| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ডঃ এম এ আলী
সাধারণ পাঠক ও লেখক
জীবন ধারণের যাবতীয় উত্তম উপাদানসহ চাষাবাদ মানবজীবনের অপরিহার্য অংশ। চাষাবাদ পৃথিবীর প্রাচীনতম পেশা। অনেক আগে থেকেই কৃষিকাজ বা চাষাবাদের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক। ইসলাম এই পেশাকে মর্যাদার চোখে দেখেছে। পৃথিবীর প্রথম মানব আদম (আ.) সম্পর্কে হাদিস শরিফে এসেছে, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আমি তোমাদের আদম (আ.) সম্পর্কে বলব। তিনি কৃষিকাজও করতেন।’ (মুসতাদরাক হাকেম, হাদিস : ৪১৬৫)
অসংখ নবীর পিতা হজরত ইবরাহিম (আ.)। তার সম্পর্কে মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আমি তোমাদের ইবরাহিম (আ.) সম্পর্কে বলব। তিনি চাষবাসও করতেন।’ (মুসতাদরাক হাকেম, হাদিস : ৪১৬৫)
প্রিয়নবী মোহাম্মদ (সা.) চাষাবাদকাজে সক্রিয়ভাবে সহায়তা করেছেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। “ইতিহাসিক সাহাবী জীবনী ও সিরাহ-সৌধে প্রচলিত একটি বর্ণনা মতে, সালমান আল-ফার্সি (রাঃ)কে তাঁর ইহুদি মালিক মুক্তি দিতে ৩০০ খেজুরগাছ লাগানোর শর্ত ধার্য করেছিলেন । প্রিয়নবী মুহাম্মদ (সা.) ও সাহাবীরা মিলিত হয়ে খেজুরগাছের চাড়াগুলো জোগাড় ও রোপণ করেন এবং নবী নিজে এতে সক্রিয় ভূমিকা নেন। ফলশ্রুতিতে সালমানকে মুক্ত করতে সহায়তা করা হয়। (উৎস: সিরাহ ও আধুনিক ঐতিহাসিক/জায়গা-বর্ণনা) Click This Link
আল্লামা সুরুখসি (রহ.) লিখেছেন, মহানবী (সা.) জারফ নামক স্থানে নীজহাতে খেজুর গাছ রোপন করেছেন। (আল-মাবসুত লিস সুরুখসি : ২/২৩)
আল কোরআনে চাষাবাদ
পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে চাষাবাদের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এক আয়াতে এসেছে, ‘তিনিই (আল্লাহ) আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন, অতঃপর তা দিয়ে আমি সব ধরনের উদ্ভিদ উৎপন্ন করি; তারপর তা থেকে সবুজ ফসল নির্গত করি, যা থেকে ঘন শস্যদানা উৎপাদন করি এবং খেজুর বৃক্ষের মাথা থেকে ঝুলন্ত কাঁদি বের করি আর আঙুরের বাগান সৃষ্টি করি এবং জয়তুন ও আনারও। এরা একে অন্যের সদৃশ ও বিসদৃশ। লক্ষ করো তার ফলের প্রতি, যখন তা ফলবান হয় এবং তার পরিপক্বতার প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করো। ইমানদারদের জন্য এগুলোতে অবশ্যই নিদর্শন আছে।’ (সুরা আনআম, আয়াত : ৯৯)।
শুষ্ক বীজ ও শুষ্ক আঁটির ভেতর থেকে শ্যামল ও সতেজ বৃক্ষ বের করে দেওয়া একমাত্র জগৎস্রষ্টারই কাজ। এর মধ্যে মানুষের চেষ্টা ও কর্মের প্রভাব নেই। আল্লাহর কুদরতে বীজ ও আঁটির ভেতর থেকে যে নাজুক অঙ্কুর গজিয়ে ওঠে, তার বেড়ে ওঠার পথ থেকে প্রতিবন্ধক ও ক্ষতিকর বস্তু সরিয়ে দেওয়াই কৃষকের মূল চেষ্টার বিষয়। লাঙল চষে মাটি নরম করা, সার দেওয়া, পানি দেওয়া এতটুকুই কৃষকের কাজ। আসল কাজ হচ্ছে বীজ ও আঁটি থেকে বৃক্ষের অঙ্কুরোদ্গম হওয়া, অতঃপর তাতে রংবেরঙের রকমারি পাতা গজানো এবং তা ফলে-ফুলে সুশোভিত হওয়া। এ ক্ষেত্রে মানবীয় কর্মের কোনো প্রভাব নেই। তাই অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তোমরা কি ওই বীজগুলো দেখো না, যা তোমরা মাটিতে ফেলে দাও? এগুলো থেকে তোমরা ফসল উৎপাদন করো, না আমি করি?’ (সুরা ওয়াকিয়া, আয়াত : ৬৩-৬৪)
কোরআনের অলৌকিকতা হলো, কোরআন চাষবাসের কথা বলছে অথচ সেখানে ঐশী চেতনা জাগ্রত করতে চেয়েছে। কোরআনের বক্তব্য দেখুন ‘মানুষ তার খাদ্যের প্রতি লক্ষ করুক। আমিই প্রচুর বারি বর্ষণ করি। পরে আমি ভূমি প্রকৃষ্টরূপে বিদারিত করি এবং আমি তাতে উৎপন্ন করি শস্য, আঙুর, শাকসবজি, জাইতুন, খেজুর, বহু বৃক্ষের বাগান, ফল ও গবাদি খাদ্য। এটা তোমাদের ও তোমাদের জীবজন্তুর ভোগের জন্য।’ (সুরা আবাসা, আয়াত : ২৪-৩২)
কোরআনের বিভিন্ন স্থানে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতির কিছু দৃশ্য মানুষের সামনে তুলে ধরা হয়েছে, যাতে এর বিচিত্র প্রকার, বর্ণ, গন্ধ ও সৌন্দর্য দেখে মানুষ পুলকিত হয়, অভিভূত হয়। যেন সবকিছুর উন্নতি, অগ্রগতি ও সক্রিয়তা দেখে মানুষ আল্লাহর কুদরতের কথা স্মরণ করে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনি তোমাদের জন্য তা (পানি) দিয়ে জন্মান শস্য, জাইতুন, খেজুরগাছ, আঙুর ও সব ধরনের ফল। অবশ্যই এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন।’ (সুরা নাহল, আয়াত : ১১)
চাষাবাদের উপযোগী করে মহান আল্লাহ এই জমিনকে বহু আগেই সাজিয়ে রেখেছেন। কোরআন বলছে, ‘তুমি ভূমিকে দেখবে শুষ্ক। পরে আমি তাতে বারি বর্ষণ করলে তা শস্যশ্যামল হয়ে আন্দোলিত ও স্ফীত হয় এবং তা উদ্গত করে সব ধরনের নয়নাভিরাম উদ্ভিদ।’ (সুরা হজ, আয়াত : ৫)
মৃতভূমিকে জীবিত করার জন্য মহান আল্লাহ সুদূর আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন। সেই পানি জমিনকে জীবিত করে তোলে। এই পুনর্জীবন পুনরুত্থানের প্রতীক। কোরআনের ভাষ্য দেখুন : ‘আকাশ থেকে আমি বর্ষণ করি কল্যাণকর বৃষ্টি। তা দিয়ে আমি সৃষ্টি করি বাগান ও পরিপক্ব শস্যরাজি ও সমুন্নত খেজুরগাছ, যার মধ্যে আছে গুচ্ছ গুচ্ছ খেজুর। (এগুলো) আমার বান্দাদের জীবিকাস্বরূপ। বৃষ্টি দিয়ে আমি সঞ্জীবিত করি মৃতভূমিকে। এভাবেই পুনরুত্থান ঘটবে।’ (সুরা কাফ, আয়াত : ৯-১১)
হাদিসে চাষাবাদ
মরুময় আরবে মহানবী (সা.) জন্মগ্রহণ করেছেন। তথাপি তার বহু বাণী রয়েছে কৃষিকাজের গুরুত্বের ওপর। তার এ হাদিসটি হয়তো অনেকেই জানেন, ‘যে মুসলমান কোনো বৃক্ষ রোপণ করে কিংবা বীজ বপন করে, তারপর তা থেকে কোনো পাখি, মানুষ বা চতুষ্পদ জন্তু ভক্ষণ করে, তাহলে এর বিনিময়ে তার জন্য একটি সদকার সওয়াব রয়েছে।’ (বোখারি শরিফ, হাদিস : ২১৩৭; মুসলিম শরিফ, হাদিস : ১৫৫৩)
এ হাদিসটি আরও স্পষ্ট করে অন্য জায়গায় বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি কোনো বৃক্ষ রোপণ করে, আল্লাহতায়ালা এর বিনিময়ে তাকে ওই বৃক্ষের ফলের সমপরিমাণ প্রতিদান দান করবেন।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২৩৫৬৭)
ইসলামি শরিয়তের মূলনীতি হলো, কেউ রাষ্ট্রীয় অনাবাদি জমি আবাদ করলে তার মালিক হয়ে যায়। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি এমন কোনো জমি আবাদ করে, যা কারও মালিকানায় ছিল না, তাহলে সে ওই জমির (মালিক হওয়ার) বেশি হকদার।’ (বোখারি, হাদিস : ২৩৩৫)
নিজে চাষাবাদ না করলে অন্যকে সুযোগ দেওয়া উচিত। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যার কাছে জমি আছে, সে যেন তা নিজে চাষ করে অথবা তার ভাইকে দিয়ে দেয়। (বোখারি, হাদিস : ২২১৬; মুসলিম, হাদিস : ১৫৩৬)
চাষাবাদ করতে হলে যেতে হবে প্রত্যন্ত অঞ্চলে। তাই মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা ভূমির খনিতে বা লুক্কায়িত অংশে রিজিক অন্বেষণ করো।’ (মুসনাদে আবি ইয়ালা, হাদিস : ৪৩৮৪)।
ইসলামে কৃষিকাজ ও চাষাবাদের প্রতি এতই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে যে, যুদ্ধের সময়ও যেন ক্ষেতখামার নষ্ট না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখতে বলা হয়েছে। আবু বকর (রা.) তার শাসনামলে সিরিয়ায় যখন সৈন্যবাহিনী পাঠান, তখন তিনি তাদের প্রতি এ নির্দেশ জারি করেন ‘তোমরা কিছুতেই কোনো ফলবান বৃক্ষ কাটবে না।’ (মুআত্তা ইমাম মালেক, হাদিস : ৯৬৫; তিরমিজি, হাদিস : ১৫৫২)
কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হলে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নজির স্থাপন করেছেন হজরত ওমর (রা.)।
ইমাম আবু ইউসুফ (রা.) তার প্রখ্যাত ‘কিতাবুল খারাজ’ নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, ‘এক কৃষক ওমর (রা.)-এর কাছে অভিযোগ করেছেন, হে আমিরুল মুমিনিন, আমি চাষাবাদ করেছি। সিরিয়াগামী মুসলিম সৈন্য দল এই ক্ষেতের পাশ দিয়ে অতিক্রম করে। আর (অতিক্রমের মাধ্যমে) তারা ওই ক্ষেত ধ্বংস করে দেয়। এ কথা শুনে ওমর (রা.) ক্ষতিপূরণস্বরূপ রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে ১০ হাজার দিরহাম দিয়ে দেন।’ (কিতাবুল খারাজ, পৃষ্ঠা : ১২৯
ব্যবসা বাণিজ্য ও প্রযুক্তিতে মানুষ যতই উৎকর্ষ করুক না কেন, চাষাবাদ ছেড়ে দিলে জীবনযাত্রা সংকুচিত হয়ে যাবে। উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠতম ইসলামী দার্শনিক শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভি (রহ.) এ বিষয়ে লিখেছেন, ‘দেশের বেশির ভাগ নাগরিক যদি বিভিন্ন পেশা ও দেশীয় রাজনীতিতে জড়িয়ে যায় এবং তারা যদি পশু পালন ও চাষাবাদে কম অংশগ্রহণ করে, তাহলে জাগতিক জীবনে ওই জাতির অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়বে।’ (হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা : ২/১০৫)।
পবিত্র কোরআন ও হাদিসের উল্লিখিত প্রমাণাদির আলোকে ইসলামি আইন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, প্রতিটি দেশের মানুষের নির্দিষ্ট অংশের জন্য চাষাবাদ করা প্রয়োজন।
এ বিষয়ে ফতোয়া হলো, ‘যৌথ সামাজিক( Collective Social ) বা ব্যক্তিগতভাবে চাষাবাদ করা ফরজে কিফায়া। কেননা এতে মানুষ ও প্রাণীর (জীবনধারণের) প্রয়োজন আছে।’ (আল-ফিকহ আলাল মাজাহিবিল আরবাআ : ৩/১২)
