নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বৈশিষ্ট্যহীন একজন মানুষ।

মোটা ফ্রেমের চশমা

বলার মতো কিছু হতে পারিনি এখনো

মোটা ফ্রেমের চশমা › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভার্জিনিয়া হলঃ মিত্রশক্তির দুর্ধর্ষতম গুপ্তচর

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ২:০৪



বললে বিশ্বাস করবেন, যে মিত্রশক্তির অস্ত্রাগারে অন্যতম দুর্ধর্ষ গুপ্তচরটি ছিলেন একজন নারী? তাও আবার যার কি না একটা পা নকল?
যুদ্ধকালীন সময়ে তার নেতৃত্বে পরিচালিত হয়েছে বহু রেসকিউ অপারেশন, স্যাবোটাজ ঘটিয়েছেন শত্রুশিবিরে, সহজ করেছেন মিত্রশক্তির পথচলা। আমেরিকার ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ নারী গুপ্তচরের খেতাবটা এমনি এমনি জোটেনি। যার কোডনেম ছিলো দুটি- মেরি ও ডায়ান।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। চলাকালীন নাৎসি অফিসাররা খুঁজে খুঁজে হত্যা করছে রেজিস্ট্যান্স যোদ্ধাদের, জাল বিছিয়ে ধরছে মিত্রপক্ষের গুপ্তচরদের। কিন্তু এত এত গুপ্তচরের ভিড়ে থার্ড রেইখের চক্ষুশূল ছিলো বিশেষ এক নারী। যার তীক্ষ্ম বুদ্ধির কাছে হেরে যাচ্ছিলো ঝাঁটা গুফোর বাহিনী। আর সেই বিশেষ মানুষটিই হলেন- ভার্জিনিয়া হল। তবে নাৎসিরা তার আসল নাম জানতো না। তাকে চিনতো ‘খোঁড়া মহিলা’ নামে।
তবে এই তকমাটা খামোখাই পাননি। হল সত্যি সত্যিই খুঁড়িয়ে হাঁটতেন। এক দুর্ঘটনায় তার বাম পা হাঁটুর নিচ থেকে কেটে ফেলতে হয়। সেখানে সাত পাউন্ড ওজনের কৃত্রিম কাঠের পা জোড়া লাগিয়ে দেয়া হয়। গুপ্তচর হলেও রসিকতাবোধ কম ছিলো না তার। আদর করে কাঠের পা’টার নাম দিয়েছিলেন- কাথবার্ট।

হলের জন্ম ১৯০৬ সালের এপ্রিলের ৬ তারিখ। বড় হয়েছেন বাল্টিমোর, মেরিল্যান্ডে। ধনী পরিবারের সদস্য হওয়ায় যত্ন-আত্তির কম ছিলো না। অ্যাথলেটিক, তীক্ষ্মধী আর রসিক স্বভাবের হল হাইস্কুলেও ছিলেন জনপ্রিয়। স্কুল ইয়ারবুকে ‘দ্য মোস্ট অরিজিনাল ইন আওয়ার ক্লাস’ তকমা পান। বার্নার্ড আর র‍্যাডক্লিফ কলেজে পড়াশোনা করলেও শেষ করেন ভিয়েনা আর প্যারিসে। অনর্গল ফ্রেঞ্চ, জার্মান, ইতালিয়ান বলতে পারতেন। এক-আধটু রাশিয়ানও পারতেন বৈকি। গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করে যুক্তরাষ্ট্রের ফরেন সার্ভিসে আবেদন করেন চাকরির জন্য। তরুণী হলের ইচ্ছে ছিলো দুনিয়াটা ঘুরে দেখতে, সেইসাথে দেশের সেবা করতে। তবে দ্রুতই স্বপ্নভঙ্গ ঘটে। তার আবেদন নাকচ করে দেয়া হয়। ফরেন সার্ভিসে কানা-খোঁড়ার জায়গা নেই।

