নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তৌফিক জোয়ার্দার

তৌফিক জোয়ার্দার

জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে ডক্টরেট শেষ করে দেশে ফিরেছি ২০১৫ সালের শেষ দিকে। যারা ফলো করতো, তাদের কাছে বারবারই বলেছি দেশে ফিরবো। সামুতে লিখেওছিলাম এ নিয়ে। অনেকেই সাধুবাদ দিয়েছিলেন, আবার অনেকে প্রকাশ করেছিলেন সন্দেহ ও অনাস্থা। এ ক’টা বছর কেটে গেল ফিরে আসার ধাক্কাটা সামলাতে। অনেক দিন পর আবার এলাম সামুতে। আবারো লেখালেখির দুর্মর আকাঙ্ক্ষা বুকে নিয়ে। আবার ঘন ঘন দেখা হবে বন্ধুরা।

তৌফিক জোয়ার্দার › বিস্তারিত পোস্টঃ

জাতি গঠনে ছাত্রসমাজ

১০ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ৯:০২



উপক্রমণিকা:
চতুর্দিকে অন্ধকার। অন্ধতমস ভূবনে তারার দীপালি জ্বালি স্রষ্টা মোদের কীসের ইঙ্গিত দিচ্ছেন? না- তারকা নয়- মশাল হাতে এগিয়ে আসছে ছাত্র সমাজ। সকল বাধা-বিঘ্নকে দলিত মথিত করে ন্যায়ের ধ্বজাকে সবার উপরে স্থান দিতে এগিয়ে আসছে দেশের হিরণ্ময় ছাত্রগণ। তাদের চোখে আশার আলো, মুখে দৃঢ় অঙ্গীকারের ছাপ, হাতে প্রোজ্জ্বলিত মশাল। কাজী নজরুল ইসলাম তাদেরই প্রশস্তি গেয়েছেন 'ছাত্রদল' কবিতায়।

বিশ্লেষণ:
জাতি গঠনকল্পে ছাত্রসমাজের ভূমিকা সম্পর্কে নিরীক্ষণের পূর্বে 'জাতি' এবং 'ছাত্রসমাজ' কী এতদসম্পর্কে ধারণা থাকা বাঞ্ছনীয়। অধ্যাপক হায়েস তাঁর Essays on Nationalism গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন- 'নির্দিষ্ট ভৌগোলিক এলাকায় বসবাসকারী ব্যক্তিবর্গ দেশাত্মবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজেদের স্বাতন্ত্র্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে উদ্যোগী হয়ে জাতি গঠন করে'। আর সুসংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ ছাত্র গোষ্ঠীই হল ছাত্রসমাজ।

চরিত্র গঠন:
"Character is the crown and glory of human life". সুস্থ্ ও চরিত্রবান ছাত্রসমাজ ব্যতীত উন্নত জাতির কথা কল্পনা করা যায়না। সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে ছাত্রগণ দেশ গড়ার মহা সমরে আত্মনিয়োগ করতে পারে। জাতি গঠনের গুরু দায়িত্ব পালনের মানসে ছাত্র সমাজকে অবশ্যই সর্বাত্মকভাবে চরিত্রগঠন করতে হবে। তবেই মর্যাদাসম্পন্ন জাতি হিসেবে বিশ্বময় ঘটবে আমাদের পরিচিতি।

ছাত্র রাজনীতি নয়, ছাত্র সচেতনতা:
ব্রিটিশ আমল থেকেই ছাত্রগণ উন্নয়নমূলক আন্দোলন করে এসেছে এবং জাতীয় জীবনে রেখেছে স্বর্ণালী সাফল্যের সাক্ষর। তৎকালীন ছাত্র রাজনীতি ছিল মূলতঃ আদর্শভিত্তিক ও গঠনমূলক। ছাত্রনেতাগণ ছিলেন মেধাবী, চরত্রিবান ও অনুকরণীয়। উদাহরণ স্বরূপ- শেরে বাংলা এ.কে. ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, জওহরলাল নেহরু, মাস্টারদা সূর্যসেন প্রমূখের নাম উল্লেখযোগ্য।

