নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তৌফিক জোয়ার্দার

তৌফিক জোয়ার্দার

জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে ডক্টরেট শেষ করে দেশে ফিরেছি ২০১৫ সালের শেষ দিকে। যারা ফলো করতো, তাদের কাছে বারবারই বলেছি দেশে ফিরবো। সামুতে লিখেওছিলাম এ নিয়ে। অনেকেই সাধুবাদ দিয়েছিলেন, আবার অনেকে প্রকাশ করেছিলেন সন্দেহ ও অনাস্থা। এ ক’টা বছর কেটে গেল ফিরে আসার ধাক্কাটা সামলাতে। অনেক দিন পর আবার এলাম সামুতে। আবারো লেখালেখির দুর্মর আকাঙ্ক্ষা বুকে নিয়ে। আবার ঘন ঘন দেখা হবে বন্ধুরা।

তৌফিক জোয়ার্দার › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফুড রিভিউ: মনা মামার হালিম

১৫ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৫:০৮



বাঙ্গালির হালকা খাবারের তালিকায় হালিমের জনপ্রিয়তা বেশ উপরের দিকে। বিশেষ করে রোজার মাসে ইফতারির অনুষঙ্গ হিসেবে এর চাহিদা বেড়ে যায় বহুগুণ। ঢাকায় যেসব হালিমের নাম ডাক বেশি শুনেছি তার মধ্যে অবশ্যই মামা হালিম সবচেয়ে এগিয়ে থাকবে। এছাড়াও অনুরাগ, মজিদ মামা, স্টার- এদের কথাও শুনি নানা জায়গায়। তবে এবার রমজানে আমার চাচাতো ভাইয়ের নিয়ে আসা মনা মামার হালিমটা অন্য সবগুলোর চেয়ে ভিন্নতর বলে মনে হয়েছিল। তবু এর আসল স্বাদ নিয়ে সন্দেহ ছিল, কারণ, রোজার কারণে মুখে স্বাদ বেশি লেগেছিল কিনা সে খটকা রয়ে গিয়েছিল। তাই বেশ ক’দিন ধরেই ভাবছিলাম, ওদের হালিমটা ওখানে গিয়েই খেয়ে পরখ করে আসা দরকার। ভাবতে ভাবতে সেদিন সুযোগটাও চলে আসলো। আমরা তিন বন্ধু সন্ধ্যার পর এক হতেই, প্রস্তাব দিলাম মোহাম্মদপুর গিয়ে মনা মামার হালিম খেয়ে আসি। হালিমের বর্ণনা শুনে ওরাও সানন্দে রাজি হয়ে গেল। আমার মতো ওদের কাছেও মনা মামার হালিম অপরিচিতই ছিল। এতদিন ঢাকায় থেকে এত জায়গার এত খাবার পরখ করেও হাতের কাছে এমন একটা হালিম অপরিচিত থেকে যাবে- এটা আমাদের কারও কাছেই ঠিক বিশ্বাসযোগ্য ছিলনা। আমিও ভয়ে ভয়ে ছিলাম, কারণ নিশ্চিত ছিলামনা আসলেই কি এর স্বাদ এতটা ভালো, নাকি স্রেফ রোজার দিনে ক্ষুধার বুজরুকিতে সাধারণ হালিমকেই অসাধারণ মনে হয়েছিল।

কিছু শঙ্কা, কিছু অনিশ্চয়তা, কিছু দ্বিধা নিয়ে তিন বন্ধু এক রিকশায় চেপে রওনা দিলাম মোহাম্মদপুরের উদ্দেশ্যে। জায়গা ঠিক চেনা ছিলনা, তাই গুগল ম্যাপ দেখে বের করে নিতে হলো। সলিমুল্লাহ রোডে পানির ট্যাঙ্ক মাঠের পাশেই ছোটখাটো একটা দোকান; বাইরে থেকে দেখে মোটেও আকর্ষণীয় কিছু বলে মনে হবেনা। জীবনে এমন অনেক সাধাসিধা জায়গায় অনেক অসাধারণ খাবারের সন্ধান পেয়েছি, তাই তিন বন্ধুর কেউই দোকানের চেহারা দেখেই হতাশ হলামনা। তাছাড়া, সাধারণ দোকান হলেও আশপাশটা বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন বলেই মনে হলো। আমার বেশি সমস্যা হয় খাওয়ার সময় ড্রেন বা অন্য কোন উৎস থেকে বাজে গন্ধ আসলে। কিন্তু মনা মামার দোকানে তেমন কোন সমস্যা অনুভব করলামনা। দোকানে ঢোকার মুখে ঢাউস সাইজের হালিমে ডেকচি পাতা, ঢাকনা দিয়ে ঢাকা। তার পাশে দোকানদার (ইনিই কি মনা মামা, জিজ্ঞেস করা উচিত ছিল) হাসি হাসি মুখে বসা। ভেতরে টিনের বেঞ্চি পাতা, সেগুলোতে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার মতো বয়সী কিছু ছেলে বসে স্যুপ অথবা হালিম খাচ্ছে।



