নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

http://www.facebook.com/reyad.parvez.3

ভাঙ্গা কলমের আঁচড়

ভাঙ্গা কলমের আঁচড় › বিস্তারিত পোস্টঃ

দৈত্য কিংবা শিউলি ফুলের গল্প (একটি রুপকথা লেখার ব্যার্থ প্রচেষ্টা)

১৯ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ১:৫৮

প্রারম্ভিকাঃ “আজ যে গল্প বলতে এসেছি তা হাজার বছর আগের কথা, বর্তমানের পার্বত্য চট্টগ্রামের কোন এক দুর্গম গ্রামের নাম ছিলো তুফাং,তুফাং এর অস্তিত্ব বর্তমানের কোন অত্যাধুনিক ম্যাপেও খুজে পাওয়া যাবে না।
তুফাং গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছিলো সিনিং নামের একটি নদী,নদীর ঠিক পাশেই ছিলো একটি দৈত্যের মুর্তি, বিশাল, বিষন্ন, মুখে অপার্থিব একটি হাসি। আজ বলবো সেই দৈত্যের গল্প।”
কোন এক শরতের মেঘ ছেড়া বিকেলে গ্রাম জুড়ে শোনা গেলো ঢুম, ঢুম আওয়াজ, গ্রামবাসী বেরিয়ে এলো, দেখলো সবুজ মাঠের উপর বসে আছে বিশাল এক দৈত্য।গ্রামের সব মানুষ ভয়ে লুকালো, এগিয়ে এলো মিটাং।
-কি চাও, কি চাও, দৈত্য তুমি কি চাও? গ্রাম সর্দার মিটাং বলে উঠলো।
-আমায় খেতে দাও,পেটে বড় ক্ষিদে, আমায় খেতে দাও।
-তুমি আমাদের ছেলে মেয়েদের খেতে চাও? মিটাং রেগে বললো।
-না, আমি মানুষ খাই না বলেই আমাকে গোত্র থেকে বের করে দিয়েছে, আমি শিউলি ফুল খাই, আপেল খাই, ফুলের সৌরভ খাই, দেখো আমার গায়ে শিউলির ঘন্ধ, আমার ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছে, আমি আলো হতে পারি না, বজ্র হতে পারি না। দৈত্য কাদতে থাকে।
যাই হোক, তুফাং গ্রামে দৈত্যের জায়গা হয়ে গেলো, দৈত্য ছোট ছেলে মেয়েদের সাথে খেলে, নদীতে ঝাপিয়ে পড়ে, ছোট ছেলে মেয়েদের নিয়ে সাই করে উড়ে যায় মেঘ চূড়ায়, রাতে গায় বিষন্ন তারাদের গান।
এভাবেই কাটছিলো, হঠাত এক সকালে চুরি হয়ে গেলো গ্রামের এক মেয়ে সিংকি, তার পরদিন নিংসি, তার পরদিন তাংসি, গ্রাম বাসী গেলো চাদ দেবীর কাছে, চন্দ্র মন্দিরে।
-দেবী,আমাদের মেয়ে চুরী হয়ে যাচ্ছে, তুমি কিছু করো।
-দেবী চুপ হয়ে থাকেন দিনের পর দিন, রাতে আকাশে ওঠেন।
অবশেষে দেবী বললেন, এদের চুরী করছে একটী বখাটে রোদের দল, যে রোদটি আসে পাহাড় হতে, নিয়ে যায় তোমাদের মেয়ে।আমি যে কিছু করতে পারবো না, আমি যে তার দেবতা সুর্যের আলোতে তোমাদের জোছনা বিলাই।তবে একটি উপায় আছে কেউ যদি সেই রোদকে মেয়ে চুরির সময় হাতেনাতে ধরতে পারে তবে সুর্যদেবতা সেই রোদকে পৃথিবীতে আসা বন্ধ করে দেবেন, আর সমস্যা হলো এই চুরীর খবর নিয়ে সূর্যদেবতার কাছে যেতে হলে একটি আত্মা লাগবে, অর্থাৎ একজনকে মরতে হবে।
গ্রামবাসী চুপ হয়ে যায়,গ্রামে ফিরে যায়,সবুজ হাসিখুশী অঞ্চলটি হয়ে ওঠে বিষন্ন, চুপচাপ।তারা তাকিয়ে থাকে দৈত্যের দিকে।
পরদিন গ্রামবাসী গ্রাম চত্তরে রেখে আসে নিতুং নামের মেয়েটিকে, দৈত্য লুকিয়ে থাকে ঘাসের আড়ালে, অবশেষে ভোরের সবুজ পাহাড় ফুড়ে বেড়িয়ে আসে একটি তীক্ষ্ণ রোদের ঝাক, এক নারকীয় উল্লাস ধ্বনি বাতাসে ভাসে, দৈত্য এগিয়ে যায়, রোদ ঝাপিয়ে পড়ে দৈত্যের গায়ে, দৈত্য ঘামতে থাকে, পুড়তে থাকে, রোদ আরো হিংস্র হতে থাকে, বলতে থাকে, দৈত্য আজ তোকে পুড়িয়ে পাথর করে দেবো, দৈত্য তবু সরে না, আগলে রাখে নিতুংকে, দৈত্যের শরীর পাথর হতে থাকে, হাতগুলো তবু নিতুংকে আকড়ে রাখে।সকাল গড়িয়ে দুপুর গড়ায়, দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়, রোদ তখনো সাই সাই করে তাপ হয়ে ঢুকছে দৈত্যের শরীরে। অবশেষে সন্ধ্যে নামলে রোদ পুরোপুরি ভাবে ঢুকে পড়ে দৈত্যের শরীরে,গ্রাম বাসী দেখে দৈত্য মারা গেছে,দাড়িয়ে আছে মূর্তি হয়ে, দু হাতে আগলে রেখেছে নিতুং নামের মিষ্টি মেয়েকে, এর মাঝে চাদ দেবী ওঠে, দৈত্যের আত্মা রোদসহ নিয়ে যায় সূর্য দেবতার কাছে।
যাই হোক গল্প প্রায় শেষ,এর পর কেটে গেছে আরো কয়েক বছর, তবে বছরের কোন এক জোছনার রাতে,যখন পাহাড় ভেসে যায় জোছনার প্লাবনে গ্রামের ছেলেমেয়েরা জড়িয়ে ধরে দৈত্যটির মুর্তি,তারা সুর করে গায় শ্লোকের মত গান, ধীরে ধীরে রাত বাড়ে, গ্রামে গ্রামে ভাসে এক আশ্চর্য শিউলির ঘ্রান,আর দৈত্যের মুর্তি দাঁড়িয়ে থাকে শান্ত ভঙ্গিতে যা কিনা বিষন্ন, আর ঠোটের কোনে বড় মিষ্টি একটি হাসি।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ১:৪০

হাসান মাহবুব বলেছেন: ভালৈসে।

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:০৬

ভাঙ্গা কলমের আঁচড় বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ ব্রাদার, আপনি কিছু রুপকথা লিখুন, মনে হয় ভালো হবে

২| ২০ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ১:৫৭

মায়াবী রূপকথা বলেছেন: ভালোলেগেছে পড়ে। শুভকামনা জানবেন

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:০৬

ভাঙ্গা কলমের আঁচড় বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ

৩| ২৪ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ১১:৩৬

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: চমৎকার!!! গল্প খুব ভালো লেগেছে +++

ভালো থাকুন সবসময়, শুভকামনা।

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:০৭

ভাঙ্গা কলমের আঁচড় বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.