কিন্তু দুঃখের বিষয় বর্তমান ছাত্র রাজনীতি পরিচালিত হচ্ছে স্বার্থান্বেষী মহলের ছত্রছায়ায়, অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা, অন্তঃসারশূণ্য বাগাড়ম্বর ও সন্ত্রাসী তৎপরতার মধ্য দিয়ে। পাক আমলে আইয়ুব খানের সময় হতে এদেশের পবিত্র ছাত্র রাজনীতির অঙ্গনে সন্ত্রাসের বীজ উপ্ত হয়- যা জাতি গঠনে কখনই সহায়ক হতে পারেনা।

৯০'র গণ অভ্যুত্থানে ছাত্রদের অতুলনীয় ভূমিকা দেখে আমরা ছাত্র রাজনীতির প্রয়োজনীয়তাকেও অস্বীকার করতে পারিনা। কিন্তু লক্ষ করলে দেখা যায়- ছাত্ররা যখন পারস্পরিক রাজনৈতিক কোন্দলকে ভুলে গিয়ে একতাবদ্ধ ভাবে সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছিল তখনই লাভ করেছিল কাঙ্খিত সাফল্য। অর্থাৎ, ছাত্রগণ যদি রাজনৈতিক বন্ধনের বেড়াজাল ছিন্ন করে পূর্বাহ্ণেই ঐক্যবদ্ধ হত, তবে হয়ত এ সাফল্য আরও আগেই অর্জিত হত। যেহেতু ছাত্রজীবন মূলতঃ জ্ঞানার্জনের সময় এবং এসময় তারা সঠিক ও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণে অপারগ অতএব, এসময় তাদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ না করাই শ্রেয়। তবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে জাতির উন্নতিসাধনে ছাত্রসমাজকে অবশ্যই হতে হবে সচেতন ও ঐক্যবদ্ধ।

জাতি গঠনে ছাত্র সমাজ: অতীত প্রেক্ষাপট
অতীত ইতিহাস সময়ের স্থাপত্য-স্মারক। অতীতকাল থেকেই ছাত্রসমাজ জাতি গঠনে অনবদ্য ভূমিকা রেখে এসেছে। পাল, সেন, পাঠান, মুঘল আর বাংলার বার ভুঁইয়াদের শৌর্য-বীর্যের ইতিহাসে গৌরবান্বিত আমাদের অতীত। কিন্তু ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে সিরাজ-উদ্দৌলার পরাজয়ের পর থেকেই শুরু হয় এ জাতির ইতিহাসে দাসত্বের কলঙ্কময় অধ্যায়- ব্রিটিশ শাসন। রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায় 'দেশপ্রেম' কবিতায় বলেছিলেন-

স্বাধীনতাহীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে
কে বাচিতে চায়,
দাসত্ব শৃঙ্খল বল, কে পরিবে পায় হে
কে পরিবে পায়?

স্বাধীনতাহীনতার দাসত্ব শৃঙ্খলকে বাঙ্গালিও বরণ করে নেয়নি। তাইতো ১৮৫৭ সালে সংঘটিত হয়েছিল সিপাহী বিদ্রোহ। কিন্তু তার নিষ্ফল করুণ পরিণতি পারেনি সেদিনের ছাত্র সমাজকে স্তব্ধ করতে। সেদিনের ছাত্র সমাজের মাঝ থেকেই জাতির মুক্তির দূত হিসেবে এগিয়ে আসেন শেরে বাংলা এ.কে. ফজলুল হক, মাস্টারদা সূর্যসেন, নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু, জওহরলাল নেহরু প্রমূখ বীর সেনানী।

