নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আদ্যন্ত গৃহী। বইপোকা। লেখালিখিটা প্যাশন; তেমন বাছবিচার না থাকলেও থ্রিলার আর হরর জনরাতে স্বাচ্ছন্দ্য বেশি। অল্প বিস্তর ছবিয়ালও। ইন্সটাতে shajus shot হিসেবে পাবেন। মুভি দেখতে ভালো লাগে, ভালো লাগে খোলা আকাশ, সাগরের পাড়ে চুপ করে বসে থাকা আর নিস্তব্ধতা। প্রিয়

মন থেকে বলি

জীবনের স্থায়িত্বকাল কত অল্প। কিন্তু কত কিছু যে ইচ্ছে করে করতে। তাই পারি আর না-ই পারি, ইচ্ছেগুলোর ডানা মেলে দিয়ে যাই - এই আমার আকাশের জানালায়।

মন থেকে বলি › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুমতাজ...! তাজ মুঝকো লুট লিয়া রে...!! (একটি \'নিজ পায়ে কুড়াল মারা\' গল্প)

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১০:৫৯

শতমুখে গুণগান শুনিয়া কদাচ আমারও ক্ষণিক সাধ জাগিয়াছিল - প্রেমের সমাধি দেখিব। তাজমহল। আগ্রা। শাহজাহান আর মুমতাজের বাইশটি বছরের কান্ডকীর্তি!

এক ব্যক্তি কত্ত বড় প্রেমিক (অথবা বেক্কল) হইলে ২২ বৎসর ধরিয়া ইহা বানাইতে পারে, ভাবিয়া ঘিলু চটকাইয়া যায়। সুতরাং দেখিবার সাধ হওয়া অন্যায় নয়।

তবে সাধ আর সাধ্যের সমন্বয় সাধন করিবার সময় 'ভ্যালু ফর মানি'র হিসেব কষিয়া দেখিলাম, কব্বর দেখিয়া কি ফয়দা হইবে? সে তো আজিমপুর যাইলেই হয়। 'আজিমপুর' ফেলিয়া 'আগ্রা' যাইতে হইবে কেন - আমার ইষ্টকসদৃশ খুলিতে কখনই সেঁধোয় নাই। আর ঢাকা শহরের অলিতে গলিতে যে কত অষ্টম, নবম, দশম, ইত্যাকার আশ্চর্য লুক্কায়িত রহিয়াছে - তাহা তো আমরা, এই ঢাকাবাসীরা জানি-ই। তো ওই আশ্চর্য দেখিবার বিশেষ কোন আশ্চর্য কারণ আছে কি?

নাই বলিয়াই....অদ্যবধি সেই তাজমহল 'মনিব্যাগ' আর 'ব্যাংক একাউন্ট স্টেটমেন্ট' নামক দুইটি পরম মানবহিতৈষী যন্ত্র দ্বারা দুর্দান্তভাবে নিয়ন্ত্রনে ছিল। বেয়াড়া 'সাধ'-এর কর্ণমূল টানিয়া ধরিবার জন্য ইহাদের অপেক্ষা কার্যকরি 'সিস্টেম' ত্রিভুবনে নাই। নিতান্তই দরকার পড়িলে গুগল মামাকে টোকা মারিয়া আর আগ্রা-ফেরত তাজের রেপ্লিকা স্পর্শ করিয়া দর্শন এবং স্পর্শ - উভয় আকাংখাই আমার পূরন হইয়া গিয়াছিল।

কিন্তু বাধ সাধিল সেই হতভাগা প্রবাদবাক্যটি - Man disposes but Woman proposes. এক্ষেত্রে শুধু মনে রাখিতে হইবে, যখন "উওম্যান প্রোপোজ" করে, তখন 'ম্যান' নিজেই 'ডিসপোসড' হইয়া যায়।

ব্যাপারটি কতকটা সফটওয়ারের লাইসেন্স এগ্রিমেন্ট পড়িবার মতন। দশ পাতা পড়া শেষ করিয়া মানুন আর না-ই মানুন, শেষে "আই এগ্রি" বোতামেই টিপি দিতে হয়।

সুতরাং আমার 'মমতাজ' যখন আমাকে শাহজাহান জ্ঞান করিয়া আসন্ন ভারতভ্রমন ট্রিপে আগ্রা ঢুকাইলেন, আমি বুদ্ধিমান পুরুষের মত দুই চক্ষু একত্রেই টিপিলাম - আই এগ্রি। সংগে দারাশিকো (পড়ুন বড়পুত্র) আর হুমায়ুন (পড়ুন ছোটপুত্র) তো আছেনই। দুইদিন আগ্রা দর্শন সাব্যস্ত হইলো।

