নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বৈশিষ্ট্যহীন একজন মানুষ।

মোটা ফ্রেমের চশমা

বলার মতো কিছু হতে পারিনি এখনো

মোটা ফ্রেমের চশমা › বিস্তারিত পোস্টঃ

যখন আরেকটু হলেই চাঁদের বুকে নির্বাসিত হতেন চন্দ্রবিজয়ীরা

০১ লা জুন, ২০২০ বিকাল ৩:১৯

''মানুষের জন্য ছোট একটি পদক্ষেপ, কিন্তু মানবজাতির জন্য এক বিরাট অগ্রযাত্রা।'' ১৯৬৯ সালের ২০শে জুলাই চাঁদের বুকে প্রথম অবতরণের পর এই বিখ্যাত উক্তি করেছিলেন নিল আর্মস্ট্রং। কিন্তু সাড়া জাগানো চন্দ্রাভিযানের শেষটা হয়তো এমন সুখকর নাও হতে পারতো। এখন পাঠক প্রশ্ন করতে পারেন- ''কেন?''
বলছি। শুনুন।
আপাত দৃষ্টিতে নিরীহ কিন্তু ফলাফলে ভয়ঙ্কর একটা দুর্ঘটনার মুখোমুখি হয়েছিলেন দুই চন্দ্র-বিজয়ী। লুনার মডিউলের একটা গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ ভেঙে আরেকটু হলেই চাঁদে আটকা পড়তে হতো দুই নভোচারীকে। তবে এডউইন অলড্রিনের উপস্থিত বুদ্ধির জোরে রক্ষা পেয়েছিল কোটি ডলারের অভিযান আর নিজেদের অমূল্য প্রাণখানা। সব থেকে বিস্ময়কর ব্যাপার হলো অলড্রিন এত অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি থাকা সত্ত্বেও সামান্য একটা ফেল্ট-টিপ কলম ব্যবহার করে এড়িয়ে গিয়েছিলেন বিপদটি।

