| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
খায়রুল আহসান
অবসরে আছি। কিছু কিছু লেখালেখির মাধ্যমে অবসর জীবনটাকে উপভোগ করার চেষ্টা করছি। কিছু সমাজকল্যানমূলক কর্মকান্ডেও জড়িত আছি। মাঝে মাঝে এদিক সেদিকে ভ্রমণেও বের হই। জীবনে কারো বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করিনি, এখন তো করার প্রশ্নই আসে না। জীবন যা দিয়েছে, তার জন্য স্রষ্টার কাছে ভক্তিভরে কৃতজ্ঞতা জানাই। যা কিছু চেয়েও পাইনি, এখন বুঝি, তা পাবার কথা ছিলনা। তাই না পাওয়ার কোন বেদনা নেই।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উপরে তখনও চাঁদটা হাসছিল, খানিক পরেই বেলা বাড়ার সাথে সাথে আকাশে বিলীন হয়ে যাবার অপেক্ষায়।
০৫ নভেম্বর ২০২৫, সকাল ০৬-০২
আমার শিক্ষাজীবন শুরু হয়েছিল রাজধানী ঢাকায়, ষাটের দশকের প্রথম দিকে। শৈশব এবং কৈশোরে স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষার পর প্রতিবছর না হলেও দুই এক বছর পর পর আমাদের দাদাবাড়ি-নানাবাড়িতে বেড়াতে যেতাম। দুই বাড়ির মাঝখানের দূরত্ব ১০/১২ কি.মি.। আমার দাদাবাড়ির ঠিক উত্তর পাশ দিয়ে প্রবাহিত ছিল ‘বিন্যাগাড়ির বিল’। সে সময়ে বিলটিতে নানা দেশ থেকে পরিযায়ী পাখিরা এসে বাসা বাঁধতো। দূর দূরান্ত থেকে শিকারিরা আসতো পাখি শিকার করতে। বর্ষাকালে বিলটি কানায় কানায় জলে ভরা থাকতো। ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলেই বিলের জলে ভেসে আসা ছোট ছোট মাছ ধরা যেত। যারা মাছ শিকারে পটু ছিল, তারা বের হতো মধ্যরাতে, হাতে হ্যাচাক বাতি এবং মাছ ধরার নানা সরঞ্জামাদি নিয়ে। কালের পরিক্রমায় সেই বিস্তীর্ণ বিলটির বুকে আজ বহু দালান কোঠা দাঁড়িয়ে আছে। প্রকৃ্তি ও পরিবেশের প্রতি আমরা কতটা বৈরী হতে পারি, তার জাজ্বল্যমান দৃষ্টান্ত হিসেবে।
বিলের উত্তর পাশ ঘেঁষে পূবে-পশ্চিমে চলে গেছে লালমনিরহাট-বুড়িমারী রেলপথ। দেশভাগের আগে এই রেলপথটি “বেঙ্গল ডুয়ার্স রেলওয়ে” বা BDR নামে পরিচিত ছিল। বিলটি যখন জলে ভরা থাকতো, তখন রেলগাড়ি চলাচলের সময় এক ধরণের শব্দ হতো। আবার শীতকালে যখন বিলটি প্রায় শুকনো থাকতো, তখন শব্দটা অন্য ধরনের হতো। চব্বিশ ঘণ্টায় লাইনটি দিয়ে দিনে দুটি ট্রেন চলতো, রাতে দুটি। মাঝে মাঝে মালবাহী ট্রেনও চলতো। আবার দিনে ট্রেন চলার আওয়াজ এক ধরণের হতো, রাতের বেলায় অন্যরকম। বিশেষ করে খুব ভোরে ফজরের ওয়াক্ত শুরুর আগে আগে একটি ট্রেন যেত, সেটার শব্দটা ছিল একেবারেই অন্য রকমের। সেই ট্রেনের চালক অনেক দূর থেকে লম্বা কুউউউউ হুইসেল দিতে দিতে আসতো। যেতও লম্বা হুইসেল দিয়ে। উল্লেখ্য যে তখন ট্রেনগুলো চলতো ভোঁশ ভোঁশ করা কয়লার কালো স্টীম ইঞ্জিন দিয়ে। ডিজেল চালিত ইঞ্জিন এসেছিল আরও অনেক পরে। ষাটের দশকের শেষের দিকে ভেঁপু বাজানো হলদে রঙের ডিজেল ইঞ্জিনগুলো দেশে আমদানী করা হয়। প্রথমে সেগুলো ঢাকা-চট্টগ্রাম লাইনে চলে, পরে আসে উত্তরাঞ্চলেও।
