নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

http://www.facebook.com/reyad.parvez.3

ভাঙ্গা কলমের আঁচড়

ভাঙ্গা কলমের আঁচড় › বিস্তারিত পোস্টঃ

আনিস এবং অন্যান্য

০২ রা জুন, ২০১৫ দুপুর ২:৫৪

১। বড় মামা মামীদের সাথে আমাদের সম্পর্কটা
অনেকটা রাজা প্রজার মত।তারা কাল ভাদ্রে
আমাদের বাসায় আসেন, খবই আন্তরিক
ভঙ্গিতে কথা বলেন,এই যেমন আজ বলছেন।
-কিরে আনিস,আমাদের বাসায় যে একদম যাস না,
এমন শুকিয়ে গেছিস কেনো? ওফ,এত্ত
গরম,কিরে ফ্যানটা চলে না? বড় মামী ঝুমুর খাতা
দিয়ে নিজের মুখে বাতাস করতে করতে বলেন।
-ফ্যানটাতে কিছু একটা সমস্যা হয়েছে? ঠিক
করাবো করাবো করে করা হয় না, বাবা
অপরাধীর মতন মাথা নিচু করে বিনয়ী ভঙ্গিতে
বলেন।
-এই জন্যই আপনাদের কিছু হয় না,একটা ফ্যান
এই গরমে ঠিক করাবেন করে করে করাচ্ছেন না,
এটা কোন কথা? মামা উদ্ধ্যত ভাবে বলে ওঠেন।
আমি চুপ করে থাকি, আমার মা রান্নাঘরে কি
করছেন কে জানে, বড় মামা মামী আসলেই মা
রান্নাঘরে আশ্রয় নেন, আমি রান্না ঘরে উকি
দিয়ে দেখলাম মা ঝিম মেরে বসে আছেন,পাশের
রুমে ঝুমু বিছিনায় শুয়ে আছে।
-আনিস,আজ তোদের বাসায় এসেছি কিছু জরুরী
কথা বলতে, শোন, বোনটার যে বয়স হয়েছে
টের পাস? নিজে তো কিছু করিস না, বোনটাকে
পার কর। মামা হাত নেড়ে বলেন,যেন মাছি
উড়িয়ে দিলেন।
-শোন, আমাদের হাতে একটা ছেলে আছে,
ভালো টাকা পয়সা আছে, বয়স একটু বেশী, সেটা
তো আর সমস্যা না, কি বলিস? মামী খুব
আগ্রহ নিয়ে আমার বাবার দিকে তাকালেন।
-বয়স কত? আমি জিজ্ঞাস করলাম
-এই ধর ৪৮।
-৪৮? আমি ক্লান্ত ভঙ্গিতে বললাম।
-সমস্যা কি? ছেলেরা সব বয়সে বিয়ে করতে
পারে, মামা গম্ভীর ভাবে বলেন।
এর মাঝে নাঈম ঢোকে,একটা ছোট টিফিন বাটি
খুব কায়দা করে কোমরের পেছনে লুকানো,আমি
জানি তাতে কি আছে, গলির মোড়ের হোটেলের
দু টুকরো অপুষ্ট মুরগীর টুকরো। যতবার ধরে
মামা মামী আসেন,ততবারই নাঈম মুরগী নিয়ে
এসেছে।
নাঈম হঠাতই মেঝেতে স্লিপ খেলো,আমি মনে
মনে আল্লাহকে ডেকে উঠলাম যাতে টিফিন
বাটিটা রক্ষা পায়,কিন্তু আল্লাহ আমার দোয়া
কবুল করলেন না,নাঈম গেঞ্জিতে ঝোল মেখে
মেঝেতে বসে রইলো।
২। অবশেষে ঝুমুর বিয়ে ঠিক হয়ে গেলো ৪৮ বছর
বয়ষ্ক এনায়েত উল্লাহর সাথে,মামা মামী ঝুমুকে
নিয়ে মার্কেটে যান, ঝুমু চুপচাপ মার্কেটে
যায়,চুপচাপ আসে।আমার রাত গুলো ভীষন গভীর
ভাবে কাটে,আমার বাবা-মা বোধহয় মানসিক
ভাবে খুব ভেঙ্গে পড়েছেন,আসলে বিয়েটাতে
আমাদের কারো মত নেই,কিন্তু বড় মামা
মামীদের টাকায় আমরা চলি, কি করবো?
৩।আজ ঝুমুর বিয়ের দিন ছিলো,আমি চুপচাপ
ভঙ্গিতে বসে আছি,আমার কিছু ভালো লাগছে
না,আমার সামনে মামা বসে আছেন, যেন বিয়েটা
না হওয়ায় আমায় শাস্তি দেবেন।মামীর চোখে
রাগ বুঝতে পারছি,তবে পরিস্থিতির কারনে কিছু
বললেন না,আমার বোবা মা কাদছেন,খুব খুব
কাদছেন,নাঈমের চোখগুলো উগ্রভাবে ধ্বক ধ্বক
করছে,আমার চাচার কোরআন তেলায়াত আর
আগর বাতির ঘ্রানে গভীর বিষাদে চারপাশ ভারী
হয়ে গেছে,আমাকে জড়িয়ে ঝুমু জড়িয়ে বসে
আছে,ঝুমুর পাশে বসে আছে আতিক,যাকে ঝুমু
আজ সকালে বিয়ে করেছে,আমি আমার বাবার
দিকে তা কালাম,আমার ভালো মানুষ বাবার
দিকে তাকালাম, মামা মামীর কাছে করা নিজ
মেয়ের শাস্তি নিয়ে শুয়ে আছেন তিনি,ফ্যান
থেকে ঝুলছে রাজা রানীর একান্ত বাধ্যগত
পেয়াদার মত এক টুকরো নাইলনের দড়ি।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই জুন, ২০১৫ বিকাল ৪:১৬

হাসান মাহবুব বলেছেন: কষ্টের গল্প। ভালো লাগলো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.