চাঁদে হাটাহাটি আর নমুনা সংগ্রহ করা শেষে অলড্রিন আর নিল আর্মস্ট্রং তৈরি হচ্ছিলেন লুনার মডিউল নিয়ে মূল নভোযানে ফেরত যাবার। সেখানে মাইকেল কলিন্স অপেক্ষা করছেন তাদের জন্য। আর ঠিক তখনই তারা লক্ষ্য করলেন ইন্সট্রুমেন্ট প্যানেল থেকে এক ইঞ্চি লম্বা সার্কিট ব্রেকারের সুইচ ভেঙে গেছে।
২০০৯ সালে প্রকাশিত আত্মজীবনী ম্যাগনিফিসেন্ট ডেসোলেশনঃ দ্য লং জার্নি হোম ফ্রম দ্য মুন-এ অলড্রিন বলেছেন- লুনার মডিউল মেঝেতে একটা কিছু পড়ে থাকতে দেখেন তিনি। আর মেঝেতে ‘কিছু’ পড়ে থাকার কথা ছিল না।
''আমি সামনে গিয়ে জিনিসটা দেখেই চমকে গেলাম। একটা সার্কিট ব্রেকার সুইচ ভেঙে কেবিনের মেঝেতে পড়ে আছে।''
সুইচটা কোত্থেকে এলো ভাবতে ভাবতে ইন্সট্রুমেন্ট প্যানেলে সারি সারি সার্কিট ব্রেকারে চোখ বুলাতে লাগলেন তিনি। বিপদটা চোখে পড়তেই ঢোঁক গিললেন আতঙ্কে।
''সুইচটা ইঞ্জিন-আর্ম সার্কিট ব্রেকার থেকে ভেঙেছে। আর এই ব্রেকারটা দিয়েই উড্ডয়ন ইঞ্জিনে ইলেক্ট্রিক্যাল পাওয়ার পাঠানো হয়। উড্ডয়ন ইঞ্জিন কাজ না করলে আমাকে আর অলড্রিনকে চাঁদের মাটি ছেড়ে উঠতে হবে না।''
ভারী স্পেসসুট পরে নড়াচড়া করবার সময়ই সম্ভবত দু’জনের একজন নিজের অজান্তে ধাক্কা লাগিয়ে বসেছিলেন সুইচটাতে। কথা হচ্ছে- সুইচ যেভাবেই ভাঙুক না কেন, সার্কিট ব্রেকারটা কাজ না করলে উড্ডয়ন ইঞ্জিন চালুও হবে না, নভোচারীদের ঘরেও ফেরা হবে না। দ্রুতই দুর্ঘটনার কথা মিশন কন্ট্রোলকে জানানো হয়। মিশন কন্ট্রোলের বাঘা বাঘা সব টেকনিশিয়ান আর কর্তাব্যক্তিরা সারা রাত ধরে মাথা ঘামালেন কীভাবে কী করা যায়। কিন্তু লাভ হলো ঘণ্টা। হিউস্টন ওয়াজ হ্যাভিং অ্যা প্রবলেম। পরেরদিন সকাল নাগাদও কেউ সুরাহা বের করতে পারল না।
''ভালমত পরীক্ষা করে দেখার পর ভাবলাম, লুনার মডিউলে যদি এমন কিছু একটা পাই যেটা সার্কিটটার ভেতরে ঢোকানো যাবে লম্বা সুইচটার বদলে- তাহলেই তো কাজ হয়ে যায়।'' অলড্রিন বলেন। ''তবে জিনিসটা যেহেতু বৈদ্যুতিক, আঙ্গুল কিংবা ধাতব কিছু দিয়ে গুঁতোগুঁতি করবার সাহস পেলাম না। শোল্ডার পকেটে অবশ্য একটা ফেল্ট-টিপ কলম আছে, সেটা দিয়ে কাজ হলেও হতে পারে।''
শলা-পরামর্শ করে উড্ডয়নের কাউন্টডাউন নির্দিষ্ট সময় থেকে কয়েক ঘন্টা এগিয়ে আনেন দু’জনে। যদি বুদ্ধিটা কাজে না লাগে তাহলে বাড়তি কিছু সময় হাতে থাকবে তাদের। অলড্রিন দুরুদুরু বুকে হাতের কলমটা সার্কিট ব্রেকারের সুইচের ফুটোর ভিতর ঢুকিয়ে চাপ দিলেন। কলজেটা যেন লাফিয়ে উঠল তার- সার্কিট ব্রেকার কাজ করছে! বিপদ কেটে গেছে! এবার নিশ্চিন্তে বাড়ি যেতে পারবেন তারা।
এই ঘটনাকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য তিনি আজও কলম আর ভাঙা সুইচটা রেখে দিয়েছেন নিজের কাছে।
নাসার চীফ হিস্টোরিয়ান উইলিয়াম ব্যারি বলেন, ''সার্কিট ব্রেকারটা যদি কাজ করতে না পারতো তাহলে আর্মস্ট্রং আর অলড্রিন চাঁদে আটকা পড়তেন। তবে কলম দিয়েও যদি কাজ হাসিল না হতো তাহলে আমি নিশ্চিত, মিশন কন্ট্রোল আর ক্রু’রা মিলে অন্য কোনো না কোনো উপায় বের করে ফেলত।''
‘তবে সত্যি কথা হচ্ছে, অবস্থা খুবই গুরুতর ছিল। এতটাই বেশি যে- পরবর্তীতে লুনার মডিউলগুলোর সার্কিট ব্রেকারের উপর আলাদা গার্ড বসানো থাকতো যাতে এরকম বিপদে পড়তে না হয়।’
ব্যারি আরও বলেন, ''অ্যাপোলো প্রোগ্রাম চলাকালীন সময় মিশন কন্ট্রোল আর নভোচারীরা মিলে হাজার বারের বেশি সিমুলেশন চালিয়েছেন। সিমুলেশন টীমের ক্রু’রা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে একেক বার একেক বিপদ বের করতেন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেবার জন্য, যাতে অচেনা কোনো আশঙ্কার মুখোমুখি হতে না হয় আসল সময়ে গিয়ে।
''আমার জানা নেই যে সার্কিট ব্রেকারের ভাঙা সুইচ নিয়ে কোনো সিমুলেশন চালানো হয়েছিল কি না; তবে সিমুলেটরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে নভোচারী-গ্রাউন্ড ক্রু’রা যে জ্ঞান অর্জন করেছিলেন সেই জ্ঞান কাজে লাগিয়ে তারা সার্কিট ব্রেকার ছাড়া অন্য যেকোনো বিপদ থেকে পরিত্রাণ পেতেন এ আমি হলফ করে বলতে পারি।''