এখন কোরানের আয়াতের অনুপ্রেরণা ও প্রয়োগিক গবেষনা সম্পর্কে কিছু প্রাসঙ্গিক আলোচনার প্রয়াস নেয়া হল ।
প্রাসঙ্গিক বিবেচনায় প্রয়োগভিত্তিক গবেষণার ধারণা, উদ্দেশ্য, পদ্ধতি এবং এর কুরআনিক ভিত্তি, তার সঙ্গে সামাজিক পরিবর্তন অর্জনে এই ধরনের গবেষণার ভূমিকা আলোচনায় স্থান দেয়া হয়েছে। পরিণাম বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, বিশ্ব জনসংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে চাষাবাদের জমি কমে যাচ্ছে। এর ফলে খাদ্যের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে, যা সামাজিক বাস্তুতন্ত্র, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং সামাজিক পরিবর্তনের ওপর গভীর প্রভাব ফেলছে এবং এটি একটি বড় সামাজিক, রাজনৈতিক ও রাস্ট্রিয় সমস্যার জন্ম দিচ্ছে। এমন সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় উন্নয়নমুলক কাজের জন্য প্রয়োগভিত্তিক গবেষণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উল্লেখ্য সাধারণ সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করতে প্রয়োগভিত্তিক গবেষণা ব্যবহৃত হয়। এখানে পরিস্কারভাবে উল্লেখ্য যে পবিত্র কোরান কোন বিজ্ঞান গ্রন্থ নয় , এটা নিদর্শন ও দিক সির্দেশনামুলক একটি ঐশী বাণী সমৃদ্ধ মহাগ্রন্থ । পর্যালোচনায় আরো দেখা যায় যে, পবিত্র কুরআনে সরাসরি ‘প্রয়োগভিত্তিক গবেষণা’ শব্দটি উল্লেখ না থাকলেও এর ভিতরে এই ধরনের গবেষণার ভিত্তি বিদ্যমান। কৃষি গবেষনা কর্মে কুরআনিক আয়াতে থাকা প্রেরণার প্রয়োগভিত্তিক ব্যবহার এবং কৃষিপণ্য বৃদ্ধি করে সামাজিক পরিবর্তন সাধনে তার প্রাসঙ্গিকতা ব্যাখ্যা করা যায়। উল্লেখ্য উন্নত দেশ যুক্তরাষ্ট্র সহ ,উন্নয়নশীল বাংলাদেশ এবং মালয়েশিয়ায় কৃষি খাতে প্রয়োগভিত্তিক গবেষণার মাধ্যমে কীভাবে কৃষিজ পণ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করা হয়েছে তার উদাহরণ টানা যেতে পারে।
এ ছাড়া মৌলিক, বৈজ্ঞানিক এবং প্রয়োগভিত্তিক গবেষণার প্রয়োগকে বহু-বিষয়ক দৃষ্টিভঙ্গিতে সংযোজন করে কীভাবে একটি আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানী দল বর্তমানে ধানকে C3 উদ্ভিদ থেকে C4 উদ্ভিদে রূপান্তর করার এক উচ্চাভিলাষী প্রকল্পে কাজ করেছে তা উল্লেখ করা যায়। এই গবেষণামুলক লেখাটি গ্রন্থাগারভিত্তিক উৎসসমূহ পর্যালোচনার ওপর ভিত্তি করে তৈরি। এই গবেশনামুলক লেখাটি লেখার সময় তিনটি পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে :পদ্ধতি তিনটি হল : আরোহ( inductive ) পদ্ধতি যেখানে নির্দিষ্ট উদাহরণ থেকে শুরু করে একটি সামগ্রিক সূত্রে পৌঁছানো হয়, গুণগত বিশ্লেষণ, এবং বিশ্লেষণমূলক পদ্ধতি।
এটি সকলেরই জানা কথা ( কিছু অবিশ্বাসী ব্যতিত) পবিত্র কুরআন একটি ঐশী বার্তা, যা শিক্ষাগত, আধ্যাত্মিক, প্রযুক্তিগত, অর্থনৈতিক, চিকিৎসাবিষয়ক, সম্পদ ব্যবস্থাপনা, রাজনৈতিক ও সামাজিক সব ধরনের উন্নয়নে মানুষকে উদ্দীপিত করে, যাতে সমস্যার সমাধান করা যায় এবং মানবজীবনের পরিস্থিতির উন্নতি সাধিত হয়। প্রকৃতপক্ষে প্রাকৃতিক পরিবেশব্যবস্থা, সামাজিক পরিবেশব্যবস্থা, সামাজিক ন্যায়বিচার ও সামাজিক পরিবর্তন এসবই পরস্পর গভীরভাবে সম্পর্কিত। খাদ্যাভাবও একটি সামাজিক সমস্যা, যা আরও নানা সামাজিক সংকট সৃষ্টি করে। পবিত্র কুরআন আমাদের সমস্যার সমাধান করতে এবং মানবিক অবস্থার উন্নতি ঘটাতে উদ্বুদ্ধ করে। সে কারণে গবেষকেরা বাস্তব জীবনের সমস্যার সমাধানে এর গুরুত্বকে তুলে ধরার প্রয়াস পান ( এটা বিশ্বাসী অবিশ্বাসী সকলের জন্যই প্রযোয্য)।
প্রয়োগমূলক গবেষণা (Applied Research) বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিগত অনুসন্ধানের মাধ্যমে এমন তথ্য তৈরি করে, যা কোনো তাৎক্ষণিক তো বটেই, দীর্ঘস্থায়ী সামাজিক সমস্যা সমাধানেও সহায়তা করে। সাধারণত সরকার, ব্যবসা বানিজ্য ও শিল্প প্রতিষ্ঠান, এবং স্থানীয় কিংবা অন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাসমুহ সামাজিক সমস্যাগুলো সম্পর্কে জানতে এবং সেই সমস্যাসমূহের সমাধানে প্রয়োজনীয় সেবা প্রদান করতে আগ্রহী হওয়ায়, প্রয়োগমূলক গবেষণা পরিচালনা বাস্তবায়ন অনেকটাই সহজ হয়ে থাকে ।
সামাজিক পরিবর্তনের ধারণা
সামাজিক পরিবর্তন বলতে একটি সমাজের সামাজিক কাঠামো বা শৃঙ্খলার পরিবর্তনকে বোঝায় যার মধ্যে রাস্ট্র পরিপালনা সঙক্রান্ত বিয়াবলীও অন্তর্ভুক্ত। অপরদিকে দ্রুত শিল্পায়ন কিংবা অবনয়ন, কর্মসংস্থানের হ্রাসবৃদ্ধি , দ্রুত নগরায়ণ কিংবা শ্রমশক্তির দেশান্তকরণ প্রবনতা কিংবা মানব বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের উঠানামা ( যেমনটি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ঘটে চলেছে বিবিধ উপায়ে নিরবধি) সমাজকে এসব ক্রমান্বয়িক পরিবর্তনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে নিজেকেও পরিবর্তিত হতে হয়। এর জন্য প্রয়োজন হয় যথাযথ শিক্ষা, আর্থ সামাজিক অবকাঠামো , সঠিক নীতিবোধ ও সামাজিক , ধর্মীয় ও রাজনৈতিক মুল্যবোধ ও শৃংখলা ।
সামাজিক পরিবর্তন হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে সমাজে কোনো না কোনো ধরনের পার্থক্য, সংশোধন, রূপান্তর বা প্রতিস্থাপন ঘটে। এই পরিবর্তনগুলো অনুভূত হয় মানুষের জীবনযাপন, চিন্তাভাবনা, মনোভাব, পারস্পরিক সম্পর্ক, সমাজের কাঠামো ও কার্যপ্রণালী এবং জীবনযাত্রার সামগ্রিক অবস্থার মধ্যে।
সময়ের সাথে সাথে সামাজিক মানদণ্ড, সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ বা আচরণগত ধরনগুলোতে যে কোনো বড় ধরনের পরিবর্তনকে সামাজিক পরিবর্তন বলা হয়। মানুষের পারস্পরিক সম্পর্ক এবং সেই সম্পর্ক যেসব সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে ঘটে তার গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনকেও সামাজিক পরিবর্তন হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
প্রয়োগমূলক গবেষণা, যা সামাজিক গবেষণারই একটি অংশ, এমন সমস্যার সমাধান দেয়, যা কল্যানমুখি সামাজিক পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করে। সমস্যাগুলোর সমাধান ব্যতীত আমরা কাঙ্ক্ষিত সামাজিক পরিবর্তন অর্জন করতে পারি না, এবং সেই সাথে জীবনযাত্রার মানও উন্নত করা সম্ভব হয় না।
পবিত্র কুরআনে প্রয়োগমূলক গবেষণার ভিত্তি
সৃষ্টির প্রতিটি অংশই এমন এক গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার বিষয়, যার মাধ্যমে মানুষের কল্যাণে পৃথিবীর সবকিছুকে আরও সার্থকভাবে কাজে লাগানো যায়। পৃথিবীতে যা কিছু রয়েছে, তা মূলত মানুষেরই মঙ্গলার্থে। তাই আল্লাহ্ তাআলা সমগ্র মহাবিশ্বের সৃষ্টির ওপর গবেষণা করতে আমাদের উৎসাহিত করেছেন। আল্লাহ্ তাআলা বলেন:
اَوَ لَمۡ یَنۡظُرُوۡا فِیۡ مَلَكُوۡتِ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ وَ مَا خَلَقَ اللّٰهُ مِنۡ شَیۡءٍ ۙ وَّ اَنۡ عَسٰۤی اَنۡ یَّكُوۡنَ قَدِ اقۡتَرَبَ اَجَلُهُمۡ ۚ فَبِاَیِّ حَدِیۡثٍۭ بَعۡدَهٗ یُؤۡمِنُوۡنَ ﴿۱۸۵﴾
“তারা কি আসমান-যমীনের রাজত্বে আর আল্লাহ যে সব বস্তু সৃষ্টি করেছেন তাতে কিছুই দেখে না? তারা কি চিন্তা করে না যে হয়ত তাদের জীবনের মেয়াদ নিকটেই এসে গেছে? এরপর তারা কোন বাণীর উপর ঈমান আনবে?” কোরআন, সূরা আ-‘আরাফ, আয়াত ১৮৫
আল্লাহ্ তাআলা আরও বলেন:
قُلِ انۡظُرُوۡا مَاذَا فِی السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ ؕ وَ مَا تُغۡنِی الۡاٰیٰتُ وَ النُّذُرُ عَنۡ قَوۡمٍ لَّا یُؤۡمِنُوۡنَ ﴿۱۰۱﴾
“বলুন, আসমান ও জমিনে কী আছে, তা পর্যবেক্ষণ করো। কিন্তু যারা ঈমান আনে না তাদের জন্য নিদর্শন ও সতর্কবার্তা কোনো কাজে আসে না।”সূরা ই ইউনুস, আয়াত ১০১।
এই আয়াতই মৌলিক, প্রয়োগমূলক, বৈজ্ঞানিক ও অন্যান্য সব ধরনের গবেষণার ভিত্তি।
আবু আল-লায়স আস-সামারকান্দি (৩৩৩–৩৭৩ হি.) উক্ত কুরআনি আয়াত যথা “বলুন, আসমানে কী আছে, তাকিয়ে দেখো”–এর ব্যাখ্যায় বলেছেন এর অর্থ হচ্ছে: আল্লাহ্ তাআলা তাঁর রাসূলকে আদেশ করছেন, যেন তিনি মানুষকে বলেন তোমরা সৃষ্টিকর্তার নিদর্শনসমূহের দিকে তাকাও; আকাশের দিকে তাকাও যেখানে রয়েছে সৌরজগৎ, সূর্য, চাঁদ ও তারকারাজি; এবং “পৃথিবীর দিকে তাকাও”যার মধ্যে রয়েছে পশুপাখি, পাহাড়, সমুদ্র, গাছপালা ও ফলমূল। এগুলো নিয়ে তোমরা চিন্তা ভাবনা করবে, অনুধাবন করবে এবং ঈমান আনবে যে এসব সৃষ্টির পিছনে অবশ্যই একজন মহান স্রষ্টা আছেন।
এরপর আল্লাহ্ তাআলা সেইসব মানুষের সম্পর্কে বলেন, যারা চিন্তাভাবনা করে না, বোঝে না এবং বিশ্বাসও করে না: “কিন্তু যারা ঈমান আনে না, তাদের জন্য নিদর্শন ও সতর্কবার্তা কোনো কাজে আসে না।”
অর্থাৎ, আকাশ পৃথিবীর অসংখ্য নিদর্শন এবং আল্লাহর রাসূলের সতর্কবার্তাগুলো থেকেও তারা উপকৃত হয় না, কারণ তারা বিশ্বাস করতে চায় না। আর “যারা ঈমান আনে না” বলতে বোঝানো হয়েছে যারা আল্লাহ্র প্রতি ঈমান আনতে চায় না এবং সঠিক প্রশ্নও করে না কিংবা অনুধাবনো করেনা ।
