নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আইন পড়ি, শব্দ লিখি আর ভাঙা গলায় গান গাই

Zinat Imam

বেঁচে থাকার জগতটার চেয়ে লেখালেখির জগতটাই ভালো

Zinat Imam › বিস্তারিত পোস্টঃ

অন্য সময়

১৬ ই অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৩:৩৫



আজ শুক্রবার। অফিস-আদালত বন্ধ। গোসল সেরে অরিন, চুলায় চা এর পানি চড়ালো। নিলয় এখনো ঘুমাচ্ছে। অরিন একবার ঘুম থেকে উঠার জন্য ডেকেছিল। যদিও নিলয় বেলা ১২ টার আগে ঘুম থেকে উঠবে না আজকে। তবুও একবার চোখ খুলে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়ানো অরিনকে দেখলো। অরিন চা বানিয়ে সাইড টেবিলে রেখেছে। নিলয় কিছুক্ষণ পর বিছানায় উঠে বসলো। চা এর কাপে এক চুমুক দিয়ে সে অরিনকে দেখতে লাগলো। অরিন আজকে সাদা জামদানি পড়েছে। ভেজা চুলে অরিনকে স্নিগ্ধ লাগছে।
এই সাদা জামদানিটা খুব শখ করে কিনে দিয়েছিলো নিলয়। নিলয় মনে মনে বলতে লাগলো -- "বিয়ের দেড় বছর হয়ে গেছে, অরিনের কোনো পরিবর্তন নেই। চুপচাপ, কম কথা বলে। দরকার ছাড়া তেমন কোনো কথা নেই। ওর সাথে ঘোরাঘুরি ও কম হয়। আজকে বন্ধের দিন। ওকে নিয়ে ঘুরতে গেলে ভালই হয়। রাতে কোনো ভালো রেস্টুরেন্টে ডিনার করা যাবে। দুপুরে অরিনকে বলবো বাইরে যাওয়ার কথা।"
নিলয় গোসলের জন্য ওয়াশরুমে ঢুকলো। বের হয়ে দেখলো, মোবারক মামা এসেছেন, গ্রাম থেকে।

অরিন কে তার শ্বাশুড়ি কল করে বলে দিয়েছেন, মোবারক মামাকে খুব ভালো করে রান্না করে খাওয়াতে। তাই সারা দুপুর অরিন রান্না ঘরে ব্যস্ত। সরষে ইলিশ, টাকি মাছ ভর্তা, গরু মাংস, রোস্ট, পোলাও সব রান্না করে টেবিলে দিয়েছে। নিলয় মামাকে নিয়ে খেতে বসেছে। অরিন রান্না শেষ করে ছাদে গেছে কাপড় আনতে। খাওয়া শেষে, অরিন রুমে এসে বিশ্রাম নিচ্ছে৷ নিলয় এই মুহূর্তে ঠিক বুঝতে পারছে না যে, বাইরে যাওয়ার কথাটা বলবে কিনা। খুব সাহস করে নিলয় বলে উঠলো--
"শহরে একটা নতুন রেস্টুরেন্ট খুলেছে। সন্ধ্যায় যাবা?" অরিন গল্পের বইটা হাতে নিয়ে বললো, - "আজকে অনেককিছু রান্না করেছি। আর মোবারক মামা এসেছেন। তাকে দেখতে হবে। অন্য একদিন যাবো।"
নিলয় শুধু বললো, "ঠিক আছে।"


পরদিন সকালে, মোবারক মামা কে সকালের নাস্তা দিয়ে অরিন খবরের কাগজ হাতে নিলো। রাশিফল কলামে লেখা,-- "কন্যা রাশির ভাগ্য আজকে অতিশয় ভালো যাবে। দাম্পত্য কলহ মিটে যাবে। সংসার সুখের হবে।" অরিন লেখাটা পড়ে মুচকি হাসলো। অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে, অরিনের এস্ট্রলোজি, নিউমেরোলোজি এইসব উদ্ভট বিষয়ে খুব ঝোঁক ছিল। এতোটাই বেশি যে, সামনে যাকেই পেতো তাকেই 'এইসবের' বিস্তর তথ্য বিতরণ করতো। কেউ কেউ খুব বেশি ইনফ্লুয়েন্স হয়ে যেতো আবার কেউ হেসে উড়িয়ে দিতো৷ কিন্তু, অরিনের এইসব কথা খুব মন দিয়ে শুনতো, অভ্র। ঘন্টার পর ঘন্টা অরিনের আবিষ্কার করা আজগুবি থিওরি শোনা, তার সাপ্তাহিক অভ্যাস ছিল। সে যে শুধুই শুনতো, তা নয়৷ অমত-দ্বিমত ও পোষণ করতো। অভ্র মাঝেমধ্যে ব্যঙ্গ করে অরিনকে বলতো, " তুমি এস্ট্রলোজি তে পি.এইচ.ডি করো.... হা হা হা।"