আমার দাদাবাড়ির দক্ষিণ দিক দিয়ে পূবে-পশ্চিমে চলে গেছে একটি প্রশস্ত ডিস্ট্রিক্ট বোর্ডের রাস্তা। সেই রাস্তাটি দিয়ে মহিশষখোঁচা ইউনিয়ন ও গোবর্ধন অতিক্রম করে তিস্তা নদী নৌকায় পার হয়ে হারাগাছ দিয়ে রংপুর শহরে যাওয়া যেত। এখন অন্য দিক দিয়ে ভালো পাকা রাস্তা হয়ে যাবার কারণে সেই রাস্তাটি আর কেউ তেমন ব্যবহার করে না। প্রতিটি ট্রেন যাওয়া আসার প্রায় আধ ঘণ্টা পরে সেই ডিস্ট্রিক্ট বোর্ডের রাস্তাটি দিয়ে ট্রেন থেকে নেমে আসা যাত্রীগণ জোর গলায় আলাপ করতে করতে পশ্চিম দিকে চলে যেত। রাতের বেলায় আমি বিছানায় শুয়ে তাদের সেই আলাপচারিতা শুনতে পেতাম। রাত দশটার আর ভোর রাতের ট্রেনের যাত্রীরা অনেক সময় গান গাইতে গাইতে হেঁটে যেতেন। কথিত আছে, গাছ-গাছালির ভেতর দিয়ে যাবার সময় অনেক মানুষ ভয়ে গান ধরতেন। আমাদের বাড়ির অদূরে পূর্বদিকে ছিল একটি অতি প্রাচীন বটগাছ। সেই গাছের নিচে ছিল একটি শ্মশানঘাট। সুনিবিড় গাছপালায় ঢাকা অন্ধকারাচ্ছন্ন ঐ এলাকাটা অতিক্রম করার সময় দিনের বেলায়ও গা ছমছম করতো।
ছোটবেলায় ট্রেনের যাওয়া আসার শব্দ শুনলে আমি দৌড়ে গিয়ে বিলের দক্ষিণ পাশে দাঁড়াতাম। বিস্তীর্ণ জলরাশির ওপারে পিলপিল করে চলে যাওয়া ট্রেনের দিকে তাকিয়ে থাকতাম। ট্রেনের হ্যান্ডেল ধরে ঝুলে থাকা যাত্রীদেরকে দেখে মনে অনেক ভাবনার উদয় হতো। রাত আটটার দিকে সকালে পশ্চিমে যাওয়া একটি ট্রেন পূবের পথে ফিরে আসতো। শব্দ শুনতে পেলে সেটাকেও দেখার জন্য অন্ধকার রাতে চুপিচুপি বিলের প্রান্তে গিয়ে দাঁড়াতাম। রাত হলে ট্রেনের কামরাগুলোতে বাতি জ্বলতো। দূর থেকে তখন কামরাগুলোকে ছোট ছোট খেলনা গাড়ির মত মনে হতো। ম্যাচবক্সের মত চলমান সেই আলোকোজ্জ্বল খেলনাগুলোকে দেখে মনে প্রভূত আনন্দ পেতাম। ট্রেন চলে যাবার পর আবার আঁধার হাতড়িয়ে জোনাকি দেখতে দেখতে বাড়ির উঠোনে ফিরে আসতাম।
সে সময়ে রেলওয়ে স্টেশন থেকে নিজ নিজ গৃহে যাবার উদ্দেশ্যে পুরুষদের জন্য একমাত্র বাহন ছিল বাইসাইকেল, অথবা পদব্রজে গমন। কদাচিৎ দুই একজন ধনী লোককে দেখা যেত গ্রামের রাস্তায় ধুলো উড়িয়ে মটর সাইকেল চালিয়ে যেতে। ওরা ছিল শহর থেকে আসা আগন্তুক, ওরা গ্রামে থাকতো না। অবস্থাপন্ন ও সম্ভ্রান্ত পরিবারের মহিলাদের জন্য বাহন ছিল গরু অথবা মহিষের গাড়ি। সেসব গাড়ির ছই এর সম্মুখ ও পেছনভাগ শাড়ি অথবা চাদর দিয়ে ঢাকা থাকতো, যেন বাহিরের কেউ ভেতরের যাত্রীদেরকে দেখতে না পায়। মহিলাদের গাড়িতে শিশুরাও স্থান পেত। কোন মহিলা যখন “নাইওর” শেষ করে শশুড়বাড়ি ফেরত যেত, প্রায়শঃ তারা করুণ সুরে বিলাপ করতে করতে যেত। তাদের সেই বিলাপের সুর আমাকে প্রবলভাবে নাড়া দিয়ে যেত।