১৯৪৭ সালের ১৪ই আগস্ট পাকিস্তানের স্বাধীনতা লাভের ফলে দু'শ বছরের ইংরেজ শাসন ও শোষণের অবসান হলেও বাঙ্গালিরা পশ্চিম পাকিস্তানের পক্ষ হতে নতুন বৈষম্যের শিকার হয়। অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক বৈষম্যের প্রেক্ষিতে এদেশে বেশ কিছু আন্দোলন দানা বাঁধে। ১৯৫২ সালে মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় সালাম, বরকতম রফিক, জব্বার, শফিউর প্রমূখ বীরদের আত্ম বিসর্জন নতুন করে ছাত্রদের অতুলনীয় জাতি-প্রেমের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। এছাড়াও ছাত্রদের এগার দফা, ৬৯'র গণ অভ্যুত্থানে ছিল ছাত্রদরে অতুলনীয় অবদান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে স্বাধীন বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা ছাত্ররাই প্রথম উত্তোলন করে। আর ১৯৭১ সালের চূড়ান্ত মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর একটি বড় অংশ ছিল এদশের দামাল ছাত্র। বাঙ্গালি জাতির নবজন্মের সেই দিন গুলোতে ছাত্ররাই নব তরঙ্গে উদ্বেলিত হয়ে বজ্র নির্ঘোষে বলে উঠেছিল-

বন্ধু তোমার ছাড়ো উদ্বেগ
সুতীক্ষ্ণ করো চিত্ত
বাংলার মাটি দুর্জয় ঘাঁটি
বুঝে নিক দুর্বৃত্ত।

বর্তমান সময়ে জাতির সমস্যা:
দ্বিজেন্দ্রলাল রায় বলেছিলেন-
ধন ধান্য পুষ্প ভরা
আমাদের এই বসুন্ধরা
তাহার মাঝে আছে দেশ এক
সকল দেশের সেরা।

ধন, ধান্য, পুষ্প-লতায় শোভিত সেদিনের সেই 'সোনার বাংলা' আজ সত্যিই স্বপ্নে পরিণত হয়েছে। আমরা আজ স্বাধীন হলেও স্বাধীনতার ফসলকে আজও পারিনি ঘরে তুলতে। অসংখ্য সমস্যার আবর্তে জর্জরিত আজকের বাংলাদেশি জাতি। জাতিকে গঠন করতে হলে জাতির সমস্যাগুলোকে অনুধাবন করতে হবে। তার পরেই সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে কর্মপন্থা নির্ধারণ করতে হবে। আমাদের প্রিয় জাতির অনগ্রসরতার মূল কারণগুলো হল- জনসংখ্যা বিস্ফোরণ, নিরক্ষরতা, খাদ্য ঘাটতি, অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা, সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, সাংস্কৃতিক আগ্রাসন, রাজনৈতিক অস্থিরতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস, পরিবেশ দূষণ, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, চোরাচালানী ও কালোবাজারি, দূর্নীতি ও আমলাতান্ত্রিকতা, সেকেলে আইন ও শাসন ব্যবস্থা, সড়ক দুর্ঘটনা, বেকার সমস্যা প্রভৃতি। এসকল সমস্যা এককভাবে ছাত্রসমাজের পক্ষে সমাধান করা সম্ভব নয়। তবে ছাত্ররা এখানে অন্যতম সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করতে পারে। আর কিছু কিছু সমস্যা রয়েছে যেগুলো ছাত্রসমাজই পারবে সুচারু রূপে সমাধান করতে।

ছাত্র সমাজের ভূমিকা:
ক. জনসংখ্যা সমস্যা সমাধানে: বিশ্ববিখ্যাত অর্থনীতিবিদ ম্যালথাসের মতে- 'চরম দারিদ্য ও আর্থিক অসচ্ছলতার প্রধান কারণ অতিরীক্ত জনসংখ্যার চাপ'। বর্তমানে ১,৪৩,৯৯৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের বাংলাদেশের লোকসংখ্যা প্রায় ১২ কোটি। জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৭৫৫ জন। জনসংখ্যা রোধকল্পে প্রয়োজন- ১. পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণ, ২. শিক্ষা বিস্তার, ৩. সচেতনতা বৃদ্ধি। এই তিনটি ক্ষেত্রেই ছাত্র সমাজ রাখতে পারে অগ্রনী ভূমিকা। ছাত্রদের কথা আজও এদেশের সাধারণ মানুষের কাছে অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য। অতএব, ছাত্ররা যদি জনসংখ্যা বৃদ্ধির কুফল ও এর প্রতিকার পদ্ধতি সম্পর্কে জনসাধারণকে জ্ঞান দানে ব্রতী হয় তবে এর সুফল শীঘ্রই পাওয়া যাবে।

