নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুহৃদ আকবর

Do Well, Be Well

সুহৃদ আকবর › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমি যদি কিশোর হতাম

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:৪৭

লিফটের সুইজ টিপে অফিসে উঠতেছিলাম। তখন আমার সাথে দুই ভদ্রলোকও উঠলো। তারা দু’জন জীবন সম্পর্কে অনেক কথাই বললো। সে সবের সবটুকু লেখা এখানে সম্ভব নয়। তাদের আলাপচারিতার একটি মাত্র বাক্যকেই আমি আজকে আমার গল্প লেখার বিষয়বস্তু হিসেবে বেছে নিয়েছি। তারা দু’জন অনেক কথাই বলেছিল। তাদের কথা থেকে জীবন সম্বন্ধে অনেক কিছু জানতে পেরেছি। তাদের প্রথমজন বলল দোস্ত, ১৬ হাজার টাকা বেতনের চাকরি ছেড়ে আজকে আমি এখানে পড়ে আছি। অপরজন বলল, আমিতো গত বছর এ্যাডভোকেট শিপ পেয়েই গেছিলাম। প্রথমজন আবার বলল, জীবনটা যদি লিফট হত, সুইজ টিপে উপরে উঠে যেতাম। দু’জনের কথা থেকে জীবন সম্বন্ধে তাদের এক ধরণের ভীতি আর হতাশা ফুটে উঠেছে বলেই আমার কাছে মনে হয়েছে। কিন্তু আমি আমার জীবন সম্বন্ধে বরাবরই আশাবাদী। কেননা আমি আমার সৃষ্টিকর্তার প্রতি একজন বিশ্বাসী মানুষ। আমি এ কথা গভীরভাবে বিশ্বাস করি, আমার সৃষ্টিকর্তা কখনো আমাকে কষ্ট দেবেন না। তিনি আমাকে বিপদে ফেলবেন না। আমাকে অপমান করবেন না। কেননা আমি আমার যোগ্যতাকে সর্বোচ্চ কাজে লাগানোর জন্য দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছি; এই সাধনা সারাজীবন করে যাব বলে ঠিক করেছি। দিনরাত আমি তাঁর কাছে এটাই মুনাজাত করি। আশা করি তিনি আমার মুনাজাত ফিরিয়ে দেবেন না। কেননা পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, যে জাতি নিজের ভাগ্য পরিবর্তণে সচেষ্ট হয় না, আল্লাহও তার ভাগ্য পরিবর্তণ করেন না। আমি দু’জন ব্যাক্তির মত এতটা উপরে উঠতে চাইনা, আমি চাই লিফটের সুইজ টিপে নিচে নামতে। মানে লিফটের সুইজ টিপে যে রকম উপরে নিচে যাতায়াত করা যায়। আমি যদি একটা সুইজ টিপে আবার আমার সেই কিশোর জীবনে ফিরিয়ে যেতে পারতাম। আমি যদি বর্ষাকালে হাফপ্যান্ট পরে বন্ধুদের সাথে খালে বিলে ঝাপ দেয়ার মুহূর্তগুলোতে আবার ফিরে যেতে পারতাম। মনে পড়ে মাধ্যমিক পর্যায়ে পড়ার সময় একটা চুরির ঘটনা। একদিন বিকেলে ক্লাশ শেষে বাড়ি ফিরছি, তখন ছিল চৈত্র মাস। খা খা রোদে প্রকৃতির কাঁপছে। গরু-ছাগল হাঁপিয়ে উঠছে। আমাদেরও পেটে প্রচন্ড ক্ষিদে। বাড়িতে মা ভাত রান্না করেছেন কিনা তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। কতদিন যে বাড়িতে গিয়ে দেখি মা রান্না করেন নাই। আজ এসব ভাবলে বড় অবাক লাগে। হাসি পায়। আমার কিশোর পেরিয়ে এসেছি প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় হবে। এই এক যুগেই চোখের সামনে দিয়ে কত কিছুরই তো পরিবর্তণ ঘটে গেল। ধানি জামিগুলো থেকে ইতোমধ্যে ধানকাটা হয়ে গেছে। বাকী জমিগুলোতে এখনো পাকা ধান দোল খাচ্ছে। পাকা ধানের মৌ মৌ গন্ধে প্রকৃতির বাতাস আমোদিত। কিছু জমিতে খিরা, বেগুণ, আল, টমেটো, তরমুজের চাষ করেছে কৃষকেরা। বিদ্যালয় ছুটির পর আল দিয়ে আসতেই খিরা ক্ষেতে কচি খিরা দেখতে পেয়ে লোভ সামলাতে পারলাম না। আমরা দু’জন সহপাঠি মিলে দু’টি খিরা চুরি করে খেয়েছিলাম। দুঃখজনক হলেও সত্য সে সহপাঠির নামটি এখন আর অনেক চেষ্টা করেও মনে করতে পারছিনা। সময় মনে হয় এভাবেই মানুষকে সবকিছু ভুলিয়ে দেয়। সে বড়ই সার্থপর। সে শুধু নতুন বিষয়কেই ধরে থাকে।