আজ সকালে হাঁটার পথে কিছুটা পথ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে’র নিচ দিয়ে হাঁটছিলাম। রাস্তার পাশ দিয়ে চলে গেছে কমলাপুর-বিমানবন্দর রেলপথ। হঠাৎ একটি ট্রেন বিমানবন্দরের দিক থেকে এসে দ্রুতবেগে কমলাপুরের দিকে চলে গেল। আমি ট্রেনের শেষ বগিটা না যাওয়া পর্যন্ত তাকিয়ে থাকলাম। দুই একটা দুরন্ত বালক ট্রেনের খোলা ছাদে দাঁড়িয়ে নৃত্যের ভঙ্গিমা করছিল। নিচে পড়ে যাবার কোন ভয় ওদের মনে ছিল না। বয়সটাই ওদেরকে সে (দুঃ)সাহস যুগিয়েছে। ভয়কে জয় করে ওরা উল্লাসে মেতে ওঠে। আমি পুনরায় হাঁটা শুরু করলাম। সামান্য পথ হাঁটতেই আবার একটা ট্রেনের ভেঁপু শুনতে পেলাম। এবারে দেখতে পেলাম, অপরদিক থেকে একটি ট্রেন বিমানবন্দরের দিকে দ্রুতবেগে ধাবমান। একটি ভিডিওচিত্র ধারণ করবো বলে পকেট থেকে সেলফোনটা বের করতে করতে সেটাও ফ্রেমের বাইরে চলে গেল। তবে আমি জানি সকালের এই সময়টাতে ঢাকা থেকে বহির্গামী এবং ঢাকার বাইরে থেকে অন্তঃমুখী বহু ট্রেন ৫/১০ মিনিট পরপর যাওয়া আসা করতেই থাকে। তাই আমি ফুটপাথ ছেড়ে একটু ভেতরের দিকে সুবিধামত জায়গায় সেলফোন ক্যামেরাটি হাতে রেডী রেখে বসে পড়লাম। ঠিকই, পাঁচ মিনিটের মাথায় একটি নয়, দু’দিক থেকে পরপর দু’টি ট্রেন এসে একে অপরকে পাশ কাটিয়ে ভেঁপু বাজাতে বাজাতে নিজ নিজ গন্তব্যের দিকে চলে গেল। আমি সেই বিরল দৃশ্যটির একটি ভিডিওচিত্র ধারণ করে রাখলাম।
আমাদের এখানে যারা নিয়মিত হাঁটাহাটি করেন, তাদের মধ্যে আমার কিছু পরিচিত মুখ খেয়াল করেছেন যে আমি চলন্ত ট্রেন যেতে দেখলে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখি, ট্রেনের ছবি তুলি। আজ সকালে তেমন একজন পরিচিত মুখ আমাকে দেখে নিজেও থমকে দাঁড়িয়ে গেলেন। ট্রেনটি চলে যাবার পর তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, আমি কী দেখি এবং কিসের ছবি তুলি। গত পরশুদিনও একজন জ্যেষ্ঠ কলীগ এবং বড়ভাই একই প্রশ্ন করেছিলেন। উভয়ের কাছে আমার সংক্ষিপ্ত উত্তর ছিল, ছোটবেলা থেকেই আমার চলন্ত ট্রেন দেখতে ভালো লাগতো, এখনও লাগে। তাই আমি এখনও চলমান ট্রেন যেতে দেখলে একটু তাকিয়ে দেখি, সম্ভব হলে ছবিও তুলি। তাদেরকে আমি কি করে বুঝাই, একটি চলন্ত ট্রেনের দৃশ্য অথবা শব্দ আমাকে কী দিয়ে যায়, অথবা আমার কাছ থেকে কী নিয়ে যায়!
