নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুহৃদ আকবর

Do Well, Be Well

সুহৃদ আকবর › বিস্তারিত পোস্টঃ

বংশী নদীর ওপারে ও প্রথম জাবি দর্শন

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:২৪

অনেকদিন থেকে নোমান আমাকে তাড়া করছিল সাভার যাওয়ার জন্য। সে নাকি সাভারে জায়গা কিনেছে। আমাকে তা দেখতে হবে। ফার্মগেট থাকতে সে আমার রুমমেট ছিল। এখন ভালো কবিতা লিখে। অল্পদিন হল শহরে এসেছে। এর মাঝে অনেকের সাথে সে পরিচয় করে ফেলেছে। সে ভালো একজন সংগঠক। সে সব সময় বলে, ভাই আপনার দেখাদেখি আমি লেখালেখি জগতে এসেছি। আমি তার কথা শুনে হাসি। সে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ আমাকে উৎসর্গ করেছে। ছাপানো বইতে আমার নাম দেখেতো টাসকি খাওয়ার জোগাড়। আজ পর্যন্ত আমার কোনো কথায় সে না করেনি। সব সময় এক কথায় মেনে নিয়েছে। সাভার যেতে আমি রাজি হচ্ছিলাম না। আজ যাব কাল যাব বলে ওকে বুঝ দিতে লাগলাম। ও হল নাছোড়বান্দা। বলল, আমি সাভার জায়গা কিনেছি আপনি যাবেন না তা কি হয়। একদিন ফোন করে ওয়াদা আদায় করল। কখন যাবেন বলেন। আমি বললাম তোমাকে আমি পরে জানাব। কোনো এক শুক্রবার যাওয়ার জন্য ডেট ঠিক করেও আর যাওয়া হয়নি। ও বলল ঠিক আছে পরে জানাবেন ভাই। শুক্রবার আমার অপ ডে। তাই বৃহস্পতিবার রাতে নোমানকে ফোন দিয়ে বললাম, ইনশাআল্লাহ আগামীকাল আমরা সাভার যাচ্ছি। ও বলল ঠিক আছে।
সকাল পৌনে দশটার দিকে আমরা (আমি আর সবুজ ভাই) দু’জন শাহজাদপুর থেকে বাসে উঠলাম। আমাদের যাতায়াতের মাধ্যম হলো বৈশাখী পরিবহণ। কথা ছিল নয়টায় আমরা রওয়ানা দেব কিন্তু অপর সঙ্গী দেরী করে ফেলল। অপরজন বলতে সবুজ ভাইয়ের কথা বলছিলাম। সবুজ ভাই এসেই সরি বলে দিলেন। সবুজ ভাইয়ের হাসিমুখ দেখলে কোনো রাগই আর থাকে না। আসলে পৃথিবীতে এমন কিছু মানুষ আছে যাদের কারণে বোধহয় পৃথিবীটা এত সুন্দর। নির্লোভ, নির্ভেজাল, সজ্জন একজন মানুষ সবুজ ভাই। খাটি সোনার সাথে তুলনা করা যেতে পারে। কিভাবে যে আমার মতো সাধারণ একজন মানুষের সাথে এ রকম মহৎ মানুষের বন্ধুত্ব হলো সে কথা ভেবে আমি কোনো কুল পাই না। সবুজ ভাইয়ের মতো আরো দুই একজন বন্ধু আমার আছে। আমার নিজস্ব একটা দর্শন মেনে চলার চেষ্টা করি, আমি নিজে অতোটা ভালো মানুষ না হলেও ভালো মানুষের সাথে চলার চেষ্টা করি।
সাভার পৌঁছতে এগারটা বেজে গেল। আগে থেকে নোমান আমাদের জন্য ওখানে অপো করছিল। একটা দোকানে জিলাপি দেখে সবুজ ভাই লোভ সামলাতে পারল না। নিজের কথা আর নাইবা বললাম। আমরা পরটা দিয়ে জিলাপি খেলাম। বেশ ভালো লাগল। আমি চা খেতে চাইলাম। ও হোটেলে চা বিক্রি করে না। যে হেটেলে চা বিক্রি করে না তা আমার কাছে একদম বাজে মনে হয়। কী রে বাপু তুই এত টাকা দিয়ে হোটেল দিলি চা বিক্রি করবিনা তাতো হয় না। তাহলে তো তোর সবই বৃথা। আমি সব সময় চা প্রিয় একজন মানুষ। সে জন্য এমন ভাবনা আসে কিনা জানি না।