হল প্যারিসে ফিরে যান একজন সিভিলিয়ান হিসেবে; সালটা তখন ১৯৪০, হামলার প্রাক্কালে। ফ্রেঞ্চ অ্যাম্বুলেন্স কর্পসে যোগ দেন। নাৎসিদের তোপের মুখে দশদিনের মাথায় ফ্রান্স যখন হার মেনে নিলো, হল পালিয়ে গেলেন ইংল্যান্ডে।
লন্ডন। এক ককটেল পার্টিতে হল প্রতিবাদে ফেটে পড়ছেন, অগ্নিবর্ষণ করছেন হিটলারের বিরুদ্ধে। সেই পার্টিতেই এক মহিলা হঠাৎ তার হাতে একটা কার্ড ধরিয়ে দেয়। ফিসফিসিয়ে তাকে বলে, ‘তুমি যদি সত্যিই হিটলারকে থামাতে চাও, আমার সাথে দেখা কোরো।’
কার্ড দেনেওয়ালী আর কেউ না, স্বয়ং ভেরা অ্যাটকিন্স। ব্রিটিশ স্পাই জগতের কিংবদন্তী। যাকে দেখে জেমস বন্ডের স্রষ্টা আয়ান ফ্লেমিং অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন মিস মানিপেনি চরিত্রটি সৃষ্টিতে। অ্যাটকিন্স চার্চিলের সদ্য খোলা স্পেশাল অপারেশন্স এক্সিকিউটিভের (এসওই) জন্য রিক্রুট করছিলেন। তিনি হলের ফ্রেঞ্চ গ্রামাঞ্চল সম্পর্কে জ্ঞান, একাধিক ভাষা বলতে পারার ক্ষমতা ও ইস্পাত কঠিন চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য দেখে প্রভাবিত হন।

১৯৪১ সালে হল ফ্রান্সে এসওই’র প্রথম নারী রেসিডেন্ট এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ পান। ছদ্মনাম আর কাগজপত্রের ব্যবস্থা করে দেয়া হয় কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে। নিউ ইয়র্ক পোস্টের একজন আমেরিকান রিপোর্টারের ভূমিকা পালন করেন হল। খুব দ্রুতই নিজের দক্ষতার পরিচয় দেন তিনি। জার্মান সৈন্যদের তৎপরতা ও মিলিটারি পোস্ট সংক্রান্ত তথ্য রেডিওতে নিয়মিতভাবে পাচার করতে থাকেন।
যে সময়টাতে শত্রুদের অঞ্চলে নারী সিক্রেট এজেন্টদের পাঠানো কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ছিলো, আর ঠিক সেই সময়েই হল কো-অর্ডিনেট করছেন দুঃসাধ্য সব অপারেশনের। ব্রিজ উড়িয়ে দেয়া, ট্রুপ মুভমেন্ট সম্পর্কিত রিপোর্ট সংগ্রহ, এজেন্টদের জন্য ইকুইপমেন্ট ড্রপের ব্যবস্থা করা, গেরিলা যোদ্ধা নিয়োগ ও ট্রেনিং প্রদান- সব পরিচালনা করতেন নিজ হাতে। সুচারুভাবে প্রতিটা অপারেশনের খুঁটিনাটি তার মাথা থেকে বেরোতো। ‘ম্যাডোনা অফ রেজিস্ট্যান্স’ নামে খুব দ্রুত পরিচিতি লাভ করেন সহযোদ্ধাদের মাঝে।



চল্লিশের দশকে প্রযুক্তি উন্নতির শিখরে না পৌঁছালেও তা পুষিয়ে নেয়া হতো উদ্ভাবনী শক্তি আর উপস্থিত বুদ্ধির দ্বারা। বিবিসি তাদের রাত্রিকালীন খবরে মেসেজ কোড করে রেডিওতে সম্প্রচারিত করতো। হল নিউ ইয়র্ক পত্রিকার এডিটরের সাথে মিলে নিউজ স্টোরির মধ্যে কোডেড মেসেজ দিয়ে রাখতেন লন্ডনে এসওই’র কর্তাদের জন্য।
‘লিয়ন থাকাকালীন, যখনই কোনো সংবাদ দেবার দরকার হতো নাৎসিদের চোখ এড়িয়ে, হল তার জানালার ধারে জেরানিয়াম ফুলের পাত্র রেখে দিতেন সিগন্যাল হিসেবে। আর সেই মেসেজটা থাকতো হয়তো নির্দিষ্ট একটা দেওয়ালের নড়বড়ে ইটের নিচে। কিংবা কোনো ক্যাফেকে সংবাদ চালাচলির জন্য ঠিক করা হলে সেই ক্যাফের বারটেন্ডার আপনাকে একটা গ্লাস দিতো। সেই গ্লাসের তলায় চিপকে থাকতো কিছু না কিছু।’ ফ্রান্সে হলের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছেন এমন ব্যক্তিদের সাথে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।