গতির পিছু ধাওয়া করার সাধ্য আমার নেই।
মনটা পিছু নেয়, তাই গতিময় কিছু দেখলেই!
পুনরায় হাঁটা শুরু করলাম। মাত্র পঞ্চাশ সেকেন্ডের একটি চলমান দৃশ্য মনের পর্দায় নানা রকমের ফ্ল্যাশব্যাক প্রক্ষেপণ করে চললো। সেসব দেখতে দেখতে বাসায় ফিরে প্রাতঃরাশ শেষে ভাবলাম, লিখেই ফেলি না কেন সেসব ফ্ল্যাশব্যাকের কথাগুলো!
উপরের প্রথম পাঁচটি অনুচ্ছেদে সেসব কথাই বলে ফেললাম।
জীবন এগিয়ে যায়,
স্মৃতি ছুটে চলে পিছে।
মানুষ ফিরে ফিরে চায়,
ফেরার চেষ্টায় মিছে।
রেল ইঞ্জিনের ধোঁয়া
ধায় না সম্মুখপানে,
পেছনেই তার নোয়া
ইঞ্জিন ধায় সামনে।
ঢাকা
২০ কার্ত্তিক ১৪৩২
০৫ নভেম্বর ২০২৫
শব্দ সংখ্যাঃ ১০৩৫
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নিচে ফুটপাথ ধরে হাঁটছিলাম।
০৫ নভেম্বর ২০২৫, সকাল ০৬-৪৩।
রেললাইনের অপর পার্শ্বে Radisson হোটেলের শীর্ষ অংশ দেখা যাচ্ছে।
০৫ নভেম্বর ২০২৫, সকাল ০৬-৫০
চলন্ত দুটি ট্রেনের ভিডিও ক্লিপটা আপলোড করতে পারলাম না বলে দুঃখিত; কারণ কিভাবে তা আপলোড করতে হয়, সে জ্ঞানটুকু আমার নেই।
১৭ ই নভেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৫৬
খায়রুল আহসান বলেছেন: পোস্টে প্রথম মন্তব্য এবং দ্বিতীয় 'লাইক' এর জন্য ধন্যবাদ।
আমার যেহেতু নানাবাড়ি ও দাদাবাড়ি দুটোই মোটামুটি কাছাকাছি ছিল (১০/১২ কি.মি. এর মধ্যে), সেহেতু বার্ষিক পরীক্ষার পর আমাদের উভয় বাড়িতেই যাওয়া হতো এবং এক মাসের ছুটিটা দুটো বাড়িতেই ভাগাভাগি করে কাটাতে হতো। আর আমাদের এলাকায় সে সময়ে সড়ক পথে যাতায়াতের সুবিধা তেমন ভালো ছিল না বিধায় ট্রেনেই সকল যাতায়াত সম্পন্ন করা হতো। সেই কারণে ছোটবেলা থেকেই আমার ট্রেন জার্নির প্রতি একটা দূুর্বলতা গড়ে উঠেছে।
"সামুতে সরাসরি ভিডিও আপলোড করা যায় না। আপনাকে আগে একটা ইউটিউব চ্যানেল খুলতে হবে" - ধন্যবাদ, এ তথ্যটার জন্য। অনেক আগে একটা ইউটিউব চ্যানেল খুলেছিলাম। দেখি সেটা খুঁজে পাই কিনা, এবং পাস ওয়ার্ড ইত্যাদি বের করতে পারি কিনা। পারলে ভিডিও ক্লিপ আপলোড করবো।
২|
১৭ ই নভেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:১০
ভুয়া মফিজ বলেছেন: আপনার বাল্যকালের মাছধরার যে চিত্র তুলে ধরলেন তাতে আমার মনে একটা প্রশ্নের উদয় হলো। সেই সময়ে আপনাদের এলাকায় মাছধরা ভুতদের উৎপাত কেমন ছিল? বর্তমানের আর্বানাইজেশানের যুগে নির্ভেজাল মাছের অভাব, বাসস্থানের অভাবে তো এরা মোটামুটি প্রায় এক্সটিংট জাতিতে পরিণত হয়েছে। তবে ব্লগ বা অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়াতে কিছু ভুতের উপদ্রব আছে। মাছখেকো ভুতেরা জেনেটিক্যাল মিউটেশানের মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়া ভুতে রুপান্তরিত হলো কিনা, কে জানে!!!!