দোকানের নাম যেহেতু ’মনামামা স্যুপ এ্যান্ড হালিম হাউজ’, তাই সিদ্ধান্ত নিলাম স্যুপ ও হালিম দু’টোই পরখ করে দেখব। তবে প্রথমে হালিমই অর্ডার দিলাম- তিনজনের তিনটা। দু’য়েক মিনিটের মাঝেই হাজির হয়ে গেল সেই বহু প্রতীক্ষিত হালিম। মেলামাইনের বাটিতে স্যুপের চামচ সহ পরিবেশন করল, হাতে হাতে। মাংস আর তার ঝোল উঁকি দিচ্ছে হাল্কা হলুদ রঙের হালিমের আড়াল থেকে। তেতুলের কিছু অংশও ভেসে রয়েছে। আর দেখা যাচ্ছে চমৎকার গোল কোয়েল পাখির ডিম। জ্বী, কোয়েল পাখির ডিম, যেটা প্রথমবার ইফতারিতে খাওয়ার সময়ও নজর কেড়েছিল। এটাই সম্ভবত মনা মামার হালিমের দৃষ্টিগ্রাহ্য প্রথম বৈশিষ্ট্য। এক বাটি হালিমের দাম ৭০ টাকা মাত্র।

কথায় আছে, আগে দর্শনদারি, তারপর গুণবিচারি। তবে এবার হালিমের গুণ বর্ণনা করা যাক। তার আগে বলে নিই, আমি যে বন্ধুদের কিল খাবার সম্ভাবনা থেকে বেঁচে গিয়েছি, তা বেশ বুঝে নিলাম তাদের তন্ময় ভঙ্গিতে হালিম ভক্ষণে মনযোগ দেখে।

১। হালিমে প্রায়ই মসলার আধিক্য থাকে। এমনকি অনেক নামকরা হালিমেও এটা দেখা যায়। অনেকটা মশলার আড়ালে স্বাদের দুর্বলতা গোপন করার চেষ্টার মতো। অথবা, মেকাপের আড়ালে রূপের কমতিটুকু ঢাকা। মনা মামার হালিম মুখে দিয়ে আমার একজন বন্ধুর প্রথম প্রতিক্রিয়া হলো- মসলার স্বাদটা আলাদা ভাবে পাওয়া যাচ্ছেনা। অর্থাৎ, হালিমের অরিজিনাল স্বাদকে অতিক্রম করে মসলার স্বাদ জিহ্বায় ধাক্কা দিচ্ছেনা। ওর কথা শুনে আমরা বাকি দু’জন মাথা নেড়ে সায় দিলাম। মশলার পরিমিতি মনা মামার হালিমের প্রথম চরিত্রবৈশিষ্ট্য।

২। হালিমে গোটা তেতুল চুবিয়ে রাখা; তেতুলের পানি নয়। অর্থাৎ, চটপটির মতো তেতুল জল ঢেলে একে টকটক স্বাদময় করে ফেলা হয়নি। হালকা ডুবে থাকা তেতুলখানা ঠিক যেন যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু টক ছড়িয়ে চুপ করে ডুব দিয়ে রয়েছে। যার একটু বেশি টক খাওয়ার সখ, সে ইচ্ছে করলে তেতুলখানা চামচে করে মুখে তুলে হাল্কা চুষে নামিয়ে রাখতে পারে। ভোক্তার এ স্বাধীনতা আমার কাছে বেশ উপভোগ্য মনে হলো।

৩। এ হালিমের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য যে দিক প্রথমেই সবার নজর কাড়ে তা হলো, কোয়েল পাখির ডিম। খেতে আহামরি আলাদা কিছু না হলেও, হালিমের সাথে এর ব্যবহার অভিনব বলেই মনে হলো। আপনারা কেউ অন্য কোথাও এমনটি পেয়ে থাকলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন।