প্রখ্যাত ইসলামী লেখক ইমাদ উদ্দিন আবুল ফিদা ইসমাইল ইবন কাসীর (৭০১–৭৭৪ হি.) ব্যাখ্যা করেছেন যে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তাঁর বান্দাদের আদেশ দেন তারা যেন তাঁর নেয়ামতসমূহ এবং আকাশ ও পৃথিবীতে সৃষ্টি করা বিভিন্ন বিষয়ের ওপর চিন্তাভাবনা করে। আকাশমণ্ডলে যে সব দৃষ্টিনন্দন সৃষ্টি রয়েছে উজ্জ্বল চাঁদ, দিন ও রাত, এবং এদের পার্থক্যএসবই চিন্তাশীলদের জন্য শিক্ষণীয় নিদর্শন। একইভাবে আকাশের উচ্চতা ও বিস্তৃতি, আর আল্লাহ তায়ালার প্রেরিত বৃষ্টির মাধ্যমে মৃত পৃথিবীর পুনর্জাগরণ যার ফলে নানা ধরনের ফল, শস্য, উদ্ভিদের হাজারো প্রজাতি, অসংখ্য ফুলের জাত, বিচিত্র আকার-আকৃতির ও রঙের প্রাণী জন্মায় এবং মানুষ এদের থেকে উপকার পায় সবই মহান আল্লাহ ব্যতীত আর কোনো স্রষ্টা নেই এই সত্যের সাক্ষ্য বহন করে।
এ ছাড়াও পাহাড় ও তৃণভূমি, সাগরের বিস্ময়কর দৃশ্যাবলি, উত্তাল তরঙ্গ এসব কিছুর মধ্যেও রয়েছে ওই একমাত্র স্রষ্টার অস্তিত্বের সুস্পষ্ট প্রমাণ।
আকাশ ও পৃথিবীতে বিদ্যমান বিভিন্ন সম্পদ মৌলিক, প্রয়োগাধর্মী, বৈজ্ঞানিক এবং নানান ক্ষেত্রের গবেষণার উপকরণ। তাই এই আয়াত মানুষকে নির্দেশ দেয় তারা যেন আকাশ ও পৃথিবীতে থাকা সৃষ্টি ও সম্পদ নিয়ে চিন্তা ও গবেষণা করে, যাতে তারা বৈজ্ঞানিক তথ্য, লুকায়িত সত্য, বিভিন্ন বাস্তবতা উদ্ঘাটন করতে পারে এবং সমস্যার সমাধান খুঁজে পায়।
এই আয়াতগুলোতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা শুধুমাত্র উৎসাহই দেননি, বরং জোর দিয়েছেন মানুষ যেন আকাশ ও পৃথিবীতে থাকা সৃষ্টিজগত এবং অন্যান্য বিষয়ের ওপর অধ্যয়ন, গবেষণা, অনুসন্ধান, পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করে। আল্লাহ মানুষকে উৎসাহ দেন যেন তারা সম্পদসমূহ নিয়ে চিন্তা ও গবেষণা করে মহাবিশ্বের পরিবেশগত উপাদানগুলো সম্বন্ধে জ্ঞান অর্জন করে, আল্লাহর সৃষ্টির দক্ষতা উপলব্ধি করে, এবং আল্লাহ, মানুষ ও পরিবেষ্টিত সম্পদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে তোলে।
এখানে “নিদর্শন” শব্দটি দ্বারা বোঝানো হয়েছে সমস্ত সম্পদ ও সৃষ্টি। আর “সতর্কবাণী” শব্দটি মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেয় তারা যেন স্রষ্টার প্রতি ঈমান আনে, সম্পদের অপচয় ও অপব্যবহার পরিহার করে; নচেৎ তারা নানান সামাজিক ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে। এসব সতর্কতার পর মানুষকে আরও সতর্ক, সংযত, দায়িত্বশীল ও নৈতিক হতে হবে সম্পদের ব্যাপারে; আর গবেষকদের দায়িত্ব সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করা।
মানুষকে বারবার তাদের হৃদয় ও আত্মাকে পর্যালোচনা করতে হবে নিজেদের অবস্থার উন্নতি করতে এবং সমস্যার সমাধান করতে। আল্লাহ মানুষের অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজের ভেতরকার অবস্থা পরিবর্তন করে। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে-
اِنَّ اللّٰهَ لَا یُغَیِّرُ مَا بِقَوۡمٍ حَتّٰی یُغَیِّرُوۡا مَا بِاَنۡفُسِهِمۡ
“নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেরা নিজেদের অন্তর পরিবর্তন করে।”
সূরা আর-রাআদ , আয়াত ১১
এই বক্তব্যের ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় দিকই রয়েছে। অর্থাৎ, যতক্ষণ মানুষ পথভ্রষ্টতার দিক থেকে ফিরে না আসে, আল্লাহ তাদের থেকে তাঁর নেয়ামত প্রত্যাহার করেন না; একইভাবে যারা ইচ্ছাকৃতভাবে পাপ করে, তারা তওবা না করা পর্যন্ত কিংবা আল্লাহর অনুগ্রহ পাওয়ার যোগ্য না হওয়া পর্যন্ত আল্লাহ তাদের প্রতি তাঁর দান স্থগিত রাখেন।
এটি আল্লাহর বিধান, তথা ঐশী আইন যা ব্যক্তি ও সামষ্টিক উভয় জীবনেই কার্যকর। সভ্যতার বিকাশও মানুষের নৈতিক চরিত্র এবং তাদের অভ্যন্তরীণ পরিবর্তনের ওপর নির্ভরশীল।
মানুষ তার সামর্থ্যের বাইরে কোনো কিছুর জন্য দায়ী নয়, এবং সে বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাও করা হবে না। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন;
لَا یُكَلِّفُ اللّٰهُ نَفۡسًا اِلَّا وُسۡعَهَا ؕ لَهَا مَا كَسَبَتۡ وَ عَلَیۡهَا مَا اكۡتَسَبَتۡ ؕ
“আল্লাহ কোনো প্রাণীকে তার সহনক্ষমতার বাইরে দায়িত্ব দেন না; মানুষ যে সৎকর্ম করবে তার ফল সে পাবে, এবং যে অসৎকর্ম করবে তার দায়ও তার ওপরই বর্তাবে” সুরা বাকারা আয়াত ২৮৬।
ইবন আব্বাস (রাঃ) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন—আল্লাহ ঘোষণা করেছেন: মানুষের আত্মাকে এমন কোনো আনুগত্যের কাজে পরীক্ষা করা হয় না, যা তার সামর্থ্যের বাইরে। কারণ আত্মা শুধুমাত্র তার প্রাপ্য সৎকর্মের প্রতিদান পায়, আর ভুলে যাওয়া, ভুল করা ও বাধ্য হওয়া, এ সব ক্ষমার বিষয়; একইভাবে, যে অসৎকর্মের সে যোগ্য, কেবল সেইটুকুই তার বিরুদ্ধে লিপিবদ্ধ হয়, ভুল, বিস্মৃতি ও জবরদস্তি এতে গণ্য হয় না।
এই আয়াত প্রত্যেক মানুষকে উৎসাহ দেয় সে যেন আল্লাহর আনুগত্য করে, সব ধরনের মন্দ কাজ থেকে দূরে থাকে, এবং সৎ, আদর্শবান, পরিশ্রমী ও দায়িত্বশীল মানুষ হয়ে ওঠে।
একইভাবে, এই আয়াত বিজ্ঞানীদেরও অনুপ্রাণিত করে তাঁরা যেন তাঁদের বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষমতা, শক্তি, সম্পদ ও সময় সঠিকভাবে ব্যবহার করে নতুন প্রযুক্তি আবিষ্কার করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য রেখে যায়, সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করে, আত্মিক উন্নতি সাধন করে এবং সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনে।
প্রয়োগমূলক গবেষণায় কুরআনিক প্রেরণার প্রয়োগ এবং কৃষিজ পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে সামাজিক পরিবর্তন
উপরোক্ত কুরআনের আয়াতসমূহ নানা ধরনের গবেষণার ভিত্তি, যার মধ্যে প্রয়োগমূলক গবেষণাও অন্তর্ভুক্ত। এগুলো গবেষণা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে ঐশী প্রেরণা হিসেবে কাজ করে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিবিভাগ (USDA) তাদের সরকারি ওয়েবসাইটে জানায়—Applied Research and Development Program (ARDP) হলো ফসল সুরক্ষা ও কীটপতঙ্গ ব্যবস্থাপনা কর্মসূচির (CPPM) অধীনে তিনটি প্রধান শাখার একটি, যা ইন্টিগ্রেটেড পেস্ট ম্যানেজমেন্ট (IPM) গবেষণা ও সম্প্রসারণ প্রকল্পগুলোকে সহায়তা করে।
নিশ্চয়ই প্রয়োগমূলক কৃষি গবেষণার ফলেই আধুনিক বিশ্বে কৃষিজ পণ্যের (শস্য, পশুপালন, মৎস্য) ব্যাপক বৃদ্ধি সম্ভব হয়েছে। পৃথিবীর খাদ্য উৎপাদন উদ্বেগজনক হারে বাড়তে থাকা জনসংখ্যার সঙ্গে তাল মিলিয়ে নাটকীয়ভাবে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ বাংলাদেশের কথা উল্লেখ করা যায়।
১৯৭১ সালে দেশের জনসংখ্যা ছিল ৭ কোটি ৫০ লাখ, এবং খাদ্য উৎপাদন ছিল ১ কোটির একটু বেশি মেট্রিক টন। আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি গ্রহণ, নীতিগত সহায়তা, উন্নত জাত, পর্যাপ্ত উপকরণ এবং সর্বোপরি পরিশ্রমী কৃষকসমাজের কারণে আজ বাংলাদেশ বছরে ৩ কোটি ৫০ লাখ মেট্রিক টনেরও বেশি খাদ্যশস্য উৎপাদন করে। গত চার দশকে বাংলাদেশ ধান উৎপাদনে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারকে ছাড়িয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। মাত্র ৪৫ বছরে দেশটি তার প্রধান খাদ্যের উৎপাদন তিনগুণেরও বেশি বাড়িয়েছে।
একইভাবে, মালয়েশিয়ার সরকারি পরিসংখ্যান জানায় ২০১৭ সালে ৩৩টি কৃষিজ পণ্য বিবেচনায় নেওয়া হয় এবং এর মধ্যে ১৬টির Self-Sufficiency Ratio (SSR) ছিল ১০০ শতাংশেরও বেশি (Malaysia, 2013–2017)।
পৃথিবীর মাত্র ২৯ শতাংশ ভূমি, এবং এরও মাত্র এক তৃতীয়াংশ কৃষির উপযোগী; বাকিটা বরফ, মরুভূমি, বন, পর্বত বা কৃষির অনুপযোগী। সহজভাবে বললে মানবজাতির খাদ্য উৎপাদনের জন্য পৃথিবীর মাত্র ১০ শতাংশ ভূমি ভৌগোলিক ও জলবায়ুগতভাবে উপযুক্ত।
তার ওপর বিশ্বের ৬০ শতাংশ মানুষ এশিয়ায় বাস করে যেখানে ধান উৎপাদনে ব্যবহৃত প্রতি হেক্টর জমি বর্তমানে প্রায় ২৭ জন মানুষের খাদ্য যোগায়; কিন্তু ২০৫০ সালে একই জমি কমপক্ষে ৪৩ জনকে খাদ্য দিতে হবে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগে Plant Development-এর অধ্যাপক এবং C4 Rice Project-এর প্রধান গবেষক প্রফেসর জেন ল্যাংডেল বলেছেন—
“বিশ্বের ৩০০ কোটিরও বেশি মানুষ বেঁচে থাকার জন্য ধানের ওপর নির্ভরশীল। জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও নগরায়ণের কারণে ২০১০ সালে যে জমি ২৭ জনকে খাদ্য দিত, ২০৫০ সালে সেই পরিমান জমিকেই ৪৩ জনের জন্য খাদ্য যোগান দিতে হবে।”
এদিকে শহর ও শিল্পপ্রসারের কারণে ধান উৎপাদনের জমি ক্রমাগত কমছে, মাটির অবক্ষয় তো আছেই।
এই পরিস্থিতিতে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিজ্ঞানীরা ধান গাছের জৈব-ভৌত গঠন পরিবর্তনের কঠিন চ্যালেঞ্জ হাতে নিয়েছেন যাতে গাছটি সূর্যালোককে আরও দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করতে পারে। কোন ফসল কতটা সূর্যশক্তি ধরে রাখতে পারে, তার ওপরই তার বৃদ্ধি ও ফলন নির্ভর করে।