ট্রেন নিয়ে আমার বলার মতো তেমন কোন স্মৃতি নাই। ঢাকা থেকে নানাবাড়ি বা দাদাবাড়ি যেতে আমাদের বাহন ছিল জলযান। ছোটবেলাকার ট্রেন নিয়ে আপনার বিস্তারিত বর্ণনা চমৎকার লাগলো। অনেক খুটিনাটি বিষয় তুলে ধরেছেন।
১৭ ই নভেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১১
খায়রুল আহসান বলেছেন: মাছধরা ভুতদের উৎপাত তো ছিলই। আর আজকাল সোশ্যাল মিডিয়াতে যা দেখছি, তাতে মাছখেকো ভুতদের জেনেটিক্যাল মিউটেশানের মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়া ভুতে রুপান্তরিত হবার সম্ভাবনাটাকেও উড়িয়ে দেয়া যায় না।
অনেক ধন্যবাদ, পোস্টটা পড়ার জন্য এবং পড়ে নিজের কিছু ভাবনার কথাও শেয়ার করার জন্য। পোস্টের প্রশংসায় অনুপ্রাণিত হ'লাম।
৩|
১৭ ই নভেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪১
রাজীব নুর বলেছেন: এরপর থেকে হাটতে বের হলে আমাকে সাথে নিবেন।
দেখি আপনার সাথে হেটে বেড়াতে কেমন লাগে।
১৭ ই নভেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:১৩
খায়রুল আহসান বলেছেন: আমি যখন হাঁটতে বের হই, তখন তো সম্ভবতঃ আপনি ঘুমিয়ে থাকেন।
৪|
১৭ ই নভেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৪
অরণি বলেছেন: চমৎকার স্মৃতিরোমন্থন।
১৭ ই নভেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:০৬
খায়রুল আহসান বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।
৫|
১৭ ই নভেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫
কাজী আবু ইউসুফ (রিফাত) বলেছেন: সময়ের তারতম্যের কারণে যে শব্দেরও হেরফের হয়--এইরকম আনুভূতি এখন আর কেউ অনুভব করে না; মাছ ধরার বিষয়টা কল্পনায় এঁকে নিলাম! যদিও আমার এলাকায় বিল নেই! তবে বর্ষাকালে ধানের জমিতে জমা/প্রবাহমান হাঁটু পানিতে অনেক মাছ ধরেছি।
---স্মৃতি রোমন্থনে --আমাদেরকেও নাড়িয়ে দিলেন- অশেষ ধন্যবাদ।
১৮ ই নভেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:১২
খায়রুল আহসান বলেছেন: শুধু দূর থেকে ট্রেন দেখার সময় নয়, চলন্ত ট্রেনে বসে কোথাও যাবার সময়ও খেয়াল করবেন, ট্রেন যখন বিস্তীর্ণ খোলা মাঠের উপর দিয়ে চলে আর যখন কোন ঝোপঝাড় বা গাছপালা অতিক্রম করে, তখন তার চলার শব্দেও তারতম্য ঘটে।
পোস্টটা মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন, শুভকামনা...।
৬|
১৭ ই নভেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৪
শায়মা বলেছেন: ভাইয়া এই রেলগেটে কিন্তু ভূত আছে শুনেছি। অনেক মানুষ কাটা পড়েছে এখানে। এখন তো অনেক ভালো আগের দিনে অনেকেই একা যেতে ভয় পেত।
১৮ ই নভেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫১
