নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অন্ধকারের মাঝে একটু আলো.. আলোর অনুসরণ ।\n\nhttps://www.facebook.com/profile.php?id=100004783727702 ।

তর্কে জড়াতে পারবোনা, জ্ঞান সীমিত ।

কলমের কালি শেষ

লেখক পাওয়া যাচ্ছে না তাই আমিই লেখক...

কলমের কালি শেষ › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি অজ্ঞাত স্বপ্ন। (গল্প)

০৭ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ৯:৫৮



আমার যখন মন খারাপ হয় তখন আমি লিখি । মানুষের মন খারাপ হওয়ার জন্য ক্ষুদ্রতম হলেও একটি উপলক্ষ লাগে । কিন্তু আমার মন খারাপ হওয়া কোন ক্ষুদ্রতম উপলক্ষের উপর নির্ভর করে না। এই যেমন পাশের বাসার কেউ বয়সের ভারে মারা গেল, এতে আমার মন খারাপ হয় না, কারণ এটা কাঙ্ক্ষিত, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু যখন কেউ তাকে খুন করলো কিংবা সে আত্মহত্যা করলো, অথবা মেয়েটি ধর্ষিত হয়ে মারা গেল, রাস্তার মোড়ে কেউ প্রিম্যাচিউরড বাচ্চাকে ফেলে গেল, কাকেরা তাকে ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাচ্ছে ।সাধারণত এই রকম ঘটনাগুলো আমার মন খারাপ করে । এখন আসি আমি তখন কেন লিখি, আমি লিখি কারণ তখন ব্যাপারগুলো তরতাজা থাকে, মনের ভেতরের প্রভাবগুলো সঠিকভাবে ফুটে ওঠে । এ যেমন কিছুদিন আগের একটি ঘটনা যা এখনো আমি ভুলতে পারি নি, আমার মনের মধ্যে ক্রমাগত প্রভাব ফেলছে । তাই ক্রমাগত লিখে চলেছি, হয়তো এই লেখার কোন প্রাণ নেই, কিন্তু রক্তপ্রবাহ আছে!

গল্পটা হচ্ছে একটি বাড়িকে ঘিরে। রাত হলেই বাড়িটি থেকে চিৎকারের আওয়াজ শোনা যেত। চিৎকারের ভয়বহতা থেকে মাঝে মাঝে আন্দাজ করা যেত ঘরের মধ্যে শুধু চিৎকার নয় অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ এবং মারামারিও চলছে। কিন্তু দিনের আলোয় সব স্বাভাবিক, সুন্দর, বাড়ির পরিবেশ এতো প্রাণচঞ্চল থাকে যে যেন গত রাতে কিছুই হয় নি । এই বাড়িটার মালিক কেদার রায় । দো'তলা বাড়িটার মধ্যে তার পরিবারের কেউ থাকে না, তিনি একাই থাকেন এক ফ্ল্যাটে, তার পরিবার আদৌ আছে কী তা কেউ জানে না । তিনি এ বাড়িটা কিনে নেয়ার পর থেকে একাই থাকেন, আর অন্য ফ্ল্যাটগুলোতে সিট ভাড়া দেন ব্যাচেলর ছেলেদের । কেদার রায় তার বাসায় ব্যাচেলর ভাড়া দেয়ার সময় এক অদ্ভুত নীতি অনুসরণ করেন, তা হলো ছেলেকে দেখতে অবশ্যই ভদ্র এবং স্মার্ট হতে হবে। এই দুই কোয়ালিটি থাকলে ব্যাচেলর বাসা সংকটের এই শহরে কেদার রায়ের দরজা তার জন্য সবসময়ই খোলা। আর এই দুই কোয়ালিটি আছে কিনা তা তিনি ছেলেদের দেখেই বুঝে নেন দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার উপর ভর করে । রায়ান এবং সুয়াদ কেদার রায়ের এই অফার লুপে নেয় নিজ যোগ্যতায় । ওরা দেখতে যেমন সুশ্রী ঠিক তেমনি কথাবার্তায় নম্র এবং ভদ্র । কেদার রায় নিজ মুখেই চোখ বড় বড় করে বলেন, বুঝলে, তোমাদের মত এমন খাসা ছেলে এই যুগে পাওয়া বেশ দুষ্কর! বেঁচে থাকো বাবারা।

