নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মানুষের জীবন প্রতিদিন তার বেঁচে থাকার লাইসেন্স নবায়ন করে ।প্রকৃতি এটা নিয়ন্ত্রন করে,যেদিন নবায়ন হবেনা,সেদিন মৃত্যু অনিবার্য ।

স্বপ্নের শঙ্খচিল

আমার মনের মাঝে শঙ্খচিল ডানা মেলে প্রতিদিন,ভুলতে পারিনি সেই অভিমান আবার ফিরে আসা তোমার কাছে !

স্বপ্নের শঙ্খচিল › বিস্তারিত পোস্টঃ

-প্রতিবাদের ভাষা হোক অন্য রকম............

১৩ ই জুলাই, ২০২৩ রাত ৮:০২



আমি রেহানা ,
চাকরির বেতনের টাকাটা যখন আমার স্বামীর হাতে তুলে দিলাম, সে টাকাটা গুণে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
- “তুমি তো ৫০ হাজার টাকা বেতন পাও, এখানে তো দেখছি মাত্র ২০ হাজার টাকা!”
আমি বললাম- ২০ হাজার তোমাকে দিলাম, ১৫ হাজার নিজের কাছে রাখলাম আর বাকি ১৫ হাজার আমার বাবা-মায়ের জন্য।
আমার স্বামী অবাক হয়ে বললো,
- “তোমার বাবা-মায়ের জন্য মানে! মেয়েকে বিয়ে দিয়েছে, সুতরাং মেয়ের উপর তাদের দায়িত্ব শেষ!
আর স্বামীর বাড়ি পা রেখেছো মানে তোমারও তাদের উপর দায়িত্ব শেষ!
আলাদা করে উনাদের প্রতিমাসে তোমার টাকা দিতে হবে না। দাও বাকি টাকাটা দাও!”
আমি বাবা-মায়ের জন্য যে টাকাটা আলাদা করে রেখেছিলাম, সেই টাকাটাও আমার স্বামীর হাতে তুলে দিলাম।
টাকাটা গুণে বললো
- “তোমার নিজের জন্য টাকা রাখতে হবে কেন? তোমার যা লাগে সবই তো আমি দিই!”
স্বামীর কথার ধরণ দেখে বুঝতে পেরেছিলাম কি বুঝাতে চেয়েছে।
আমি আমার জন্য রাখা টাকাটাও চুপচাপ তার হাতে দিয়ে দিলাম…

শ্বাশুড়িও কিছুটা তার ছেলের মতোই। একদিন মার্কেট থেকে একই রঙের দুইটা শাড়ি এনে শ্বাশুড়িকে দেওয়ার পর শ্বাশুড়ি বললো,
“বউমা, একই রঙের দুইটা শাড়ি এসেছো কেন? দুইটা দুই রকম আনতে?”
আমি বলেছিলাম- একটা আপনার জন্য, একটা আমার মায়ের জন্য।
সেদিন শ্বশুড়ি বিরক্ত হয়ে বলেছিল
- “তোমার আহ্লাদ দেখে বাঁচি না। মেয়ে মানুষের বিয়ের পর স্বামীর বাড়িই সব।
এতো বাপের বাড়ির কথা চিন্তা করলে হবে?”
মাথা নিচু করে বলেছিলাম- ঠিক আছে, আর বাপের বাড়ির কথা চিন্তা করবো না!

পরদিন সকালে অফিস যাওয়ার সময় আমার স্বামীকে বললাম,
- আমাকে ভাড়া বাবদ ৩০০ টাকা দিও। আর শোনো, বাসায় ফেরার সময় আমার জন্য নতুন দুই সেট ব্রা*-পেন্টি* নিয়ে এসো,
আর হ্যাঁ ফার্মেসি থেকে এক প্যাকেট প্যাডও। ব্রা আনার সময় ভুল সাইজ এনো না কিন্তু! যদি আনো,
তাহলে তোমারই আবার সেটা চেঞ্জ করে আনতে হবে।
কথার ধাক্কাটা হয়তো আমার স্বামী নিতে পারেনি। তাই বোবা হয়ে গেলো!
আমি মানিব্যাগ থেকে ৩০০ টাকা নিয়ে অফিস চলে গেলাম…

