নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার মত আমি

আসুক যত ঝড় বিপতি বাধা.... উননত করি শির ,নোয়াবোনা মাথা

মাহামুদ রোমেল

মোর নাম এই বলে খ্যাত হোক আমি তোমাদেরি লোক আর কিছু নয় এই হোক শেষ পরিচয়

মাহামুদ রোমেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

পদ্মা পাড়ের গদ্য পদ্য

০৬ ই আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৩২

পদ্মার মাওয়া ঘাটে যখন পৌঁছাই তখন ঘড়ির কাঁটা পাঁচটা ছুঁই ছুঁই করছে। লঞ্চ ডুবির চব্বিশ ঘন্টা পার হয়েছে বেশ আগেই। তখনো সনাক্ত করা যায়নি লঞ্চের অবস্থান। চলছে সনাক্তকরন অভিযান। বিআইডব্লিউটিএ’র তত্বাবধানে ফায়ার ব্রিগেড, কোষ্ট গার্ড, পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ে চলছে এই অভিযান। কিন্তু সাফল্যের ঝুলি তখনো শূন্য। পদ্মায় বাঁধ ভাঙ্গা স্রোত, উত্তাল ডেউ। পাড়ে স্বজনদের উদ্বিগ্ন অপেক্ষা। বিষাদের কালো ছায়ায় ভারী বাতাশ। সহমর্মিতা জানাতে আসা শুভানুধ্যায়ীদের ভীড়। এটাই যেনো পদ্মা পাড়ের শেষ বিকালের চিত্রকল্প। সবার একটাই প্রশ্ন, কোথায় আছে পিনাক-৬। কোথায় তাদের হারিয়ে যাওয়া স্বজন?



লাশ চাই, লাশ নাই

বাংলাদেশের ইতিহাসে এমনটা আর ঘটেনি কখনো। দুইদিন শেষ হতে চললো এখনো কোন লাশের সন্ধান নেই। নেই লঞ্চের সন্ধান। সারাদিনে কোন লাশ উদ্ধার হয়নি। আগেরদিন যে পাঁচটি উদ্ধার হয়েছিলো, সংখ্যাটা ওখানেই সীমাবদ্ধ। নড়েনি আর। স্বজনদের লাশ চাই, প্রশাসন বলে লাশ নাই। কিন্তু নিখোঁজের তালিকায় তখন পর্যন্ত জমা পড়েছে ১২৯টি নাম। এই তালিকা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে আরও। নারায়নগঞ্জের জব্বার আলী অপেক্ষায় আছেন স্ত্রী ও দুই কন্যার লাশের জন্য। আফিয়া খাতুন বসে আছেন একমাত্র পুত্র ও পুত্রবধুর লাশের জন্য। নাম না জানা শিশুটি মায়ের কোলে বসে অপেক্ষায় আছে তার প্রিয় বাবার লাশের জন্য। পার হচ্ছে উৎকন্ঠার সময়। অপেক্ষায় উদ্বিগ্ন স্বজন। কখন মিলবে লাশ!



রহস্যপুরী বারমুডা ট্রায়াংগল

মাওয়া ঘাট থেকে মাইল দেড় দূরে দৃষ্টি সীমার মধ্যেই অলস দাঁড়িয়ে আছে অত্যাধুনিক উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয়। গতকাল বিকেল থেকেই দাঁড়িয়ে আছে জাহাজটি। ডুবে যাওয়া লঞ্চের অবস্থান সনাক্ত হয়নি, তাই উদ্ধার কাজে নামতে পারছে না। এদিকে লঞ্চের অবস্থান সনাক্ত করার জন্য বিআইডব্লিউটিএ এবং ফায়ার ব্রিগেড তাদের ছোট পাঁচটি জাহাজের সাহায্যে ম্যানুয়ালি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু ফলাফল শূন্য। লঞ্চটি খুঁজে পাচ্ছেননা তারা। তবে কি লঞ্চটি অদৃশ্য হয়ে গেলো! এ যেনো রহস্যপুরী বারমুডা ট্রায়াংগল। একদিকে প্রবল স্রোত অন্যদিকে ১০০ফিটেরও বেশি গভীর পদ্মা। ধারনা করা হচ্ছে, স্রোতের টানে অনেক দূরে চলে গেছে লঞ্চটি। কেউ কেউ বলছে পলির নিছে চাপা পড়ে গেছে। তবুও চেষ্টা অব্যাহত আছে। খবর দেওয়া হয়েছে হাইড্রোলিক সার্চিং সুবিধা সম্বলিত জাহাজ জরিপ-১১ কে। চট্রগ্রাম থেকে রওনা দিয়েছে এটি। আজ সকাল পর্যন্ত এসে পৌঁছায়নি সেটিও।



যতটা সম্ভব কাছে যাওয়া

যতটা সম্ভব দূর্ঘটনাস্থলের কাছে যেতে হবে। কিভাবে যাবো! সঙ্গী আমাদের সময়ের রিকু ভাই বের করলেন এক পথ। নদীর পাড় ঘেষে হাঁটতে হবে মাইল দেড়েক। সামনে জলাভূমি। কি বিপদ! কিন্তু পেছনে ফিরে যাবার প্রশ্নই আসে না। যাই থাকুক, সামনেই এগুতে হবে। নেমে পড়লাম পানিতে। পানি হাঁটুর উপর উঠতেই ভাবলাম, সর্বনাশ। এই বুঝি গোসল হয়ে গেলো! পকেটে মোবাইল, মানিব্যাগ, কাগজপত্র। কিন্তু না, শেষ পর্যন্ত পানি এটুকুই। পার হলাম সেই পথ। গেলাম, যতটা সম্ভব কাছাকাছি। কথা হলো প্রত্যক্ষ্যদর্শীদের সাথে। সে এক অনন্য অভিজ্ঞতা।



