নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ওয়াসি আহমেদ

ওয়াসি আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মমির ইতিবৃত্ত – পর্ব ০৪

২৭ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৯:৪০

মিশরিয় মমি বানানোর পদ্ধতিঃ

ইতিহাসটা বেশ দীর্ঘ, প্রায় চার হাজার বছরের। হ্যা,মমি বানানোর প্রথাটি প্রাচীন মিশরীয়রা অনেক লম্বা সময় ধরেই টিকিয়ে রেখেছিল। বহু বছর ধরে একের পর এক নতুন নতুন পন্থা অবলম্বন করে তারা উন্নত থেকে উন্নততর মমি বানানো শুরু করল। কখনো নতুন কিছুর সংযোজন,কখনো একদমই নতুন পরীক্ষামূলক পদ্ধতির প্রয়োগ- এভাবেই চলতে থাকত মমি বানানো। সবচেয়ে নিখুঁত মমিগুলো তৈরি হয় আজ থেকে আনুমানিক সাড়ে তিন হাজার বছর আগে, আর ইতিহাসের পাতায় এসময়কালকে উল্লেখ করা হয় “The new kingdom of Egypt” হিসেবে।

মমির সাথে নারীদের সংশ্লিষ্টতা ছিলনা কখনোই। মমি বানানোর কারিগরদের এই পেশাটি বংশক্রমানুসারে চলে আসত। অর্থাৎ একজন বাবা যিনি মমির কারিগরীর সাথে জড়িত, তার দায়িত্ব ছিল নিজের ছেলেকে পদ্ধতিগুলো শিখিয়ে দেয়া। কারিগরদের কাজগুলো অবশ্য ভাগ করা থাকত বিভিন্ন ধাপে। যার কাজ চামড়া ছাড়ানো, সে সব মমি বানানোর সময় শুধুমাত্র ঐ কাজটিই করত। আর উত্তরাধিকার সূত্রে তার সন্তানের ঘাড়েও বর্তাত একই দায়িত্ব।

মমির কারিগররা কার্যসম্পাদনের জন্য বেছে নিত খোলা তাবু। তাবুগুলো খোলামেলা রাখা হত যাতে করে মৃতদেহের দুর্গন্ধ বাতাসে মিশে যেতে পারে। লোকালয় থেকে দূরে, সাধারনত নীলনদের পশ্চিম উপকূল ঘেষে সারিবদ্ধভাবে গড়ে উঠত তাদের কর্মশালা। মমি বানানোর কাজে পানির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকায় নীলনদের উপকূলীয় অঞ্চল ছিল অত্যন্ত সহায়ক।
মমি বানানোর অনেকগুলো পদ্ধতির মধ্যে একটি সম্পর্কে জানা যায় হেরোডটাসের লিখিত বিবরণ থেকে। প্রাচীন গ্রিসের নাগরিক হেরোডটাস খৃষ্টপূর্ব ৪০০ অব্দে মিশর পরিভ্রমণ করেন। তার পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, একটি মমি বানাতে দরকার হত ৭০ দিন - প্রথম ১৫ দিন দেহকে পরিস্কার করার জন্য, পরের ৪০ দিন শুকানোর জন্য আর শেষ ১৫ দিন তাকে মোড়ানোর জন্য।

প্রথম ধাপ :
দেহকে সঠিক উপায়ে পরিস্কার করে অভ্যন্তরীন পচনশীল অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অপসারণ, মমি বানানোর ধাপ হিসেবে এই ছিল প্রথম ১৫ দিনের কার্যক্রম। বিশুদ্ধকরণ তাবুতে (Purification tent) মৃতদেহকে লবণাক্ত পানিতে ধোঁয়ানো হত বেশ কয়েকবার। তারপর একে নেওয়া হত সৌন্দর্যবর্ধক তাবুতে(Beauty tent)। এখানে মূলত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অপসারণের কাজ চলত। প্রথমে মৃতের বাম নাকের ভেতর দিয়ে এক ধরনের ধাতব হুক প্রবেশ করানো হত, যার সাহায্যে টেনে বের করে আনা হত পুরো মস্তিষ্ক। এরপর বুক থেকে পেট পর্যন্ত (সাধারনত দেহের বামদিক) নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্য অনুসারে লম্বালম্বি ভাবে চিরে ফেলা হত। দেহের ভেতর থেকে ফুসফুস,পাকস্থলী,যকৃত আর অন্ত্র বের করে আনার পর সেগুলো সংরক্ষণ করা হত বিশেষ উপায়ে। তবে হ্যা, হৃৎপিন্ডটি কিন্ত সবসময় যথাস্থানে রেখে দেওয়া হত। প্রাচীন মিশরীয়রা বিশ্বাস করত যে, সকল বুদ্ধি বিবেক আর বিচক্ষনতার কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে মানুষের হৃৎপিন্ড। পরের জন্মে যখন মমি থেকে আবার কেউ মানুষরূপে ফিরে আসবে, তখন তার হৃদয়ই তাকে সঠিক পথের নির্দেশনা দেবে। হৃৎপিন্ডের পাশাপাশি কখনো কখনো বৃক্কও রেখে দেয়া হত শরীরের ভেতরে।