ধান বর্তমানে C3 photosynthetic pathway ব্যবহার করে, যা ভুট্টার C4 pathway-এর তুলনায় কম কার্যকর। তাই আন্তর্জাতিক ধান গবেষনা ইন্সটিটিউট ( IRRI) থেকে শুরু করে যুক্তরার্জ্যের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি,, চীনা বিজ্ঞান একাডেমি থেকে কেমব্রিজ—বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীরা একটি উচ্চাভিলাষী প্রকল্পে কাজ করছেন ধান গাছকে C3 থেকে C4-এ রূপান্তর করার জন্য।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এক বিবৃতিতে বলেছে;
“যদি ধানকে C4 photosynthesis-এ রূপান্তর করা যায়, তাহলে তাত্ত্বিকভাবে তার উৎপাদন ৫০ শতাংশ বাড়তে পারে।”
Journal of Experimental Botany-তে প্রকাশিত একটি নতুন গবেষণায় বিজ্ঞানীরা বলেছেন;
“এই পর্যালোচনায় আমরা C4 ফসলের আলোকসংশ্লেষ দক্ষতা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছি যা ফলন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধির একটি সম্ভাবনাময় উপায়।”
C4 উদ্ভিদের তুলনায় C3 উদ্ভিদে আলোকসংস্লেষণের দক্ষতা বৃদ্ধির ওপর গবেষণা তুলনামূলকভাবে কম হলেও, প্রচুর প্রমাণ রয়েছে যে এই কৌশল সফলভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব এবং ফলন বৃদ্ধিতে তা উপকারী হতে পারে। কৃষিজ পণ্যের উৎপাদন বাড়াতে এবং সৃষ্টিকর্তা মানুষের জন্য যে সকল সম্পদ দান করেছেন সেগুলো সংরক্ষণ করতে বিজ্ঞানীরা বারবার নতুন গবেষণা পরিচালনা করছেন।
এখানে আলোচনার সুবিধার্থে C4 ধানের উপর গবেষনাটির অবস্থা অগ্রগতি (২০০৮ –২০২৫) ও চ্যালেঞ্জ সমুহ একটু বিস্তারিতভাবে আলোচনার প্রয়াস নিয়েছি ( যদিও এই প্রকল্পের নাতিদীর্ঘ বিবরণটি অনেকের কাছেই বিরক্তির উদ্রেক ঘটাবে, তথাপি প্রয়োজনীয় রেফারেন্সসহ প্রকল্পির একটি সার্বিক চিত্র এখানে তুলে ধরেছি, এই আশায় যে, লেখাটি যদি কপালগুলে সংস্লিষ্টদের নজরে আসে তাহলে এই সামু ব্লকে আমার করা গবেষনাধর্মী পুর্বের কতক পোষ্টের ন্যয় এটাও যদি নজরে আসে তাহলে তাদের মধ্যে সচেতনা সৃজনে সহায়ক হবে )
C4 ধান প্রকল্প বিবরণী
১৯৯৫ সালে C4 ধান উদ্ভাবনের প্রথম প্রস্তাব করেছিলেন ইরির ( IRRI) তত্কালীন উদ্ভিদ শারীরতত্ত্ববিদ ড. জন সিহির। তবে গবেষণার কাজ শুরু হয় ২০০৮ সালে। সে সময় বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন C4 ধান গবেষণায় ১১.১ মিলিয়ন ডলার অনুদান দেয়। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর জেন ল্যাংডেল এই গবেষণার সমন্বয় করছেন। এ প্রকল্পে আটটি দেশের ১৫টি প্রতিষ্ঠানের মোট ২০টি গবেষণা গ্রুপের বিজ্ঞানী ও গবেষকেরা যুক্ত হন।
অবশ্য এ গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে বাংলাদেশ ধান গবেষনা ইসন্টিটিউট( BRRI) সরাসরি অন্তর্ভুক্ত আছে মর্মে প্রকল্পটির ওয়েবসাইটে দেখা যায়না । তবে BRRI এর বার্ষিক প্রতিবেদন/পরিচিতিতে তারা “C₄ Rice”-গবেষণা এলাকাকে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনায় যুক্ত করার কথা উল্লেখ করা পর্যন্তই আছেন মর্মে দেখা যায় (সেখানে এমনটি লেখা আছে “for breaking yield ceiling … rice and C4 rice”): এটি পুরাতন “BRRI at a Glance” ডকুমেন্টে উল্লেখ আছে। old.bansdoc.gov.bd তবে এটি আধিকারিক তথা “Consortium সদস্য” হিসেবে নয়, বরং সম্ভাব্য বা পরিকল্পনামূলক অংশগ্রহণকে বোঝায়। তাইতো, আমি আমার পুরাতন পোষ্টে বলেছি নীজের মধ্যে আলো জ্বালিয়ে কোন উন্নততর মহত কাজে নিয়োজিত করার লক্ষ্যে দৈনিক একবার করে হলেও কোরানের আয়াত ,কিংবা ধর্মবানী কিংবা যে কোন নীতিকথা পাঠ করে নীজেদেরকে ভালকাজে তৈরী বা উদ্যোগী হতে । যদি বাংলাদেশ রাইস রিসার্চ ইসন্টিটিউটের সংস্লিস্ট উর্ধতন কতৃপক্ষ নিজেদের মধ্যে যথাসময়ে যথাযথভাবে সচেতন হয়ে এই আন্তর্জাতিক মুল্যবানন গবেষনা প্রকল্পের সহিত যুক্ত হতো তবে তার সুফল প্রাপ্তি বহুলাংশে সহজ ও মসৃন হতো । যদি তারা কৃষিকাজে আত্মনিয়োগ করে এর উন্নতির লক্ষ্যে সর্বোচ্য প্রয়াস বা গবেষনায় রতি হত তাহলে এই গুরুত্বপুর্ণ আন্তর্জাতিক গবেষনা কর্মে সরাসরি যুক্ত হওয়ার প্রয়াস নিত, অন্যের করা গবেষনার ফল ধার করে নিয়ে এসে দেশের ধান উৎপাদন বৃদ্ধি করার জন্য দেশবাসীকে শুধু আশার আলো দেখিয়ে যেতোনা ।
বাংলাদেশ ধান গবেষনা ইনস্টিটিউট ধানকে C3 হতে C4 এ রূপান্তরিত ফল দিয়ে দেশের ধান উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ভবিষ্যত পরিকল্পনায় শুধু আশার আলোই দেখাচ্ছে ।
https://www.bigganchinta.com/biology
যাহোক, কামনা করি এই প্রকল্পের সুদুর প্রসারী গুরুত্ব উপলব্ধি করে তারা যেন এই প্রকল্পের সাথে যুক্ত হয় সর্বোতভাবে ।
প্রকল্পটির সাফল্য সম্পর্কে সকলেই আশাবাদী , ২০৩৫ সালের মধ্যে এশিয়ার ১৩টি দেশে ট্রান্সজেনিক C4 রাইস ছাড়করণ সম্ভব হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা।
C4 Rice Project গবেষণার অবস্থা এবং অগ্রগতি
C4 Rice Project টি একটি বড় মাপের আন্তর্জাতিক প্রকল্প, যার লক্ষ্য ধানকে C4 ফটোসিনথেসিস পাথওয়ে দেওয়া। সুত্র :
https://www.ox.ac.uk/news/2017-10-19-breakthrough-efforts-âsuperchargeâ-rice-and-reduce-world-hunger?
এই প্রকল্পে দুইটি দিক থেকে কাজ করা হচ্ছে:
১.আনাটমি পরিবর্তন (leaf anatomy): যেমন, Kranz anatomy তৈরি করা, যেখানে ধানের পাতা এমনভাবে সাজাতে হবে যেন C₄-এর মত কাজ করতে পারে। সুত্র : Click This Link
২.বায়োকেমিক্যাল পরিবর্তন : C₃পাথওয়ের জন্য প্রয়োজনীয় জেন এবং এনজাইম (যেমন PEPCase ইত্যাদি) ধানে প্রবেশ করানো।
সুত্র : Click This Link
প্রাথমিক সফলতা
এক গবেষণা-পেপারে, বিজ্ঞানীরা একট একটি একক ভুট্টা জিন (A single Maize gene) GOLDEN2-LIKE ধানে প্রবেশ করিয়েছেন। এটি ধানের শিরায় (vein sheath) কোষগুলিতে ক্লোরোপ্লাস্ট এবং মাইটোকন্ড্রিয়া বৃদ্ধি করতে সাহায্য করেছে, যা “proto-Kranz” আর্কিটেকচারের দিকে নিয়ে যায়।সুত্র : সুত্র : https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/29056456/
এই ধাপটি একটি “প্রথম evolutionary ধাপ” হিসেবে দেখা হচ্ছে C₃ থেকে C₄ রূপান্তরের পথে।
সুত্র : Click This Link
অন্যান্য জেন যুক্ত করা হচ্ছে কাজ চলছে যাতে আরও C₄-সংক্রান্ত জিন (যেমন পাঁচটি C₄ এনজাইম) একসাথে ধানে প্রবেশ করানো যায়। এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, পাঁচটি জিনকে একসাথে যুক্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে।
সুত্র : file:///C:/Users/mdaal/Downloads/2020-11-c4-rice-reality (3).pdf
তবে, শুধুমাত্র জিন ঢোকানো যথেষ্ট নয় পাতা গঠন, কোষের বিন্যাস এবং নিয়ন্ত্রণ তুল্যভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
সুত্র : Click This Link
এর মডেলিং এবং থিওরিটিক্যাল বিশ্লেষণ
এক শ্রেষ্ঠিকরণ অধ্যয়নে (3D reaction-diffusion মডেল) দেখা গেছে, ধানের বর্তমান C₃ আর্কিটেকচারে কিছু C₄ মেটাবলিক পথ “সংযুক্তভাবে” চালালে (C₃ ও C₄ এক সাথে) ফটোসিনথেসিসে লাভ হতে পারে।
এক রিভিউতে বলা হয়েছে যে, ক্রমাগত গবেষণা সত্ত্বেও ফটোসিনথেটিক দক্ষতা এখনও অনেকাংশে বাড়েনি (মাপক-ফল হিসেবে) এবং চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সুত্র : https://pubmed.ncbi.nlm.nih.gov/27628301/
নিয়ন্ত্রণকারী জিন এবং রেগুলেটরি নেটওয়ার্ক
সম্প্রতি এক নতুন গবেষণায় (২০২৪), এক ধরনের “single-cell sequencing” প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেখা গেছে, ধান (C₃) এবং C₄ গাছ (যেমন সোরঘাম)-এ জিন নিয়ন্ত্রণকারী কিছু ফ্যাক্টর (DOF regulators) সাদৃশ্য দেখায়।
সুত্র: Click This Link
এই তথ্যটি ইনজিনিয়ারিংয়ের জন্য অনেক মূল্যবান, কারণ এটি নির্দেশ করে কোন জিন নিয়ন্ত্রণকারী উপাদান পরিবর্তন করলে C₄-মতো অভ্যন্তরীণ কোষ পরিচয় তৈরি করা যেতে পারে। সুত্র : Click This Link
Insights into how photosynthesis evolved could help develop climate-resilient crops
বায়োকেমিক্যাল পথের অংশগুলো ফিট করা সংক্রান্ত অগ্রগতি
গবেষকরা ধানে C₄-এর প্রধান এনজাইম (যেমন PEPC, PPDK, NADP-ME ইত্যাদি) সক্রিয় করে দেখিয়েছেন ও একাধিক জিন একসাথে (multi-gene stacks) প্রবর্তনের কৌশল উন্নত করেছেন; ফলত কোষস্তরে C₄-ধরনের প্রতিক্রিয়া অংশটির প্রাথমিক কার্যকারিতা ল্যাব পর্যায়ে প্রদর্শিত হয়েছে। সুত্র : https://c4rice.com/phase-i-ii/?
অ্যানাটমি (Kranz anatomy) হল সবচেয়ে বড় প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ
C₄ কার্যকারিতার জন্য পাতের বিশেষ ধরনের কোষবিন্যাস (বাণ্ডল-শীথ ও মেসোফাইলের বিভাজন ও ক্লোরোপ্লাস্ট বণ্টন) দরকার; যে জিনগত নিয়ন্ত্রণই এই আর্কিটেকচার তৈরি করে তা সম্পূর্ণভাবে চিহ্নিত ও কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রিত করা এখনো অসম্পূর্ণ এজন্য অনুচ্চ অগ্রগতির প্রয়োজন।সুত্র : Click This Link
অফ-ট্র্যাকেট/প্রবাহ পর্যায়ের অর্জন ও বিকল্প পদ্ধতি
সম্পূর্ণ C₄ রূপান্তরের চাইতে কিছু দল (উদাহরণ: RIPE প্রকল্প) ফটোরেস্পিরেশন কমানো বা Rubisco উন্নতকরণ ইত্যাদি বিকল্প কৌশলে ফসল-উৎপাদন বাড়ানোর আরও বাস্তবসম্মত/ত্বরিত পথ অনুসরণ করছে; এগুলো সিঁড়ি ধরে ফলন বাড়াতে দারুন কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। সুত্র : https://ripe.illinois.edu/press?