কাহিনীর ক্লাইম্যাক্স শুরু হইলো আগ্রা নগরে প্রবেশ করিবার সাথে সাথে। বলা যায়, নাগরা-পেটা হইলাম।

উহুঁ...এক্ষনেই কি অস্থির হইতেছেন? কাহিনী তো মাত্র ফাঁদিয়া উঠিতেছে। ধীরে বৎস, ধীরে।

বাধা দিবেন না, জাস্ট শুনিয়া যান।

আগ্রায় প্রবেশ করিলাম।

শাহজাহান-মমতাজের লীলাক্ষেত্র। প্ল্যান ফাঁদিয়াছিলাম- সেইদিনই তাজকে একচক্ষু মারিয়া লইব। তা, ঈশ্বর সে প্ল্যান আদ্দেকটা বাহাল রাখিয়া বাকিটুকু চটকাইয়া দিলেন

মানে অতি সরল।

আমরা শুক্কুরবারে আগ্রায় ঢুকিয়াছি। সেইদিন তাজমহল বন্ধ থাকে। গাইড মহাশয় সেটি জানিতেন না। মন চাহিল 'শ্যালক' সম্বোধনে বলিঃ ওহে, প্ল্যান করিবার সময় কি *** ছিঁড়িতেছিলি? আগ্রায় ঢুকাইয়া নাগরা মারিয়া দিলি?

দেহ ততক্ষনে এলাইয়া পড়িয়াছে। সুতরাং শাহজাহানের 'তাজ'কে না পাইয়া 'তাজ প্যালেস' নামক সরাইখানায় সেধাঁইয়া গেলাম।

ইত্যবসরে এক সুদর্শন লোকাল ছোকরা আসিয়া হাজির। আমাদের চালক কাম গাইডের দোস্তস্থানীয়। বুঝিলাম, 'শ্যালক' বিপদে পড়িয়া তাহার গুরুর শরণ লইয়াছে। 'গুরু' আসিলেন বাইকে। চোখে 'কালা চাশমা'। জ্যাকেট টানিতে টানিতে নামিলেন। নামটাও বাহারী - ফাইজান খান।

চেহারা আর ভাবচক্কর দেখিয়া 'মমতাজ' আগেই উড়ু উড়ু করিতেছিলেন। নামে পুরাই গলিয়া গেলেন। আমি হালকা মনে করাইবার চেষ্টা করিলাম - এ সালমান খান নহে। স্রেফ ফাইজান। বজরঙী ভাইজানও ডাকিতে পার।

কিন্তু কিসের কি? খান বংশীয় তো বটেন।

কিন্তু পষ্ট দেখিলাম - জালের মধ্যে মাছি পড়িয়াছে দেখিয়া ছোঁড়ার চোখ দুইটা চক চক করিতেছে। এই মমতাজকে দেখিয়া অবশ্য সবাই ক্যাবলা মারিয়া যায় - আগেও লক্ষ্য করিয়াছি। ফাইজান তো নস্যি।

এরইমধ্যে 'মমতাজ' আবদার জুড়িলেন - সন্ধ্যের ঝোঁকে আগ্রার বাজারটি (পড়ুন শপিং) বাজাইয়া দেখিবেন। ফাইজান যেন 'সঠিক জায়গায়' লইয়া যায়। এইবার আমি স্বশব্দে লোল টানার শব্দ শুনিলাম। এ যে শিয়ালকে মুরগির দ্বায়িত্ব দেয়া! অহো...! কি উত্তম প্রস্তাব...!!!

খান সাহেব আশ্বস্ত করিলেন, আগে শহর দেখাইবেন। তারপর অতি অবশ্যই উমদা শপিংপ্লেসে আমাদের গাড়িয়া দিবেন। আরও যোগ করিলেন - আপনাদিগের 'স্ট্যান্ডার্ড' যেন ক্ষুন্ন না হয়, সেইদিকে আমি সদাসর্বদা তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখিব। 'মান' যাইতে দিবই না। বুকে দুন্দুভি বাজিয়া উঠিল - মান রাখিতে 'money'র কুরবানি হইবে রে।

খুদা...খিয়াল রাখিও এই অধমের দিকে।

খাইয়া দাইয়া বাহির হইলাম আগ্রা রোঁদ মারিতে।

লালকেল্লা দেখিলাম, হুনুমানের ভেংচি দেখিলাম, যমুনা নামক মজা-খালের গন্ধ শুঁকিলাম এবং শেষ পর্যন্ত 'মাহতাব বাগ' নামক প্রমোদউদ্যানে প্রবেশ করিলাম।

