নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুহৃদ আকবর

Do Well, Be Well

সুহৃদ আকবর › বিস্তারিত পোস্টঃ

পথ ভুলানো কুজো বুড়ি

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:০৩

আজ থেকে একযুগ আগের ঘটনা। তখন ছিল শীতকাল। সময় বারটা বেজে পনের মিনিট। কুয়াশার চাদরে ঢেকে আছে পুরো দেশ। গ্রামের নাম কেরামতিয়া। সবুজ গাছ গাছালিতে পূর্ণ তার চারদিক। ছায়াঢাকা মায়াঘেরা ছবির মতন একখানি গ্রাম। কবি সুফিয়া কামালের সেই কবিতাটির মতই-‘গাছের ছায়ায় লতায় পাতায় উদাসী বনের বায়’। দূরে একটি শিয়াল ডাকছে। টিনের চালে টুপটাপ শিশির ঝরছে। পাখির ডানা ঝাপটানিতে ঘুম ভাঙল বদিউল আলমের।
বদিউল আলম কৃষিজীবী মানুষ। বয়স চল্লিশের ঘরে গিয়ে পৌঁছেছে। টানাটানির সংসার। সোনার চামুচ মুখে নিয়ে জন্মায়নি সে। নিরীহ এক কৃষক পরিবারে তার জন্ম হয়। সারাদিন খাটাখাটুনির মধ্য দিয়ে তার দিন অতিবাহিত হয়। কাজ না করলে সে খাবে কি? জীবনটা হলো কাজের সমষ্টি। কাজ-ই পেটের জ্বালা মিটায়। আজ বাজারে একটু বেশিই খেয়ে ফেলেছে বদিউল আলম। কি সব ভাজাভুজা খেয়েছে পেট ভরেছে এখন বুঝতাছে তার মজা। একটু পর পর পেটের ভিতর কি যেন মোচড় দিয়ে উঠে। না তাকে এখনই টয়লেটে যেতে হবে। টয়লেটে গিয়ে পেট পরিস্কার করতে হবে। না হয় তার চোখে ঘুম আসবে না। বদিউল আলম ঘর থেকে বাহিরের দিকে গেল। এখনকার সময়ের মত তখন বাথরুম, টয়লেট ঘরের ভেতর ছিল না। তাই প্রাকৃতিক কাজ সারাবার জন্য রাতে বিরাতে মানুষকে ঘরের বাহিরে যেতে হতো। অনেক সময় বাড়ির বাহির দিকে থাকত সে সুব্যবস্থা। ঘরের দণি কোণে এক বিশাল সুপারি বাগান। তার পাশে একটি পায়খানা। যাকে গ্রামের লোকেরা টাট্টিখানা বলে জানে। তার পাশেই শ্যাওড়া বন। শ্যাওড়া বনে নাকি ভূত প্রেত এসব থাকে। এসব বদিউল আলম শুনেছে। শোনা কথায় বেশি কান দিতে নেই। বদিউল আলমও এসব কথায় কান দিত না কোনোদিন।
বদিউল আলম বদনা নিয়ে টাট্টিখানায় ঢুকল। পায়খানাটির কোনো দরজা ছিল না। শুধুমাত্র নারিকেলের কয়েকটি শুকনো ডগা রশির উপর ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া বাড়ির এক পাশে হওয়াতে খুব একটা সমস্যা হয় না। বদিউল আলম পায়খানায় ঢুকে বাহিরের দিকে চোখ মেলল। তার দৃষ্টিজোড়া যা দেখল সে কথা আর কিইবা বলব। সে কথা ভাবলে এখনো তার শরীরে কাটা বিঁধে। ইতিমধ্যে প্রাকৃতিক কাজ সমাপ্ত করেছে বদিউল। সে দেখল একটি বুড়ি লাঠিতে ভর করে দাঁড়িয়ে আছে। এক দৃষ্টে তার দিকে তাকিয়ে আছে। বদিউল আলমের তাই মনে হলো Ñ হেঁটে হেঁটে বুড়িটি তার নিকট আসতে লাগল। বুড়িটির চেহারা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না। বুড়িটিকে চেনা চেনা লাগল বদিউলের। মনে মনে ভাবল, বুড়িটি মনে হয় কোনো বিপদে পড়েছে। তাই বুঝি এত রাতে সুপারি বাগানে ঘুরছে।
বদিউল আলম বুড়ির দিকে এগিয়ে গেল। এগিয়ে যেতেই বুড়িটি দিক পরিবর্তন করে করল। বুড়িটি এবার পিঠ দেখিয়ে হাঁটা শুরু করল। বদিউলও বুড়ির পিছন পিছন চলতে লাগল। চলছে তো চলছে বুড়িটি আর থামে না। বদিউল একবার ডাকল বুড়িকে। বুড়ি কোনো জবাব দিল না। শুধু লাঠি দিয়ে সামনের দিকে কি যেন ইশারা করল। বদিউল বুঝল বুড়িটি মনে হয় পাশের কোনো গ্রামের হবে। নিশ্চয়ই তার কোনো বিপদ হয়েছে। তার বদিউল সামনের দিকে এদিয়ে গেল। বুড়ির পিছনে বদিউল আলম অনেক দূর চলে গেল। পথিমধ্যে এক বিশাল বড় চর অতিক্রম করে করল। চর অতিক্রম করার পর বদিউল বুঝতে পারল সে অনেক পথ চলে এসেছে। চরের পাশে বিশাল এক দিঘী। তার পাশে হিন্দুদের পুরাতন একটা মন্দির। মন্দিরের পাশে কতগুলো শ্যাওড়া গাছ। এ ছাড়া আরো নানান কিসিমের গাছগাছালিতে পরিপূর্ণ মন্দিরের চারপাশ। বুড়িটি মন্দিরের ভেতর ঢুকে গেল। বদিউল আলম দিঘীর পাশে দাঁড়িয়ে রইল। বদিউল আলম অনেণ পর্যন্ত বুড়ির জন্য অপো করতে থাকল। বুড়িটিকে ডাকল। কই বুড়ির আর দেখা নেই। ডেকেও কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। বদিউল ভয় পেয়ে গেল। তার শরীরের লোমকূপ দাঁড়িয়ে গেল। বদিউলের শরীর ঘেমে ভিজে একাকার হয়ে গেল। সে এখনো রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে আছে। কতণ দাঁড়িয়ে ছিল সে বলতে পারবে না। তার একদিকে বড় দিঘী আর অন্যদিকে হিন্দু মন্দির। এবার ভিতর থেকে বিকট একটা আওয়াজ তার কানে এলো। সে কোন দিকে যাবে ভেবে পাচ্ছে না। বদিউল হাঁটতে যাচ্ছে কিন্তু কিছুতেই সে হাঁটতে পারছে না। পরদিন পাশের বনে বদিউলের লাশ পাওয়া গেল। সকালে মন্দিরে ফুল দিতে এসে বদিউলের লাশ দেখে চিৎকার করে উঠল হিন্দু বাড়ির ওই মহিলা।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.