নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ওয়াসি আহমেদ

ওয়াসি আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মমির ইতিবৃত্ত - পর্ব ০১

২৫ শে অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২০

মমি কি ??? নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার মত অবশ্য তেমন কিছু নেই। তবুও ছোট্ট করে বলে নিচ্ছি - মমি হচ্ছে প্রাকৃতিক উপায়ে বা মানবিক প্রযুক্তির সাহায্যে সংরক্ষিত অপচনশীল মৃতদেহ । প্রাকৃতিক মমিকে অবশ্য মমি হিসেবে মেনে নিতে নারাজ অনেকেই, কিন্তু শ্রেণিগত দিক থেকে সেগুলোও মমির আওতাভুক্ত। প্রাকৃতিক মমি সাধারণত কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন তুষারপাত, জলাবধ্বতা অথবা পানিশূন্যতার মাধ্যমেই সৃষ্টি হয়ে থাকে বলে জানা যায় । তাছাড়া দেশ ও জাতিভেদে বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে সংরক্ষিত মমি তো আছেই।

প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী মমির উৎপত্তিস্থল হলো প্রাচীন মিশর । অনেক অনেক বছর আগে , পার্সিয়ান (বর্তমান ইরান) পরিব্রাজকদের ধারণা ছিল যে বিটুমেন (Bitumen) নামক এক ধরণের কাল চটচটে মোম জাতীয় পদার্থের সাহায্যে মমি বানানো হয়ে থাকে । বিটুমেন এর পারস্য ফার্সি প্রতিশব্দ "موم " এবং আরবী শব্দ "مومياء" (মুমিয়া) থেকেই ইংরেজি Mummy শব্দটির জন্ম।

চিনচরোর আদিম মমি :
আজ থেকে প্রায় সাত হাজার বছর পূর্বে (প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতারও এক হাজার বছর আগে) উত্তর চিলি ও দক্ষিন পেরুর Chinchorro তে মমির উৎপত্তি ঘটে । সমুদ্র উপকুলবর্তি এ অঞ্চলের মৎস্যজিবী অধিবাসীদের একটি প্রচলিত ধারণা ছিল ,মৃত্যুর পরে আরেকটি নতুন জীবনের শুরু হয়।আর এ ধারণা থেকেই তাদের মধ্যে মমি সংস্কৃতির প্রচলন ঘটে । তাদের একটি বিশেষ প্রবণতা ছিল মমিকে যতটুকু সম্ভব জীবিত মানুষের সাথে সদৃশ্যপূর্ণ রাখা। সম্ভবত তাদের মধ্যে একটি প্রচলিত ধারণা ছিল যে, মৃত দেহকে নিখুঁত উপায়ে সংরক্ষন করা গেলে তারা আবার বেঁচে উঠতে সক্ষম !

মমি বানানোর প্রথম ধাপ হিসেবে চিনচেরানরা প্রথমেই মৃতদেহ থেকে সকল অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বের করে ফেলত । তারপর সূক্ষ্ম ভাবে হাড় থেকে চামড়া ও মাংস আলাদা করা হত । হাত,পা এবং মেরুদন্ডের অস্থির সাথে বেঁধে দেয়া হত গাছের মোটা ডাল, বাশ অথবা লাঠির কাঠামো । কঙ্কালের ওপর বিশেষ ভাবে প্রক্রিয়াজাত সাদা রঙের কাঁদা লেপে দিয়ে একটা পূর্ণাঙ্গ দেহ কাঠামো তৈরি করে ফেলা হত এভাবে । সবেশেষে সংরক্ষিত মুখের চামড়া কে তার নিজস্থানে বসানোর মাধ্যমে তৈরি করা হত মুখাবয়ব। আর তার পাশাপাশি সারা দেহেও লাগিয়ে দেয়া হত মৃতের নিজের চামড়ার আবরণ । কাঁদার আস্তরন পুরোপুরি শুকানোর পর মমিকে রাঙানো হত তুলির আঁচড়ে – কখনো কাল, আবার কখনো লাল রঙে ।

৩০০০ বছরেরও বেশী সময় ধরে চিনচেরা সভ্যতায় মমি বানানোর প্রথা চলমান ছিল । ১৯১৭ সালে উত্তর চিলিতে ধ্বংস্তুপে সমাহিত অবস্থায় পাওয়া যায় ১২ টি মমি । এরপর ১৯৮৩ সালে প্রত্নতাত্বিকরা খুঁজে পান আরও কিছু প্রাচীন সমাধিস্থল । এসব জায়গা খুঁড়ে বের করা হয় শতাধিক মমি, যার অনেকগুলো বর্তমানে ব্রিটিশ মিউজিয়ামে সংরক্ষিত রয়েছে ।



ইউরোপের তুষারমানব (Ötzi the Iceman) :

