নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যতই আসুক, দুঃখ আঘাত,অন্ধ দু\'চোখ যতই বাধার সামনে দাড়াকবন্ধু তোমার স্বপ্ন দেখার, মনটা ধরে রেখো।

টি এম মাজাহর

Bangladesh

টি এম মাজাহর › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমরা কি বাংলা সাহিত্যের দ্বিতীয় অন্ধকার যুগ পার হচ্ছি?

১৫ ই জুলাই, ২০১৫ সকাল ১১:১৯

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস থেকেই পাই, বাংলা ভাষার বুনিয়াদ কতটা মজবুত। পৃথিবীর বিভিন্ন জনপদে যখন তাদের নিজস্ব স্বতন্ত্র ভাষা তৈরীর ভাঙচুরের খেলা চলছে, তখন এই জনপদে চর্যাপদের মতো পরিণত সাহিত্যের চর্চা হচ্ছে। পরিণত বলা হয়েছে এই কারণে, বিশ্বের অন্যান্য দেশের প্রাচীন লেখাগুলো যেখানে শুধুমাত্র রাজা রাণীদের কাহিনীতে ভরপুর মাত্র, সেখানে, চর্যাপদে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ঘটনাবলী যেভাবে বর্ণিত হয়েছে, তা থেকেই বোঝা যায়, এ জনপদ তাদের নিজস্ব ভাষা, নিজস্ব বর্ণপরিচয়ে কতটা সমৃদ্ধ ছিলো যে তা রাজদরবার পেরিয়ে সেই যুগে সাধারণ মানুষের মাঝে পৌছে গেছিলো। বস্তুত, এই সুকঠিন বুনিয়াদের কারণেই প্রায় একহাজার বছর সরকারী ভাষা ফারসী আর দুইশো বছর সরকারী ভাষা ইংরেজী হলেও বাংলা তার নিজস্ব বর্ণমালা ও ভাষা বিবর্তনের মাঝেও হারিয়ে যায় নি। দক্ষিন আমেরিকা, আফ্রিকা আর অস্ট্রেলিয়ায় দেখেছি ইউরোপীয়ানদের দুইএকশো বছরের শাসনেই আদি এবং স্থানীয় ভাষার পুরো বিলুপ্তি, এবং যাও কিছু অবশিষ্ট আছে, তাদের বেশীরভাগই রোমান, স্প‌্যানিশ কিংবা ইংরেজী বর্ণমালার উপর ভিত্তি করেই টিকে আছে।
ইতিহাস এটাও বলে, বাংলা ভাষাকে নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়েই তার জায়গা ধরে রাখতে হয়েছিলো। প্রথম ধাক্কাটার নাম ইতিহাসে দেয়া হয়েছে অন্ধকার যুগ। প্রেক্ষাপট, পশ্চিম থেকে মুসলমান বণিকদের ভারত দখল, গণহারে স্থানীয় সংস্কৃতি ধ্বংসের প্রক্রিয়া (যার অল্পকিছুমাত্রই বেচে যায় কিছু মানুষের জীবনবাজী রেখে নেপালে পালিয়ে যাওয়া চর্যাপদের মাধ্যমে)। কিন্তু মজার ব্যপার হচ্ছে, যেই মুসলমান(আরব ও আফগানী) শাসকদের জন্য অন্ধকার যুগের শুরু, পরবর্তী ইতিহাসের সাহিত্যের অগ্রগতিতে সেই মুসলমান শাসকদেরই পৃষ্ঠপোষকতা দেখা যায়। মধ্যযুগের সাহিত্যচর্চার প্রায় সবটুকুতেই এবং সবার সাথেই কোন না কোন অংশে মুসলিম শাসকগোষ্ঠীর প্রত্যক্ষ্য বা পরোক্ষ সংশ্লিষ্টতা দেখা গেছে। এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, সাহিত্যে সাধারণের উপস্থিতি, সেটা চন্ডিদাশ থেকে শুরু করে ময়মনসিংহ গীতিকার চন্দ্রাবতী পর্যন্ত আর রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের আসর থেকে আরাকান রাজার