নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ওয়াসি আহমেদ

ওয়াসি আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাবা দিবস ও কিছু টুকরো গল্প

১৮ ই জুন, ২০১৭ রাত ৮:৫১

সেই যে মাসখানেক আগে দুদিনের জন্য বাবার দেখা মিলেছিল, তারপর যেন বসন্তের বাতাসে মিশে অদৃশ্য হয়ে গেলেন আবার। গভীর রাতে ঘুমের ঘোরে তিন বছরের ছোট্ট মেয়েটা হাতড়ে হাতড়ে খোঁজে তাকে, তারপর ঘুমিয়ে পড়ে ঝিঝিপোকার ঘ্যানঘেনে ডাক শুনতে শুনতে। শহরের খুপড়িসদৃশ মেসঘরে পাতা তেল-চিটচিটে তোষকে শুয়ে মেয়েটার কথা মনে পড়ে খুব, ঘাসফুল ছেড়ে শিশির বিন্দুগুলো বাবার চোখ বেয়ে গড়িয়ে যায়। পরদিন দুপুরে এক কৌটা পাউডার, প্যাকেট ভরা চকলেট আর গোলাপি ফ্রক হাতে গ্রামের বাড়িতে দেখা যায় তাকে। এতদিন পর দেখে খুব অভিমান হয় শিশুর, মুখ ফিরিয়ে নেয় ছলছল চোখে। আবার একটু পর, নতুন জামা গায়ে বাবার শরীরের সাথে লেপ্টে যায় ছোট্ট মামণির শরীর। ঘামের নোনা গন্ধভেজা দেহ আকড়ে ধরে ভুলে যায় সবকিছু। হয়তো আবার দেখা হবে মাসখানেক পর, তবুও বাবার কোলে শরীর মেলে দূর হয়ে যায় ভয়। খুকু ঘুমায়, পাড়া জুড়ায়, অবচেতনায় একটা বদ্ধমূল বিশ্বাস দৃঢ়ভাবে ছেয়ে রয়: "বাবা আমার সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়।"

সেই যে ছেড়া শার্ট পরা মাটিকাটা শ্রমিক লোকটা, নুন আনতে যার পান্তা ফুরিয়ে যায়; হাড় জিরজিরে বাচ্চাটা রাস্তার আরেক মাথা থেকে কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে যায় তার কাছে। সুপারির রসে হলদে হয়ে যাওয়া দাত বের করে একগাল হাসেন তিনি। পকেট থেকে নিজের ভাগ্যের মতোই ন্যাতনেতে টেপ প্যাচানো ময়লা পাচ টাকার একটা নোট বের করে সবুজরঙা ললি আইসক্রিম কিনে ফেলেন। ফোস্কা পড়া কালচে বাদামি হাতে লেগে থাকা সিমেন্টের গুড়োগুলো সাবধানে মুছে নেন শার্টের এক কোনায়। তারপর পৃথিবীর সব মায়া, সব বিশুদ্ধ আবেগকে একত্রিত করে কাঁধে বসান মেয়েটাকে। রাজপথের ধুলোর সাক্ষী হয়ে থাকা বাবার চুলের সাথে গাল লাগাতেই, চোখের পানিগুলো বাষ্প হয়ে স্বর্গে উড়ে যায় সেই বোকা বাচ্চাটার। সবুজরঙা ললি আইসক্রিম গলে যায় মুখের ভেতর, সাতরঙা আনন্দে দ্রবীভূত হয় শিশুর অন্তর। দু চোখ বুজে, পা নাচিয়ে নাচিয়ে তখন সে একটা কথাই ভাবে, "বাবা আমার এ কেমন অবাক জাদুকর?"

সেই যে সাতদিন আগে খোকার গায়ে জ্বর এলো, ভুগে ভুগে কাহিল হয়ে পড়ল বাচ্চাটা। হাসপাতালের ভীষণ মন খারাপ করা বিছানায় শুয়ে তার চোখে ভাসে দৌড়ে বেড়ানোর স্বপ্ন, অথচ একগাদা নল আর সুই গাঁথা শরীরটা নড়াবার উপায় নেই। স্কুলে যাওয়া হয়নি সাতদিন, বন্ধুবান্ধবের সাথে দেখা হয়নি। বাবাও অবশ্য তিনদিন হলে অফিসে যাননি, কেমন যেন শুকনো মুখে হেটে বেড়ান অবিরাম: কেবিনের এপাশ থেকে ওপাশ, দিনরাত। বাচ্চাটার খুব আকাশ দেখতে ইচ্ছা হয়, মুখের দিকে তাকিয়ে কীভাবে যেন না বলা কথাটা বুঝে ফেলেন বাবা। খুব আয়োজন করে ডান হাতের ওপর ছেলেকে বসিয়ে, বাম হাতে তুলে নেন স্যালাইন ঝুলানো ভারী স্ট্যান্ড। হাসপাতালের বারান্দায় ঘুরে ঘুরে খোকাকে রৌদ্দৌজ্বল শরতের আকাশ দেখানোর সময় তিনি ভুলে যান- বছরখানেক আগে বামপাশের কলার বোন ভাংগার পর থেকে বাম হাতে খুব বেশি শক্তি পেতেন না। কদিন আগে দুটো দাত পড়েছে খোকার, ফোকলা মুখের হাসিতে সে ঐশ্বরিক শক্তির যোগান দেয় বাবার পেশীতে। শরতের রোদ ছুটে যায়, সূর্যের দাপটে মেঘের দল হয় ম্লান। দুচোখ ভরে আকাশ দেখে খোকা, বাবার কাঁধে হাত রেখে ভাবে, "বাবা আমার সুপারম্যান, সর্বশক্তিমান।"

পিতা,জনক,জন্মদাতা,পালনকর্তা.... সত্যিকার অর্থে, "বাবা" নামক ব্যক্তিটিকে হাজারো বিশেষ্য কিংবা লাখো বিশেষণে-ও সংজ্ঞায়িত করা সম্ভব নয়।

পৃথিবীর সব বাবাকে জানাই শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
(বি:দ্র: ছবিগুলো বিভিন্ন সময়ে নিজের মোবাইল ক্যামেরায় ধারণকৃত।)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই জুন, ২০১৭ রাত ৯:৪৮

উজ্জ্বল হায়দার বলেছেন: আমিও জানাই শ্রদ্ধা ও সালাম। কিন্তু আমার একটা প্রশ্ন সবার কাছে, সেটা হল পৃথিবীর সব বাবাই কি ভাল? আর যদি কারও বাবা তার সন্তানের কাছে ভাল না হয় তখন সেই সন্তান কি তার বাবাকে বুক ভরে ঘৃনা করতে পারবে???

২| ২০ শে জুন, ২০১৭ রাত ১২:৩৯

ওয়াসি আহমেদ বলেছেন: পৃথিবীতে খারাপ মানুষ আছে, কিন্তু একটাও "খারাপ বাবা" নেই - এই হুমায়ূনীয় তত্বে আমি বিশ্বাসী নই।
অন্তত পৃথিবীর ইতিহাস সে কথা বলে না..

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.