নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন অলস মানুষ; ভালোবাসি স্বপ্ন দেখতে, চিন্তা করতে, আর কবিতা লিখতে।পেশায় চিকিৎসক, তবে স্বপ্ন দেখি সাহিত্যের সাথে নিবিড় সখ্য গড়বার।ছাত্রজীবনে জড়িত ছিলাম স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনে, ভবিষ্যতে কাজ করতে চাই কন্যাশিশু নিরাপত্তা ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ নিয়ে।

তাহমিদ রহমান

প্রবাসী চিকিৎসক ও স্বপ্নচারী। শখের বশে কবিতা লেখার প্রয়াস হয়। হয়তো সেগুলা কবিতা হয়ে ওঠে না, হয় অগোছালো শব্দমালা,জীবনের মতোন...

তাহমিদ রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

উত্তর সাগরের তীর থেকে ১

১৯ শে এপ্রিল, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:২২



রবিবার এখানে সাপ্তাহিক ছুটি। সবকিছু আগেভাগে বন্ধ হয়ে যায়। অন্যদিন রাত ৯টায় কিংস লীন এর শেষ বাস ছাড়লেও আজকে শেষ বাস সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়। অন্তত আমার কাছে থাকা টাইমটেবল সেটাই বলছে।

এদিকে রবিবার দেখে লোকাল বাসও সংখ্যায় কম। সুতরাং ট্যাক্সি নিয়েই বাসস্টেশনে গেলাম।

সোয়া সাতটায় কুইন্সগেট বাসস্টেশনে পৌছলাম, কিন্তু সেখানে যেয়ে মাথায় হাত! বাসের সূচি আবারো চেঞ্জ হয়ে গেছে। সন্ধ্যা ৭টায়-ই শেষ বাস স্টেশন ছেড়ে গেছে! অন্যদিকে সকালের প্রথম বাসও ৭টার আগে ছাড়বেনা। সেই বাস ধরে কোনোক্রমেই ঠিক সময়ে হাসপাতালে পৌছানো সম্ভব না।

সকালে ট্যাক্সি ভাড়া করে একগাদা পাউন্ড গচ্ছা দিয়ে কিংস লীন যাবো এটাই মনে মনে ভাবতে ভাবতে সাদিকা'র বাসায় ফেরত যাবো ভাবছিলাম। এমন সময় সাদিকা ফোন করে বললো যে কিছুক্ষণ পর-ই একটা ট্রেন আছে, সেই ট্রেনে ইলি(Ely) হয়ে কিংস লীন যাওয়া যাবে।
আসলে সবসময় বাসেই যাতাযাত করি, আর ট্রেন সহজলভ্য না। এজন্য এই রুটে চলার সময় ট্রেনের বিষয়টা মাথায় থাকেনা।

বাহিরে হালকা তুষারপাত আর বৃষ্টি হচ্ছিলো, এরমধ্যেই বাস স্টেশন থেকে দ্রুত হেঁটে রেলস্টেশনে গেলাম। দশ মিনিট লাগলো।
সাদিকা'র কথাই ঠিক, ট্রেন আছে। তবে টিকিট পেলাম রাত আটটার ট্রেনের। পিটারবরো থেকে লীনের সরাসরি ট্রেন নাই, ইলি তে নেমে অন্য ট্রেনে উঠতে হবে। সেই ট্রেন ধরতে আবার ইলি'তে ৫০মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। সময় খালি বাড়ছেই।


ছবি: ক্ষণে ক্ষণে রঙ বদলানো আকাশ

ইলি ক্যাম্ব্রিজশায়ারের ছোট্ট মফস্বল। স্টেশনটাও খুব ছোট। রাত সাড়ে আটটায় যখন পৌছলাম, স্টেশন তখন বিরান ভূমি। কোনো মানুষ নেই, খোলা প্ল্যাটফর্মে হু হু হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। টেম্পারেচার মাইনাস ১!
সকালেও সুন্দর রোদ ছিলো। অথচ বেলা বাড়ার সাথে সাথে আবহাওয়া একদম বদলে গেছে।

মানুষ যখন একা থাকে, তখন অল্প একটু সময়ও অনেক দীর্ঘ মনে হয়। আর কোনো কিছুর অপেক্ষারত থাকলে ত কথাই নেই, সময় যেন স্থির হয়ে থাকে। একাকী স্টেশনে ৫০ মিনিট তাই এক যুগের মতোন ঠেকলো। বিদেশ বিভূইয়ে ভুল প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে রাত্রিবেলায় ট্রেন মিস করে ফেলার টেনশনও ছিলো বেশ।

যাহোক ট্রেন সময় মতোন আসলো। ৫/৬ কামরার ছোটো ট্রেন, তবুও উঠে দেখি আমার কামরায় আর একজন লোকও নেই। অতঃপর একাকী বসে বসে কিংস লীনের পথে রওনা দিলাম। গন্তব্যে এসে যখন পৌছালাম, রাত তখন প্রায় দশটা। পথে ফেলে আসলাম ডাওনহাম মার্কেট আর লিটলপোর্ট।