মাহতাব বাগ - এইখানে শাহজাহান নিজের জন্য 'কালো তাজ' বানাইতে চাহিয়াছিলেন। ভিত পর্যন্ত হইতেই পুত্র হুমায়ুন থাবড়া মারিয়া থামাইয়া দিয়াছে। বর্তমানে অসংখ্য ঝোপঝাড়ের কারনে ইহা কপোত-কপোতীদের কাছে তীর্থস্থানের মর্যাদা পাইয়াছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে নাকি রীতিমত 'ঝোপ' ভাড়া দেওয়া হয়।

এই মাহতাববাগ হইতেই যমুনার অপরপাড়ে তাজমহল দেখিতে পাইলাম। পুরাই ঝাপসা। নাহ....কুয়াশা নহে, ধুলি। সেই ধুলির মধ্য হইতেই নজর ছুড়িলাম।

এইই তাজমহল...!! এহ....!!!

সাদা রঙ এর মসজিদের মত লাগিল। কবুল করিতে লজ্জা নাই, দেখিয়া কোন কিছু উদ্বেলিত অনুভব করিলাম না। এই মসজিদ দেখিয়া লোকে গলিয়া পড়ে...! ফুহ...!!

'মমতাজ' কিন্তু আবেগে শাহজাহানকে (পড়ুন আমাকে) জড়াইয়া পটাপট কয়টা সেল্ফি মারিয়া দিলেন। ব্যাকগ্রাউন্ডে তাজ।

কাল হো না হো। লে লে লে সেল্ফি লে লে লে...!

ইত্যবসরে খান সাহেব দেখি আগাইয়া আসিতেছেন। ব্যাটার মতলব বুঝিতে বাকি নাই। চামে 'মমতাজ'কে লইয়া সেল্ফিই টিপিতেই চায়। আমি মমতাজকে আড়াল করিয়া দাঁড়াইলাম। আমার ভঙি দেখিয়া খান ওইখানেই খান্ত দিলেন।

ক্ষুদে দারাশিকো আর হুমায়ুন ওদিকে মহানন্দে কালো তাজের প্রত্নাবশেষ হইতে স্যুভনির (পড়ুন ইঁটের টুকরা) কুড়াইতেছে। যাউক....কিছু হইলেও আমদানি হউক। রপ্তানি তো সামনে আসিতেছে।

এই করিয়া বেলা ফুরাইল। এইবার ফাইজান ভাইজানের সময়। ব্যাটাচ্ছেলে ক্ষনে ক্ষনে খিলখিল করিয়া হাসিয়া উঠিতেছে মমতাজের কথায়। ইচ্ছা হইতেছিল, যমুনার কাদায় ল্যাং মারিয়া ফেলিয়া দেই।

হঠাৎ মমতাজ 'বান্দি = বাংলা+হিন্দির' এক অপূর্ব ভার্সনে বাৎচিৎ শুরু করিলেন খান সাহিবের সাথে।

"ওওওও ফাইজায়ায়ায়ান (লম্বা টান)।

শোনো, ওই যো রাস্তার ধারমে ছোট ছোট দোকান হোতা হ্যায় না, আরেহ ব্যাংককের মত। বহুত ভিড় হোতা হ্যায়। অনেক লোকজন। ওর মত জায়গায় মুঝে যেতে চাহিয়ে। দামাদামি করেঙে যেইসব দোকানে। বুঝছ না?"

ফাইজান ক্যালানো হাসি দিল। আমিও কোমর বাঁধিলাম। মমতাজকে ঠেকাইতেই হইবে। নিজের ট্যাঁকও।

(ফা)ভাইজান জ্ঞান বিতরন করিলেনঃ আগ্রায় সব দোকান ভাল নহে। আমি তোমাদের সর্বাপেক্ষা দাম সাশ্রয়ী স্থানেই লইয়া যাইব। তবে.....!