অফিস থেকে ফেরার পর শ্বাশুড়ি একটা শাল দেখিয়ে বললো,
- “এটা তার মেয়ে, মা'র জন্য কিনে পাঠিয়েছে। কেমন হয়েছে বউ মা?”
কিছুটা অবাক হয়ে বললাম .......
- তার মেয়ের তো বিয়ে হয়েছে বছর তিনেক হলো। সে শ্বাশুড়ির জন্য শাল না কিনে কোন আক্কেলে আপনার জন্য কিনেছে বুঝলাম না! বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িই মেয়েদের নিজের বাড়ি! জানিনা আপনার মেয়ের এতো আহ্লাদ কেন? যাহোক, শালটা আমি নিয়ে যাচ্ছি পরে
সময় মতো আপনার মেয়ের কাছে পাঠিয়ে দিবো!
একথা বলে শ্বাশুড়ির গা থেকে শালটা খুলে নিজ রুমে চলে আসলাম ।

কিছুক্ষণ পর স্বামী বাসায় ফিরলে তাকে জিজ্ঞেস করলাম,
- আমার জিনিস এনেছো?
আমার স্বামী মুখ ভোঁতা করে বললো- “না, আনিনি!”
কিছুটা রেগে বললাম, - কেন আনোনি ? আমার পেট ব্যথা শুরু হয়েছে।
একটু পর যখন পিরিয়ড শুরু হবে, তখন বিদেশ থেকে আনা এই দামী কম্বলে রক্তের দাগ লেগে গেলে সেটা কি ভালো লাগবে?
আমার কথা শুনে স্বামী তাড়াতাড়ি রুম থেকে বের হয়ে গেলো…..........
কিছুক্ষণ পর এক প্যাকেট প্যাড এনে আমার হাতে দেওয়ার পর বললাম :- বাকী জিনিস কোথায়?
আমার স্বামী মাথা নিচু করে ১৫ হাজার টাকা হাতে দিয়ে বললো ................
“আজ থেকে তোমার জিনিস তুমিই কিনো। মেয়েদের সব জিনিস পুরুষ কিনতে পারে না!”

পরদিন বাবা বাসায় এসে আমার স্বামী-শ্বাশুড়ির সামনে আমাকে বললো,
“মা, আমার বয়স হয়েছে। কখন কি হয় বলা যায় না। তুই তোর প্রাপ্য সম্পত্তিগুলো বুঝেনে।”

বাবার দিকে তাকিয়ে বললাম,
- কিসের সম্পত্তি বাবা? তুমি জানো না, মেয়েরা বিয়ের পরে পর হয়ে যায়? তুমি যেদিন আমায় বিয়ে দিয়েছো,
সেদিনের পর থেকেই আমার প্রতি তোমার দায়িত্ব শেষ! আর আমি যখন শ্বশুরবাড়িতে পা রেখেছি,
তখনই তোমার প্রতি আমার দায়িত্ব শেষ! আমার স্বামী-শ্বাশুড়ি আমাকে সেটাই শিখিয়েছে!

বাবা অবাক হয়ে বললো,
- “মা, এসব তুই কি বলছিস?”
আমি বললাম- ঠিক বলেছি বাবা, আমার কিছুই লাগবে না।
স্বামী আমতা আমতা করে আমাকে বললো,
- “তুমি আমাদের ভুল বুঝছো, বিষয়টা এমন না!”
শান্ত গলায় আমার স্বামীকে বললাম,
- তুমিই বলো বিষয়টা কেমন? আমার কি ইচ্ছে হতে পারে না, যে মানুষটা আমাকে এতো বড় করলো, পড়াশোনা শিখিয়ে যোগ্য পাত্রের সাথে বিয়েও দিলো, তার জন্য কিছু করতে? আজ আমি চাকরি করছি সবটা তো উনার জন্যই।
উনিতো চাইলেই পারতেন উনার মেয়েকে পড়াশোনা না করাতে। আমার বিয়ে হয়ে গেছে বলে উনার প্রতি আমার সব দায়িত্ব শেষ হয়ে যাবে?
মেয়ে বিয়ে দিলেই যদি বাবা-মায়ের দায়িত্ব শেষ হয়ে যেতো, তাহলে আমার বাবা এখানে আসতো না আমার প্রাপ্য আমাকে বুঝিয়ে দিতে। আমার স্বামী আর কোন কথা না বলে মাথা নিচু করে রইলো…

আমি তখন শ্বাশুড়িকে বললাম,
- এক মাকে ছেড়ে আরেক মায়ের কাছে এসেছি। আমার দুই-দুইটা মা! যে মেয়ের দুই-দুইটা মা, সে তো একটু আহ্লাদি হবেই।
আমি এক মায়ের জন্য কিছু কিনবো, আরেক মায়ের জন্য কিনবো না, সেটা কিভাবে হয় মা, আপনিই বলুন?