ইউরোপের সবচাইতে পুরানো মমিটি তুষারমানব( Ötzi the Iceman) নামে পরিচিত । তার সম্ভাব্য মৃত্যুকাল প্রস্তর যুগের শেষ ভাগে , আজ থেকে প্রায় ৫৩০০ বছর পূর্বে । ১৯৯১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর উত্তর ইটালি অঞ্চলের দুইজন পাহাড়ি অভিযাত্রী Helmut simon আর Erika Simon এর মাধ্যমে আবিষ্কৃত হয় তুষার মানব । তার দেহটি পাহাড় এলাকার অনেক উচু অংশে একধরণের হিমনদী তে নিমজ্জিত অবস্থায় ছিল। প্রথম দেখায় তারা মনে করেছিল হয়তো এটি কোন রাখাল/শিকারী অথবা তাদের মত কোন অসহায় অভিযাত্রী। ২২ সেপ্টেম্বর খুঁড়ে বের করার পর একে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয় Innsbruck university তে । এরপর ২৪ সেপ্টেম্বর প্রত্নতত্ববিদ Konrad Spindler একে নিয়ে পরীক্ষা শুরু করেন । পর্যবেক্ষকরা দেখতে পান , তুষারমানবের বাম কাঁধে বিঁধে রয়েছে একটি তীরের সুচালো অগ্রভাগ । এথেকে ধারণা পাওয়া যায় যে হয়তোবা সে কোন আসন্ন শত্রুর হাত থেকে পালানোর জন্য পাহাড়ে আশ্রয় নিয়েছিল, কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি তার।

তুষারমানবের কাধে বিধে থাকা তীরের অগ্রভাগ টি ছিল ফ্লিন্ট নামক এক ধরণের চকচকে পাথরের তৈরি। এই বিষাক্ত তীর তার চামড়ার পোশাক ভেদ করে সৃষ্টি করেছিল একটি গভীর ক্ষত। তাৎক্ষণিক ভাবে তীরের বাকি অংশ বের করে ফেলতে সক্ষম হলেও ফলাটি কিন্ত ভেতরেই রয়ে যায়। আর এই ক্ষত থেকেই মৃত্যুমুখে পতিত হয় তুষার মানব।

চমকপ্রদ ব্যপার হচ্ছে, তুষারমানবের দেহের পাশাপাশি তার পোশাক ও হিমবাহে প্রাকৃতিক ভাবে সংরক্ষিত হয়ে গিয়েছিল। এর মাধ্যমেই গবেষকরা প্রস্তরযুগের মানুষদের পরিধেয় বস্ত্র সম্পর্কে প্রথম বারের মত সুস্পষ্ট ধারণা পান। তার পরণে ছিল চামড়া নির্মিত আঁটসাঁট পায়জামা আর পায়ে ছিল চামড়ার জুতো। দেহের উপরিভাগে ছিল ছাগলের চামড়ার বিশেষ ধরণের কোট আর শুকনো ঘাসের স্কন্ধাবরণ(Cape) । মাথায় ছিল অনাচ্ছাদিত চামড়ার সুদৃশ্য টুপি। তার সাথে ছিল তামার কুড়াল, ফিলন্ট নির্মিত ছোরা, ধনুক আর ১৪ টি তীর সহ তূণীর । তার সাথে শুকনো ঘাসে ভরা একটি চামড়ার থলিও ছিল – যা দিয়ে জ্বালানো হত আগুন।

এবার আসি Ötzi’s Curse অথবা তুষারমানবের অভিশাপ এর কথায় । মিশরের ফারাওদের মমির অভিশাপের মতই একটি কাহিনী এটি , যার সঠিক ব্যখ্যা বেশ বিতর্কিত। এ মমিটিকে একটি অভিশপ্ত মমি হিসেবে ধরা হয় , কেননা এই মমির আবিষ্কারক থেকে শুরু করে গবেষকদের অনেকেরই রহস্যময় মৃত্যু ঘটে । Helmut simon থেকে শুরু করে প্রত্নতত্ববিদ Konrad Spindler , এভাবে একে একে এই মমির সাথে সংশ্লিষ্ট সাতজনের মৃত্যু ঘটে নানারকম দুর্ঘটনায় । তবে ব্যপারটিকে নিছক কাকতালীয় ভাবেই দেখেন অনেকে , কেননা এই মমির সাথে এখন পর্যন্ত জড়িত থাকা শত শত মানুষ কিন্তু বহাল তবিয়তেই আছেন।

বর্তমানে তুষার মানবের মমিটি সংরক্ষিত রয়েছে উত্তর ইটালির “South Tyrol Museum Of Archaeology” তে । আপনি যদি কখনো তুষারমানবকে দেখতে যান, তাহলে আপনাকে একটি সরু জানালার মধ্যে দিয়ে তাকিয়ে দেখতে হবে। কারণ তাকে একটি নির্দিষ্ট হিমাঙ্কে বরফঘরে রাখা হয়েছে । সামান্য তাপমাত্রার তারতম্যের কারণে নষ্ট হয়ে যেতে পারে পাঁচ হাজার বছরের সংরক্ষিত এই তুষারমানবের দেহ । তাইতো এত বিশেষ সতর্কতা !!!



মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.