বিয়োগান্তক গল্পের শেষ পাতা

পদ্মার পাড়ে এখন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে হাজারো গল্প। ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপটে তিল তিল করে বেড়ে উঠা এসব গল্পরা আজ মিলে গেছে শেষ পাতায় এসে। এ যেনো কোন ট্রাজেডি গল্পের শেষ পাতা। প্রিয়জন হারানোর বেদনায় বুঁদ হয়ে আছে একেকটি গল্পের বুক। মুখে বিষাদের কালো মেঘ। ষাটোর্ধ জব্বার আলী নির্বাক বসে আছেন পদ্মার পাড়ে। উদাস দৃষ্টি পদ্মার ঐ প্রান্ত ভেদ করে চলে গেছে আরো সুদূরে। জিজ্ঞাস করতেই শান্ত কণ্ঠে জানান, বড় মাইয়াডা এইবার ইন্টার পরীক্ষা দিছে, ছোট মাইয়াডা ক্লাস এইটে পড়ে। মায়ের সাথে চইলা গেছে তারা। আর ফিরা আইবো না। পড়ার টেবিলে বই খুইলা আর বুঝি কেউ পড়তে বইবো না! জব্বার আলীর গলা ভারী হয়ে আসে। চোখের অশ্রু শুকিয়ে গেছে আগেই। সর্বনাশা পদ্মা শুষে নিয়েছে তার সব অশ্রু। আশেপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে আরো শত শত গল্প। সবগুলো গল্পের শেষ একেকটি পাতা যেনো স্বজন হারাদের শুকিয়ে যাওয়া একেক ফোটা চোখের জল।



আরেকটি কালো সন্ধ্যা

পদ্মার বুকে নেমে এসেছে আরেকটি কালো রাত। অন্ধকারের ছায়া পড়েছে পদ্মার জলে। সারাদিন একটিও লাশ উদ্ধার হয়নি। সন্ধ্যা নেমেছে। ঘাটে ফিরে আসছে একটি একটি করে উদ্ধারকারী জাহাজ। স্বজনরা উদ্ভিঘ্ন, অপেক্ষার বাঁধ ভেঙ্গে যাচ্ছে তাদের। লাশ চাই। সবাই ছুটছে উদ্ধার তৎপরতা সমন্বয়কারী সেল গুলোর দিকে। একটু যদি আশার খবর পাওয়া যায়। লঞ্চের অবস্থান সনাক্ত হয়েছে কি? আর কোন লাশ পাওয়া গেছে কি? সবার একই জিজ্ঞাসা। কিন্তু উত্তর নেই কোন। যারা উত্তর দেবে তারা নিশ্চুপ। প্রশাসন নিশ্চুপ। বাড়তে থাকে স্বজনহারাদের অপেক্ষার প্রহর।



রোমান্টিক পদ্মা

আকাশে শুক্ল পক্ষের চাঁদ উঠেছে। মেঘের সাথে লুকোচুরি খেলা চাঁদ তার জ্যোৎস্না ছড়িয়ে দিয়েছে চারপাশে। সেই জোস্নার আলো উছলে পড়ছে পদ্মার জলে। আলো ডেউয়ের খেলায় মুক্তোর মত চিক চিক করছে পদ্মার জল। ওপাড় থেকে ভেসে আসছে নরম শীতল বাতাশ। মুহুর্তেই পদ্মাকে যেনো হঠাৎ দেখা অপরিচিত কোন সুন্দরী যুবতী মনে হয়। পদ্মার এমন মনোমুগ্ধকর রুপের হাতছানিতে যে কেউ হারিয়ে যেতে পারে ইন্দ্রপুরে। কতো রোমান্টিক এই পদ্মা! অথচ কি তার সর্বনাশা রুপ। পদ্মার কোল ঘেষে বসে ভাবি। চোখের সামনে ভেসে উঠে বাঁচার আকুতি নিয়ে চিৎকার করা প্রিয়ন্তি নামে সেই ছোট্ট শিশুটির মুখ। কোন এক উদ্ধারকারীর চোখের সামনে থেকে যাকে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে শিল্পী আব্দুল আলীমের সর্বনাশা এই পদ্মা।



নির্ঘুম রাত শেষে ভোর

রাতে আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ রাখা হয় উদ্ধার অভিযান। আমরা আস্তানা গেড়ি বিআইডব্লিউটিএ’র জাহাজ ‘’সন্ধানী’’ তে। পদ্মার ডেউ এসে ভাঙে জাহাজের গায়ে। জলের কল কল শব্দে ভেঙ্গে চলে রাতের নিস্তব্দতা। দানব আকৃতির ফেরিগুলো নিয়মিত বিরতিতে পার হয়ে যায় পাশ ঘেষে। মেঘাচ্ছন্ন আকাশ। মাঝে মাঝে নামে ঝির ঝির বৃষ্টি। শেষ রাতে বৃষ্টির সাথে বয়ে যায় ঝড়ো হাওয়া। আমরা অপেক্ষায় থাকি ভোরের। অবশেষে আসে ভোর। সূর্য হেসে উঠে পুব আকাশে। শুরু হয় আরেকটি কর্মমুখর দিনের প্রস্তুতি......

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১০:৪৯

মুহাই বলেছেন: বড় মাইয়াডা এইবার ইন্টার
পরীক্ষা দিছে, ছোট মাইয়াডা ক্লাস
এইটে পড়ে। মায়ের
সাথে চইলা গেছে তারা। আর
ফিরা আইবো না। পড়ার টেবিলে বই
খুইলা আর বুঝি কেউ পড়তে বইবো না!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.