নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ওয়াসি আহমেদ

ওয়াসি আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মৃত্যু রহস্য

২১ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:০৭

১৯৯৮ সাল:

আদনানের বাড়ির কাছে একটা নতুন বুকশপ খোলা হলো, ভেতরে বসে বিনামূল্যে বই পড়ার সুযোগ আছে সেখানে। বই পড়তে সে বরাবরই পছন্দ করে। পরবর্তী দুই বছর প্রায় প্রতিদিন দেখা গেল , বুকশপের এক কোনায় বই হাতে বসে আছে ছেলেটা। এমন করে ওই দোকানের প্রায় সব বই-ই পড়া হয়ে গেল ওর।

দোকানে বিক্রি তেমন একটা হতো না। বই পড়ুয়া মানুষ সে তল্লাটে তেমন নেই বললেই চলে। এক বিকালে আদনান দেখতে পেল, বুকশপের বাইরে কাচের দরজায় একটা সাইনবোর্ড ঝুলানো - "দোকান ভাড়া হইবে।" কথায় কথায় জানতে পারল, দোকানটা উঠে যাচ্ছে। আদনানের খুব মন খারাপ হলো। বুড়োমতোন ম্যানেজার ভদ্রলোকের সাথে দুবছরে তার বেশ খাতির হয়েছিল। কথার ফাঁকে লোকটার কাছে জানতে চাইল ও, এমন কোনো বই কি আছে, যেটা ওর পড়া হয়নি? ম্যানেজার মৃদু হাসল, জবাব না দিয়ে ভেতরে ঢুকল একবার। ধুলোমাখা একটা বই বের করে এনে দেখালো। বইটা নাকি বিক্রির জন্য নয়, দোকান উঠে যাচ্ছে বলে সেখানে বসে আর পড়াও যাবে না। আদনানের মাথায় জেদ চেপে গেল, জানতে চাইলো কত দাম পেলে বইটা বিক্রি করবে বুড়ো। রহস্যময় হাসি হেসে লোকটা জানালো, বিশ হাজার টাকার এক পয়সা কম হলেও সম্ভব না। এই বই পৃথিবীতে একটাই আছে।

কালো মলাটের বইটার দিকে ভালোভাবে তাকালো আদনান। সোনালি কালিতে লেখা, "মৃত্যু রহস্য।" বুকের ভেতরটা ছলাত করে উঠল ওর, যেকরেই হোক বইটা পেতে হবে। এই বুড়ো নির্ঘাত যাদুকর। নাহলে এই নির্জন। এলাকায় এসে একটা বইয়ের দোকান খুলবে কেন!
পরেরদিন বিকালেই, দুই বন্ধুর কাছ থেকে ধারদেনা করে বিশ হাজার টাকা নিয়ে দোকানে এসে হাজির হলো আদনান। বুড়ো ম্যানেজার খানিকটা ইতস্তত করে বইটা বের করে ওর হাতে দিল। গম্ভীর স্বরে বললো, "সাবধান। আগামী অমাবস্যার আগে বইটা পড়বে না। আরেকটা কথা, এই বইয়ের প্রথম পৃষ্ঠা কখনো খুলতে যেয়োনা। ঘোর অমঙ্গল হবে।"

লোকটার কন্ঠে কিছু একটা ছিল, আদনান কিছু বলার সাহস পেল না। চূপচাপ বইটা নিয়ে বাড়ির দিকে পা বাড়ালো। পরেরদিন দেখা গেল দোকানের শাটার নামানো, তালা ঝুলছে। বুকশপের কোনো নামগন্ধ নেই।

আদনান বইটা আলমারির ভেতরে যত্ন করে রেখে দিল। অমাবস্যা আসতে আরও মাসখানেক বাকি। ধীরে ধীরে ওর মাথার ভেতর যন্ত্রনা হতে শুরু করল, কোনো কাজে মনোযোগ বসাতে পারে না ঠিকমতো। অবশেষে ঘনিয়ে এল সেই বহুল প্রতিক্ষিত রাত। কাপা কাপা হাতে বইটা খুলল ও। এক নিশ্বাসে পড়ে ফেলল সত্তর পৃষ্ঠার বইটা। আগামাথা কিছুই বোঝা গেল না, ভেতরে নকশা কাটা হাতের রেখার ছবি দেয়া জ্যোতিষবিদ্যার অসংখ্য মন্ত্র। প্রচন্ড মাথাব্যথা নিয়ে বইটা বন্ধ করে রাখল ও।

ভেবেছিল, বইটা পড়ার পর সব কৌতুহল মিটে যাবে। কিন্তু না! প্রথম পাতায় কী আছে ভেবে ওর দম বন্ধ হয়ে আসতে শুরু করল। চার মাসে ওজন কমল আট কেজি, চোখের নীচে কালি পড়ে গেল। ঘুমের ভেতর দু:স্বপ্ন দেখতে শুরু করল, বুড়ো ম্যানেজার হাত নেড়ে মানা করছে, যাই- হোক না কেন, বইয়ের প্রথম পাতা খুলবে না। অমঙ্গল হবে।

অবশেষে কৌতুহলের কাছে অমংগলের আশংকা হার মানল একদিন। নিজেকে আর ধরে রাখতে পারল না আদনান। এই অভিশপ্ত বই ওকে এমনিতেই শেষ করে দিয়েছে, নতুন করে আর কী-ই বা অমঙ্গল হবে। কপালে মৃত্যু থাকলে তা'ই সই। কিন্তু এই ভয়াবহ আতংক নিয়ে বেচে থাকা সম্ভব নয় ওর পক্ষে। সকল বাধা নিষেধ উপেক্ষা করে বইয়ের প্রথম পৃষ্ঠা খোলার সিদ্ধান্ত নিল ও।

কাজটা করার আগে বারবার ম্যানেজারের চেহারাটা চোখে ভাসতে লাগল - সেই কুচকে যাওয়া কপাল, রহস্যময় হাসি, ছানি পড়া চোখ। বুড়ো মানা করেছিল বইটা খুলতে, কী হয় কে জানে!
শেষবারের মতো চারদিকে তাকাল আদনান। দরদর করে ঘামতে শুরু করেছে, চারদিকে পিন পতন নীরবতা। পুরো পৃথিবী যেন থমকে গিয়ে অপেক্ষা করছে আদনানের জন্য। মাথার ভেতর থেকে কেউ যেন বারবার বলছে, "আদনান, বইটা খুলো না। আদনান, বইটা খুলো না।"

সবকিছু উপেক্ষা করে একটানে প্রথম পাতাটা চোখের সামনে মেলে ধরল আদনান। পরমুহূর্তেই হাত থেকে ফেলে দিল বইটা। প্রথম পাতার নীচের দিকে বড় বড় করে লেখা -

" রামু জ্যোতিষীর বশীকরণ মন্ত্র সমগ্র - আদি ও আসল
মূল্য : বিশ টাকা (বিফলে মূল্য ফেরত)"

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:৩১

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: হা হা।
মজার। এর আরেকটা সংস্করণ কোথায় যেন পড়েছিলাম

২| ২২ শে নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:০২

হাতুড়ে লেখক বলেছেন: ভাল লেগেছে। যদিও আগেই বোঝা যাচ্ছিল শেষটা কি হতে যাচ্ছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.