আরেকদিন আমার এক বন্ধুর সাথে দিনে দুপুরে তাদের নারিকেল গাছ থেকে কচি ডাব চুরি করে খেয়েছিলাম। অন্যদিন জৈষ্ঠ্য মাসের ভ্যাপসা গরমের এক রাতে বন্ধুদের সাথে আরেক বন্ধুদের আম বাগান থেকে আম চুরি করে খেয়েছিলাম। এসব চুরির ঘটনা মনে পড়লে আজো আমার হাসি পায়।

মনে পড়ে গেল গরম কালের কথা। গরম কালে বিদ্যালয় থেকে ফেরার পর জাম-কাপড় খুলেই প্রথমে মাছ ধরতে চলে যেতাম। বাড়ি থেকে যাবার সময় রাস্তার পাশে আমাদের জমিতে একটা গর্ত করে যেতাম। গর্ত করার পর সেখানে পানি জমতো। গর্তটিতে আমি গাঢ় সবুজ একটা তালপাতা দিয়ে ঢেকে যেতাম, যাতে রোদ পড়ার সাথে সাথে মাছের দল এসে সেখানে জমা হয়। এরপর আমি বিদ্যালয়ে চলে যেতাম। এদিকে সূর্য যত উপরে উঠত রোদের তাপও তত বাড়তে থাকত। ধান কাটা জমি থেকে কই, শিং, পুটি, রূপচাঁদা, মাগুর এসে সে গর্তে জমা হতো। তারা মনে করত নিরাপদ জায়গায় এসে পৌঁছেছে। আসলে ক্ষণিকের এ নিরাপদ জায়গা যে তাদের পুরো জীবনটাই কেড়ে নেবে তা তাদের জানার জানা থাকত না।

