নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দীপ্ত আমার আমার সামনে চুপ করে বসে আছে,গায়ে সাদা চাদর,পরনে ধূতি।
-কেমন আছিস? আমি জিজ্ঞেস করলাম।
-দীপ্ত চুপ করে রইলো,দীপ্তর বাবা মারা গেছেন কয়েকদিন,সেই থেকে দীপ্ত চুপচাপই থাকে।কথা তেমন বলে না।যতই স্বান্তনা দেই দীপ্ত চুপ।এসময় হারুন এলো।
-কিরে মাগরিবের সময় হয়ে এসেছে,নামাজ পড়তে যাবি না,সরোয়ার?
-যাবো,আমি বললাম।তুই ও চল।আমি হাসতে হাসতে বলি,হারুন মাথা দোলায়,যাবে না,হারুন কিছুতেই বিশ্বাস করে না,বলে,কিছু নেই,স্রষ্টা বলে কিছু নেই,সব মানুষের সৃষ্টি।
আমরা বসে আছি আমাদের বিল্ডিং এর ছ’তালার ছাদে,বহূদূরে দেখা যাচ্ছে চিটাং পোর্টের হলুদ হলুদ শক্তিশালী সোডিয়াম।
-আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার………
মাগরিবের আজান দিলো,ঝাকে ঝাকে পাখি উড়ে যাচ্ছে,কি বিষন্ন পরিবেশ,দীপ্ত মাথা নিচু করে বসেই আছে,বসেই আছে।
-ঠিক আছে বস তোরা আমি নামাজটা পড়ে আসি।আমি উঠে এলাম।
নামাজ পড়ে গিয়ে দেখি হারুন ধুমসে সিগারেট টানছে,দীপ্তকে কি সব বলছে-
-বুঝলি দীপ্ত,এই যে এত মন খারাপ করছিস,কেনো?দেখ আমারো বাবা মারা গেছে,মরে গেছে গেছে,সবার বাবা কি চিরকাল বেচে থাকে?হারুন স্বান্তনা দিতে থাকে।
-আধার হয়ে এসেছে,আবছা করে দেখলাম,হারুনের চোখ চিক চিক করছে,গলা হালকা ধরে এসেছে।
-দীপ্ত সিগারেট খাবি?আমি হালকা ভাবে জিজ্ঞাস করলাম।
-দীপ্ত কাদছে,আমাকে জড়িয়ে হাউমাউ করে কাদছে।
-শোন,আমার মা যখন মারা যায়,আমি পুরো পাগল পাগল হয়ে গিয়েছিলাম,বুঝলি বেটা,তিন দিন কিছু খেতে পারি নাই,ঘরে ফিরতেই দেখতাম রান্না ঘরটা খালি,কেউ সকাল থেকে ঘুম থেকে ওঠার জন্য আর চেচামিচি করতো না,সিগারেট খাওয়ার ম্যাচটা লুকিয়ে রাখতো না,শুকিয়ে যাচ্ছিস বলে চেচাতো না,বাড়ী ফিরতে দেরী হলে ফোনের পর ফোন করতো না,ফযরের নামাজ শেষে কোরআন করে ফু ঘুমন্ত আমার মাথায় ফু দিয়ে দিতো না,বাড়ি ফিরিতেই পুরো ঘরময় কে জানি নেই,কে জানি নেই।
-দীপ্ত আমাকে জড়িয়ে কেদেই যাচ্ছে,হারুন মাথা নিচু করে বসে আছে,ফোফানোর আওয়াজ পাচ্ছি,কাদছে বোধহয়,আমার গলায় কি যেন আটকে আটকে নামছে,আমি চোখ মুছলাম।
রাতের বাতাস ভারী হয়ে আসে,বহুদূরের বন্দরের শক্তিশালী সোডিয়াম আলো চোখের সামনে ঝাপসা হয়ে আসে,বুকের বাম পাশে অদ্ভুদ গাঢ় চিনিচিনে ব্যাথা অনূভব করি,আমাদের তিনজনের কখনও ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি হয়নি,দীপ্তর বাবা মারা গেলে দীপ্ত কাদে,আমার মা মারা গেলে আমি পাথর হয়ে যাই,হারুনের বাবা মারা গেলে হারুনও কাদে,শেষমেষ আমরা সবাই মানুষ আর বাতাসে বাতাসে স্বজন হারানোর বেদনা।
২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:৪৯
ভাঙ্গা কলমের আঁচড় বলেছেন: পাঠে কৃতজ্ঞতা, ধন্যবাদ
২| ০১ লা মার্চ, ২০১৫ দুপুর ২:০৮
হাসান মাহবুব বলেছেন: বাবা মা যদি চিরকাল বেঁচে থাকতো! অসাম্প্রদায়িকতার বার্তাটা ভালো লাগেছে।
০২ রা মার্চ, ২০১৫ রাত ১২:১৭
ভাঙ্গা কলমের আঁচড় বলেছেন: ধন্যবাদ হাসান ভাই,বার্তাটাই মেইন ছিলো,দুই তিনটা লাইন লেখার জন্যই পুরো লেখাটা লিখ মেইনলি
৩| ০১ লা মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৩২
মহাকাল333 বলেছেন: খুব ভাল লাগলো।
০২ রা মার্চ, ২০১৫ রাত ১২:১৮
ভাঙ্গা কলমের আঁচড় বলেছেন: আপনার ভালো লাগাই প্রাপ্তি
৪| ০১ লা মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৫০
সুমন কর বলেছেন: মনকে ভারী করার মতো লেখা।
আমাদের তিনজনের কখনও ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি হয়নি,দীপ্তর বাবা মারা গেলে দীপ্ত কাদে,আমার মা মারা গেলে আমি পাথর হয়ে যাই,হারুনের বাবা মারা গেলে হারুনও কাদে,শেষমেষ আমরা সবাই মানুষ আর বাতাসে বাতাসে স্বজন হারানোর বেদনা। -- চমৎকার!
০২ রা মার্চ, ২০১৫ রাত ১২:১৮
ভাঙ্গা কলমের আঁচড় বলেছেন: ধণ্যবাদ ব্রাদার ,স্বাগতম
৫| ১০ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১:৫৭
ডি মুন বলেছেন:
প্রিয়জন হারানোর বেদনা সত্যিই মর্মান্তিক।
একদিন হারিয়ে যাব বলেই এই বেঁচে থাকা - ভাবতেই কেমন যেন সবকিছু এলোমেলো হয়ে যেতে চায়। তবু মরে যেতে হয়, যাব - এটাই বাস্তবতা।
লেখাটা ভালো লেগেছে।
ভালো থাকুন সর্বদা।
©somewhere in net ltd.
১| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:৫৬
দিশেহারা রাজপুত্র বলেছেন:
হৃদয় ছুঁয়ে গেল।