খ. নিরক্ষরতা দূরিকরণে: Plato বলেছেন- 'Better be unborn than untaught for ignorance is teh root of misfortune'। বাংলাদেশের শিক্ষিতের হার আজও ৩২ শতাংশ অতিক্রম করতে পারেনি। নিরক্ষরতার অভিশাপ মোচনে ছাত্র সমাজের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। ছাত্রদের স্বেচ্ছামূলকভাবে নিরক্ষরতা দূরিকরণের উদ্দেশ্যে একসময় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা কোর্সে পঞ্চাশ নম্বরের সিলেবাস প্রণয়ন করা হয়েছিল। সদিচ্ছা ও সুপরিকল্পনার অভাবে এ মহৎ উদ্যোগ সফল হয়নি। একনায়কতন্ত্রের হাত থেকে মুক্ত দেশ নিকারাগুয়ায় ছাত্র ও তরুণ সমাজ 'ব্রিগাদিস্তান' নামক অজ্ঞানতা বিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে মাত্র তিন মাসের এক ঝটিকা কর্মসূচির মাধ্যমে শিক্ষিতের হার ২৮ থেকে ৭৩ শতাংশে উন্নীত করেছিল। রাশিয় ও চীনে ছেলেমেয়েরা তাদের ছুটি ও অবসর সময়ে বয়স্কদের শিক্ষাদান করে। ইরানের ইসলামী বিপ্লবের পর সরকার গৃহীত ব্যবস্থায় ছাত্ররা বয়স্কদের শিক্ষা দানের মাধ্যমে শিক্ষিতের হার ৪২ হতে ৮৮ তে উন্নীত করেছে। এভাবে ছাত্র সমাজ নিরক্ষরতা দূরিকরণে ভূমিকা রাখতে পারে।

গ. বেকার সমস্যা সমাধানে: সারা বাংলাদেশে এমন পরিবার খুব কমই পাওয়া যাবে যেখানে এক বা একাধিক বেকারের দীর্ঘশ্বাস জীবনের মর্মান্তিক পরাভব ও শোচনীয় গ্লানিকে প্রমূর্ত করছেনা। বেকার সমস্যা সমাধানে ছাত্র সমাজকে কেবলমাত্র সরকারী চাকরির পেছনে না ছুটে কারিগরি বা বৃত্তিমূলক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। বর্তমানে মাধ্যমিক পর্যায়ে কৃষি শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। উদ্যান ফসলের উৎপাদন, মৎস্য চাষ, গবাদি পশুপালন, হাঁস-মুরগী পালন, গুটিপোকা ও মৌমাছির চাষ ইত্যাদি বিষয় গুলো হাতে কলমে আয়ত্তে এনে স্বকর্মসংস্থান সৃষ্টি করা যেতে পারে। এতে বেকারসমস্যা কিছুটা হলেও লাঘব হবে।

ঘ. খাদ্য সমস্যা সমাধানে: আমাদের দেশে খাদ্য ঘাটতির পরিমাণ বার্ষিক ২০ লক্ষ টন। এ সমস্যা সমাধানে কৃষিক্ষেত্রে উন্নয়ন সাধন করতে হবে। আর কৃষিক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন করে খাদ্য ঘটতি দুরিকরণের ব্যাপারে ছাত্ররাই রাখতে পারে অগ্রণী ভূমিকা।

ঙ. নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসন রোধে: ছাত্র সমাজকে নিজেদের সংস্কৃতিকে হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে হবে। স্মরণ রাখতে হবে সংস্কৃতি গতিশীল ও প্রগতিশীল। তাই দেশীয় সংস্কৃতিকে বর্জন না করে বরং তাকে যুগোপযোগী করে তোলাই ছাত্রদের প্রধান দায়িত্ব।

চ. প্রাকৃতিক দুর্যোগ: প্রাকৃতিক দুর্যোগকে ছত্র সমাজ প্রতিরোধ করতে না পারলেও দুর্গত মানুষের সেবায় আত্মনিয়োগ করতে পারে ছাত্রগণ।