এখন পর্যন্ত “সম্পূর্ণ এবং উৎপাদন-যোগ্য C₄ ধান”একদম শেষ ধাপে পৌঁছায়নি; অনেক বায়োলজিক্যাল এবং প্র্যাকটিক্যাল বাধা অব্যাহত আছে।
সময়রেখা : এখনও এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প
অফিসিয়াল আপডেট ও সাম্প্রতিক পর্যালোচনায় বলা হয়েছে যে ‘কৃষিতে ব্যবহারের যোগ্য’ C4 ধান তৈরির জন্য কর্মতালিকা, বায়োমেকানিক্স ও বহু-বর্ষের পরীক্ষার প্রয়োজন; অনেকেই অনুমান করেন ইতিবাচক আলোচনার পরও বাস্তব মাঠ-প্রটোটাইপ পেতে বছরে দশেক তারো কম বা বেশী সময় লাগবে। এই টাইমলাইন অনুমানভিত্তিক; নির্দিষ্ট তারিখ এখনও ঘোষিত হয়নি)। সুত্র : Click This Link
https://www.bigganchinta.com/biology
2025 Annual Meeting in Bangkok
ছবিসুত্র : https://www.bigganchinta.com/biology
কারা কাজ করছে / মূল প্লেয়ার কারা
C₄ Rice Consortium / C4 Rice Project : আন্তর্জাতিক কনসোর্টিয়াম ৪টি মহাদেশ হতে ৮টি দেশের ১৫টি রিসার্চ ইনস্টিটিউট/পবেষনা প্রতিষ্ঠানের ২০টি গবেষক/কৃষিবিজ্ঞানী দল (ইউকে, নেদারল্যান্ডস, ফিলিপাইন, চীন, অস্ট্রেলিয়া ইত্যাদি ) এই প্রকল্পে কাজ করছেন । সুত্র : https://ripe.illinois.edu/press?
বিশ্ববিদ্যালয়/গবেষণা গ্রুপ ও প্রকল্প যেমন RIPE (ইলিনয়স ও অন্যান্য অংশীদার), IRRI সহ CGIAR সংস্থাগুলি ইনপুট/কলাবরেশন এবং বায়োএনার্জেটিক্/বায়োটেক সহায়তা করছে। সুত্র : https://ripe.illinois.edu/press?

C3 and C4 Gas Exchange. Credit: Moonsub Lee/University of Illinois
প্রকল্পটি হতে কি পাওয়া গেছে ২০২৩–২০২৫ পর্যন্ত সময়কালে
২০২৩ এ একাধিক পর্যালোচনা ও স্টেট-অফ-দ্যা-আর্ট নিবন্ধ C₄ রাইস প্রকল্পের অতীত অর্জন ও অগ্রগতির সারমর্ম করেছে , বিশেষত biochemical module ইনস্টলেশনে প্রযুক্তিগত অগ্রগতি। সুত্র : Click This Link
প্রকল্পের ওয়েবসাইট ও আপডেটগুলোতে (phase I/II) বর্ণিত আছে যে জিন-মডিউল একত্রিত করা, উপযুক্ত প্রমোটার শনাক্তকরণ ও সিঙ্ক্রোনাইজেশনে কাজ চলমান। কিন্তু এখনও “ওপেন-ফিল্ড” স্তরের সফল প্রোটোটাইপ রিপোর্ট করা হয়নি। সুত্র : https://c4rice.com/phase-i-ii/?
আরো গভীরে গিয়ে দেখতে চাইলে নীচের লিংকে গিয়ে পড়তে পারেন ;
Furbank et al., “The evolving story of C4 rice” (Photosynthesis Research, 2023) — সাম্প্রতিক পর্যালোচনা।
অফিসিয়াল C4 Rice Project সাইট (project goals, phase progress)।
RIPE প্রকল্পের প্রেস রিলিজ ও কৌশল-পেজ (ফটোসিন্থেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এর বিকল্প/সংপূরক পন্থা)।
এই আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রকল্পটি গত কয়েক বছরে স্পষ্ট অগ্রগতি দেখিয়েছে বিশেষত C₄ বায়োকেমিস্ট্রি রাইসে ঢুকানোর ক্ষেত্রে,তবে পাতার অ্যানাটমি ও সব প্রয়োজনীয় বৈশিষ্ট্য একসাথে স্থায়ীভাবে স্থাপন করে মাঠে ব্যবহারযোগ্য C₄ ধান তৈরি করা এখনও অর্জিত হয়নি; এটি এখনো উচ্চ-প্রাধান্য ও বহু-দলীয় গবেষণা ও তহবিলপ্রাপ্ত দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প।
এখন পূনরায় ফিরে যাওয়া যাক কোরানের প্রেরণাদায়ক আয়াতগুলির দিকে । পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেছেন ,তিনি মানুষের অবস্থা পরিবর্তন করেন না এবং করবেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেদের ভেতরের গুণাবলি পরিবর্তন করে, যদি তারা তা করতে সক্ষম হয়। একইভাবে, মানুষ যখন অন্যায় ও অবাধ্যতার পথে চলে না, তখন তিনি তাঁর অনুগ্রহ কমিয়ে শাস্তি দেন না এবং দেবেন না। কুরআনে বলা হয়েছে:
“নিশ্চয়ই আল্লাহ কোন সম্প্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেদের ভেতরের অবস্থা পরিবর্তন করে; আর যখন আল্লাহ তাদের নিজেদের কৃতকর্মের কারণে কোন বিপদ উপস্থিত করতে চান, তখন তা প্রতিহত করার কেউ থাকে না; এবং তাদের জন্য আল্লাহ ছাড়া কোনো রক্ষাকারী নেই।”
এই বাণীর একটি ইতিবাচক ও একটি নেতিবাচক দিক রয়েছে: অর্থাৎ, মানুষ যখন নৈতিকভাবে অধঃপতিত না হয়, তখন আল্লাহ তাঁর দান রহমত প্রত্যাহার করেন না; ঠিক তেমনি, যারা ইচ্ছাকৃতভাবে পাপ করে চলেছে, তারা নিজেদের ভেতরের অবস্থা না বদলানো পর্যন্ত আল্লাহর অনুগ্রহ লাভ করতে পারে না। ব্যাপক অর্থে এটি আল্লাহর সেই চিরন্তন কারণ - কার্য সম্পর্কের আইন যার অধীনে ব্যক্তি ও সমাজের জীবন পরিচালিত হয় এবং যা সভ্যতার উত্থান পতনকে নির্ধারণ করে মানুষের নৈতিক গুণাবলি ও তাদের আত্মিক পরিবর্তনের উপর ভিত্তি করে।
অতএব, আল্লাহ আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন মানুষকে সৎকর্মে সাহায্য ও উৎসাহ দিতে এবং অসৎ কাজে সহযোগিতা করা থেকে বিরত রাখতে। কুরআনে বলা হয়েছে:
“সৎকর্ম ও তাকওয়ার কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা করো, আর পাপ ও শত্রুতার কাজে একে অপরকে সহযোগিতা করো না; এবং আল্লাহকে ভয় করো নিশ্চয়ই আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা।”
এছাড়া আরও বলা হয়েছে:
“সুতরাং তোমরা সৎকর্মে একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করো।”
সমাজে সমস্যা সমাধান করা এবং শান্তি প্রতিষ্ঠা করা একটি মহৎ কর্ম ও অবদান। জটিল সমস্যা সমাধান সহজ নয়, কিন্তু অসম্ভবও নয়। বর্তমান বিশ্বের সমস্যাগুলো সমাধানে গবেষকরা বহুবিধ ও আন্তঃবিষয়ক পদ্ধতি প্রয়োগ করেন। পবিত্র কুরআন আমাদের উৎসাহ দেয় সকল প্রকার সৎকর্মে ব্যক্তিগত ও সামষ্টিকভাবে সমস্যা সমাধান করাও এর অন্তর্ভুক্ত হওয়া।
উপসংহারে এসে বলা যায় যে কোন কল্যানকামী উন্নয়নমুলক কর্ম বা গবেষণায় পবিত্র কুরআনে প্রয়োগিক (Applied) গবেষণার ভিত্তি প্রেরণাদায়ক শক্তি হিসাবে প্রয়োগতুল্য । কৃষিপণ্য উৎপাদনের লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র, বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার কৃষিক্ষেত্রে প্রয়োগমূলক গবেষণার দেশভিত্তিক উদাহরণও এতে উল্লেখ করে দেখানো হয়েছে ।
পবিত্র কুরআনের নির্দেশ অনুযায়ী, প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের বিজ্ঞানীদের প্রয়োজন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও তার অন্তর্নিহিত কারণগুলো শনাক্ত করা যেগুলো প্রাকৃতিক পরিবেশব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, স্থলে ও সাগরে সম্পদ ধ্বংস করে, এবং প্রাকৃতিক ও সামাজিক উভয়ভাবে পরিবেশ দূষণ ঘটায়। এর ফলে প্রাকৃতিক সম্পদ, পারিবারিক বন্ধন, সামগ্রিক পরিবেশ এবং মানবসম্পদ সবই ঝুঁকির মুখে পড়ে। পবিত্র কুরআন প্রাসঙ্গিক আয়াতের মর্মবানী বিজ্ঞানীদের উৎসাহিত করে স্বীকৃত সমস্যাগুলোর কারণ শনাক্ত করে, প্রয়োগমূলক গবেষণার মাধ্যমে তার সমাধান খুঁজে বের করতে। আল্লাহ্ তা‘আলার দানকৃত নেয়ামত সংরক্ষণ ও বৃদ্ধি করতে হলে সঠিক পদ্ধতি আবিষ্কার করা জরুরি। মানুষকে নিজের অবস্থা উন্নত করতে হবে এবং দুঃসহ পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে; তাই সময়ের প্রয়োজন অনুযায়ী উপকারী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়ন অপরিহার্য।
মানুষকে তাই বারবার চেষ্টা করে নিজের অবস্থার উন্নয়ন ঘটিয়ে তার আলোকে সমস্যার সমাধান করা । সমাজে সমস্যার সমাধান করা এবং নতুন ইতিবাচক পরিবর্তন সৃষ্টি করা । নিশ্চয়ই ভয়াবহ সমস্যার সমাধান সহজ নয়, কিন্তু অসম্ভবও নয়। বর্তমান বিশ্বের কিছু জটিল সমস্যা সমাধানে গবেষকদের বহুবিধ ও আন্তঃবিষয়ক পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হয়। পবিত্র কুরআন আমাদের ব্যক্তিগত ও সামষ্টিকভাবে সব ধরনের সৎকর্ম সম্পর্কিত সমস্যা সমাধানসহ করতে উদ্বুদ্ধ করে।
আমরা জানি, মৌলিক গবেষণা (basic research) পরিচালিত হয় জ্ঞান বৃদ্ধি করার জন্য ,প্রাকৃতিক বা সামাজিক যে কোনো জ্ঞানশাখা, পরিবেশ ব্যবস্থা, প্রাকৃতিক বা সামাজিক ঘটনা সম্পর্কে বোঝার লক্ষ্যে। সুতরাং, সমস্যাকে সনাক্ত করা এবং তার কারণ নির্ণয় হলো মৌলিক গবেষণার অংশ; আর সমস্যার সমাধান বের করা হলো প্রয়োগমূলক গবেষণা (applied research)।
এভাবে সমাজ পরিবর্তনের পথে মৌলিক গবেষণা ও প্রয়োগমূলক গবেষণার মধ্যে এক উজ্জ্বল সামঞ্জস্য রচিত হয়।আর এ ধরনের সামঞ্জস্যতা বিধানের কাজে নীজ নীজ ধর্মবিশ্বাস ও ধর্মগ্রন্থে থাকা বানী বা সুনীতিকথামালা সমুহ কোরানিক উদ্দিপনা/অনুপ্রেরণামুলক বানীগুলির মতই উদ্দিপিত করে তোলে গবেষনা কর্মে ব্রতি হতে, যা সামগ্রিক অর্থে সমস্ত বিশ্ব মানব সমাজের কল্যানের দিকেই
ধাবিত হয় ।
ধন্যবাদ দীর্ঘক্ষন সাথে থাকার জন্য ।
তথ্য সুত্র : যথাস্থানে লিংক যুক্ত করে দেয়া হয়েছে।
২৩ শে নভেম্বর, ২০২৫ রাত ১:১৮
ডঃ এম এ আলী বলেছেন:
ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য । ঠিক আছে ধীরে সুস্থে পাঠ করে বলুন কোথাও কোন
ভুল আছে কিনা । সংশোধনের মত কিছু পেলে জানাবেন । কারণ পোস্টটি বহু
দুরে সংস্লিষ্টদের কাছে যাবে । এই কৃষি প্রকল্পটির সাথে ধান গবেষনা ইন্টিটিটিটের
ঘনিষ্ট সম্পৃক্ততার বিষয়টি খতিয়ে দেখার ঈঙ্গিত পাওয়া গেছে আমার ঘনিষ্ট
একজনের কাছ হতে ।
শুভেচ্ছারইল
২|
২২ শে নভেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২৪
মহাজাগতিক চিন্তা বলেছেন: গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কুরআন হাদিসের আলোকে তুলে ধরার জন্য ধন্যবাদ।
২৩ শে নভেম্বর, ২০২৫ রাত ১:২১
ডঃ এম এ আলী বলেছেন:
ধন্যবাদ লেখাটির বিষয়ে সুন্দর মন্তব্যের জন্য ।
শুভেচ্ছা রইল ।
৩|
২২ শে নভেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৩৮
স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: আপনার এই তথ্য অনেকের জন্য দরকারি
কিন্ত এখানে জাপান কৃষিতে অনেক দুর এগিয়ে আছে
সে বিষয়ে কোন আলোকপাত করেননি দেখে
আমি বিস্মিত হলাম ।
.......................................................................
