নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তৌফিক জোয়ার্দার

তৌফিক জোয়ার্দার

জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে ডক্টরেট শেষ করে দেশে ফিরেছি ২০১৫ সালের শেষ দিকে। যারা ফলো করতো, তাদের কাছে বারবারই বলেছি দেশে ফিরবো। সামুতে লিখেওছিলাম এ নিয়ে। অনেকেই সাধুবাদ দিয়েছিলেন, আবার অনেকে প্রকাশ করেছিলেন সন্দেহ ও অনাস্থা। এ ক’টা বছর কেটে গেল ফিরে আসার ধাক্কাটা সামলাতে। অনেক দিন পর আবার এলাম সামুতে। আবারো লেখালেখির দুর্মর আকাঙ্ক্ষা বুকে নিয়ে। আবার ঘন ঘন দেখা হবে বন্ধুরা।

তৌফিক জোয়ার্দার › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমাদের যা বলার ছিল

০৮ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ৯:৫৪

প্রত্যেক মানুষ কিছু অধিকার নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। আমাদের মিডিয়া, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, পত্রিকার কলাম আরো বিভিন্ন সব উৎস থেকে আমরা এসব মৌলিক অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয়েছি। গ্রামের কৃষক থেকে শুরু করে শহরের রিকশাচালক পযর্ন্ত সবাই খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসার মত মৌলিক অধিকার গুলো সম্পর্কে অবগত। সরকারী উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যখন গবেষণার কাজে গিয়েছি সেখানেও দেখেছি গরিব, অশিক্ষিত রোগিরাও স্টাফদের সাথে তর্ক জুড়ে দিয়েছে, ‘হামরা ভোট দিয়া সরকার বানাইছু, মুই ওষুধের জন্যে টাকা দিবু ক্যান বাহে?’ জীবন ধারণের অধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা- এসব বিচারে বাংলাদেশিরা যথেষ্ট সোচ্চার বলেই মনে হয়। হয়ত সে জন্যই এ জনগোষ্ঠী ভারতবর্ষের বেশিরভাগ জাতি থেকে ব্যতিক্রম হিসেবে একটা স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের মালিক হতে পেরেছে। বহু চড়াই উতরাই পেড়িয়ে নাম মাত্র হলেও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতি বিশ্বাস রেখে বেঁচে বর্তে আছে। অসংখ্য অপ্রাপ্তির যন্ত্রণার মাঝেও এদেশের কষ্টসহিষ্ণু মানুষগুলো এই ভেবে সান্ত্বনা পায় যে, সে চাইলেই তার জনপ্রতিনিধি নেতাটিকে কষে দুটো গালি অন্তত দিতে পারে, সেই অধিকার তার রয়েছে। পেটে ভাত আর গায়ে কাপড় থাকুক আর নাই থাকুক।

এর সবকিছুই ঠিক আছে। এই সামান্য সান্ত্বনাটুকু থেকে মানুষকে বঞ্চিত করাও আমার উদ্দেশ্য নয়। কিন্তু আমরা কদাচ ভুলে যাই অধিকারের সাথেই লেপ্টে থাকা মুদ্রার অপর পিঠের মতোই আরেক অকৈতব উচ্চারণ- ‘দায়িত্ব’। যেখানেই অধিকারের দাবি সেখানেই দায়িত্ব পালনের দায়বদ্ধতা। বিশ্বের নানা দেশে পেশাগত ও নানা কারণে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, বেশিরভাগ দেশের নাগরিকই নিজ নিজ দায় দায়িত্ব বিষয়ে আমাদের দেশের জনগণের চেয়ে বেশি সচেতন। সুইজারল্যান্ডে দেখেছি মানুষ কিভাবে বেশ খানিকটা হেঁটে গিয়ে হলেও ঠিক জেব্রা ক্রসিং দিয়েই রাস্তা পার হয়, এমনকি রাস্তা সম্পূর্ণ ফাঁকা থাকলেও। সেখানে বিভিন্ন ধরণের আবর্জনা ফেলার জন্য ভিন্ন ভিন্ন ডাস্টবিন রয়েছে। একজন মানুষকেও চোখে পড়েনি এর ব্যতিক্রম করতে, রাস্তায় ময়লা ফেলা তো দুরের ব্যাপার। আমরা জাতি হিসেবে আমাদের অধিকার সম্পর্কে যতটা সচেতন হয়েছি, দায়িত্বগুলো সম্পর্কে কি ততটা হয়েছি? আদৌ কি সচেতন হয়েছি বা চিন্তা করে দেখেছি নাগরিক হিসেবে আমার দায়িত্বগুলো কি কি?