কিংস লীনে নেমে পড়লাম আরেক বিশাল সমস্যায়। আবারো রবিবার জনিত সমস্যা, কোনো লোকাল বাস নাই, এমনকি ট্যাক্সিও পাচ্ছিনা।

কিংস লীন হলো পুরনো মার্কেট টাউন, আমাদের দেশের হিসেবে মফস্বল বলা চলে। ফলে এখানে উবার বা ব্ল্যাক ক্যাব কিছু নেই। দুয়েকটি কোম্পানী ট্যাক্সি বিজনেস চালায়, তবে ট্যাক্সি সংখ্যায় অপ্রতুল। এর উপর আজ যেহেতু রবিবার আর রাত নেমে গেছে ইতোমধ্যে, কোথাও ট্যাক্সি নেই! শেষ লোকাল বাসের ইঞ্জিনও বন্ধ হয়েছে অন্তত দু ঘন্টা আগে। শেষ চেষ্টা হিসেবে অনলাইনে ট্যাক্সি বুক করলাম। ২০ মিনিট হয়ে গেলো, অথচ কোনো কনফার্মেশন নেই। অপেক্ষা করেই চলছি, ট্যাক্সিবাবাজি লাপাত্তা।

এদিকে রাস্তায় মানুষও নেই। দু-চারজন যারা রেলস্টেশনের আশেপাশে ঘুরাঘুরি করছে, তাদের দেখে আশ্বস্ত হওয়ার বদলে অস্বস্তি জেঁকে বসে। অন্যদিকে এপ্রিল মাস হলেও আজকে প্রচন্ড ঠান্ডা। মোটা জ্যাকেট ভেদ করেই ঠান্ডা কাঁপিয়ে দিয়ে যাচ্ছে।
ঠান্ডার প্রকোপে আবারো স্টেশন বিল্ডিং এ ঢুকে পড়লাম। অপেক্ষার পালা চলছেই কিন্তু ট্যাক্সি আর আসেনা।

রেলস্টেশন থেকে আমার বাসা অন্তত ৪৫ মিনিটের হাটাপথ। দিনের বেলায় সম্ভব হলেও এই ঠান্ডার রাতে হেটে যাওয়া রীতিমতো অসম্ভব। নিরব রেলস্টেশনে দাঁড়িয়ে মনে মনে নিজেকেই গালি দিচ্ছিলাম

শেষ পর্যন্ত ট্যাক্সি ম্যানেজ হলো। বুকিং দেওয়া ট্যাক্সি না পেলেও সৌভাগ্যক্রমে অন্য ট্যাক্সি পেয়ে গেলাম আরও প্রায় ২০ মিনিট পর। রাতের জনমানবশূন্য রাস্তায় দ্রত ছুটে চলে 'কানেক্ট কার' কোম্পানীর ট্যাক্সি আমাকে বাসায় পৌছে দিলো।
চলন্ত গাড়ির জানালা দিয়ে চেয়ে দেখলাম শহরের মূলকেন্দ্র থেকে উপকন্ঠ, যেখানে আমার বাসা, সর্বত্রই নীরবতা-নিস্তব্ধতা।

এখন রাত প্রায় ১১টা বাজে।ক্লান্ত শরীর নিয়ে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়তে হবে, সকালে ডিউটি আছে.......

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ৮:০৭

খায়রুল আহসান বলেছেন: খালি টেনশন আর টেনশন! তবুও, এর মধ্যে যেটুকু বললেন, ভালই লাগলো পড়তে। আর ছবি দুটোও মায়া ছড়িয়ে যায়।

২০ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ১২:৪৩

তাহমিদ রহমান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
আমি ভালো ছবি তুলতে পারিনা, নাহলে আরও সুন্দর ছবি দেওয়া যেতো হইতো।

২| ২০ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ১২:২৩

রাজীব নুর বলেছেন: সাদিকা নামটা সুন্দর।

২০ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ১২:৪৬

তাহমিদ রহমান বলেছেন: সাদিকা বেশ সুন্দর একটি আরবী শব্দ, অর্থ সত্যপরায়ণ।

৩| ২০ শে এপ্রিল, ২০২১ সকাল ১১:৩৯

মোস্তফা সোহেল বলেছেন: ভালই তো লাগছিল শেষ হয়ে গেল!

২১ শে এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ২:২৪

তাহমিদ রহমান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। পরবর্তী পর্বগুলো আরেকটু বিস্তারিত করার চেষ্টা করবো যদি সুযোগ পাই।

৪| ২০ শে এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৫:০০

শোভন শামস বলেছেন: লিখে যান প্রবাস জীবনের কথা

২১ শে এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ২:২৫

তাহমিদ রহমান বলেছেন: ধন্যবাস। চেষ্টা থাকবে।

৫| ২২ শে এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ১:২৩

পদ্মপুকুর বলেছেন: পড়তে গিয়ে মনে হলো আগেও এর পর্ব ছিলো, কিন্তু শিরোনামে দেখলাম ১ লেখা, এটাই কি প্রথমপর্ব?

২৩ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ৩:৩৮

তাহমিদ রহমান বলেছেন: এটাই প্রথম পর্ব। পড়বার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.