দ্বিতীয় ধাপ :
পরিস্কার করার পর এবার দেহকে শুকানোর পালা। মমির কারিগরেরা দেহকে শুকানোর কাজে ন্যাট্রন(Natron) নামক এক বিশেষ ধরনের লবণ ব্যবহার করত।প্রাথমিক ভাবে এই ন্যাট্রনের ব্যবহার সীমাবদ্ধ ছিল জেলেদের মাঝে। মাছ ধরার পর জেলেরা মাছের গায়ে ন্যাট্রন মাখিয়ে রাখত। কেননা এই ন্যাট্রনের স্ফটিক দানাগুলো খুব সহজেই মাছের দেহ থেকে রস শুষে নিয়ে শুষ্ক বানিয়ে ফেলত, যা মাছ সংরক্ষণের জন্য দরকারি। জেলেদের কাছ থেকেই মমিরা কারিগরেরা এই ন্যাট্রন ব্যবহারের ধারণা পায় এবং প্রয়োগ করে মমির উপর। মিশরের উত্তরাঞ্চলের হ্রদসর্বস্ব এলাকা থেকে ন্যাট্রন সংগ্রহ করা হত। বাক্সে ভরে সেগুলো পাঠানো হত মমির কারিগরদের কাছে।

মমির প্রক্রিয়াজাতকরনের শুরুতে ছোট ছোট লিনেনের ব্যাগ ভর্তি করে রাখা হত ন্যাট্রন। মৃতের শরীরের চিরে ফেলা ফাঁকা অংশের ভেতর এ লিনেনের ব্যাগ ঢুকিয়ে দেয়া হত। এর পাশাপাশি ঢুকানো হত খড়,শুকনো ঘাস আর কাঠের গুড়া। এর সাহায্যে দেহের আকৃতিকে পুনর্নির্মাণ করা হত।

এরপর দেহটিকে একটি টেবিলে চিত করে শোয়ানো হত। ন্যাট্রনের পুরু আস্তরনে ঢেকে দেওয়া হত সারাদেহ। এঅবস্থায় তাকে শুকানোর জন্য রেখে দেয়া হত ৪০ দিন। এর পাশাপাশি ফুসফুস,পাকস্থলী,যকৃত আর অন্ত্র – এই প্রত্যেকটি অঙ্গ রাখা হত আলাদা আলাদা মাটির পাত্রে। তার উপরে ন্যাট্রন দিয়ে পাত্র কানায় কানায় পূর্ণ করে দেয়া হত। ঠিক একইভাবে এই পাত্রগুলোও ৪০ দিন রেখে দেয়া হত যাতে করে তা পুরোপুরি শুকিয়ে যেতে পারে।

৪০ দিন এভাবে রেখে দেওয়ার ফলে ন্যাট্রনের আবরণ শুষে নিত সমস্ত দেহরস। এরপর দেহ থেকে ন্যাট্রনের আচ্ছাদন চেঁছে তুলে ফেলা হত। তার পাশাপাশি দেহের ভেতরে ভরে রাখা খড়,ঘাসের স্তুপও বের করে ফেলা হত। ইতোমধ্যে কিন্ত শরীরটি তার প্রকৃত ওজনের প্রায় তিন চতুর্থাংশ হারিয়ে ধারণ করেছে আকুচিত নতুন রুপ। নীলাভ কাল সেই শুষ্ক রুক্ষ দেহের দিকে তাকালে বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় যে কিছুদিন আগেও পৃথিবীর বুকে ছিল তার দাম্ভিক পদচারণা।

(.....চলবে )

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.