নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুহৃদ আকবর

Do Well, Be Well

সুহৃদ আকবর › বিস্তারিত পোস্টঃ

শিশিরের নূপুর পায়ে এলো শীত

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:১৭

পৌষ এবং মাঘ দুইমাস শীতকাল। শীত এলে প্রকৃতি ভিন্ন রূপ ধারণ করে। গাছের পাতা ঝরে পড়ে। বাতাসে শুকনো পাতার মর্মর ধ্বনি শোনা যায়। শীত এলেই আমরা দেখি গাছের পাতাগুলো বিবর্ণ রূপ ধারণ করে। একটা সময়ে কিছু গাছের পাতা ঝরে পড়ে। বাকী গাছের পাতাগুলো ধুনোবালি মেখে কদর্য রূপ ধারণ করে। নজরুল ইসলাম গান লিখেছেন, “শুকনো পাতার নূপুর বাজে... ছোট ছেলেরা ধুলাবালি নিয়ে খেলা করে। সকল ঋতুরই আলাদা কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এটা হলো শীতের সৌন্দর্য। শীতের এলে প্রকৃতির বুকে নির্জনতা নেমে আসে। চারপাশ কেমন চুপচাপ হয়ে যায়। কুয়াশা মোড়া নিঝুম রাতে আর সকালে পুকুরে ধোঁয়া ছড়িয়ে সে আসে। সে আসে মিষ্টি রোদ নিয়ে। কুয়াশা ভেদ করা রূপালী রোদ গাছের পাতার উপর চিকচিক করে।
কবি রফিক আজাদ-এই শীত নিয়ে কবিতা লিখেছেন, “শীত নামে বৃ-েপুষ্পে Ñ/ শীত নামে দিগন্তরে,/ শীত নামে স্তরে-স্তরে/ প্রাণের বিরূদ্ধে নামে,/ জীবন বিপন্ন ক’রে/ বরফ শীতল জলে/ নামে শীত ঘরে-ঘরে।”
বাংলার ষড়ঋতুতে ছয় ঋতুর কথা উল্লেখ থাকলেও মূলত বাংলার প্রকৃতিতে তিনটি ঋতুর প্রাধান্য দেখা যায়। তা হলো গ্রীষ্ম, বর্ষা এবং শীত। শরৎ, হেমন্ত আর বসন্ত খুব দ্রুত ফুরিয়ে যায়। অনেক সময় এ ঋতুগুলো কখন শুরু হয় কখন শেষ হয় তা বলা মুস্কিল। তবুও আমাদের কবি, সাহিত্যিকরা এই তিন ঋতু নিয়ে প্রচুর কবিতা, গান রচনা করেছেন। আমাদের বাংলা সাহিত্যে সেই তুলনায় শীতকে নিয়ে খুব কম রচনা দেখা যায় । বাংলাদেশে এক দিনের বৈশাখ নিয়ে যত মাতামাতি হয় তিন চার মাসের স্থায়িত্বকাল শীতকে নিয়ে তার সিকিভাগও হয় না। এ রহস্যের ভেদ আমার জানা নেই। বাংলা একাডেমী প্রায় বছরই বৈশাখ উপলে বিশেষ সংখ্যা বের করে। শীতকে নিয়ে বিশেষ সংখ্যা বের করেছে বলে আমার জানা নেই। শীতের প্রতি কবিদের এত অনীহা ভাব কেন? বিরূপ মনোভাবই বা কেন সে বিষয়ে সাহিত্যবোদ্ধা মাত্রই প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক। প্রথম চৌধুরীর নির্বাচিত প্রবন্ধ বইয়ে ফালগুন বর্ষাকে নিয়ে প্রবন্ধ থাকলেও শীত নিয়ে কোনো লেখা খুুঁজে পাওয়া যায়নি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিচিত্র প্রবন্ধ বইয়ে নববর্ষা, আষাঢ়, শরৎ নিয়ে প্রবন্ধ স্থান ফেলেও শীত নিয়ে কোনো লেখা সে বইয়ে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। এটা কি আমাদের চেতনাগত সমস্যা নাকি অন্য কিছু। বৈশাখের সাথে আমাদের বাংলা ভাষার একটা আবেগ জড়িয়ে আছে একথা সত্য। এ ভাষার জন্য সালাম, রফিক, জব্বার সহ আরো অনেকে রক্ত দিয়েছে। আর রক্ত দিয়ে যে ভাষায় কথা বলার অধিকার লাভ করতে হয় সে ভাষা কতইনা মহৎ।