খায়রুল আহসান বলেছেন: "এই রেলগেটে কিন্তু ভূত আছে শুনেছি" - এ ব্যাপারে সাড়ে চুয়াত্তর যদি কোনদিন এ পোস্টে আসেন, তবে হয়তো একটা বিশেষজ্ঞ মতামত পাওয়া যেতেও পারে।
তবে তিনি এখন ব্লগে এতটাই অনিয়মিত যে সে সম্ভাবনাটা খুব কমই মনে হয়। তবে শোনা কথার কথাই যদি বলেন, আপনার এ শোনা কথাটা কিন্তু আমিও শুনেছি।
"অনেক মানুষ কাটা পড়েছে এখানে। এখন তো অনেক ভালো আগের দিনে অনেকেই একা যেতে ভয় পেত" - আমি এ এলাকাটায় বাস করছি প্রায় ১৫/১৬ বছর যাবত। প্রথম ৮/১০ বছর দু'প্রান্তের রেলগেটে নিয়মিত দু'জন ভিখারিণীকে দেখতে পেতাম। তাদের একজন ছিলেন কিশোরী, অপরজন আনুমানিক চল্লিশোর্ধ্ব বয়স্কা নারী। কিশোরীটির হাঁটুর ওপর থেকে একটা পা কাটা ছিল, বয়স্কা নারীর একদিকের হাত আর অপর দিকের পা। তারা উভয়েই এই এলাকায় ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে তাদের অঙ্গ হারিয়েছিলেন। কিশোরীটি এখন বিবাহিতা, একাধিক সন্তানের জননী। সে কালে ভদ্রে মাঝে মাঝে জুম্মার দিনে এখনও উদয় হয়, দেখা হলে দু'চারটে কথাও হয়। কিন্তু সেই বয়স্কা নারীকে ৫/৭ বছর ধরে আর দেখা যায় না। জানিনা, তিনি আদৌ বেঁচে আছেন কিনা।
মন্তব্য ও প্লাসের জন্য ধন্যবাদ জানবেন।
৭|
১৭ ই নভেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৪২
শেরজা তপন বলেছেন: দারুন স্মৃতিকথা! ট্রেন ভ্রমনের যে কত স্মৃতি আমার। ভোরবেলায় ট্রেন শব্দ এভাবে কত শুনেছি-ট্রেন আসছে কিনা সেটা আমরা ট্রেন লাইন পেরুনোর আগে লাইনে কান পেতে শুনে নিতাম। ভাটিয়াপাড়া, পোড়াদহ , যশোহর, খুলনা, পাকশী, ঈশ্বরদী, রাজশাহী চাপাই হয়ে আমনুরা এতদস্থানে ভ্রমনের স্মৃতি ভাস্বর হয়ে আছে।
এবার আমার ছেলে মেয়েকে নিয়ে ট্রেনে কক্সবাজারে যাব। ছেলে বাইরে ট্রেন ভ্রমন করেছে দেশে করেনি আর মেয়ের প্রথম ট্রেন ভ্রমন। সে খুব এক্সাইটেড!
১৮ ই নভেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:০২
খায়রুল আহসান বলেছেন: "ট্রেন আসছে কিনা সেটা আমরা ট্রেন লাইন পেরুনোর আগে লাইনে কান পেতে শুনে নিতাম" - এটা আমরাও করতাম। আমার অবশ্য ব্রডগেজ লাইনে ট্রেন ভ্রমণের অভিজ্ঞতা হয়েছে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের পর। তার আগে পর্যন্ত নিয়মিতভাবে ঢাকা-রংপুর, ঢাকা-লালমনিরহাট, আদিতমারি-রংপুর, আদিতমারি-ঢাকা মিটারগেজ লাইনে যাতায়াত হতো।
আশাকরি, ছেলে মেয়েকে নিয়ে ট্রেনে কক্সবাজারের ট্রিপ থেকে ফিরে আসার পর এ নিয়ে ব্লগে একটি পোস্ট লিখবেন। আমি গতবছর দলে বলে গিয়েছিলাম।
৮|
১৭ ই নভেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:২১
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