হাইওয়ের বুক শপের পাশে একটা ছোট্ট কফি শপ ছিল। মাত্র তিনটা কাউচ ছিল বসার জন্য। এজন্য খুব কম মানুষের আনাগোনা ছিল। অভ্র-অরিনের নিয়মিত গল্প করার জায়গা ওইটাই ছিল। দুই কাপ কফি খেয়ে সেইখানে ৩-৪ ঘন্টা বসা যেতো। কফি শপের বুড়ো চাচা, অভ্র কে একদিন প্রশ্ন করেই বসলো, " তোমারা এইখানে প্রায়ই আসো। তাই জিজ্ঞাসা করছি, বিয়ে কবে করছো তোমরা?" চাচার প্রশ্নের উত্তর অভ্র দিতে পারেনি। সে রীতিমতো থতমত খেয়ে গিয়েছিল। অরিন চাচা কে বললো, " কি যে বলো না,চাচা? অভ্র'র বিয়ের বয়স তো পার হয়ে গেছে। ও কে বিয়ে কে করবে!"

আজকের অরিন আর সেদিনের অরিনের ভিতর পার্থক্য এতটুকু যে, অরিন আর আগের মতো অনরগল কথা বলে না। তার মাথায় আর কোনো উদ্ভট থিওরি উঁকিঝুঁকি দেয়না। হয়তো এইটা বয়সের পরিপক্কতার লক্ষণ। হয়তো এইটা খুব সাংসারিক হয়ে যাওয়ার প্রভাব। খবরের কাগজটা জায়গা মতো রেখে, অরিন মোবাইল হাতে নেয়৷ নিলয় কে কল করার জন্য। কিন্তু, এখন তার কথা বলার ইচ্ছা নেই৷ এজন্য একটা মেসেজ লিখে সে-- " দুপুরের রান্না করিনি৷ মায়ের বাসায় দুপুরের দাওয়াত।আমি যাচ্ছি। তুমি বাইরে লাঞ্চ করে নিও।" অরিন, নিলয়কে তার মায়ের বাসায় যাওয়ার জন্য বলতে পারতো৷ কিন্তু, বললো না৷ কারন, নিলয় ঘরকুনো টাইপ লোক৷ অফিস আর বাসা ছাড়া কোথাও তেমন যেতে চায় না। আর অরিনদের বাসায় মোটেও না৷ অরিনের বাবা খুব রসিক মানুষ। যদিও নিলয়ের মতে তিনি খুব কটাক্ষ করে কথা বলেন। মূলত এইটাই কারন৷

অরিন নিলয়ের দেওয়া শাড়িটা পরে রেডি হয়। এর মধ্যে একটা মেসেজ আসে অরিনের মোবাইলে-- " আজকে বাইরে খেতে ইচ্ছা করছে না। আমি তোমার সাথে দাওয়াতে যেতে চাই।আম্মুর হাতের বিরিয়ানি খাওয়া অনেকদিন হয়ে গেছে।"
অরিন হাতে একগোছা চুড়ি পড়লো। আজকে তার ভাগ্য সত্যি অতিশয় ভালো।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১২:৩৭

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: গল্পটি ভাল লাগল।

১৭ ই অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৪:৪৩

Zinat Imam বলেছেন: ধন্যবাদ ।।।

২| ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৪৩

খায়রুল আহসান বলেছেন: আজকে তার ভাগ্য সত্যি অতিশয় ভাল - ভাগ্যের মত গল্পটাও সত্যি খুব ভাল হয়েছে। শিরোনাম নির্বাচনে মুন্সীয়ানার পরিচয় দিয়েছেন। ছবিটাও সুন্দর। সব মিলিয়ে, অনবদ্য উপস্থাপনা।
পোস্টে প্লাস + +

১৭ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৮:০৮

Zinat Imam বলেছেন: এত প্রশংসনীয় মন্তব্য পেয়ে সত্যি খুব ভালো লাগছে। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।।।।

৩| ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ২:৩৮

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:



আপনার গল্প তো চমৎকার। গল্পের উপস্থাপনা খুব সুন্দর হয়েছে। +++

১৯ শে অক্টোবর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৩৯

Zinat Imam বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ।।।

৪| ২০ শে অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ২:৩৪

ফারিহা হোসেন প্রভা বলেছেন: খুব ভালো লাগলো আপু। কেমন আছেন?

২০ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৮:২৬

Zinat Imam বলেছেন: মন্তব্য করার জন্য, অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।।।
সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদে ভালই আছি।
আপনি কেমন আছেন??

৫| ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ২:৫৮

পবন সরকার বলেছেন: চমৎকার গল্প। ধন্যবাদ

২৪ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:৩৯

Zinat Imam বলেছেন: মন্তব্য করার জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ।।।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.