নোমান একটি নৌকার মাঝিকে ফোন দিল। ওপর ফোন পেয়ে মাঝি ব্রিজের নিচে আমাদের জন্য অপো করতে লাগল। আমার তিনজন নৌকায় উঠলাম। নৌকার দুলুনিতে আমাদের মনটাও দোলে উঠল। আহ! কতদিন নৌকায় উঠিনা। নৌকা যেন আমাকে আমার শৈশবের সোনাঝরা স্মৃতিকেই মনে করিয়ে দিল। আমাদের বাড়ির পাশেই ছিলো ছোট ফেনী নদী। মনে পড়ে আমরা বাড়ির সমবয়সী বন্ধুরা মিলে নৌকায় করে এপার থেকে ওপারে যেতাম। কুলে আসার একটু আগে ঝাপিয়ে পড়তাম পানিতে। আহ! কোথায় হারিয়ে গেল সেইসব দিন। আর বুঝি ফিরে পাব না সেই সোনালী শৈশব। রুপালী কৈশোর বেলাটা সপ্নের মতই বুঝি চলে গেল দেখতে না দেখতেই। এভাবে পুরো জীবনটাই এক সময় শেষ হয়ে যাবে।
একটু যাবার নোমান মুক্তার ভাইকে ফোন দিল। মুক্তার ভাই স্থানীয় একজন ভদ্র মানুষ। তিনি এসেই আমাদেরকে সালাম দিলেন। হাসিমুখে কথা বললেন। আমার মুক্তার ভাইকে পেয়ে দারুন খুশি। মুক্তার ভাই ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে আমাদেরকে সব দেখালেন। আমরা যে প্রজেক্ট দেখতে গেলাম তা দেখালেন। সাভারের ভবিষ্যত পরিকল্পনানর কথা বললেন। তার সমাজসেবার আগ্রহের কথা জেনে আমরা খুশি হলাম। জায়গা দেখা শেষ হলে এবার চা পানের পালা। মুক্তার ভাই আমাদেরকে নিয়ে একটা দোকানে ঢুকল। আমরা সবাই চা খেলাম। দেখলাম দোকানের টেবিলের উপর সারিসারি সাগর কলা সাজিয়ে রাখা হয়েছে। কলা দেখে আমি সবুজ ভাইকে উদ্দেশ্য করে বললাম, কলাগুলোতে বেশ সুন্দর! খাওয়া যায় নিশ্চয়ই। আমার কথা শোনে দোকানদার বলল, খান কলা খান, কলা খেলে তি নাই তো। আমি বললাম কিসের তি। কলা স্বস্থ্যের পে যথেষ্ট উপকারি। বুঝলাম দোকানদারটি রসিক। রসিক মানুষরা সব কথায় একটু রস বের করার চেষ্টা করেন। অতিরিক্ত রসিকটা আমার একদম ভালো লাগে না। তবে দোকানদারিটির সেই রসিকতা খারাপ লাগেনি। আজো মনে আছে।
এরপর আমাদের গন্তব্য হলো জাবি। জাবি মানে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়। আমরা তিনজন হাঁটা শুরু করলাম। গল্প করতে করতে হাঁটছিলাম। নোমান ভালো গল্প করতে পারে। এটাসেটা নিয়ে ওর কথা বলা অভ্যাস। সবুজ বন বনানী ঘেরা চিকন রাস্তা ফেরিয়ে এক সময় পিচডালা রাস্তার দেখা পেলাম। সেখান থেকে প্রায় এক কিলোমিটার হাঁটার পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দেখা পেলাম। পথে জুমার নামাজ আদায় করেছি। পথিমধ্যে একটা সাগর কলার গাছ দেখে সবুজ ভাই আর নোমান ছবি তোলার বায়না ধরল। কিছুটা উঠেপড়ে লাগার মতো অবস্থা। কি আর করা তাদের দেখাদেখি আমিও দুই এক কপি ছবি তুললাম। পিছনের দরজা দিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রবেশ করলাম। রাজা লণ সেন নাকি পিছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে গিয়েছিল। আমরা কিন্তু পালিয়ে যাইনি জাবিতে প্রবেশ করেছি। জাবির ক্যাম্পাসে ঢুকেই গা চমকে উঠল। প্রথম প্রথম সব কিছুই একটু বেশি আকর্ষণ করে। এই প্রথম জাবিতে আসলাম। দেশের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয় আমার দেখা হয়েছে বাকি ছিল এই জাবি। অনেকদিন যাবো যাবো করতে আর যাওয়া হলো না। সেদিন সবুজ ভাই নোমান মিলে সাভার আসার কারণে হঠাৎ আমার মাথায় আসলো জাবিতে যাবার কথাটি। সবুজ ভাইকে বলাতেই উনি রাজি হয়ে গেলেন। জাবির লাল লাল বিল্ডিংগুলো আমাদেরকে অভ্যর্থনা জানালো। ক্যাম্পাসে ঢুকার পরই পেট ছো ছো করতে লাগল। সে জানান দিল আগে কিছু খেয়ে নাও তারপর হবে ঘোরাঘুরি। আমরা একটা ক্যাণ্টিনে