- আর বয়স তখন সম্ভবতো ৮ বছর। বাবা মার সাথে গিয়েছিলাম চট্টোগ্রাম। বায়েজিদ বোস্তামীর মাজার দেখে সন্ধ্যার পরে গিয়েছিলাম শেখ ফরিদ চশমা মাজার দেখতে। সেখানেই প্রথম অন্ধকার ফুড়ে ভয়াবহ হণ বাজিয়ে কান আর আত্মা নাড়িয়ে দিয়ে এটি ট্রন ছুটে যায়। এতো কাছ থেকে সেটাই প্রথম আমার ট্রেন দেখা।
১৮ ই নভেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩৩
খায়রুল আহসান বলেছেন: বাহ, স্মৃতির আর্কাইভ থেকে ৮ বছর বয়সের একটি স্মৃতি তুলে এনে আমাদের সাথে শেয়ার করলেন, এজন্য আপনাকে ধন্যবাদ। +
৯|
১৮ ই নভেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:২৮
রাজীব নুর বলেছেন: পোষ্টে আবার এলাম। কে কি মন্তব্য করেছেন, সেটা জানতে।
১৯ শে নভেম্বর, ২০২৫ ভোর ৬:২৮
খায়রুল আহসান বলেছেন: ওকে।
১০|
১৯ শে নভেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২১
জ্যাক স্মিথ বলেছেন: ছোট বেলার স্মৃতি দারুণভাবে ফুঁটিয়ে তুলেছেন, শৈশবের স্মৃতি কার না ভালো লাগে।
আমি সন্ধার একটু আগে হাঁটতে বের হই।
তিন দিন আগে আমি একটি চলন্ত ট্রেনের সাথে সেলফি তুলেছি, আমি যেখানেই যাই প্রচুর ছবি তুলি কিন্তু ব্লগে কখনো আপলোড করা হয়নি।
২৬ শে নভেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৩৮
খায়রুল আহসান বলেছেন: মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ। প্রীত ও প্রাণিত হ'লাম।
সম্ভব হলে চলন্ত ট্রেনের সাথে তোলা সেলফিটা এখানে পোস্ট দিয়েন।
১১|
২৬ শে নভেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:২৯
মোস্তফা সোহেল বলেছেন: আপনার স্মৃতিচারন গুলো পড়তে খুবই ভাল লাগে।
আমারও চলন্ত ট্রেন দেখতে অনেক ভাল লাগে।
২৬ শে নভেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩০
খায়রুল আহসান বলেছেন: এই স্মৃতিচারণমূলক পোস্টটি পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ। মন্তব্যে প্রীত ও প্রাণিত।
১২|
২৮ শে নভেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫২
গেঁয়ো ভূত বলেছেন: আপনার স্মৃতিচারণ খানিকটা মন্ত্রমুগ্ধের মতোই পড়লাম। আজ থেকে ২৬-২৭ বছর আগে লালমনিরহাটের উপজেলাগুলি ভ্রমণের সুযোগ হয়েছিল, আপনার বর্ণনায় দৃশ্যগুলো আবার মানসপটে ভেসে এলো।
ভাল থাকবেন।
২৯ শে নভেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪২
খায়রুল আহসান বলেছেন: "আপনার স্মৃতিচারণ খানিকটা মন্ত্রমুগ্ধের মতোই পড়লাম" - অনেক ধন্যবাদ, কিছুটা দেরিতে হলেও এ পোস্টে এসে মন্তব্য রেখে যাবার জন্য।
"আজ থেকে ২৬-২৭ বছর আগে লালমনিরহাটের উপজেলাগুলি ভ্রমণের সুযোগ হয়েছিল" - সেটা কি কর্তব্য পালন উপলক্ষ্যে, নাকি বেড়ানোর উদ্দেশ্যে গিয়ে?
