নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুহৃদ আকবর

Do Well, Be Well

সুহৃদ আকবর › বিস্তারিত পোস্টঃ

বোবা পেত্নী কালো ভূত

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:৪২

সবুজ গাছগাছালি ঘেরা পাহাড়ি এলাকা। মাঝে মাঝে ছোট-বড় অনেক টিলা। টিলার শরীর লাল মাটির তৈরী। তার উপর নানান জাতের, ফুল, ফলের গাছ। গাছের ডালে পাখির বাসা। বাতাসে ফুলের সুবাস। দুই টিলার মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে চিকন একটি খাল। যাকে পাহাড়ি এলাকার মানুষ চড়া নামে চিনে থাকে। এরই মাঝে বিশাল এক মাঠ। যতদূর চোখ যায় শুধু ধু ধু বালি। তার পাশে একটি বাঁশবাগান। বাঁশ বাগানের পাশে এক বড় এক ঝিল। সে ঝিলে এলাকার ছেলেমেয়েরা মাছ ধরতে আসে। জেলেরা গলা ছেড়ে গান গায়। গোধূলিবেলায় মহিলারা কলসি কাখে পানি নিতে যায়। রাতে পুরুষরা আসে মাছ ধরতে। তখন আকাশের বুকে চাঁদ জ্বলে। চাঁদের ছায়া ঝিলের জলে পড়ে। ঝিঝি পোকারা ডাকতে থাকে বাঁশ বাগানের ফাঁকে। নীল দিগন্তে তারার মেলা বসে। জোছনা মাখা চাঁদের ছবি ঝিলের জলে ভাসে। চাঁদের আলোয় প্রকৃতি নতুন সাজে সাজে। এমন এক রাতে মাছ ঝিলের জলে মাছ ধরতে গেল মজিদ বেপারী। সাথে মজিদের ছেলে রফিক। রফিক কাশ সেভেনে পড়ে। মজিদ কাজের মানুষ। সারাদিন কাজেকর্মে জড়িয়ে থাকে। বিকালে বাজারে গিয়ে রাতে ফিরে। বাজারে সে ধানের ব্যবসা করে। কখনো ব্যবসা ভালো হয় কখনোবা মন্দের ভালোয় দিন কাটে তার। এই নিয়ে টেনেটুনে চলছে তার সংসার। এক ছেলে এক মেয়ে মজিদের। মেয়েটি এবার কাশ টেনে উঠেছে। এরই মধ্যে বিয়ের জন্য টানাটানি শুরু হয়ে গেছে। মানুষকে যতই নিষেধ করে মানুষ তবুও শোনে না। মজিদ মনে মনে ভাবে, ‘মাইয়া মানুষ কি এতই অবলা যে শরীরে মধ্যে একটু মাংসের দলা জমাট বাঁধলে বুঝি তাকে তুলে দিতে হবে বাঘের মুখে’। কত আশা ছিল মেয়েকে একজন ভালো শিতি মানুষ বানাবে। তার সেই আশা আর পূরণ হলো কই। যেভাবে লোকজন ঘাপটি মেরে আছে। তাতে মেয়েটিকে বেশিদিন ঘরে রাখা যাবে না বলে মনে হয়। মেয়েটির কথা মনে হলে মনটা তার হু হু করে উঠে। যাক উপরওয়ালার উপর ভরসা। তিনি যা ভালো মনে করেন তাই করবেন। তার ইচ্ছা ছাড়া তো একটি গাছের পাতাও পড়ে না।
মজিদ বেপারী যখন ঝিলের জলে মাছ ধরতে গেল তখন রাত দশটার বেশি হবে। ইতিমধ্যে অনেক লোক মাছ ধরে চলে গেছে। মজিদ অন্যান্য দিন তার বন্ধু রশিদ বেপারী, কবির বেপারীর দেখা ফেলেও আজ তাদের কারো সাথে তার দেখা হয়নি। এর আগে তারা মাছ ধরে চলে গেছে। সে একা একা মাছ ধরা শুরু করল। আজ ঝিলের ধারে এসেই কেমন গা তার মোচড় দিয়ে উঠল। মজিদ বেপারী সাহসী মানুষ। কিছুকে সে ভয় পায় না। না ভূত, প্রেত, জ্বিন এদেরকে গণার ভেতর ধরার তার টাইম নেই। সে হলো কাজের মানুষ। কাজই তার কাছে সব। সারাদিন মাঠে কাজ করে বিকালে বাজারে