ছ. বিবিধ: প্রকৃতপক্ষে জাতিগঠনে ছাত্রসমাজের ভূমিকা বহুমুখী যা নির্দিষ্ট কোন ক্ষেত্রে অংশগ্রহণের মাধ্যমে সুসম্পন্ন করা যায়না। পড়াশুনার পাশাপাশি ছাত্ররা সমাজসেবামূলক কর্মকান্ড যেমন রাস্তা-নির্মাণ, খাল-খনন, স্বেচ্ছাশ্রম, পুল ও সাঁকো তৈরি, আবর্জনা-পরিষ্কার, বৃক্ষ-রোপন, সমবায়সমিতি-স্থাপন প্রভৃতি কাজে অংশগ্রহণ করতে পারে। এলাকার মুরুব্বিদের সহযোগিতায় তারা দরিদ্রদের পুনর্বাসন ও কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারে।

ভবিষ্যতের আলোকে ছাত্রসমাজের ভূমিকা:
এ পৃথিবী ক্রমশই হয়ে উঠছে জটিল। যতই দিন যাচ্ছে জাতির অগ্রগতির পথ ক্রমশই হয়ে যাচ্ছে সঙ্কীর্ণ। তাই ছাত্রদেরকে উত্তম ও আদর্শ রূপে গড়ে উঠতে হবে। এ জাতির উন্নতির সোনারকাঠি তাদের হাতেই রয়েছে। আজকের ছাত্ররাই পারবে ভবিষ্যতের বাংলাদেশকে সুজলা-সুফলা করে তুলতে।

উপসংহার:
প্রতিরাতে এদেশের দশ লাখ শিশু পেটে ক্ষুধা নিয়ে ঘুমোতে যায়। প্রতিটি নবজাতক পাঁচ হাজার টাকা ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে পৃথিবীর আলোর মুখ দেখে। অপুষ্টিতে কঙ্কালসার এদেশের ৮০ শতাংশ শিশু। এদেশের আকাশে বাতাসে অনুরণিত হয় সে মায়ের হাহাকার যে পারেনি তার শিুশুর মুখে দু'মুঠো ভাত তুলে দিতে। সে পিতার সজল দৃষ্টিতে হদয় বিদীর্ণ হয়ে যায়, যার সমস্ত জীবনের স্বপ্নকে ধুলিস্ম্যাত করে দিয়েছে রুদ্র প্রকৃতি। ধ্বংসের শেষ সীমায় দাঁড়িয়ে চাইনা আর মৃত্যু, চাইনা মাতার আহাজারি, পিতার আর্তনাদ। চাইনা অবুঝ শিশুর মুখে খাদ্যের অন্বেষায় অমানবিক সেই ফরিয়াদ। ফিরে পেতে চাই সুজলা সুফলা সোনার বাংলাকে যেখানে নেই বিভৎস মৃত্যুর তান্ডব। যেখানে ক্ষুধায় খাদ্য রয়েছে, শীতে বস্ত্র রয়েছে, রয়েছে মাথা গুঁজবার সামান্য ঠাঁই। জাতির এই ক্রান্তিকালে মুক্তির দূত আর কেউ নয়- সে ছাত্রসমাজ। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ভাষায় শপথ নেবার সময় আজ-

এ শিশুর কাছে এ পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গিকার।

[সুদূর অতীত স্কুল জীবনে একটি রচনা প্রতিযোগিতার জন্য লেখাটি লিখেছিলাম, যা কখনো আলোর মুখ দেখেনি। আজ বহু বছর পর লেখাটি চোখে পড়ল। উপলব্ধি করলাম, দুই দশকেরও আগে যা বলেছি, আমার এখনকার বক্তব্যও এর থেকে খুব ভিন্ন কিছু নয়। নিশ্চিত নই, তাহলে কী এই দু’দশকে দেশের আনুষঙ্গীক বিষয়গুলোতে কোন পরিবর্তন আসেনি, নাকি আমার চিন্তাভাবনারই বিকাশ হয়নি?]