কিশোরবেলায় আমার অনেক বন্ধুই ছিল। তবে আমরা তিনজন ছিলাম খুবই ঘনিষ্ট-আমি, সেলিম, রেজাউল। বেশিরভাগ সময় আমরা একসাথে চলতাম। তখন ভাবতাম আমরা বুঝি আর আলাদা হব না। সারা জীবন আমরা এ রাস্তা ধরে কেবল হাঁটতেই থাকব। হাঁটতে হাঁটতে আমরা যুবক হব এরপর বিয়ে-শাহী করব। বৃদ্ধ হয়ে এক সময় মৃত্যু বরণ করবও এই গ্রামে। কিন্তু না আমাদের আলাদা হতে বেশি সময় লাগেনি। সময় সবকিছু পাল্টে দিয়েছে। সে পাল্টে দিতে জানে। আজ আমরা তিনজন তিন মেরুতে অবস্থান করছি। রেজাউল সৌদিতে থাকে। সেলিম বিয়ে করেছে, স্টার লাইন কোম্পনীতে চাকরি করে, ফেনীতে থাকে। আমি পড়ে আছি ঢাকায়। কখনো ভাবিনি আমি ঢাকায় আসবো। সাংবাদিকতা করব। এখন আমি ঢাকায় থাকি। সাংবাদিকতা করছি। ভাবিনি কখনো এক লাইন লিখব। ছোটবেলায় পত্রিকার পাতায় গল্প কবিতা, ফিচার, কলাম পড়তে পড়তে অবাক হয়ে ভাবতাম। এগুলো কিভাবে লেখা সম্ভব। এখন আমি টুকটাক লেখালেখি করছি। মানুষ আমাকে লেখক বলে, কবি বলে সম্বোধন করে এগুলো ভাবলে বড় অবাক হতে হয়। জীবন ¯্রােতে ভাসতে ভাসতে বাকী জীবনটা কোথায় গিয়ে ঠেকে তা বলা মুস্কিল। মনে পড়ে একসাথে টেম্পুতে করে আমরা তিন বন্ধু এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছি। আমাদের পরীক্ষা কেন্দ্র ছিল সোনাগাজীতে। সোনাগাজী আমার থানা হলেও আমি বড়জোর তিন-চার বার মাত্র সেখানে গিয়েছি। সোনাগাজীর মুহুরী প্রজেক্টের সবুজ প্রকৃতি দেখতে একবার গিয়েছিলাম কয়েকজন বন্ধুর মিলে। সে বন্ধুদের কারো নাম আর মনে করতে পারছিনা। তবে সেখানের জমে থাকা পলিমাটি, পানির ¯্রােত, সবুজ অরণ্য, পানকৌড়িদের মাছ শিকারে ব্যস্ত দৃশ্য এখনো আমার চোখের পাতায় লেগে আছে। মনে পড়ে আমরা তিন বন্ধু মিলে গোধূতি বেলায় গ্রামের রাস্তা ধরে হাঁটা শুরু করতাম। আমাদের বাড়ির দু’পাশে দু’টি রাস্তা দু’দিকে চলে গেছে। একটি রাস্তা ছিল নদীর তীর ঘেষে। এটি ছিল ফেনী নদীর একটি শাখা নদী।

বছরে দুই তিনবার মায়ের সাথে নানার বাড়িতে যেতাম। আমার নানার বাড়ি ছিল ফটিকছড়ি। আমার বড় মামি আমাদেরকে অসম্ভব রকম আদর করতেন। শিল্পী আপুও আদর করতেন। আমার খালাতে ভাই মোজাম্মেল হক (মনু), মিজান, আর আমি একসাথে থাকতাম। মাঝে মাঝে মামাতে ভাই সোহেল, খালাতে ভাই নাছির এসে আমাদের সাথে যোগ দিত। মামাতে ভাই সোহেল আমাদেরকে খুব ভালবাসত। তার সাথে নাস্তা করলে কখনো আমাদেরকে বিল দিতে দিত না।

আমি থাকতাম আমার ছোট খালার বাসায়। মিজান আমার খালার একমাত্র ছেলে। আমি বাড়িতে বসে বসে বসে পড়তাম। আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতাম কখন মিজান স্কুল থেকে ফিরবে তার জন্য। কারণ, সে আসলে আমরা দু’জন দাতমারা বাজারে কিংবা পিচঢালা কালো রাস্তা ধরে হাঁটতে বের হতাম। মেহগনির কচি পাতা দিয়ে আমারা একে অপরের সাথে দুষ্টামিতে মেতে উঠতাম। এগুলো হল আমার কিশোর বেলাকার দুষ্টু, মিষ্টি, বিরহী স্মৃতি।



মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:৪২

মদন বলেছেন: +++++++++++++

২| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৩:৪৯

ডরোথী সুমী বলেছেন: ভাল লেগেছে। জীবনে হতাশ হবার কিছু নেই, যেমন কর্ম তেমন ফল হবেই। আমাদের প্রয়োজন আল্লাহ্‌তে বিশ্বাস রাখা আর নিজের লক্ষ্যে স্থির থাকা। শুভ কামনা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.