গিয়ে ধানের ব্যবসা করে পেট চালায়। তার কি আর এত কিছুকে ভয় করলে চলে! তাই সে কিছুকে আর ভয় পায় না। ভয়কে সে জয় করেছে। আজকে কেন জানি তার বুকটা ধড়পড় ধড়পড় করতে লাগল। গায়ের লোম খাড়া হয়ে উঠল। হঠাৎ ঝিলে জলে পিনপতন নিরবতা নেমে এলো। এতে নিরব কোনোদিন লাগেনি তার কাছে। পৃথিবীর সকল নিরবতা আর ভয় বুঝি এই ঝিলে এসে জড়ো হয়েছে। মজিদ বেপারী এক দৃষ্টে ঝিলের পানির দিকে তাকিয়ে আছে। এমন সয় একটা মাছ ঘাই দিয়ে উঠল। মাছের ঘাই এত বড় ছিল যে তার ঢেউ কুলে আঁচড়ে পড়ল। পানির কয়েকটি ঝাপটা মজিদের চোখে মুখে লাগল। সে আল্লাহর নাম নিয়ে জাল ফেলল। জাল ফেলার সাথে মনে হলো ভারি কোনো জিনিস জালের ভেতর আঁটকা পড়েছে। মজিদ বেপারীর মুখ খুশিতে ঝলমল করতে লাগল। হারিকেনের আলোয় মজিদ বেপারীর মুখখানা দেখে ছেলে রফিক হাসির কারণ জিজ্ঞেস করল। মজিদ বলল, ‘বাবা মনে হয় জালের ভেতর বড় কোনো মাছ আঁটকা পড়েছে। আহ! কতদিন হলো বড় একটা মাছ ধরতি পারি না’। বাবার কথা শুনে রফিক খুশি হলো। সে হাসিমুখে বাবাকে বলল, ‘আজকা মাছ ধরলে কিন্তু বাজারে নিতে পারবা না। বাড়িতে নিয়ে মাকে দিবা রান্না করতে। অনেকদিন হলো বড় মাছ খাই না। আমাগো তুমি খালি ছোটছোট মাছ খাওয়াও। হয় বাপদন হয় ছোটমাছ শরীরের পে ভালো। তাছাড়া অনেক ভিটামিন আছে। বাবার কথা শুনে রফিক বলে, ‘বড় মাছে বুঝি ভিটামিন নাই। ওইদিন দেখলাম তুমি বাজারে নেওয়ার সাথে সাথে বড় মাছটি পাশের বাড়ির গফুর মিজি কিনে নিয়েছে। যতদূর জানি গফুর মিজি এলাকার অনেক বড় ধনী লোক। তারাতো ভিটামিন ছাড়া মাছ খাইবো না’। ছেলের কথা শুনে মজিদ বেপারী চুপ মেরে যায়। বলল, ‘যা বাবা আজকে মাছ পাইলে বাজারে বেচুম না। তুই তুস্টি কইরা খাইস’।
মজিদ অনেক কষ্টে জাল উপরে তুলল। তীরে এসেই মাছটি জাল থেকে পড়ে গেল। মজিদ বেপারী আপসোস করতে লাগল। আপসোস শুনে ছেলে রফিক বলল, না বাবা আবার জাল দাও দেখবা মাছ উঠবে। এত তাড়াতাড়ি হতাশ হওয়া ঠিক না। জানো বাবা, আজকে আমাদের স্যার বলেছেন ‘একবার না পারিলে দেখ শতবার’। তুমিতো মাত্র একবার জাল ফেলেছো। অবার জাল ফেলো দেখবে মাছ উঠবে। ছেলের কথা শুনে মজিদ হাসে। ছেলের কথা মতো মজিদ দ্বিতীয়বার জাল ফেলল। এবার হাপ কেজি ওজনের একটি রুই মাছ উঠল। যাক তবুও কম কিসের। আগামীকাল বাজার করা বন্ধু, এটিই রান্না হবে।
মজিদ বেপারী ছেলেকে সাথে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা করল। পিছন দিন থেকে অচেনা কন্ঠের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। তাদের ফিসফাস শব্দ মজিদের কানে বাজল। একটির আওয়াজ স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে আর একটির আওয়াজ অস্পষ্ট। শুধু ঘো ঘো করছে। যেদিকে আওয়াজ শুনল সেদিকে এগিয়ে গেল মজিদ বেপারী। কই কাউকে সে দেখল না। আবার এগিয়ে চলল মজিদ। সামনের