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ৯:৩৭

রাজীব নুর বলেছেন: ছাত্রদের দোষ নেই। তাদের দোষ তারা দরিদ্র দেশে জন্ম গ্রহন করেছেন।
শিক্ষার মান খারাপ। শিক্ষকরা জোর করে বাধ্য করে কোচিং করতে।
বেশির ভাগ ছাত্ররাই ভালো। শুধু মাত্র যারা লীগ করে তারা ভয়ঙ্কর।

১০ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ৯:৪২

তৌফিক জোয়ার্দার বলেছেন: "শুধু মাত্র যারা লীগ করে তারা ভয়ঙ্কর।"- B-)
ভালোমন্দ সব দিকেই আছেরে ভাই। কেউ সুযোগের অভাবে ভালো হয়ে আছে এখন। পার্সেন্টেজ একটু কম বেশি হতে পারে- এই যা।

২| ১০ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ৯:৫০

চাঁদগাজী বলেছেন:


পরীক্ষার জন্য গরুর রচনা মুখস্হ করেছিলেন, ভালো; এখনো মুখস্হ আছে আপনার?

১০ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ১০:০১

তৌফিক জোয়ার্দার বলেছেন: হা হা হা। মুখস্ত নারে ভাই। আসলেও সেই মুখস্তের যুগে অনেক কষ্ট করে ঘেঁটে ঘুঁটে লেখাটা লিখেছিলাম। সেজন্যই এখনও একটা কপি রয়ে গিয়েছে। গৎবাঁধা গরুর রচনা কি কেউ যুগ যুগ ধরে সংরক্ষণ করে?

৩| ১০ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ৯:৫১

স্রাঞ্জি সে বলেছেন: শুভ সকাল।

খুবই ভাল লাগল।

১০ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ১০:০১

তৌফিক জোয়ার্দার বলেছেন: ধন্যবাদ।

৪| ১০ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ১০:৪২

ঋতো আহমেদ বলেছেন: ভালো লিখেছিলেন। সমস্যার আলোচনা, বিশ্লেষণ ও সমাধানের দিক-নির্দেশনা নিয়ে সম্পূর্ণ একটি লিখা।++

আপনার নতুন কিছু লিখাও পোস্ট করুন।

১০ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৪:৫৮

তৌফিক জোয়ার্দার বলেছেন: দীর্ঘদিন নিয়ম করে লেখা হয়না। বাংলা ব্লগ হঠাৎ করেই ম্রিয়মান হয়ে পড়েছিল একটা সময় (অন্ততঃ আমার তা-ই মনে হয়েছে)। আবার লেখার আশা রাখি। ধন্যবাদ।

৫| ১০ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ১১:০৬

টারজান০০০০৭ বলেছেন: আমাদের ছাত্রসমাজের ক্রম ইতিহাস পড়িলে দেখা যাইতেছে তাহারা পড়াশোনা বাদে সব জায়গাতেই---- বিশেষ করিয়া রাজনীতি, আন্দোলন , আন্দোলন দমনে বিশেষ পটু ! যেহেতু তাহারা পড়াশোনা বাদে বাকি সবকিছুতেই দক্ষতার সাক্ষর রাখিতেছে তাই তাহাদের পার্ট টাইম ছাত্রগীরি আর দরকার নাই ! হয় তাহারা ফুল টাইম ছাত্র হউক নাহয় ফুল টাইম রাজনীতিবিদ হউক !

১০ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৪:৫৯

তৌফিক জোয়ার্দার বলেছেন: :-*

৬| ১০ ই জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১২:২৭

শামচুল হক বলেছেন: সুন্দর লেখা।

১০ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৪:৫৯

তৌফিক জোয়ার্দার বলেছেন: ধন্যবাদ।

৭| ১০ ই জুলাই, ২০১৮ দুপুর ২:৩৩

ফেনা বলেছেন: সবার আগে দেশ থেকে ছাত্র রাজনীতি বনধ করেন দেখবেন একে একে সব সমস্যা সমধান হয়ে যাচ্ছে।

১০ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৫:০০

তৌফিক জোয়ার্দার বলেছেন: হুম। তবে অন্য উপায়ে ছাত্রদের মাঝে রাজনীতি-সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.