তাদের বিপনণ ব্যবস্হা আরও চমকপ্রদ ।
২৩ শে নভেম্বর, ২০২৫ রাত ১:২৫
ডঃ এম এ আলী বলেছেন:
ধন্যবাদ মুল্যবান মন্তব্যের জন্য ।
ভুল হয়ে গেছে , জাপানের কৃষি ব্যবস্থার
সাফল্যের উদাহরণ পোস্টে তুলে ধরা
হয়নি । বিষয় বিবেচনায় নিলাম।
এডিট করে সংযুক্ত করে দিব ।
শুভেচ্ছা রইল
৪|
২২ শে নভেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:৩২
জ্যাক স্মিথ বলেছেন: সত্যিই কোরানের বিস্ময়কর জ্ঞান দেখে অভিভূত না হয়ে পারা যায় না- আকাশ থেকে পানি পরে, মাটির নিচ থেকে বীজ অঙ্কুরিত হয়, বাতাস জলরাশিকে বয়ে নিয়ে যায়, সাগরের জল লবনাক্ত, সূর্য পশ্চিমে অস্ত যায় এবং পুর্বদিক হতে উদিত হয় ইত্যাদি জ্ঞানগুলো আমরা শুধুমাত্র কুরআন থেকেই জানিতে পারি, কুরাআন ব্যতিত এই জ্ঞান অর্জন করা অসম্ভব।
২৩ শে নভেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৩৩
ডঃ এম এ আলী বলেছেন:
ধন্যবাদ , প্রিত হলাম মন্তব্যে ।
কোরান এগুলি জানতে বলেনি,
বলেছে তাকিয়ে দেখতে ও ভাবতে
কেমন করে তারা কৃষি কাজে
উপকারে লাগে এবং এ সমস্ত
পাকৃতিক সম্পদের সর্বোত্তম
ব্যবহার এর পন্থা নিয়ে
ভাবতে আর সেসকল নিয়ামতের
সৃস্টিকর্তার প্রতি শুকরিয়া
জানাতে, যদি ইচ্ছা হয়,
কোন বাধ্যবাধকতা
নেই ।
শুভেচ্ছা রইল
৫|
২২ শে নভেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:৫৮
কলাবাগান১ বলেছেন: এত কস্ট করার দরকার কি বিজ্ঞানীরা আপনার লিখা পড়ে সুরা কালাম পড়ে C3 উদ্ভিদ কে ফু দিলেই C4 এ রূপান্তরিত হয়ে যাবে..। কি অপচয় মানব মনন এর
গত ১০ বছর ধরে BIOL101 ক্লাশে পড়াচ্ছি C3 C4 এর মলিকুলার/মেকানিজম ডিফারেন্স। নেক্সট সেমিস্টার এর সিলেবাসে দোয়া-দরুদ এর রোল role in C3 and C4 plants যোগ করতে হবে...ধন্যবাদ এমন একটা ইফেক্টিভ রোল কে আমরা এতদিন ইগনোর করে আসছিলাম
২৩ শে নভেম্বর, ২০২৫ রাত ২:১১
ডঃ এম এ আলী বলেছেন:
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
আপনার বক্তব্যে যে ব্যঙ্গ, অতিরঞ্জন এবং ভুল বোঝাবুঝি আছে, সেগুলো স্পষ্ট করা প্রয়োজন মনে করি।
আমার মূল লেখায় কোথাও বলা হয়নি যে “বিজ্ঞানীরা সুরা পড়লে C3 উদ্ভিদ C4 হয়ে যাবে”এ ধারণাটি
না বৈজ্ঞানিক, না লেখাটির বক্তব্যের সঠিক প্রতিফলন। আপনি আমার বক্তব্যকে এমনভাবে প্যারোডি
করেছেন যা বাস্তব আলোচনার বদলে কৌতুকের পর্যায়ে চলে গেছে।
১. আমার কথার যতার্থতাকে ভুল বোঝা হয়েছে:
আমি যে বিষয়টি আলোচনা করেছি তা ছিল
ইসলামে কৃষির গুরুত্ব, কৃষককে উদ্বুদ্ধ করার ধর্মীয় বাণী, এবং একই প্রবন্ধের একটি অংশে কৃষিবিজ্ঞানের
অগ্রসর গবেষণা (যেমন C3 থেকে C4-এ রূপান্তর প্রকল্প) সম্পর্কে কিছু তথ্য।
ধর্মীয় অনুপ্রেরণা কৃষির উন্নয়নে মানুষের মনোভাব ও নৈতিক শক্তি বাড়ায় এটি সমাজবিজ্ঞান ও নীতিশাস্ত্রের
আলোচনার অংশ।
অন্যদিকে C3 হতে C4 রূপান্তর একটি জটিল জিনোমিক ও ফিজিওলজিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং গবেষণা
এটি সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক বিষয়।
এই দুই ক্ষেত্রকে একই সারে মিশিয়ে ফেলা প্রকৃতপক্ষে ভুল পাঠ বা ইচ্ছাকৃত ভুল ব্যাখ্যা।
২. মন্তব্যের অসারতা ; ব্যঙ্গের চেয়ে তথ্য প্রয়োজন বেশী:
আপনার বক্তব্যে ১০ বছর BIOL101 পড়ানোর কথা এসেছে, কিন্তু পাঠদান কোনও যুক্তি নয়
বিষয়টি হলো:
C3 থেকে C4 এ রূপান্তর একটি বহুধাপীয় গবেষণা প্রকল্প, যেখানে Kranz anatomy,
carbon-concentrating mechanisms, gene regulatory networks, cell-specific expression,
এবং chloroplast positioning এর মতো জটিল বিষয়ের সমন্বয় রয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে IRRI, CSIRO, এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বহু বছর ধরে গবেষণা চলছে।
এগুলো বাস্তব বৈজ্ঞানিক তথ্য।
এখানে দোয়া-দরুদ বা ধর্মসংশ্লিষ্ট অংশটি এসেছে কৃষক মানবসম্পদকে উত্সাহিত করার প্রসঙ্গে
জিনগত প্রকৌশলে কোনও অলৌকিক হস্তক্ষেপের দাবিতে নয়।
৩. কথায় মিথ্যাচারিতা/ইচ্ছাকৃত বিকৃতি:
“সুরা পড়ে C3 উদ্ভিদে ফুঁ দিলে C4 হয়ে যাবে”
এটি আমার বক্তব্য নয়, পুরোপুরি আপনার আরোপ করা / তৈরী করা কথা ।
আমার লেখায় বৈজ্ঞানিক আলোচনার পাশে ধর্মীয় অনুপ্রেরণার ভূমিকা তুলে ধরা হয়েছে
দুটিকে গুলিয়ে বৈজ্ঞানিক অগ্রগতিকে তাচ্ছিল্য হিসেবে উপস্থাপন করা যুক্তিগ্রাহ্য নয়।
দোয়া দরুদকে সিলেবাসে যোগ করার প্রয়োজনীয়তা এ কথাটি ব্যঙ্গ ছাড়া আর কিছু নয়।
আপনি যদি সত্যিই ১০ বছর ধরে শিক্ষার্থীদের C3/C4 pathway পড়িয়ে থাকেন,
তবে নিশ্চয়ই জানেন যে কোনো একাডেমিক আলোচনায় প্রথম শর্ত misrepresentation এড়িয়ে চলা।
আমার লেখায় যা বলা হয়নি, সেটিকে বলা হয়েছে মনে করে উপহাস করাই আসলে মানবমননের অপচয়।
আমার মুল হল
ধর্মীয় বাণী → মানুষের নৈতিক-মানসিক উদ্দীপনা বৃদ্ধি করে → কৃষিকাজে অধ্যবসায়, দায়িত্ববোধ ও
উৎপাদনশীলতাকে উৎসাহিত করতে পারে।
C3 → C4 গবেষণা → একটি কঠোর বৈজ্ঞানিক ও জিনগত প্রকৌশলভিত্তিক আন্তর্জাতিক প্রকল্প, যার সাথে
কোনও অলৌকিক বা আধ্যাত্মিক পদ্ধতির সম্পর্ক নেই।
এই দুই ভিন্ন মাত্রার বিষয়কে একসাথে উল্লেখ করা মানেই তারা বৈজ্ঞানিকভাবে পরস্পরের বিকল্প এমন দাবি নয়।
শেষ কথা, মতবিরোধ থাকতেই পারে, কিন্তু ব্যঙ্গ নয় তথ্য, যুক্তি এবং পাঠ-বোঝার যথার্থতা দিয়ে
আলোচনা এগোলে সবাই উপকৃত হয়।
শুভ কামনা রইল
৬|
২৩ শে নভেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:২২
কলাবাগান১ বলেছেন: নদীর রচনা লিখতে বললে ছাত্র/ছাত্রী যদি নদীর পাড়ের গরুর রচনা লিখে (কেননা সে সেটাতেই বেশী পারদর্শী), তাহলে সেটা কে ধান ভানতে শিবের গীত বলা চলে...অবশ্য কেন আপনি দুইটা সমপূর্ন ভিন্ন মাত্রার বিষয় কে এক করে লিখেছেন সেটা বুঝা যায় যে আপনি চাদগাজীর আগের কবিতার পোস্টে সঠিক মন্তব্য এর কাউন্টার দেওয়ার জন্য এমন ভিন্ন মাত্রার বিষয় কে জোড়াতালি করার চেস্টা করেছেন?
"ধর্মীয় বাণী → মানুষের নৈতিক-মানসিক উদ্দীপনা বৃদ্ধি করে → কৃষিকাজে অধ্যবসায়, দায়িত্ববোধ ও
উৎপাদনশীলতাকে উৎসাহিত করতে পারে।" তা ধর্মীয় বাণী → তে C3 → C4 গবেষণার কোন সম্পর্ক নাই!!!!! আমি তো ভাবছিলাম যে আমার নিজের ল্যাবে যে আমরা ভুট্রার কারবোনিক এনহাড্রেজ জিনকে ধান গাছে প্রবেশ করাচ্ছি ক্রিসপার ইউজ করে, আশা যে বেটার কার্বন ফিক্সাশান হবে, প্রবেশ করানোর আগে বোধহয় দোয়া কালাম পড়লে হয়ত সাকসেস হব। ৩০ বছর এর বেশী সময় ধরে বিজ্ঞানীরা চেস্টা করছে C3 → C4 রূপান্তর করার জন্য, তারা ফেইলউর হচ্ছে বোধহয় ধর্মকে প্রাধান্য দিচ্ছে না..ও সেটা আবার দুটা ভিন্ন জিনিস আপনি একসাথে লিখে আমার মাথা টাকেই গুলিয়ে দিলেন...