রায়ান এবং সুয়াদের বয়স ষোল কী সতেরো হবে । এবার কলেজে ভর্তি হয়েই এই নতুন শহরের এই নতুন বাসায় উঠেছে । প্রথম কিছুদিন তাদের ভালোই কাটে । কেদার রায় যথেষ্ট ভদ্রলোক, ওদের সাথে অল্প ক'দিনেই বেশ খাতির জমিয়ে ফেলে। তিনি ওদেরকে বাসায় ঢেকে এনে গল্প করে, একসাথে খাওয়া দাওয়া করে, মজার মজার কাহিনী শোনায় । রায়ান আর সুয়াদ ভাবে, এই শহরে তাদের কেউ না থাকলেও কেদার রায়ের মত একজন বড়ভাই সমতুল্য বন্ধু আছে। তারা দিনরাত কেদার রায়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ থাকে । এছাড়াও বিভিন্ন ছোটখাটো কাজে কেদার রায়কে সহযোগিতাও করে। আমার সাথেও রায়ান এবং সুয়াদের কয়েকবার দেখা হয়েছে, তখনো তাদের মুখে শুধু কেদার রায়, কেদার রায় । ছেলেগুলো ভালো, আসলেই বেশ সহজ সরল, অমায়িক । আচার আচরণেই বোঝা যায় ভালো ঘরে ওরা বড় হয়েছে । কেদার রায়ের এমন বন্ধুসুলভ আচরণে শুধু তাদেরই নয় বাসার অন্য ছেলেদেরও এভাবেই দিন কেটে যাচ্ছে ।

ইদানিং কেদার রায়কে এক মুহূর্ত না দেখলে সবার মন খারাপ থাকে, কেউ দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে থাকে, কেউ ঘুমায়, কেউ কানে হেটফোন গুঁজে রাখে, কেউ এদিক ওদিক তাকিয়ে কী যেন ভাবে, যেন তাদের মধ্যে কোন এক দুশ্চিন্তা ভর করেছে । কেদার রায় বাড়িতে না থাকলে তারা যেন খুব অসহায় হয়ে পড়ে, নিজেদেরকে নিয়ে নিজেরাই যেন খুব ভয় পায়, অবচেতন মনেই তারা কেদার রায়ের প্রতি বেশ নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে । কেদার রায়ের সাথে দেখা হলে আমিও বলি, ছেলেগুলোর সাথে কেদার সাহেব না থাকলে যেন বাড়িটাকে মৃত মনে হয় ! কেদার রায় বিরক্তিভাব নিয়ে বলেন, আর বলবেন না, ছেলেগুলোকে নিয়ে আমি আর পারি না, আমার কী আর কোন কাজ নাই, সারাক্ষণ তাদের সাথে থাকলে চলে ? কেদার রায় কথাগুলো বিরক্ত হয়ে বললেও কথাগুলোর মধ্যে মায়া আছে, তাই কেদার রায়ের প্রতি আমার মনেও একপ্রকার শ্রদ্ধা জন্ম নেয়। কেদার রায়কে আর জিজ্ঞেস করা হয়ে ওঠে না, রাতেআপনার বাড়িতে এতো চিৎকার চেঁচামেচি কীসের হয় । আমি অন্য ভাবনায় মগ্ন থাকি । হয়তো আমার মত এলাকার অন্য সবাইও । কারণ বাড়িটা নিয়ে একটা গুজব আছে, আগে যারা এই বাড়িতে থাকতো তাদের মধ্যে বেশ ঝগড়া হতো, এর জের ধরে এক সময় ঘরের কর্তা আত্মহত্যা করে । আর ঘরের কর্ত্রী একসময় বাড়িটা কেদার রায়ের কাছে বিক্রি করে চলে যায়। তখন থেকেই নাকি রাত হলে এমনটা হয়, আগের পরিবারের কার্যকলাপগুলো বাড়িরটার ভেতরে এখনো রিফ্লেক্ট হয়। তাই সবাই কর্তার আত্মহত্যাকে জোরালো যুক্তি হিসেবে দেখিয়ে একটা ভুতুড়ে গল্পকেই মনে প্রাধান্য দিয়েছে । আমিও হয়তো অবচেতনমনে তাই মেনে নিয়েছিলাম ।