দিকে যেতেই আবার কন্ঠস্বর শুনতে লাগল। আবার মজিদ পিছনের দিকে হাঁটতে লাগল। যেতে যেতে তেঁতুলগাছটির নিচে চলে গেল। কই কাউকে সে দেখতে পায়নি। এই তেঁতুলগাছ নিয়ে সে অনেক গল্প শুনেছে। তখন কারো কথা সে বিশ্বাস করেনি। আজকের ঘটনায় সে কিছুটা থমকে দাঁড়াল। ভাবনার জগতে হাবুডুবু খেতে লাগল মজিদ। গা তার শিউরে উঠল। সে আবার সামনের দিকে এগিয়ে যেতে লাগল। আবার কথা শুনতে লাগল। রফিক শক্ত করে বাবার হাত ধরে আছে। রফিকের গা কাঁপতে লাগল। মজিদ দোয়া কালাম পড়ে নিজের এবং ছেলের শরীরে ফু দিল। এবার কোনো ডাক শুনল না। সে রাতে বাসায় এসে ভাত না খেয়ে শুয়ে পড়ল বাপ বেটা। রাতে রফিকের শরীরে জ্বর আসল। সরারাত মর্জিনা বেগম ছেলের মাথায় জলপট্টি দিল। মজিদ সকালে ছেলের জন্য ওষুধ আনল। এক সপ্তাহ পর সুস্থ হলো রফিক। রফিক আবার স্কুলে যেতে শুরু করেছে। মর্জিনা বেগম আর মজিদের মুখে হাসির রেখা ফুটল।
আজ আর বাজারে যেতে হবে না মজিদের। তাই বিকালে কাজ সেরে কারো সাথে কথা না বলে সোজা বাড়িতে চলে এলো। এত তাড়াতাড়ি বাড়িতে আসায় তার স্ত্রী মর্জিনা একটু আশ্চর্য হলো বটে। মজিদ স্ত্রীকে সব ঘটনা খুলে বলল। মর্জিনা বেগম সব ঘটনা শুনেতো অবাক। তবে মর্জিনা শিতি একজন মহিলা। ইতিমধ্যে সে ভুতের উপর অনেক পড়ালেখা ফেলেছে। মর্জিনা স্বামীকে তিনটা ভূতের বই দিল। সাথে কিছু পত্রিকার দিল। বলল, আজকে বসে বসে এগুলো পড়। তোমার ভূতের ভয় কেটে যাবে। পড়তে পড়তে একটি নিউজে মজিদ বেপারীর চোখ আটকে গেল। নিউজটির শিরোণাম এ রকম ছিল যে- ‘ব্যর্থ প্রেমিক যুগলের আতœহত্যা’। নিউজের নিচে বিস্তারিত লিখা আছে তা পড়ে নিল মজিদ বেপারী। এবার ধীরে ধীরে মজিদ বেপারীর কাছে সবকিছু স্পষ্ট হতে লাগল। বোবা পেতœী আর কালো ভূতের ঘটনা ভাবতেই মজিদ বেপারীর গা চমচম করে উঠল। সেই থেকে ঝিলের জলে মজিদ বেপারীর মাছধরা বন্ধ হলো। আজ থেকে আনুমানিক দশ বছর আগের কথা। মজিদের গ্রামেরই একটা ঘটনা। চৌধুরী বাড়ির ছেলে ভালোবাসত মিজি বাড়ির মেয়েকে। সেই অবৈধ প্রেম তাদের পিতামাতা মেনে নেয়নি। তাই এক রাতে তারা ঝিলের পাড়ের তেঁতুলগাছে গিয়ে আতœহত্যা করে। সেই থেকে চৌধুরী বাড়ির ছেলে আর মিজি বাড়ির মেয়েটি অশরীরি আতœা হয়ে আজো তেঁতুলগাছে বসবাস করছে।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:৪৯

ঋজুক বলেছেন: ভূত ভূত ভূত :D

২| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:৫২

টেক সমাধান বলেছেন: ভূত ভৌত ভুতং B-)

৩| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:৪৫

রাশেদ রাহাত বলেছেন: ভূত ভৌত ভুতং বাচাও...

৪| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১:০০

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: ভাল লাগে নি

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.