২৩ শে নভেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৪
ডঃ এম এ আলী বলেছেন:
আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। তবে কিছু বিষয়ে পরিষ্কারভাবে বলা প্রয়োজন।
প্রথমত, “দুইটি ভিন্ন মাত্রার বিষয় জোড়া লাগানো”এই অভিযোগটি প্রকৃতপক্ষে আমার লেখার প্রকৃতি ঠিকভাবে
না পড়ার ফল। আমি কোথাও C3 → C4 রূপান্তরকে ধর্মীয় বাণীর ফল বলে দাবি করিনি, কিংবা কৃষিবিজ্ঞানের
জটিল জৈব-রাসায়নিক প্রক্রিয়াকে ধর্মের ওপর নির্ভরশীল বলেও উপস্থাপন করিনি। আমি শুধু দেখিয়েছি
মানুষের নৈতিক মানসিক উদ্দীপনা, দায়িত্ববোধ, অধ্যবসায় বা কর্মপ্রেরণা কখনো কখনো ধর্মীয় বাণীর দ্বারা
প্রভাবিত হতে পারে।
অন্যদিকে C3 → C4 রূপান্তর একেবারেই শুদ্ধ বৈজ্ঞানিক, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োকেমিস্ট্রিভিত্তিক প্রক্রিয়া।
অর্থাৎ, একটির বিষয় মানুষের আচরণগত প্রেরণা, আরেকটি জৈবিক মেটাবলিক পথের রূপান্তর। দুইটি ক্ষেত্রই ভিন্ন,
এবং আমি কোনোটিকেই আরেকটির ওপর নির্ভরশীল বলিনি; কেবল একটি উদাহরণে মানুষের সামাজিক-নৈতিক
আচরণ নিয়ে কথা বলেছি, আর অন্যটিতে জেনেটিক জটিলতা নিয়ে আলোচনা করেছি।
দ্বিতীয়ত, নদীর রচনা লেখার বদলে গরুর রচনা লেখার উদাহরণটি এখানে একেবারেই খাটে না কারণ আমি
বিষয়বস্তুকে বদলে দিইনি; বরং একই প্রসঙ্গের ভিন্ন ভিন্ন দিক ব্যাখ্যা করেছি। কেউ নৈতিক সামাজিক প্রভাব
নিয়ে কথা বলতে পারে, আবার একই আলোচনায় বৈজ্ঞানিক সীমাবদ্ধতাও তুলে ধরতে পারে ,এটা বিষয়বস্তুর
বৈচিত্র্য, বিভ্রান্তি নয়।
তৃতীয়ত, আপনি যেভাবে বললেন “আমার মাথা গুলিয়ে গেল” তা খুবই স্বাভাবিক, কারণ আলোচনার দুই
দিকই ভিন্ন স্তরের:
একদিকে মানসলৌকিক প্রেরণা (psychosocial motivation)
অন্যদিকে মলিকিউলার ফটোসিন্থেটিক pathway engineering
এই দুটি বিষয় একই স্কেলে মাপা যায় না এটাই মূল পয়েন্ট।
আমি কোথাও দাবি করিনি যে জেনেটিক ট্রান্সফরমেশন সফল করতে আগে দোয়া পড়তে হবে
এটি আপনার নিজস্ব ব্যঙ্গাত্মক অতিরঞ্জন, আমার বক্তব্য নয়।
সবশেষে, বিজ্ঞান যেমন নিজস্ব পদ্ধতিতে এগোয়, তেমনি সমাজবিজ্ঞান বা নৈতিক আচরণও নিজস্ব
মাত্রায় কাজ করে। দুইয়ের ক্ষেত্র ও ভূমিকা ভিন্ন তাই তুলনাও আলাদা।
তাই বিভিন্ন বিষয়কে পাশাপাশি আলোচনা করাকে “জোড়াতালি” বলা অর্থহীন।
আশা করি বিষয়টি এখন পরিষ্কার হয়েছে।
শুভেচ্ছা রইল
৭|
২৩ শে নভেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:২২
সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন:
অনেক জটিল কৃষি বিজ্ঞান ও ইঞ্জিনিয়ারিং সহজ ভাষায় লিখেছেন। এজন্যে, আপনার অনেক অনেক ধন্যবাদ।
কিন্তু, তবু আমি পুরোপুরি বুঝতে পারি নাই। বিজ্ঞান আসলে আমার বিষয় নয়, বুঝতে পারছি।
কিছু প্রশ্ন,
১) ধানগুলোর কি কোন প্যাটেন্ট আছে?
২) কোন মানুষ এই ধানগুলো থেকে উৎপাদিত চাল খেয়ে দেখেছে কি?
৩) এই ধানগুলোর পুষ্টিগুণ কেমন? কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কি? যেমন - দীর্ঘমেয়াদে, মানব দেহে পরিবর্তন?
৫) জেনেটীকালি মোডিফায়েড রাইস গবেষণার সাথে ধর্মের কোন সঙ্ঘর্ষ আছে কি?
৪) অমুসলিম গবেষকরা কি দ্বারা মোটিভেটেড হয়ে এই গবেষণা কাজে নিয়োজিত হয়েছেন? কোন ধর্মগ্রন্থ দ্বারা কি?
ধন্যবাদ নিরন্তর।
২৪ শে নভেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৪৩
ডঃ এম এ আলী বলেছেন:
মানুষ নীজেই এক মহা বিজ্ঞান , নীজের জন্ম ধেকে মৃত্যু পর্যন্ত বিষযারলির দিকে তাকালেই আমারকথার
সত্যতা বুঝতে পারবেন ।
আপনার মুল্যবান প্রশ্নগুলোর জন্য একটি তথ্যভরপুর, সহজ সরল উত্তর দেওয়া হলো নীচে।
আপনার প্রশ্নগুলো বেশ গুরুত্বপূর্ণ এবং অত্যাধুনিক গবেষণা খাতের সঙ্গে যুক্ত।
আমি ধারাবাহিকভাবে উত্তর দিচ্ছি:
প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন : ১) ধানগুলোর কি কোন প্যাটেন্ট আছে?
উত্তর : এখানে ধানগুলি বলতে আমি নিশ্চিত যে আপনি C3 / C4 ধানগুলির কথা জানতে চেয়েছেন ।
না পুরোপুরি “C3 ধান” বা “C4 ধান” নামে স্বাভাবিক ধান জাতগুলোর জন্য সাধারণ প্যাটেন্ট নেই,
কারণ C3 হল সাধারণ ধানের (রাইস) ফটোসিন্থেসিস টাইপ।
অপরদিকে গবেষণা পর্যায়ে “C4 রাইস” তৈরি করার জন্য বেশ কিছু জিনগত পরিবর্তন
(genetic engineering) করা হচ্ছে, এবং সেই ক্ষেত্রে প্যাটেন্ট রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ:
একটি পেটেন্ট US 10519206B2 যা “genetically modified higher plants with increased
photosynthesis … methods and uses thereof” সম্পর্কে, যেখানে C3 উদ্ভিদে (যেমন ধান)
কিছু জিন প্রবেশ করিয়ে photosynthesis বৃদ্ধি করার কথা বলা হয়েছে।
আরেকটি ইউরোপীয় পেটেন্ট EP3227316A2-তে C3 এবং C4 উদ্ভিদে এমন জিন প্রাচার করার কথা বলা
হয়েছে যা CO₂ কনসনট্রেটিং মেকানিজমে কাজ করে। ( সুত্র গুগল পেটেন্ট সাইট)
তাই, “C4 ধান” প্রকল্পগুলো এখনো মূলত গবেষণা পর্যায়ে এবং কিছু নির্দিষ্ট জিন বা প্রযুক্তির জন্য পেটেন্ট রয়েছে,
কিন্তু বাণিজ্যিকভাবে পুরোপুরি স্থায়ী ‘C4 ধান জাত’ এখনো ব্যাপকভাবে প্রচলিত বা চালু হয়নি।
প্রশ্ন ২) কোন মানুষ এই ধানগুলো থেকে উৎপাদিত চাল খেয়ে দেখেছে কি?
উত্তর : এখন পর্যন্ত গণহারে বিক্রির জন্য “C4 ধান” চাল মারকেট-স্তরে সাধারণ ভোক্তাদের মধ্যে প্রবলভাবে
পরীক্ষিত বা ব্যবহৃত হয়েছে বলে কোনো প্রমাণ নেই। এটি মূলত একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রকল্প
(C4 Rice Project) যা ধীরে ধীরে উন্নয়ন করছে।
এর গবেষণাগুলো বেশ পরীক্ষামূলক পর্যায়ে আছে: বিন্যাস, জিন এক্সপ্রেশন, পাতা গঠন (leaf anatomy)
এবং সেল টাইপ স্পেসিফিসিটি (যেমন bundle sheath cell) ইত্যাদির দিকে কাজ চলছে।
এছাড়া, কিছু ট্রান্সজেনিক (genetically modified) ধান গাছ পরীক্ষাগারে বা কন্ট্রোলড পরিবেশে উত্পাদিত
হয়েছে, কিন্তু এটি এখনও সাধারণ কৃষি ফসল বা বাজারজাত চাল হিসেবে পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত হয়ে নেই।
প্রশ্ন ৩) এই ধানগুলোর পুষ্টিগুণ কেমন? কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কি? যেমন – দীর্ঘমেয়াদে, মানব দেহে পরিবর্তন?
উত্তর : পুষ্টিগুণ: যেহেতু C4 রাইস প্রকল্পটি মূলত “ফটোসিন্থেসিস কার্যকারিতা বাড়ানো”তে দৃষ্টিপাত করে
(উচ্চ উৎপাদন, আরও দক্ষ কার্বন শোষণ, কম জল ও নাইট্রোজেন খরচ, এর উদ্দেশ্য খাদ্যপুষ্টি (nutrition)
বাড়ানো নয়, বরং ফসল ফলন বৃদ্ধি করা( সুত্র : Oxford Biology Department)
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও ঝুঁকি: যেহেতু এটি জিন পরিবর্তন, তাই সম্ভাব্য ঝুঁকি রয়েছে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে,
নির্দিষ্ট C4-এনজাইম (যেমন NADP-ME) বেশি এক্সপ্রেশন হলে গাছের বৃদ্ধি হ্রাস পায়, পাতার রঙ ফিকা
হতে পারে, এবং অন্যান্য ফিজিওলজিক্যাল সমস্যাও হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, জার্নালে প্রকাশিত এক
পরীক্ষায় এমন স্টান্টিং (বৃদ্ধি রোধ) ও ব্লিচিং (পাতার রঙ ফিকে হওয়া) দেখেছে।
দীর্ঘমেয়াদে মানব দেহে পরিবর্তন: এই দিক থেকে সরাসরি তথ্য খুব সীমিত। কারণ এখনও “C4 চাল”
বাণিজ্যিকভাবে বড় পরিমাণে মানুষের খাদ্যচক্রে নেই। যে পরীক্ষাগুলি হয়েছে, সেগুলো গাছ পর্যায়ে বা ল্যাবরেটরি
পর্যায়ে; মানব মার্কেটে বা দীর্ঘ সময় ধরে মানুষের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার হওয়া ধানের বড়-স্কেল স্টাডি
(যেমন জনসংখ্যাগত স্বাস্থ্য বা দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পরীক্ষণ) এখনো সীমিত।
প্লশ্ন ৪) (বিকল্প) জেনেটিকালি মোডিফায়েড রাইস গবেষণার সাথে ধর্মের কোন সংঘর্ষ আছে কি?
উত্তর : ধর্ম বা নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই প্রশ্ন তুলতে অনেকেই উদ্বিগ্ন। প্রথমত, জেনেটিক্যালি মোডিফায়েড
(GM) ফসল নিয়েই সাধারণভাবে ধর্মীয় ও নৈতিক বিতর্ক রয়েছে, কারণ কিছু মানুষ মনে করে যে এটি "প্রকৃতির
সীমানা অতিক্রম করা" বা “ আল্লার সৃষ্টি পরিবর্তন করা” হতে পারে।
তবে, যদি উদ্দেশ্য থাকে খাদ্য নিরাপত্তা, দরিদ্র এলাকায় খাদ্য উত্পাদন বৃদ্ধি এবং পরিবেশগত স্থায়িত্ব (কম পানি,
কম সারের ব্যবহার) হয়, অনেক ধর্মীয় চিন্তাবিদ এবং সম্প্রদায় একে সহায়ক হিসেবে দেখতে পারে। প্রকল্পের লক্ষ্য
সাধারণত মানুষের কল্যাণ, বিশেষ করে খাদ্য ঘাটতির দেশগুলোর জন্য।
এছাড়া, ইসলামী দৃষ্টিকোণে: কিছু ইসলামী স্কলার একে গ্রহণযোগ্য বলেছে যদি এটা মানব কল্যাণে সাহায্য করে
এবং “হারাম” কিছুর সঙ্গে যুক্ত না হয় (যেমন, নিষিদ্ধ জিন বা মানব বিধ্বংসী কাজের জন্য ব্যবহৃত প্রযুক্তি)।
কোথাও কোথাও নিয়মিত মূল্যায়ন প্রয়োজন হয় (যেমন, জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি, পরিবেশগত প্রভাব) যাতে এটি
শরীর‘-নৈতিক সীমাবদ্ধতার মধ্যে থাকে।
প্রশ্ন ৫ : অমুসলিম গবেষকরা কি দ্বারা মোটিভেটেড হয়ে এই গবেষণা কাজে নিয়োজিত হয়েছেন?কোন ধর্মগ্রন্থ দ্বারা কি?