নাৎসি নেতাদের মধ্যে হল এতটাই কুখ্যাত হয়ে ওঠেন যে গেস্টাপো তাকে ডাকা শুরু করে, ‘মিত্রশক্তির সবচেয়ে খতরনাক গুপ্তচর।’ নাৎসিরা খোঁড়া মহিলাকে ধরার জন্য গোটা ইউরোপ জুড়ে পোস্টার ছড়িয়ে দিলে তিনি পালাতে বাধ্য হন। সেই পলায়নও ছিলো আরেক সাহসিকতার গল্প। স্পেনের দক্ষিনাঞ্চলের পিরানীজ মাউনটেইন্সের উদ্দেশ্যে রওনা দেন তিনি। পঞ্চাশ মাইল দুর্গম পথ ট্রেকিং করতে হয় তাকে কাঠের পা নিয়ে। তার স্প্যানিশ গাইড তাকে নিতে অনীহা প্রকাশ করে। কেন? সেই একই কারণঃ একে তো নারী, তারওপর খোঁড়া। কিন্তু হলের দৃঢ়সংকল্পের কাছে হার মানতে হয় তাকে। নভেম্বর মাসের প্রতিকূল আবহাওয়াকে উপেক্ষা করে এগোন হল। এদিকে নকল পা’টা বড্ড ভোগাচ্ছিলো।
পাহাড়ে অবস্থিত সেফ হাউজে পৌঁছে লন্ডনে ঊর্ধ্বতনের কাছে রেডিওতে রিপোর্ট করেন হল। জানান তিনি ঠিক আছেন তবে কাথবার্ট যন্ত্রণা দিচ্ছে ভীষণ। এদিকে বেরসিক এসওই ধরে নেয় কাথবার্ট বুঝি হলের অধীনস্থ কোনো ইনফরম্যান্ট। তারাও সিরিয়াস উত্তর দেয়, ‘কাথবার্ট সমস্যা সৃষ্টি করলে সরিয়ে দাও চিরতরে।’

তবে হলের লড়াই এখানেই শেষ হয়নি। এসওই তাকে ফ্রান্সে ফেরত পাঠাতে অনিচ্ছুক ছিলো, কারণ ইতিমধ্যেই তার চেহারা ফাঁস হয়ে গেছে সেখানে। উপায় না দেখে হল যোগ দেন ইউএস অফিস অফ স্ট্র্যাটেজিক সার্ভিসে (ওএসএস)। সিআইএ’র জন্মদাতা বলা যায় ওএসএস’কে।
১৯৪৪, ডি-ডে আক্রমণের কয়েক মাস আগের কথা। হল এক ব্রিটিশ টর্পেডো জাহাজে চাপেন ৬০ বছর বয়স্ক এক মহিলার ছদ্মবেশে। ফ্রেঞ্চ গ্রামাঞ্চল ধরে এগোবার সময় জার্মানদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটা স্যাবোটাজ মিশন পরিচালনা করেন তিনি। ওএসএস-এর এক রিপোর্ট থেকে জানা যায় যে; হলের দল লাইচ্যুত করেছে অনেকগুলো ফ্রেইট ট্রেইন, উড়িয়ে দিয়েছে চারটে ব্রিজ, হত্যা করেছে ১৫০ নাৎসি সৈন্য, বন্দী করেছে আরও ৫০০।

যুদ্ধশেষে ভার্জিনিয়া হলকে ভূষিত করা হয় ডিসটিঙ্গুইশড সার্ভিস ক্রসে। যা যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর অন্যতম উচ্চমর্যাদা সম্পন্ন পদক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নারী হিসেবে একমাত্র তিনিই পান এই সম্মাননা। অর্ডার অফ দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ারের (এমবিই) একজন অনারারি মেম্বার হিসেবে গ্রহণ করে নেয়া হয় তাকে। ফ্রান্সের তরফ থেকে দেয়া হয় কোয়া দ্য গ্যাঁ পদক। ৬০ বছর বয়সে বাধ্যতামূলক অবসরের আগ পর্যন্ত সিআইএ’র হয়ে কাজ করে যান তিনি।

ভার্জিনিয়া হল মারা যান ১৯৮২ সালের জুলাই মাসের আট তারিখে।

ইতিহাসের অন্যতম সেরা গুপ্তচরকে নিয়ে লেখা হয়েছে বেশ কিছু বই। যার মধ্যে রয়েছেঃ

** Hall of Mirrors: Virginia Hall: America's Greatest Spy of WWII, by Craig Gralley (2019)
** The Lady Is a Spy: Virginia Hall, World War II Hero of the French Resistance, by Don Mitchell (2019)
** The Spy with the Wooden Leg: The Story of Virginia Hall, by Nancy Polette (2012)
** A Woman of No Importance: The Untold Story of WWII’s Most Dangerous Spy, Virginia Hall, by Sonia Purnell (2019)
** Code Name Badass: the true story of Virginia Hall, by Heather Demetrios (2021)
** The Invisible Woman, by Erica Robuck (2021)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সকাল ৯:৩৪

শায়মা বলেছেন: এই সাহসী মহিলার কথা জেনে মুগ্ধ হলাম।

এমন সাহসী আর মনোবল মুগ্ধ হতেই হয়।

২| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১:৪০

রাজীব নুর বলেছেন: পুটিন কি হিটলার হতে চাইছে?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.