এই সুইচ ভাঙার ব্যাপারটা কি তাহলে নাসা কল্পনা করেনি? উত্তরটা হবে- না। উড্ডয়নকালে কিংবা যাত্রাপতে অনেক সমস্যাই হতে পারে- এটা না বোঝার মতো বোকা না তারা। তবে কথা হচ্ছে সিমুলেটরে লুনার মডিউল লঞ্চ আর ডকিং (মূল নভোযানের সাথে মিলিত হওয়া) সংক্রান্ত যাবতীয় সমস্যার সমাধান শেখানো হয়েছিল। তবে এসব সমস্যা তখনই হবে যখন লুনার মডিউল চাঁদের বুক ছেড়ে উপরে উঠবে। আর সুইচ ভেঙে যাওয়ায় অলড্রিনরা ঠিক সেটাই করতে পারছিলেন না। বাহনের উড্ডয়ন ইঞ্জিন অকেজো হয়ে গেলে কমান্ড মডিউলে থেকে মাইকেল কলিন্সও কোনো সাহায্য করতে পারতেন না। কারণ মূল নভোযান চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণে সক্ষম ছিল না।
এত আধুনিক প্রযুক্তি আর প্রস্তুতি সব মাঠে মারা যেত সামান্য কলমটা না থাকলে।

এখন থেকে পকেটে একটা বাড়তি কলম রেখে দিতে পারেন। কখন কোন দরকারে লেগে যায়, কে জানে!

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫৭

রাজীব নুর বলেছেন: গান শুনুন।

০২ রা জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:০১

মোটা ফ্রেমের চশমা বলেছেন: কোনো নির্দিষ্ট সাজেশন আছে? জনরা, ব্যান্ড, সলো সিঙ্গার?

২| ০১ লা জুন, ২০২০ রাত ৮:১২

কল্পদ্রুম বলেছেন: থ্রিলিং ব্যাপার স্যাপার।

০২ রা জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:০২

মোটা ফ্রেমের চশমা বলেছেন: অনেকেই জানে না এই ঘটনাটা। আমিও জানতাম না কিছু দিন আগেও।

৩| ০১ লা জুন, ২০২০ রাত ৮:৫০

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: সত্যিই ভয় ধরিয়ে দেওয়ার মতো ব্যাপার স্যাপার।

০২ রা জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:০২

মোটা ফ্রেমের চশমা বলেছেন: আসলেই। ভিন্ন গ্রহে গিয়ে আটকা পড়া- যেন সিনেমার দৃশ্য!

৪| ০১ লা জুন, ২০২০ রাত ৯:০৭

কাছের-মানুষ বলেছেন: আজান কিছু জানলাম। ধন্যবাদ শেয়ারের জন্য।

০২ রা জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:০০

মোটা ফ্রেমের চশমা বলেছেন: ধন্যবাদ :)

৫| ০২ রা জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:০৪

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
খুবই ভালো পোস্ট।

০২ রা জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:১৮

মোটা ফ্রেমের চশমা বলেছেন: থ্যাংকিউ।

৬| ০৩ রা জুন, ২০২০ রাত ১১:২২

ব্লগার_প্রান্ত বলেছেন: What was wrong with the Hubble Space Telescope?

It was finally launched by Space Shuttle Discovery in 1990, but its main mirror had been ground incorrectly, resulting in spherical aberration that compromised the telescope's capabilities. The optics were corrected to their intended quality by a servicing mission in 1993.

এটা জানেন??

০৪ ঠা জুন, ২০২০ দুপুর ১:৩৩

মোটা ফ্রেমের চশমা বলেছেন: নাহ এইটা জানা ছিল না। নতুন একটা ইনফো জানলাম। থ্যাঙ্কু!
বাই দ্য ওয়ে, তথ্যটা কোত্থেকে পেয়েছেন? হিস্ট্রি ডট কম?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.