সেই রাতে আমি এক অদ্ভুত স্বপ্ন দেখি । একজন পুরুষ এবং একজন মহিলা কেদার রায়ের ফ্ল্যাটের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে । তারা কলিং বেল বাজাচ্ছে । কেদার রায় তড়িঘড়ি করে দরজা খুলে, আর বলে, আসেন আসেন সবকিছু রেডি আছে, আজকের মালগুলো একদম নতুন ।' ওরা বলে, 'তোমাকে এতো টাকা কী এমনি এমনি দিয়েছি কেদার বাবু!' কেদার রায় শুধু হাসে । সে তাদের দু'জনকে আলাদা দুই রুমে ঢুকিয়ে দেয়। আমি দেখি এক রুমে রায়ান আরেক রুমে সুয়াদ শুয়ে আছে, দুজনই উলঙ্গ । তাদের চোখ লাল হয়ে আছে । এরপর সব অন্ধকার হয়ে যায় । একটু পরে আবার দেখি, কেদার রায় এবং ওরা দু'জন মিলে রায়ান এবং সুয়াদের নিথর উলঙ্গ শরীরকে ধুয়ে মুছে কাপড় পরিয়ে দিয়েছে এবং তাদেরকে ধরাধরি করে সিঁড়ি ছাদের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তখন আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়, আমি ঘেমে যাই, খুব অস্থির অস্থির লাগে । আমি নিজেকে ধিক্কার দেই একটা সুন্দর সম্পর্কের কী সব আজেবাজে স্বপ্ন দেখছি । তখন প্রায় ভোর পাঁচটা বাজে । বাইর থেকে খুব সরগোলের আওয়াজ আসে কানে । আমি ভাবছি এতো ভোরে বাইরে কী হচ্ছে । আমি বারান্দায় যাই, বাইরে তাকিয়ে দেখি কেদার রায়ের বাড়ির সামনে সামনে খুব ভীড় । আমি দৌঁড়ে সেখানে যাই । ভীড় ঠেলে ভেতরে গিয়ে দেখি কেদার রায় মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন, চুলগুলো এলোমেলো, তার চোখ অশ্রুতে ভিজে উঠেছে । তার সামনে রায়ান এবং সুয়াদের থেতলানো শরীর পড়ে আছে । ওদের চোখগুলো তখনো কেউ বন্ধ করে দেয় নি, চোখগুলো লাল হয়ে আছে ।

কিছুদিন পর একটা দৈনিক পত্রিকায় খবর ছাপে, 'তরুণ সমাজের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে আগের থেকে দ্বিগুণ'। খবরটা পড়তে পড়তে একটা প্যারায় চোখ আটকে যায়, সেখানে লেখা ''সেই সাথে এখন দলবেঁধে আত্মহত্যাও একটি নতুন মোড় নিয়েছে, রায়ান এবং সুয়াদের মৃত্যু এর অন্যতম প্রমাণ। যদিও কেন তারা আত্মহত্যা করেছে এর কারণ এখনো উৎঘাটন হয় নি । তবে বিশেষজ্ঞরা জোরালোভাবে বলছেন, এ বয়সী ছেলেমেয়েদের আবেগ থাকে প্রবল, তাই হয়তো প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়ে তারা এমন পথকে বেছে নিয়েছে।''

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১০:২২

পুলহ বলেছেন: গল্পের কোন রূপক অর্থ আছে কি না, ঠিক নিশ্চিত হতে পারছি না। এম্নিতে তো মনে হলো কিছুটা থ্রিলার ধাচ এর গল্প....
শুভকামনা কলমের কালি শেষ !

০৮ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১০:৫৪

কলমের কালি শেষ বলেছেন: না , এর মধ্যে তেমন কঠিন কোন রূপক অর্থ নেই । স্বপ্নটাই মূলত এর আলোচ্য বিষয় । যে সব ওইয়ার্ড থিং ''নাও এ ডেইজ থিজ গেটিং নরমাল''!

পাঠে এবং মন্তব্যে অনেক ধন্যবাদ পুলহ ভাই ।

ভাল থাকুন সবসময় । :)

২| ০৭ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১০:২৯

সজল দাস বলেছেন: পুলহ ভাই প্রতিটি গল্পেরি একটি রূপক অর্থ আছে এবং আমার মতে এটিরো আছে.........