এখন রাশিয়ায় বিশ্বকাপ ফুটবল ২০১৮ চলছে। পেপারে পড়েছি এক জার্মানির সমর্থক জমি বিক্রি করে সে দেশের র্দীর্ঘতম পতাকাটি বানানোর প্রয়াস পেয়েছেন। অথচ ইউরোপের রাস্তায় সেই দেশের পতাকা ছাড়া অন্য কোন দেশের পতাকা কল্পনাও করা যায়না। এ যে নিজের সার্বভৌম সত্তার প্রতি তীব্রতম কটাক্ষ, এবং রাষ্ট্রীয় আইন অনুযায়ী বেআইনি তো বটেই। সেদিন এক ফেসবুক ভিডিওতে ব্রাজিলের সাওপাওলো প্রবাসী এক বাংলাদেশিকে দেখলাম শহরের উঁচু বিল্ডিংগুলো মোবাইলের ক্যামেরায় দেখাচ্ছে- কোথাও কোন পতাকা নেই, এমনকি ব্রাজিলের পতাকাও নয়। ভদ্রলোক আরও বলছিলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে পতাকা ওড়ানোর জন্য তাদেরকে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয়েছে, এবং মাত্র কয়েক ঘন্টা তা ওড়ানোর অনুমতি তারা পেয়েছিলেন। আমার মনে হয় আর্জেন্টিনা ব্রাজিলের যত পতাকা আমার দেশের আকাশে ওড়ে, ওইসব দেশে নিজ দেশের পতাকাও এত ওড়েনা।



ছোট্ট একটা উদাহরণ দিলাম; বড় বড় উদাহরণ তো আমাদের চার পাশেই ছড়ানো ছিটানো আছে। লিখতে গেলে মহাকাব্যিক বিশালতা এ লেখাকে আকীর্ণ করবে। একটা উপলব্ধি শেয়ার করে শেষ করি। আমাদের পারিপার্শ্বিক প্রতিবেশে এমনকি আমাদের মিডিয়াতেও মানুষকে কিভাবে মস্তিষ্ক খাটানো না লাগে তার প্রচ্ছন্ন শিক্ষাই দেয়া হয়। কারণ, মানুষ চিন্তা করতে শিখলেই তো বিপদ। মানুষ বুঝে যাবে কিভাবে শোষণের মিহিন জাল পেতে রাখা আছে চারিদিকের আপাত নির্দোষ বিজ্ঞাপনের চাকচিক্যে, তথাকখিত গণতন্ত্রের মোহময়ী শ্লোগানে, আমাদের পুঁজিবাদী-ভোগবাদী বিলাসী জীবনটার প্রতিটা পরতে। আমাদের স্বাধীনতাকামী পূর্বপুরুষেরা নিশ্চয়ই আশা করেছিলেন আমাদের ছেলেমেয়েরা আর কিছু করুক আর না করুক অন্তত স্বচ্ছ চিন্তা করতে শিখবে। কৌতূহলী হয়ে উঠবে আমাদের দিনানুদৈনিকতার অসামঞ্জস্যগুলো সম্পর্কে, প্রতিকার করতে পারুক আর না-ই পারুক। রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে একটা লাইন লেখা আছে, কবি আসাদ চৌধুরির, ‘তোমাদের যা বলার ছিল, বলেছে কি তা বাংলাদেশ?’ আজকের বাংলাদেশ কি আসলেই তা বলছে যা আমাদের পূর্বপুরুষেরা বলতে চেয়েছিলেন?

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ১০:৩০

রাজীব নুর বলেছেন: দার্শনিক চিন্তার বাহন-মস্তিক, আর কবির অবলম্বন হৃদয়।

০৮ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ১০:৩৩

তৌফিক জোয়ার্দার বলেছেন: তা ঠিক, তা ঠিক। :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.