অর্থনৈতিক মেরুদন্ড ভেঙে দেয়া হচ্ছে। বিদেশিদের কাছে আমরা ক্রমেই বিপদজনক রাষ্ট্রে পরিনত হয়ে যাচ্ছি। আসলে আমরা ভয়ঙ্করভাবে বিভক্ত আর ব্যর্থ জাতিতে পরিণত হয়ে যাচ্ছি দিন দিন। আর আমরা এখনও ব্লেম গেম খেলে যাচ্ছি। আর ওদিকে অসহায় বুড়ো মুক্তিযোদ্ধা আর প্রকৃত দেশপ্রেমিকদের দীর্ঘশ্বাসগুলো বাতাসে হারিয়ে যাচ্ছে!

দেখে শুনে মনে হচ্ছে শুধু যৌথ বাহিনী না, এই ঘটনায় বিস্ময়করভাবে ইতিহাসে প্রথমবারের মত একই সাথে জংগী, আইএস,সরকারী দল, বিরোধী দল, মিডিয়া,ডান, বাম সবারই জয় হয়েছে। এদিকে বাংলার আকাশে অদৃশ্য শকুনের আনাগোনা.... চকচকে চোখে একটি জাতির মৃত্যু কামনায় অপেক্ষমান। আর আমরা তারপরও ব্লেম গেম খেলে যাচ্ছি।
আর ওদিকে মাটিতে উড়তে থাকা লাল সবুজ রঙের একটা অসহায় পতাকা থেকে দীর্ঘশ্বাস সহ এক ফোঁটা রক্ত মাটিতে গড়িয়ে পড়ে!

সূত্রঃ গত দুদিনের ফেবু সেলিব্রেটি/ব্লগারদের স্ট্যাটাসসমূহ, জনগনের হিতাকাঙ্খি থুক্কু হিটাকাঙ্খি অনলাইন মিডিয়ার খবর মতান্তরে গোবর, দায়িত্বশীল অথবা দায়ীত্বজ্ঞানহীনদের বক্তব্য আর লাইভ প্রচারে না যেতে পারা অভিমানী মিডিয়া আর রসিক আর ইস্যুপ্রিয় বাঙালীর উর্বর মস্তিষ্কের চিন্তাভাবনার ফসল ।

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই জুলাই, ২০১৬ ভোর ৫:৫৭

মো সাদিকুর রহমান বলেছেন: পুরো ঘটনাটা এখানে মানুষ পেয়ে যাবে সাথে থাকছে নান্দনিক ভাষার কারুকার্য। তবে ক্ষমতাবান সেই জংগী কে তা অজানাই থেকে যাবে হয়ত।

০৫ ই জুলাই, ২০১৬ বিকাল ৩:৪৯

পলক শাহরিয়ার বলেছেন: হ্যাঁ। যত যাই ঘটুক ক্ষমতা আঁকড়ে বসে থাকা আর যেকোন মূল্যে ক্ষমতায় আরোহন যাদের লক্ষ্য তাদের কাছে এমন ভাল কিছু আশা করা ঠিক হবে না। :(
ভাল থাকবেন।

২| ০৫ ই জুলাই, ২০১৬ সকাল ১১:০৪

রেজা এম বলেছেন: বাল হে বাঙ্গাল B-)

০৫ ই জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১২:১৮

পলক শাহরিয়ার বলেছেন: এক সময় গর্বের সাথে উচ্চারিত হতো একটি স্লোগান.....আমরা সবাই বীর বাঙ্গালী। দেখে শুনে মনে হচ্ছে স্লোগান বদলে দেবার সময় হয়েছে...আমরা সবাই বাল বাঙ্গালী। কি বলেন?

৩| ০৫ ই জুলাই, ২০১৬ বিকাল ৪:২৮

আশরাফুল ইসলাম (মাসুম) বলেছেন: বর্ননা কৌশলে মজা পেলাম....

০৫ ই জুলাই, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:২৯

পলক শাহরিয়ার বলেছেন: ধন্যবাদ....ভাল থাকবেন আর সাবধানে থাকবেন।

৪| ০৬ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ১:৪৭

হাসান মাহবুব বলেছেন: ভালো ধারাবিবরণী দিছেন।

০৬ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ১:৫৪

পলক শাহরিয়ার বলেছেন: :) :) B-) B-) ;)

৫| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৩:৩২

ভাবুক কবি বলেছেন: কিন্তু রহস্য আজও অজানাই থেকে গেলো

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.