১৩|
৩০ শে নভেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৯
ডঃ এম এ আলী বলেছেন:
স্মৃতি চারণমুলক লেখাটি পুর্বেই এক নজর দেখে গিয়েছিলাম । ঘুম কাতর চোখে মন্তব্য লেখা একটু কঠিন মনে
হ ওয়ায় সে সময় মন্তব্য না লিখে পরে আমার মনোভাব নিয়ে চলে গিয়েছিলাম ।
এখন এসে মনযোগ দিয়ে লেখাটি পড়লাম ।
একরাস মুগ্ধতা নিয়ে লেখাটি পাঠে মনে হল এ যেন ভোরের নরম আলোয় ভাসমান এক দীর্ঘশ্বাস, যেখানে
লোহার চাকার শব্দ আর স্মৃতির অনুরণন একে অপরের সাথে জড়িয়ে একই লাইনে ছুটে চলে। পড়তে পড়তে
মনে হল আপনি কেবল একটি রেলপথের গল্পই বলছেন না, আপনি সময়ের উপর এক সেতু নির্মাণ করছেন;
যেটার এক প্রান্তে বিন্যাগাড়ির বিলের জলজ শৈশব, স্টীম ইঞ্জিনের কুউউউউ করে ডাকা কণ্ঠ, আরেক প্রান্তে
কোলাহলমুখর আধুনিক ঢাকার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে।
এই বর্ণনার সৌন্দর্য তার নিঁখুত নস্টালজিয়ায়। শব্দের ভিন্নতা দিনে একরকম, রাতে আরেকরকম, শীতে শুকনো
মাঠ আর বর্ষায় ভরা বিল, ফজরের আগমনী হুইসেলের অন্যরকম সুর,এসব খুঁটিনাটি আমাকেও নিজের
ব্যক্তিগত অতীতে ফিরিয়ে দেয়। আমিও পড়তে পড়তে একবার থমকে যাই, যেন আমিই সেই বিলের ধারে
দাঁড়িয়ে আলোকোজ্জ্বল ম্যাচবক্সের ট্রেনটাকে দেখতে দেখতে ফিরছি আঁধার হাতড়ে জোনাকির সাথে।
একইসাথে এই লেখা এক গভীর সচেতনতার দলিল। বিলুপ্ত বিল, নিশ্চুপ হয়ে যাওয়া শিকড়, অব্যবহৃত পথ সবই
জানিয়ে দেয় প্রকৃতি ও মানুষের টানাপোড়েনের ভয়াবহ সত্য। আপনি অভিযোগ করেন না, কিন্তু প্রতিটি লাইনের
ফাঁকে আমরা শুনতে পাই এক নিঃশব্দ আক্ষেপ,আমরা যত এগিয়েছি, ততই পিছিয়ে ফেলেছি বহু অমূল্য দৃশ্য,
শব্দ ও অনুভূতি।
শেষের কবিতাময় অংশটি মনের ভেতর এক লিরিক্যাল দোল তোলে,ট্রেনের ধোঁয়া যেমন পেছনে ভাসে, জীবনও
তেমন সামনে ছোটে, আর স্মৃতি ধোঁয়ার মতোই থেকে যায় পিছুতে, ছোঁয়া যায় না কিন্তু চোখ বন্ধ করলেই দেখা দেয়।
সব মিলিয়ে, এই লেখাটি রেলগাড়ির মতই চলে যায় দ্রুত, কিন্তু তার কম্পন আমাদের মনে থেকে যায় বহুক্ষণ।
এটি একাধারে গল্প, অনুভব, ইতিহাস ও দর্শন; এবং পাঠক হিসেবে বলতে দ্বিধা নেই এই ট্রেনের শব্দ শুধু
আপনার কাছ থেকে কিছু নিয়ে যায় না, পাঠক হিসাবে আমাদেরকেও কিছু দিয়ে যায়।
ধন্যবাদ এমন একটি সুন্দর যাত্রার জন্য, যেখানে প্ল্যাটফর্ম নেই, তবুও মন থামে, তাকায়, এবং পিছু নেয়।
শুভ কামনা রইল
©somewhere in net ltd.
১|
১৭ ই নভেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫০
অপু তানভীর বলেছেন: আপনার স্মৃতিকথা পড়ে নিজের ছোট বেলার কথা মনে পড়ল। পরীক্ষা শেষ হলেই প্রতিবারই নানা বাড়ি যাওয়া হত আমাদের। যাওয়া হত ট্রেনে করে। ট্রেনে যে জীবনে কত উঠেছি তার কোন ঠিক নেই। এখন ছুটিতে যাওয়ার সময়েও এই ট্রেনে করেই যাওয়া হয় সব সময়। চলতি পথে প্রায়ই রেললাইনে আটকা পড়তে হয় ট্রেন যাওয়ার কারণে।
সামুতে সরাসরি ভিডিও আপলোড করা যায় না। আপনাকে আগে একটা ইউটিউব চ্যানেল খুলতে হবে। সেখানে ভিডিও আপলোড দিয়ে তারপর এখানে ভিডিও লিংক যোগ করতে হবে। ছবি আপলোডের পাশেই পাবেন ইউটিউব লিংক সংযোগের বাটন।