শ্বাশুড়ি মাথা নিচু করে কাঁদতে লাগলো…
আমার স্বামী হাত ধরে বললো,
- “তুমি তোমার সম্পত্তি নাও কিংবা না নাও, এতে আমার বিন্দু পরিমাণ আপত্তি নেই।
কিন্তু তুমি আমাকে কখনো ছেড়ে যেও না।
আমি চাই তোমার সাথে থেকে হলেও আমাদের নিচু-পুরানো মন-মানসিকতার পরিবর্তন হোক।”

বাবা আমাদের এসব কথা শুনে অবাক হয়ে বললো- “মা রে, আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না!”
হেসে বললাম- তেমন কিছু না বাবা। একটু সমস্যা হয়েছিল, তোমার সামনেই সেটা সমাধান হয়ে গেলো।

শ্বাশুড়ির কাছে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে বললাম
- আহারে শ্বাশুমা , শালটা নিয়ে গেছি বলে কান্না করতে হবে না?
শ্বাশুড়ি আমার কান টেনে বললো,
- “ফাজিল মেয়ে, মায়ের সাথে ঢং করা হচ্ছে? শালের জন্য না, আমি আমার কৃতকর্মর জন্য দুঃখিত,
আর এক মেয়েকে বিয়ে দিয়ে আরেকটা মেয়ে পেয়েছি, সেই খুশিতে কান্না করছি।”

মানুষ কখনো ভুলের উর্ধ্বে নয়।
সংসার জীবনে এমন সমস্যা হতেই পারে।
প্রতিবাদের ভাষা ও কৌশলটা শুধু হোক একটু চমৎকার ভিন্নতর … ... ....

** সামাজিক মাধ্যম থেকে সংকলিত ।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই জুলাই, ২০২৩ রাত ৯:১৮

শাহ আজিজ বলেছেন: বাহ চমৎকার ।

১৬ ই জুলাই, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৩৯

স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: ধন্যবাদ ! আপনার অনুভূতির জন্য ।
..................................................................................
আমাদের সমাজে নারীদের চিন্তা ভাবনার উন্নতি ঘটেছে ,
ভালো লক্ষন ।

২| ১৩ ই জুলাই, ২০২৩ রাত ৯:২০

কামাল১৮ বলেছেন: সামন্ত সমাজে এটাই নিয়ম ছিলো।স্ত্রীর সব কিছুর মালিক স্বামী।হাজার হাজার বছর এভাবেই চলে আসছিলো।সকল ধর্মগুলোও এই নিয়ম গ্রহন করে।তাই এই নিয়ম থেকে বের হয়ে আসা একটু কঠিন।
উন্নত বিশ্ব অনেকটা বের হয়ে আসছে।আমাদের মতো দেশগুলো অনেক পেছনে পড়ে আছে।ছেলে মেয়ে দুই জনেরই দায়িতত্ত্ব আছে বাবা মাকে দেখার।
আধুনিক বিশ্বে স্বামী স্ত্রী মিলে নতুন সংসার গড়ে তুলবে।সেখানে প্রয়োজনে ছেলের বাবা মাকে সাহায্য করতে পারে,প্রয়োজনে মেয়ের বাবা মাকেও সাহায্য করতে পারে।

১৬ ই জুলাই, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৪২

স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: পৃথিবীর পরিবর্তন হেতু সমাজ কাঠামো যেমন ভেঙ্গে নুতন রুপ নিচ্ছে
তেমনি আমাদের মন মানসিকতার ও উন্নতি ঘটাতে হবে ।

৩| ১৩ ই জুলাই, ২০২৩ রাত ৯:৩৯

কবীর হুমায়ূন বলেছেন: সংসারে পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা ও সমর্মিতা থাকা বাঞ্ছনীয়। সুন্দর লিখেছেন। বাংলাদের প্রতিটি পরিবারের মাঝে সচেতনা আসুক। বর্তমানের নারীরা জি-বাংলা দেখে দেখে তাদের মাথার ভেতরে দুষ্টুদের পোকা ঢুকে গেছে। তাই, প্রায়ই খবরের কাগজে নেতিবাচক খবর পড়ছি। শুভ কামনা।

১৬ ই জুলাই, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৪৪

স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: নারী হোক প্রতিদিনের সঙ্গী
শুধুমাত্র শষ্যাসঙ্গী নয় ।

৪| ১৪ ই জুলাই, ২০২৩ দুপুর ২:৪৩

রাজীব নুর বলেছেন: "It is better to keep your mouth closed and let people think you are a fool than to open it and remove all doubt." - Mark Twain

১৬ ই জুলাই, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৪৬

স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: বাচাঁর মতো বাচঁতে হলে
লড়তে হবে ।
প্রতিদিন ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.