গেলাম ভাত খেতে। ভাতের অর্ডার দিতেই বয় বলল মামা ভাত নেই দশ মিনিট দেরি হবে। সাথে সাথেই আমরা বের হয়ে আসলাম। তখন দশ মিনিট আমাদের জন্য দশ ঘন্টার সমান। জাবি দেখতে এসে একটা দোকানে ভাতের জন্য দশ মিনিট বসে থাকব তাতো হতে পারে না। শুরু হলো দেখার পালা। হাঁটতে হাঁটতে আমরা বটতলায় চলে গেলাম। পথে নানান ধরণের গাছপালা চোখে পড়ল। বটতলার সামনে যে পুকুর আছে তা দেখে নোমান আরো কিছু ছবি তুলল। দাঁড়িয়ে থেকে বসে গাছের ডাল ধরে সে ছবি তুলল। সবুজ ভাই তুলল, আমিও তুললাম। এরপর খাওয়া দাওয়ার পালা। গেলাম বটতলার বাঙালি হোটেলে। হোটেলের ম্যানু দেখে চু চড়ক হবার দশা। নানান পদের ভর্তা কত ধরণের যে মাছ তার হিসাব নেই। গরুর মাংস, হাসের মাংস তা এখানে বলে শেষ করা যাবে না। আমরা তিনজন মিলে তিনটি ভর্তা একটি ছোট মাছ একটি রুই মাছের অর্ডার দিলাম। তিনজন পেটপুরে খেলাম। বিল আসল মাত্র ১৪০ টাকা। বিলশুনে আপসোস করতে লাগলাম আহ আর একটু বেশি করে খেলাম না কেন। যাক সামনের কোনো দিনের জন্য এ অভিজ্ঞতা জমা রাখলাম।
খাওয়া শেষে আমি চা পানের প্রস্তাব দিলাম। সবুজ ভাই সাথে সাথে না করল। উনি বুদ্ধিমান একজন মানুষ। কোনো কাজ হিসাব ছাড়া করেন না। বলল আমরা দশ মিনিট পরে চা খাই। নোমান বলল চলেন আমরা দশমিনিট সবুজ ঘাসের উপর বসি। সবুজ ভাইকে নিয়ে আমরা সবুজ ঘাসের উপর বসলাম। খাওয়ার দোকানগুলো অতিক্রম করে বসার আসন চোখে পড়ল। সবুজ ভাই ওগুলোতে বসতে চাইছিলো নোমান বলল ভাই ঘাসের উপর বসি। আমি বললাম না বসব না জোঁক আছে। আরে চলেন জোঁক নেই। আমরা তিনজন ঘাসের উপর বসলাম। প্রজেক্ট সম্পর্কে নোমান আমাদেরকে ব্রিফ করল। মহান আল্লাহর উপর ভরসা করে আমরা একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হলাম। মানে সাভার ধামরাইতে আমরা জায়গা কিনব বলে ঠিক করলাম।
এরপর একটা দোকানে চা খেতে গেলাম। আমাদের পাশের দোকানে একটা ছেলে গিটার নিয়ে গান ধরল। ছেলেটির সাথে আরো অনেকেই বেসুরো গলায় গান ধরল। পাশেই দুইটি কুকুর ঘেই ঘেউ করে ডাকছে। চা খেয়ে আমরা ফাইনালি জাবি দেখা শুরু করলাম। এত বড় বিশ্ববিদ্যালয় হেঁটে দেখা কি সম্ভব! আমরা কিছুণ পায়ে হাঁটলাম আরো কিছু ছবি তুললাম। এরপর একটা ভ্যানগাড়ি ভাড়া করলাম। লেকের পাশ ঘেষে আমাদের ভ্যানগাড়িটি উঁচু নিচু রাস্তা দিয়ে চলতে লাগল। আমরা বেশ মজা করলাম। সেলফি তুললাম। আইসক্রিম খেলাম। গাছের ডালে পাখিরা ডাকছে। লেকের পানিতে অতিথি পাখিরা ডুব সাঁতার খেলছে। তখনও পুরোপুরি শীত আসেনি। তাই এতটা শীতের পাখি চোখে পড়েনি। ঘুরতে ঘুরতে আসরের সালাতের সময় হলো। আসরের সালাত আদায় করে আমরা গাড়িতে উঠলাম। আমাদের গাড়িটি এগিয়ে চলল সামনের দিকে। পিছনে পড়ে থাকল স্বরণীয় একটা দিন। যে দিনটি আর কখনো ফিরে আসবে না। ভাবছি প্রতিদিন যদি এ রকম একটি সুন্দর জায়গা ভ্রমণ করতে পারতাম। তাহলে অন্তত জীবনকে দোষারোপ করতে পারতাম না। যাক অন্তত ভ্রমণ করে জীবন কাটিয়ে দিয়েছি। এ জীবনে কি করলাম! না ভ্রমণ, না পড়ালেখা, না মানবসেবা। এই প্রশ্ন করি নিজেকে। আহ! জীবন এত ছোট কেন? যদি পৃথিবীটাকে একবার চোখ মেলে দেখতে পারতাম।


মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.