আসর পর্যন্ত। তাহলে আসলে সেই মুসলিম শাসকদের কি এমন পরিবর্তন ঘটেছিলো যে, তারা এই বাংলা ভাষায় সাহিত্য পৃষ্ঠপোষকতার দিকে এগিয়ে এসেছিলেন, এমনকি সনাতন ধর্মের ধর্মগ্রন্ত অনুবাদে পর্যন্ত মুসলিম শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতা এবং অতি উৎসাহের উৎসই বা কি? একটা কথা নিশ্চয়ই নিশ্চিত করেই বলা যায়, উপমহাদেশের বেশীরভাগ মুসলমান শাসক আদতে ভদ্রলোক ছিলেন না, সেটা কুতুবুদ্দিনই হোক কিংবা সাদত আলীই হোন না কেন। তবে, বাঙালা সাহিত্যের ইতিহাসে সব বর্ণনাই আছে। মূল বিষয়বস্তুতে আসা যাক। সেই দেড়শো বছরের অন্ধকারে কি সাহিত্যচর্চা বন্ধই ছিলো? যে ভাষা সাধারণ মানুষের দুয়ারে পৌছে গেছিলো তা কি সেই মানুষদের দুঃখের কথাগুলো লিখে যেতে পারে নি? কি ভয়ানক ছিলো সেই সাহিত্যচর্চার ধ্বংসযজ্ঞ? ইতিহাসে সেই সময়ের সাহিত্যের উদ্ধার করা অংশের মধ্যে খনা, রামাই পন্ডিত আর হলায়ুধ মিশ্রের লেখাগুলো পাওয়া যায়, যেগুলেতে কিন্তু খুবই সুক্ষভাবে প্রতিবাদ আর সংস্কারের গান। তা সেসময়ের শাসকগোষ্ঠীদের তেলমারা সাহিত্যগুলো হারিয়ে গেছে কেনো? প্রসঙ্গত, বিশ্বের সব প্রাচীন সাহিত্যেই শাসকগোষ্ঠির পৃষ্ঠপোষকতায় চলা সাহিত্য চর্চায় যেমন শাসকগোষ্ঠীর গুনকীর্তণে পূর্ণ থাকে, তেমনি সুক্ষ্ণভাবে তাদের সমালোচনা/ভুল/ভ্রান্তির কথা লেখা থাকে বলেই তা টিকে থাকে। অসীম তেলের ভান্ডারে পরিপূর্ণ সাহিত্য হারিয়ে যায় কালের গর্ভে। যেমনটা অন্ধকার যুগের তেলের সাহিত্যগুলো হারিয়ে গেলেও থেকে গেছে সংস্কার আর প্রতিবাদের সাহিত্য।
অতি আধুনিক কালে বাংলা সাহিত্য আরও গতি পেয়েছিলো ৫২, ৭১ আর ৯০ এর প্রতিবাদী চেতনা ধারণ করেই । তার পর থেকে যেনো হঠাৎই ছন্দপতন। সাহিত্যচর্চাকেন্দ্র গুলো পরিণত হয়ে যেতে থাকলো দলীয় কার্যালয়ে, অন্যায়ের প্রতিবাদ পরিণত হয়ে গেলো দলীয় স্বার্থ কেন্দ্রীক। মূল সাহিত্যচর্চার স্থান হয়ে উঠলো সিন্ডিকেটেড। অর্থাৎ নির্দিষ্ট দলীয় ঝান্ডা উড়াতে পারলে তবে সাহিত্যচর্চায় আসো নচেৎ মুড়ি খাও এরকম একটি বার্তা তৈরী করে দেয়া হলো। রাষ্ট্রীয় অন্যায় কাজের চোখ বুজে থাকাটাই বর্তমান সাহিত্যচর্চার মূলমন্ত্র (!)। সাহিত্যচর্চা থেকে ডানবাম প্রায় উধাও। দেশের মূল কবি দাড়িয়ে গেলেন সরকারী দলের প্রার্থীর অফিসিয়াল এজেন্টরূপেে। ভোটারবিহীন ভোটের প্রশংসায় তার মুখ বিগলিত। কবিত্বের চরম প্রকাশ ঘটালেন সেই রাবারস্ট্যাম্প ইলেকশনের গুনকীর্তনে। মাঝখানে শাহবাগের আন্দোলনে লক্ষ মানুষের উপস্থিতিতে অন্যায়ের প্রতিবাদের যে ঝড় উঠতে নিয়েছিলো, বছর ঘুরতেই কোটি মানুষ জানলো, সেটা ছিলো আসলে সাজানো বিরানী খেকো নাটক মাত্র। সাহিত্যচর্চার মানুষগুলো হয়ে উঠলো সস্তা বেশ্যাজীবিদের মতো, সময় লাগলে