০৮ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১০:৫৫

কলমের কালি শেষ বলেছেন: তা তো থাকেই ।

পাঠে এবং মন্তব্যে অনেক ধন্যবাদ সজল দাস ভাই ।

শুভ কামনা সবসময় । :)

৩| ০৭ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১০:৩০

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: গল্প ভাল লাগল। লিখে যান লিখতে লিখতে লিখিয়েন।

০৮ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১০:৫৬

কলমের কালি শেষ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ পাঠে এবং সুন্দর মন্তব্যে মাহমুদুর রহমান সুজন ভাই ।

ভাল থাকুন সবসময় । :)

৪| ০৮ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১২:৪৪

সুমন কর বলেছেন: গল্প বলার ধরনটা ভালো লেগেছে। +।

০৮ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১০:৫৭

কলমের কালি শেষ বলেছেন: অনেক ভাললাগা সুন্দর মন্তব্যে সুমন ভাই ।

ভাল থকবেন সবসময় । :)

৫| ০৯ ই মার্চ, ২০১৭ সকাল ১১:১৭

জুন বলেছেন: ককাশে আমি তিনবার করে এসে পড়ে গেছি এই গল্প। মন্তব্যগুলোও পড়েছি যাতে কিছু ক্লু পাই ।
কিন্ত কিছুই বুঝতে পারি নি । আমার অক্ষমতা মনে হয় :(
+

০৯ ই মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৩:০০

কলমের কালি শেষ বলেছেন: একটা ইক্সট্রিম লেভেলের ক্রাইম নিয়ে গল্পটা লিখেছি । কেদার রায়ের মত মানুষেরা ভালো মানুষের মুখোশ পরে যদি বিভিন্ন ড্রাগস প্রয়োগ করে ছেলেদের দিয়ে পতিতা বিজনেস করে এবং যাদের খদ্দের মহিলাদের পাশাপাশি পুরুষও হয় তখন কী হবে ! এই গল্পে একটি ঘটনাকে উল্লেখ করা হয়েছে- মাত্রাতিরিক্ত ড্রাগস এবং ফর্সেবল সেক্স এর কারণে ছেলে দু'টো মারা যায় তাই কেদার রায় এবং তার কাস্টমার দু'জন মিলে ছেলে দু'টোকে ছাদ থেকে ফেলে আত্মহত্যার মুখোশ দিয়ে পুরো ব্যাপারটা ঢেকে ফেলে, কারণ কেদার রায় যে ক্রাইমের সাথে জড়িত আমাদের সমাজ এই ক্রাইমের সাথে পরিচিত নয় । তাই কোন ইনভেস্টিগেশন ছাড়াই এসব ক্রাইমগুলো এই বয়সী ছেলেদের আবেগের উপর ভর করে আত্মহত্যার এক অনাকাংখিত ঘটনার নিচে চাপা পরে যায় ।

এখানে মূলত স্বপ্নটাকেই সত্য বলা হয়েছে ।

আপনার অক্ষমতা নয় । আসল ব্যপারটা হলো এখানে একটা উইয়ার্ড ক্রাইমকে ঘিরে গল্পটা গড়ে উঠেছে । সিংভাগ মানূষই এইসহ ক্রাইম সম্পর্কে চিন্তা করতে পারে না । তাই হয়তো ধরতে সমস্যা হচ্ছে ।

পাঠে এবং সুন্দর মন্তব্যে অনেক ভালোলাগা জুন আপু ।

শুভ কামনা সবসময় । :)

৬| ০৯ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ৮:২৯

জুন বলেছেন: আমারো ড্রাগের কথা মনে হয়েছিল ককাশে সন্ধ্যা হলেই ছেলেগুলোর অসংলগ্ন আচরনের কথা পড়ে । ভুত প্রেতের কথা ভাবিনি মনে রেখো :)

১০ ই মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৫:৩৩

কলমের কালি শেষ বলেছেন: হুম এখানে ছেলেদের দোষ নাই। কেদার রায়ের মত লোকদের কপ্পরে পড়ে এমন অবস্থা ।

হা হা । আপনি তো অনেক জায়গা ঘোরেন, যেখানে ভূত প্রেত থাকার সম্ভাবনা বেশি । এমন কোন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন কখনো কী হয়েছেন !!

ফিরতি মন্তব্যে অনেক ভাললাগা জুন আপু ।

ভাল থাকুন সবসময় । :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.