বৈশাখ বাংলা পঞ্জিকার প্রথম মাস। শীতের সাথে আমাদের মুখের ভাষার কোনো সম্পর্ক জড়িয়ে নেই সত্য। তবে শীত হলো প্রকৃতির অন্য রকম এক রূপ। বর্ষার মতো রুদ্র আর ভয়াল রূপ নিয়ে সে হাজির হয় হয় না বটে। তবে সে এলে প্রকৃতির বুকে কাঁপন লাগে। প্রকৃতিতে রুèতা দেখা যায়। গাছের পাতা ঝরে পড়ে। রাতে টিনের উপর শিশির ঝরে। নদীর পানি শুকিয়ে যায়। শুকনো পুকুর, ডোবার তলায় মেয়েরা কুতকুত খেলে। ছেলেরা হাডুডু খেলে। কেউবা খেলে কানামাচি ভোঁ ভোঁ। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে, রমনার সবুজ নিকুঞ্জে বাউল সাধক একতারা হাতে গান গায়। তবে খেজুর রসের মিষ্টি গন্ধ আর পিঠাপুলির মিষ্টি স্বাদের কাছে এসব যেন ম্লান হয়ে যায়।
শীত আবহমান বাংলার অন্যতম এক অনুষঙ্গ। দেশের অনেক কবি, সাহিত্যিক শীতকে নিয়ে অসংখ্য কবিতা, প্রবন্ধ রচনা না লিখলেও শীত ঋতুও যে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছে তা অন্তত বলা যায়। এ ঋতু নিয়ে সবচেয়ে বেশি কবিতা লিখেছেন জীবনানন্দ দাশ। অন্য কেউ লিখলেও লিখতে পারেন। তবে আমার জানা নেই। “পউষের শেষ রাতে আজও আমি দেখি চেয়ে আবার সে আমাদের দেশে ফিরে এল;/ রঙ তার কেমন তা জানে অই টসটসে ভিজে জামরুল,/ নরম জামের মতো চুল তার, ঘুঘুর বুকের মতো করুণ আঙুলÑ/ পউষের শেষ রাতে নিমপেঁচাটির সাথে আসে সে যে ভেসে” Ñ (রূপসী বাংলা-এই সব ভালো লাগে)। অন্য কবিতায় লিখেছেন, “এ-সব কবিতা আমি যখন লিখেছি বসে নিজ মনে একা;/ চালতার পাতা থেকে টুপ্ টুপ্ জোছনায় ঝরেছে শিশির; Ñ (জীবনানন্দ দাশÑএ-সব কবিতা আমি)।
জীবনানন্দ দাসকে সে জন্যই বুঝি রূপসী বাংলার কবি বলা হয়। এ ছাড়া মেঘদূতের কবি কালিদাস ঋতুচক্রকে নিয়ে বেশ কিছু কবিতা লিখেছেন। কালিদাস সবচেয়ে বেশি বর্ষাকে নিয়ে লিখেছেন।
কবিকঙ্কন মুকুন্দরাম চক্রবর্তী ‘চন্ডীমঙ্গল’ মধ্যযুগের অন্যতম কাব্য। এ কাব্যের নায়ক কালকেতু নায়িকা ফুল্লুরাা। দেবী চন্ডীর কাছে ফুল্লুরা বারমাসের দুঃখ বর্ণনায় শীতের কথা উল্লেখ আছে এভাবে।
“পউষে প্রবল শীত সুখী যগজন।/ তুলি পাড়ি পাছড়ি শীতের নিবারণ ॥/ হরিণী বদলে পাইনু পুরাণ খোসলা।/ উড়িতে সকল অঙ্গে বরিষয়ে ধুলা ॥/ দুঃখ কর অবধান দুঃখ কর অবধান।/ জানু ভানু কৃশানু শীতের পরিত্রাণ ॥/ মাঘে কুঞ্ঝুটিকা প্রভু মৃগয়াতে জায়।/ আন্ধারে লুকায় মৃগ দেখিতে না পায়।/ ফুল্লুরা কত আছে কর্মের বিপাক।/ মাঘ মাসে কাননে তুলিতে নাহি শাক ॥”
শীতের সকালে লাঙল জোয়াল কাঁধে কৃষক মাঠে যায়। ছেলেমেয়েরা দলবেঁধে মক্তবে যায়। গাছ থেকে খেজুর রস নামায় গাছি। সে রসের গন্ধে চারিদিক মৌ মৌ করে। মা ফিরনী রান্না করে ছেলেমেয়েদের ডাকে। পিঠাপুলির স্বাদ এখনো জিহ্বায় যেন লেগে আছে। দূর্বাঘাসের মাথায় বিন্দু বিন্দু শিশির ফোটে। কলমির ডগা আর বেগুন গাছেল মাথায় কুয়াশা জমে থাকে। সে শিশির বিন্দুকে মনে হবে কিশোরী মেয়ের নাকফুল। তাই শিশিরের নূপুর পায়ে শীত আবার সমাগত হয়েছে বাংলার মাঠে ঘাটে প্রকৃতির বুকে। তইতো শীত এলে কুমড়ো ফুল হাসে। দূর্বাঘাস শিশিরের নূপুর পায়ে হাঁটে।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:৪৯

তার আর পর নেই… বলেছেন: চালতার পাতা থেকে টুপ্ টুপ্ জোছনায় ঝরেছে শিশির …

শিশিরের শব্দ কখনো শুনিনি, এবার শিশিরের শব্দ শুনতে হবে …

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.