তবে প্রথমে দেখাইবেন আগ্রার অষ্টম আশ্চর্য - মডেল তাজ। দিনের বিভিন্ন সময়ে যে তাজ ভিন্ন ভিন্ন রঙ ধারণ করে, তাহা আমাদের মত বুরবক তাজ-পিয়াসীদের দেখাইবার জন্য মডেল। সেইখানেই তিনি আমাদের প্রথমে নিয়া তুলিলেন।

মাটির দশ হাত নিচে দোকানের প্রবেশ পথ। এক আধবুড়া চৈনিক দোর খুলিয়া আমাদের সম্ভাষন জানাইলেন। কাঁচের বাক্সের মধ্যে ফুট দুই উঁচু তাজমহলের মডেল। বুড়া জানাইল, ইহা নাকি পাঁচ বৎসরকাল ধরিয়া নির্মিত হইয়াছে। আর করিয়াছে তাজমহলের শ্রমিকদেরই বংশধরেরা।

প্রথমেই ভরা পূর্নিমায় তাজ কিরকম নীলাভ বর্ণ ধারন করে সেইটেই দেখাইবে বলিয়া ঘর অন্ধকার করিয়া দিল। আমি ভাবিতে লাগিলাম, টেকনোলজি কোথায় পৌঁছাইয়াছে যে কৃত্রিম জ্যোৎস্নালোক তৈরি হইবে। ভাবিতে ভাবিতেই বুড়া একটি নীল রঙ এর বালব জ্বালাইল, এবং অবধারিতভাবে সাদা মার্বেলের তাজ-ও নীল হইয়া গেল। একই পদ্ধতিতে সাদা বালব জ্বালিয়া দিন এবং লাল বাল্লব জ্বালাইয়া দুপুর বুঝাইবার চেষ্টা লইল।

অনুমান করিলাম, বুড়া বিশেষ প্রজাতির জোচ্চর। জোচ্চোরেরও রকমফের থাকে। এই বুড়া দেখি অনায়াসে 'লিডার' পদ লইতে পারে।

মডেল তো দেখিলাম। এইবার উলটা ঘুরিয়া বাহির হইতে গিয়াই বাধা পাইলাম। ইহা এন্ট্রির দরজা। বাহিরের পথ অন্য প্রান্তে বলিয়া আমাদের ঢুকাইয়া দিল স্যুভনির দোকানে। এইমাত্র যে মডেল দেখিলাম, তাহারই অসংখ্য সাজানো। যতই বলি, কিনিব না, ততই বুঝায় - কেন কেনা উচিৎ।

বুড়া যখন বুঝিল যে এইখানে ফয়দা হইবে না তখন আমাকে নিষ্কৃতি দিল। তড়িঘড়ি বাহির হইতে গিয়া আবার সেই ফ্যাসাদ। দরজা অন্য দিকে। এবং সেইটা হইলো তাহাদেরই অলংকার শাখা। উফ....! কি বুদ্ধি....!! চাহ, আর না-ই চাহ, একবার এই ভুলভুলাইয়া ঢুকিলে পুরা কম্পলেক্স ঘুরিতেই হইবে। আর সেই অলংকারের দামও চমৎকার। এক টুকরা সাদা পাথর দেখাইয়া দাম হাঁকে ১৮০০০ টাকা (ডিসকাউন্টও দিল)।

এইভাবে অলংকারের গেট পার হইয়া শাড়ি, সেইখান হইতে জুতা, তাহার দরজার দিয়া ব্যাগ - এই পুরা চক্কর কাটিয়া অবশেষে দেখি এক দরজার উপরে দেকি এক্সিট লেখা। বিদ্যুৎবেগে মমতাজকে হ্যাঁচড়াইয়া বাহির হইয়া আসিলাম।

আমি সফল। এই যাত্রায় কিছুই কিনিতে দেই নাই।

আমাদের হাত খালি দেখিয়া বজরঙী ভাইজানকে কিছুটা বিমর্ষ দেখাইল মনে হইল। মৎস চারে আসিয়াছিল, কিন্তু বড়সি বিধাইতে পারে নাই। কি আর করা...!

এই করিয়া কয়েক দোকান ঘুরিয়া যখন বাস্তবতায় ফিরিলাম। ততক্ষনে মমতাজের ব্যাটারি যখন তলানিতে নাবিয়া আসিয়াছে। ঢুকিলাম 'দাঙাল' দেখিতে। নারী কুস্তিগীর দেখিয়া প্রান কিছুটা শান্ত হইল। আজ তো কুস্তি করিয়াই জিতিয়াছি ফাইজানের সহিত।

এইখানেই আমার কাহিনী সমাপ্ত। পরদিন তাজমহলে ঢুকিয়াছিলাম। সে অন্য এক কাহিনী। বলিব কোন এক সময়।
(পাঠকের সুবিধার্থে বজরঙী ভাইজান সহ লেখক ও তাঁর পরিবারের ছবি সংযুক্ত করা হইলো)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:২২

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: বেশ মজা করে লিখেছেন!

২| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ২:৪৩

মন থেকে বলি বলেছেন: আপনার ভাল লেগেছে, এটাই সার্থকতা।
অনেক ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.