৪। হালিম খেতে গেলে সবচেয়ে বিরক্তিকর যে জিনিসটি লাগে তা হলো, মাংস মেশানোয় কার্পণ্য। আবার অনেক হালিমে মাংস এমনভাবে কেটে দেওয়া থাকে যে, না যায় একবারে মুখে পোরা, না যায় সহজে ছিড়ে খাওয়া। এখানে দেখলাম, প্রচুর মাংস, অর্থাৎ, পুরো বাটি শেষ করতে এক চামচও মাংস ছাড়া শুধু হালিম মুখে দিতে হয়নি। ভুল বললাম, দুই চামচ দিতে হয়েছে, তবে সে দুই চামচে কোয়েলের ডিম ছিল। মাংসের স্বাদ ভালো, আকার এমন যে সহজেই ছেঁড়াছিঁড়ির ঝামেলায় না গিয়ে একবারে মুখে পোরা যায়, এবং হাড্ডিমুক্ত।

৫। কিছু হালিম ডালের মতো পাতলা বা ফিনফিনে হয়। কিন্তু এ হালিমের তারল্য একদম যথাযথ মাত্রার। পাতলা নয়, আবার একদম ঘনও নয়।



সব মিলিয়ে বেশ ভাল একটি অভিজ্ঞতা হলো। নিশ্চিত হওয়া গেল এর স্বাদ কেবল রোজামুখেই ভালো লাগেনি, আসলেও বেশ ভালো। সবচেয়ে বড় কথা, বন্ধুদের কাছে আমার ইজ্জতটা রক্ষা হলো; তা না হলে কী বিপদেই যে পড়তাম, আর কত আড্ডায় যে হাস্যরসের খোরাক হতে হতো তার কোন ইয়ত্তা নেই। তবে একটা কথা জানিয়ে রাখি। দোকানের নামে যদিও ‘স্যুপ’ শব্দটি আছে, আমাদের কাছে স্যুপটি মোটেও খুব একটা সুপেয় মনে হয়নি। কাজেই, ও খেয়ে স্বাদ নষ্ট করা সমিচীন হবেনা।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:০৭

রাজীব নুর বলেছেন: ঢগাকা শহরের বেশির লোকই হালিম বানাতে পারে না।

তবে স্টারের হালিম খেতে ভালো।

১৬ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ৮:৫৬

তৌফিক জোয়ার্দার বলেছেন: জ্বী। স্টারের হালিম বেশ ভালো বলেই শুনেছি। সম্ভবত খেয়েছিও, কিন্তু স্বাদ মনে নেই।

২| ১৫ ই জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:১১

কথার ফুলঝুরি! বলেছেন: ইশ! এটা কোন কথা হল :(( এখন তো আর লোভ সামলাতে পারছিনা :( মনা মামার হালিম না খেতে পারলেও আজ বাসায় ফেরার সময় মাস্ট হালিম নিতে হবে :P

১৬ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ৮:৫৮

তৌফিক জোয়ার্দার বলেছেন: :D
Bon Appetit.

৩| ১৫ ই জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২৯

সৈয়দ মূসা রেজা বলেছেন: ভ্রাম্যমাণ আদালতে ধানমন্ডির কাছে এক মামা হালিমের জরিমানার ঘটনার পর দোকানের হালিম খাওয়ার প্রতি টান উধাও হয়ে গেছে। পারতপক্ষে বাইরের খাবার খাই না। তবে এখানে বর্ণনা পড়ে জিভে পানি আসার জোগাড়!

১৬ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ৯:০১

তৌফিক জোয়ার্দার বলেছেন: বাইরের খাবার পারতপক্ষে পরিহার করাই ভালো। তবে মাঝে মাঝে না খেয়েও পারা যায়না। আসলে এসব খাবার যেন স্বাস্থ্যকরভাবে প্রস্তুত করা হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য আমাদের চাপ সৃষ্টি করতে হবে। তা নাহলে একদিন এসব খাবার হারিয়ে যাবে।

৪| ১৫ ই জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩৮

চাঁদগাজী বলেছেন:


পুরো জিনিষটাই একটা অখাদ্য

১৬ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ৯:০২

তৌফিক জোয়ার্দার বলেছেন: :(
আপনার পছন্দের খাবার কী? দেখি সেটা নিয়ে কোন রিভিউ দেওয়া যায় কিনা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.