নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যতই আসুক, দুঃখ আঘাত,অন্ধ দু\'চোখ যতই বাধার সামনে দাড়াকবন্ধু তোমার স্বপ্ন দেখার, মনটা ধরে রেখো।

টি এম মাজাহর

Bangladesh

টি এম মাজাহর › বিস্তারিত পোস্টঃ

মহান মুক্তিযুদ্ধের রূপকথায়ন!

২৮ শে জুলাই, ২০১৫ দুপুর ১:৩১

বিভিন্ন জায়গায় চাকরী করবার সুযোগে একটা মজার জিনিস আবিস্কার করেছি। যে কাজ বেশী করে, সে আসলে গুছিয়ে বলবার অবকাশ পায় না যে সে কি করেছে, তাকে বর্ণনা করতে দিলে, কোনটা হয়তো বাদ পড়ে, আবার কোন কঠিন কাজ হয়তো তার করার সুবাদে তার হাতে সহজ হয়ে গেছে, এজন্য সেটাকেও রং চড়িয়ে বলার চেয়ে সহজ করে বলে ফেলে, ফলে মনে হয়, কত ছোট কাজটাই করে ফেলেছে সে ... এরকমই, তার সব কাজ করার মাঝের সময়টুকু কম থাকে, ফলে কি করে না করে ফলাও করে গুছিয়ে চিন্তা করবার অবকাশ সে পায় না। আর যে যত কম কাজ করে, তার বলবার খেরো বিশাল। সামান্য ছোট্ট একটা কাজ সে কতভাবে, কিভাবে, কত কঠিনভাবে সুসম্পন্ন করে তার বর্ণনা শুনলে বস্ তো বটেই সহকর্মীদেরও মাথা ঘুরে যায়, আহারে, কি বিশাল কর্মযজ্ঞ করে সে! কাজ কম করে বলে সে প্রচুর সময় পায় যা করে এবং যা করে না, সবগুলো সুন্দর করে সাজিয়ে বলবার। আর যে কোন কাজ করেই না, সে সেই অফিসের সবচেয়ে ব্যাস্ত লোক! বছর শেষে বস্ দের মূল্যায়নেও বিষয়গুলো বর্ণনানুসারেই হয়ে থাকে, ফলে, কাজের লোক সেই জায়গায়ই ওঠে, আর বেকাজের লোকের তরতরিয়ে উন্নতি। এজন্য চাকুরী করার মূলমন্ত্র যদি কেউ আজকাল জানতে চায়, তার প্রতি সবচেয়ে মূল্যবান উপদেশ হলো- কম কাজ কর। কম কাজ করলে ভুলও কম, পরিশ্রমও কম, উন্নতির সিড়ি খুজে ফেলাটাই সহজ। ছেলেবেলা থেকে দেখে আসছি মহান মুক্তিযুদ্ধের অবদান নিয়ে এর ওর দড়ি টানাটানি, একজন যাকে গাছের মগডালে ওঠায় অন্যদল তাকে মাটিতে আছড়ে ফেলে। এতো কিছুর পরও এর ওর বর্ণনার পরও মহান মুক্তিযুদ্ধের একটা ছবি আমাদের সামনে দাড়িয়ে গেছিলো। বিশেষ করে আশি এবং নব্বই দশকে যারা পড়ালেখা করছিলেন তারা মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক যেসব লেখা পড়েছিলেন সেগুলোর বেশীরভাগই হয় সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা কিংবা যারা নিজের চোখে মুক্তিযুদ্ধ দেখেছিলেন তাদের দেখা। ফলে প্রচার মাধ্যমে যতই অদৃশ্য বাধা দেয়া থাক না কেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সত্যিকারের তথ্য, ঘটনাগুলিই উঠে এসেছিলো সে সময়, সেই সাথে প্রকাশনার কাজ ব্যয়বহুল ও কঠিন হওয়ায় সিরিয়াস ও সত্যিকারের লেখক ছাড়া এমেচারদের হুটহাট করে যা ইচ্ছা তা লিখে বই তরতরিয়ে ছাপানোর সুযোগ ছিলো না। এবং টিভি/বেতার মিডিয়া তখনকার সময়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিলো বিধায় গুরুত্বপূর্ণ এবং মূল্যবান লোকদেরই সেখানে হাজির করা হতো। এখনকার মতো ধুম করে টক শোতে চলে আসবার সাহসও বোধ করি কারও ছিলো না। বিংশ শতাব্দির শুরু থেকে একদিকে প্রিন্ট মিডিয়ার সহজায়ন, অন্যদিকে অসংখ্য টিভি চ্যানেলের আগমন এবং অনলাইন সংশ্লিস্ট কম খরচের গণমাধ্যম চলে আসায় পরিস্থিতি পাল্টে যায়। একদল লোকের কাছে মহান মুক্তিযুদ্ধ পরিণত হয়ে যায় কোটাব্যবসা এবং চেতনা ব্যবসার পুজি হিসেবে, আর আরেকদল লোক মহান মুক্তিযুদ্ধে তাদের কৃত অপকর্ম ঢাকতে বিভিন্ন ইস্যুতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ভিন্নভাবে লেখার প্রক্রিয়া শুরু করে। মুক্তিযুদ্ধচলাকালীন সময়ে কলকাতায় বসে চর্বিচোহ্যভোগীরা হঠাৎই হয়ে উঠেন অতিমাত্রায় সরব ভুমিকায়, সেই চাকরীর বর্ণনার মতো- তারা একের পর এক