আবার তাদের ব্যবহার করা হবে, এই আশ্বাসে তারা কনডম হাতে এক চোখ বুজে বসে আছে। অন্যায়ের প্রতিবাদ হবে মতলববাদী সাজানো নাট্যপ্রতিবাদ, এই হয়ে উঠেছে তাদের শিল্পচর্চার মূলমন্ত্র। সাতক্ষীরায় সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রতিবাদ, হুঙ্কার দিয়ে সাতক্ষীরা যাবার টিকিট করে বসে তারা, কিন্তু যখন জানতে পারে, তাদের দলেরই কারসাজী এটি, টিকিট ফেরতের ভিড় লেগে যায়। অন্যদিকে বিশাল জনগনের সাপোর্ট (!) নিয়ে একটি দল বসে আছে মুখ গোমড়া করে, অন্যায়ের ভিত কাপিয়ে দেবার হুঙ্কার দিয়ে রাজপথে নামার ঘোষনা দিলেও খুজে পাওয়া যায়না তাদের ও তাদের পোষা সাহিত্যচর্চিকদের। সত্যি কথা বলতে কি, রাজপথে এই দলটির নেতাদের মুখোমুখি হওয়ার থেকে রাজপথে হিজড়ার দলের মুখোমুখি হওয়াই শৃৃঙ্খলারক্ষা বাহিনীর জন্য বেশ চ্যালেঞ্জিং।
তাহলে কি দাড়াচ্ছে? গত দুই বছরে তন্ন তন্ন করে অসংখ্য সাহিত্যানুষ্ঠানে যাওয়ার পরও একটি অনুষ্ঠান/আসরের নামও আজকে বলতে পারবো না, যেটি মনে দাগ কেটেছে। বইমেলায় কবিতার বই কেনার থেকে মূল গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে শাহবাগী বিরানীর আসর এবং ছুরিকাঘাত পাওয়া মুক্তনার দেহ। এই জাতির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ পাওয়া মহান মুক্তিযুদ্ধকে এই সময়ে বানিয়ে ফেলা হচ্ছে রুপকথার আসরে। বেচে থাকা হাজারো মুক্তিযোদ্ধার প্রাণপণ যুদ্ধ বর্ণনার চেয়ে নব্য চেতনা ব্যাবসায়ীদের বাণী আর বানোয়াট রূপকথাই নাকি মুক্তিযুদ্ধের গ্রহনযোগ্য গল্প(!)। পারসোনা থেকে বিপুল সাজে বের হওয়া রমনীর সেক্স আপীল ভরা চিত্র , কিভাবে একটি ছায়াছবিতে মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা হিসেবে দাড় করানো হয়, কে বলতে পারবে? সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধারা যখন জীবনযুদ্ধের মিছিলে লড়াই করছে, তখন ভুয়া মুক্তিযুদ্ধাদের কোটাযুদ্ধই নাকি মুক্তিযুদ্ধের সত্যিকারের চেতনা ধারণ করে(!)। কবিরা আজকে নীরব। ঐযে, সময় হলে ব্যবহৃত হবে, এই আশায় হাতে উক্ত জিনিস নিয়ে দাড়িয়ে আছে! অন্যায়ের প্রতিবাদ করা আজ কবিদের কাজ না, সত্যভাষণও সাহিত্যিকদের কাজ না, চেতনার আগুন আজকে কম পাওয়ারে বেশী আলোর ফ্লুরোসেন্ট বাল্বের মতো জ্বলে আছে- অনেক স্পন্সর, অনেক আলো, কিন্তু কাউকে আলোড়িত করছে না, কেউ জেগে উঠছে না। কবিরা ব্যস্ত উত্তরার ফ্ল্যাটের ভাগ পেতে, সাহিত্যিকরা ব্যাস্ত নতুন একটি টিভি চ্যানেল বাগাইতে। অন্ধকার যুগের পুরো ইতিহাস কেউ বলতে পারছে না, কিন্তু অনন্তর ইতিহাসের কালগর্ভে কি আর একটি অন্ধকার যুগ পার করছি আমরা? সময়ই বলে দিবে নিশ্চয়ই।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.