গল্প বানাতে শুরু করেন। মুক্তিযুদ্ধচলাকালীন সময়ে সরকারী পত্রিকায় থেকে সেই পাকিদের স্তুতি করা লোকেরা হয়ে উঠে মুক্তিযুদ্ধের ঝান্ডাধরা লোক হিসেবে। রাজাকার বাহিনীর সাথে বিভিন্নভাবে ব্যাবসা করা লোকেরা আজ হয়ে যায় বিচারের দাবীতে সম্মুখে দাড়ানো মানুষগুলো! - একটা কথা কিন্তু সত্যি, সেই সময়ে কিছু লোক তাদের নিজেদের এমন জায়গায় নিয়ে দাড় করিয়ে রেখেছিলো যাতে করে যে কোন পক্ষ জয়ী হলেই তারা সামনে থেকে এগিয়ে আসতে পারে। খোদা না করুক, সেদিন যদি উল্টো বিজয় হতো, তাহলে সেদিনের সেই মুরগী ব্যবসায়ীরাই বা সরকারী পত্রিকার সেই সাংবাদিকরাই এই মুক্তিযোদ্ধাদের বিচার চেয়ে উচ্চকিত হয়ে সবার সামনে থাকতো, এনিয়ে কোন সন্দেহ নাই। আর অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধবিরোধীরা ধর্মের খোলস আকড়ে ধরে নব উদ্যমে নেমে পড়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ছোট করতে।
মুক্তিযুদ্ধকে পুজি বানিয়ে ব্যবসা করতে বসা গোষ্ঠির হাতে বন্দী হয়ে পড়েছে সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধারা এবং নতুন প্রজন্ম। আজকে "আরাফাত" রা নির্ধারণ করে কে মুক্তিযোদ্ধা আর কে নয়। খেতাবধারী মুক্তিযোদ্ধাদের মন চাইলেই রাজাকার আর আইএ্সআই এর এজেন্ট বলে অপমান করা হচ্ছে। সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধাদের না খেয়ে থাকবার ইতিহাসের সাথে সাথে মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেট নেয়ার তোড়জাের আর কোটা বানিজ্যের রমরমা তল্পি বিছিয়ে বসে বগল বাজাচ্ছে একদল লোক। বাবা মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ, অথচ তরুণ ছেলে লুকিয়ে ছিলো নিরাপদ আশ্রয়ে, অথচ আজ সেই বাবাকে পুজি করেই ব্যবসা করতে তার একটুকুও বাধে না। কলকাতায় বিড়ি-সিগারেট খেয়ে কাটিয়ে দেয়া নয় মাস পর এদেশে ফিরে গালভরা গল্প বানানোর প্রতিযোগিতায় তারাই সেরা।
সেই অফিস করার গল্পই এখানে প্রাসঙ্গিক হয়ে যায়, যেহেতু কোন কাজ করে নাই তখন, তাই আজ গল্প বানানোর ক্ষেত্রে তারাই সৃষ্টিশীল। সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধাদের গল্প তাদের কাছে হয়ে উঠছে অপ্রাসঙ্গিক। ক্ষমতার মতে না মিললে, বরং সেই সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধাকে অস্বীকার করে তাকে অপমান করার জন্য পা বাড়িয়ে দেয় তারাই!
সবচেয়ে ভয়ঙ্কর রূপ দাড় করাচ্ছে আর এক দল। মুক্তিযুদ্ধের নাম করে বিভিন্ন বানানো গল্প তৈরীর প্রতিযোগিতায় নামছেন এরা। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় "পারসোনা থেকে সেক্সসিম্বল সাজ নিয়ে" মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা বানানোতে কোন চেতনা কাজ করেছে সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধারা তা বুঝেন না। মুক্তিযোদ্ধারা বেচে থাকবার পরও এই রূপকথার গল্প যারা সাজাচ্ছেন তারা আজ নিজেদের খুব মহান অনুভব করলেও বুঝতে পারছেন না যে, এইসব বানানো রূপকথা নিয়ে আজকে আপনারা ব্যবসা করতে পারলেও সত্যিকারের ঘটনাগুলো রূপকথার ভিড়ে হারিয়ে যাবে। সত্যি ঘটনা আর বানানো কথার মধ্যে দুরত্ব কমে গেলে কি রূপকথার ক্ষতি, না সত্যিকথার ক্ষতি ? ভাববে কে? মুক্তিযুদ্ধ কে পুজি করে চলা ব্যবসায়ীরা আর মুক্তিযুদ্ধবিরোধীরা এক অর্থে দেশে মহান মুক্তিযুদ্ধের সত্যিকারের চেতনা থেকে নতুন প্রজন্মকে একই সাথে মিসগাইড করছে না? ভাববে কে ?
----- এক সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধার ভাবনা থেকে অঙ্কুরিত।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.