উত্তর : এটা একটি জটিল প্রশ্ন । কোন কাজ শুরুর পুর্বে বেশির মুসলমানই বিসমিল্লাহ বলে শুরু করেন ,
কেও জুরে শব্দ উচ্চারণ করে আবার অনেকেই মনে মনে বলে থাকেন , বুঝার উপায় নাই । তেমনিভাআএ
অমুসলিমরাও হয়তা অনেকেই জুরে জুরে বা মনে মনে তাদের ধর্মগ্রন্থ যথা খ্রিস্টনগন বাইবেল , ইহুদিগন
তৌরাতে থাকা তাদের ধর্মীয় রীতিতে কাজ শুরুর পুর্বে কিছু প্রার্থনা জাতীয় কথা থাকলে তা পাঠ করে থাকেন।
তাই এই বিষয়ে সঠিক করে কোন কথা বলা যাবেনা । তবে ভাল কথা বলেছেন বিষয়টি নিয়ে একটি অনলাইন
জরীপ পরিচালনা করা যেতে পারে ।
যাহোক সব মিলিয়ে, ধর্মীয় সংঘর্ষ নির্ভর করে কোন ধর্মীয় সম্প্রদায়, তার ধ্যান-ধারণা ও নিয়ম (fiqh),
এবং গবেষণা ও ব্যবহারের প্রেক্ষাপট অর্থাৎ এটি একদম নির্দিষ্টভাবে “ধর্মের সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে সংঘর্ষে”
বলাও যায় না, বরং বিভিন্ন মতামত থাকতে পারে এবং সময়ের সঙ্গে মানুষের বোঝাপড়া, নিয়ন্ত্রণ এবং নীতিমালা
উন্নত হতে পারে।
মোট কথা হল ধর্মের দৃষ্টিকোণ থেকে, কিছু বিতর্ক থাকতে পারে, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই এটি মানব কল্যাণ, খাদ্য
নিরাপত্তার প্রসঙ্গেই দেখা হয় এবং নীতিগত ও শাস্ত্রীয় ও তাত্বিক আলোচনার মধ্য দিয়ে মেনে নেওয়ার পথ
তৈরি করা যেতে পারে।
শুভেচ্ছা রইল
৮|
২৩ শে নভেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:১২
মলাসইলমুইনা বলেছেন: আলী ভাই,
চমৎকার লেখাটা পড়ালাম । কুরআনে কৃষি সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণের নির্দেশনা ও হাদিসে এই সম্পদ রক্ষনাবেক্ষনের যে বর্ণনা আছে সেগুলো যে কত আধুনিক আর সেগুলোর সাথে যে এখনকার এ বিষয়ের যে ফিল্ডগুলো আছে তাদের ফাইন্ডিংসের মিলগুলো যে কত বিস্ময়কর সেটা আসলে এ'নিয়ে না পড়লে, অনেক ভাবনা চিন্তা না করলে বোঝা খুবই কঠিন। এ নিয়ে আপনার মন্তব্যটা "এখানে পরিস্কারভাবে উল্লেখ্য যে পবিত্র কোরান কোন বিজ্ঞান গ্রন্থ নয় , এটা নিদর্শন ও দিক সির্দেশনামুলক একটি ঐশী বাণী সমৃদ্ধ মহাগ্রন্থ । পর্যালোচনায় আরো দেখা যায় যে, পবিত্র কুরআনে সরাসরি ‘প্রয়োগভিত্তিক গবেষণা’ শব্দটি উল্লেখ না থাকলেও এর ভিতরে এই ধরনের গবেষণার ভিত্তি বিদ্যমান " চমৎকার হয়েছে । কুরআনের নির্দেশনাগুলো আমাদের এখনকার বিজ্ঞানগত অভিজ্ঞগতার সাথে সাংঘর্ষিক কিনা সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ । আর সেখানে কোনো সাংঘর্ষিক কিছু নেই ।
আমি এগ্রো সাইন্সের মানুষ না । কিন্তু তবুও Consortium / C4 Rice Project নিয়ে আপনার লেখাটুকু আগ্রহ নিয়ে পড়লাম । আর অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালযে বিবৃতি, “যদি ধানকে C4 photosynthesis-এ রূপান্তর করা যায়, তাহলে তাত্ত্বিকভাবে তার উৎপাদন ৫০ শতাংশ বাড়তে পারে" পরে বাংলাদেশের পোভার্টি এলিভিয়েশন নিয়ে নতুন করে আশাবাদী হলাম । ডেভলাপমেন্ট ইকোনমিক্সের মানুষ হিসেবে এটা পোভার্টি এলিভিয়েশনের ক্ষেত্রে এটা আমাদের দেশের জন্য বড় সহায়ক হবে সেটা আমি সবসময়ই বিশ্বাস করি । একটু অফটপিকঃ হলেও বলি, আপনি হয়তো জানেন IRRI -এর এক সময়ের সোশ্যাল সায়েন্স ডিপার্টমেন্টের ডাইরেক্টর ছিলেন বাংলাদেশের খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ ডক্টর মাহবুব হোসেন । উনি ডক্টর ইউনুস সাথে গ্রামীণ ব্যাংকের একজন কো-ফাউন্ডারও ছিলেন। উনাকে আমি চিনতাম অনেক আগে থেকেই পারিবারিক ভাবেই। আমার ভার্জিনিয়ার বাসাতেও উনি এসেছেন ডিসিতে কনফারেন্স বা মিটিং করার অবসরে।আমি IRRI-এর কাজ নিয়ে সবসময়ই তাই খানিকটা জানি উনার থেকে। উনি মারা গেছেন ২০১৬ সালে। তারপর থেকে IRRI-র কাজ নিয়ে খুব কথাবার্তা হয়নি কারো সাথেই । ধানের C4 photosynthesis নিয়ে অনেকটা জানা হলো আপনার লেখা থেকে । চমৎকার লেখার জন্য আবারো একটা ধন্যবাদ ।
২৪ শে নভেম্বর, ২০২৫ ভোর ৬:১৬
ডঃ এম এ আলী বলেছেন:
আপনার গভীর অনুভূতিপূর্ণ মন্তব্যটি পড়ে সত্যিই অনুপ্রাণিত হলাম। কুরআন ও হাদিসের কৃষি-সংক্রান্ত
নির্দেশনাগুলোকে আপনি যে আধুনিক বিজ্ঞানচর্চার আলোকে পুনরায় বিশ্লেষণ করেছেন এটি অত্যন্ত প্রশংসনীয়।
আসলেই, পবিত্র কুরআন কোনো বৈজ্ঞানিক গ্রন্থ নয়; তবে তার দিক-নির্দেশনাগুলো মানবজাতিকে গবেষণা,
অনুসন্ধান, পরিবেশ-রক্ষণ ও সুষম ব্যবহার সম্পর্কে যে সুস্পষ্ট বোধ তৈরিতে সাহায্য করে, সেটাই বিস্ময়ের জায়গা।
আর আধুনিক এগ্রো-সায়েন্স কিংবা ইকোলজি যে আজ নানা পরীক্ষার মাধ্যমে একই নীতিসমূহের বৈজ্ঞানিক রূপ
খুঁজে পাচ্ছে, তা ঈমান ও জ্ঞানের পারস্পরিক সম্মিলনের এক দৃষ্টান্ত।
আপনি যে C4 Rice Consortium এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার উদ্ধৃতিটি এত মনোযোগ দিয়ে
পড়েছেন, সেটিও আনন্দের বিষয়। ধানকে যদি পূর্ণাঙ্গ C4 photosynthesis-এ রূপান্তর করা যায় এর
সম্ভাব্য ৫০% উৎপাদন বৃদ্ধির ধারণাটি নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের মতো কৃষিনির্ভর দেশে দারিদ্র্যতা হ্রাসে
নতুন এক আলো দেখাতে পারে। বিশেষত ডেভেলপমেন্ট ইকোনমিক্সের প্রেক্ষাপটে আপনি যেমন উল্লেখ
করেছেন এটি খাদ্য নিরাপত্তা, উৎপাদন ব্যয়, এবং গ্রামীণ অর্থনীতির শক্তিশালীকরণে যুগান্তকারী প্রভাব
রাখতে পারে।
IRRI-এর প্রেক্ষাপটে আপনার ব্যক্তিগত স্মৃতিও অত্যন্ত মূল্যবান। ড. মাহবুব হোসেন ছিলেন বাংলাদেশের
কৃষি-উন্নয়ন ও সামাজিক বিজ্ঞান গবেষণার এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। আপনার সঙ্গে তাঁর সরাসরি পরিচয় এবং তাঁর
কাছ থেকে IRRI-এর কার্যক্রম সম্পর্কে জানা এটিকে এক ধরনের বিশেষ সাক্ষ্য বলা যায়। বাংলাদেশে গ্রামীণ
উন্নয়ন, কৃষি উৎপাদন ও দারিদ্র্য বিমোচন সম্পর্কে তাঁর বাস্তবমুখী লেখনী ও গবেষণাকে আজও নতুন প্রজন্মের
গবেষকদের পথ দেখায়।
আমি নীজেকে গৌরবান্বিত মনে করি কারণ .ডক্টর মাহবুব হোসেন বাংলাদের একটি আন্তর্জাতিক মানের গবেষনা
প্রতিস্ঠান বাংলাদেশ গবেষনা ইন্সটিটিউটের এককালীন ডাইরেকটর জেনারেল ছিলেন , াআমার কর্ম জীবনের শুরু
সেখানেই একজন রিসার্চ এসোসিয়েট হিসাবে আজ হতে প্রায় ৫০ বছর আগে। সেসময় হতেই তাঁর সাথে পরিচিতি।
তাঁকে নিয়ে অনেক মধুর স্মৃতি জমে আছে অন্তরে আমার । তাঁর প্রতি রইল শ্রদ্ধাঞ্জলী ।
আমি লজ্জিত যে বাংলাদেশে সে সময় ভাস্থানের সময় আপনার নম্বর সেভ করা ফোন সেট টি হারিয়ে
যাওয়ায় আর যোগাযোগ করে উঠতে পারিনি আপনার সংগে। যাহোক, অমি মনে হয় পুরান কম্পিটারে
খুজলে আপনার নম্বর পেয়ে যাব । পেলাম কিনা জানাব সেই নাম্বার ধরেই ।
এবার ফিরে আসি মন্তব্যের কথায়। আপনার মন্তব্য শুধু প্রশংসা নয় বরং জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যৎ-আশার
এক সুন্দর বিন্যাস। এজন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা।
আবারও ধন্যবাদ আপনার সমৃদ্ধ মতামতের জন্য।
৯|
২৩ শে নভেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:০২
সৈয়দ মশিউর রহমান বলেছেন: লেখার চেয়ে মন্তব্য প্রতিমন্তব্য গুলো বেশি ভালো লেগেছে।
২৪ শে নভেম্বর, ২০২৫ ভোর ৬:১৯
ডঃ এম এ আলী বলেছেন:
মুল্যবান কথা বলার জন্য ধন্যাবদ ।
মন্তব্য ও প্রতিমন্তব্যগুলি আবার
একাবর এসে দেখে যাওয়ার
আমন্ত্রন রইল ।
শুভেচ্ছা রইল
১০|
২৩ শে নভেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২৭
রাজীব নুর বলেছেন: পড়লাম।
ধর্ম একদিকে, বিজ্ঞান আরেক দিকে। আমরা কোন দিকে যাবো?
২৪ শে নভেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:২২
ডঃ এম এ আলী বলেছেন:
ভাই রাজিব নুর ,
খুব সুন্দর মুল্যবান একটি প্রশ্ন করেছেন ।
ধর্ম একদিকে, বিজ্ঞান আরেক দিকেসআমরা কোন দিকে যাবো?
আমরা যদি মানবসভ্যতার ইতিহাসের দিকে তাকাই তাহলে স্পষ্ট দেখা যাবে ধর্ম এবং বিজ্ঞান দু’টি শক্তিশালী
প্রবাহ, যা বিভিন্ন সময় মানুষের চিন্তা, মূল্যবোধ, জীবনযাপন এবং দৃষ্টিভঙ্গিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে।
তবে আধুনিক যুগে প্রায়ই এই প্রশ্নটি ওঠে: ধর্ম একদিকে, বিজ্ঞান আরেক দিকে মানুষ তাহলে কোন পথে হাঁটবে?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে আমাদের প্রথমেই বুঝতে হবে ধর্ম কী, বিজ্ঞান কী, এবং এ দু’য়ের প্রকৃত
সম্পর্ক কোথায়।
ধর্ম মুলত মানবমনের আধ্যাত্মিক ও নৈতিক ভিত্তি। ধর্ম জানায় মানবজীবনের উদ্দেশ্য, নৈতিকতা, কর্মফল, স্রষ্টা,
সৃষ্টি, জীবন-মৃত্যু ইত্যাদি বিষয়ে একটি সার্বিক ব্যাখ্যা প্রদান করে। ধর্ম মানুষের মনকে প্রশান্ত করে, জীবনে
মূল্যবোধ দেয়, কষ্টে-দুঃখে ভাষা দেয়, সহ্যের শক্তি জোগায়।ধর্মের মাধ্যমে মানুষ আল্লা তথা সর্বোচ্চ
শক্তির প্রতি নিজেকে সমর্পণ করে, যা তাকে নৈতিকতার দিকে পরিচালিত করে এবং সামাজিক জীবনকে
সুশৃঙ্খল রাখে।ধর্মের শক্তি হলো বিশ্বাস, নৈতিকতা, এবং আধ্যাত্মিক উন্নতি।
বিজ্ঞান দেখায় অনুসন্ধানের পথ, যুক্তির আলো। বিজ্ঞান হলো পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষণ ও যুক্তির মাধ্যমে তথ্য
আবিষ্কারের পদ্ধতি। বিজ্ঞান আমাদের দিয়েছে প্রযুক্তি, চিকিৎসা, যোগাযোগ, পরিবহন, জগতকে বোঝার
ক্ষমতা এবং মানবজীবনের মানোন্নয়ন। বিজ্ঞানের শক্তি হলো পরীক্ষা, প্রমাণ, এবং উন্নয়ন।
এখন প্রশ্ন হল ধর্ম ও বিজ্ঞানের বিরোধ কোথায়? বিরোধ আসলে ধারণাগত, বাস্তব নয়।
ধর্মের মূল লক্ষ্য হলো মানুষের চরিত্র, নৈতিকতা, আত্মঅনুসন্ধান, সৃস্টিকর্তা আল্লাহর উপলব্ধি।
বিজ্ঞানের মূল লক্ষ্য হলো বিশ্বের নিয়ম জানা, বস্তুগত বাস্তবতা বোঝা ও প্রযুক্তি উন্নয়ন।
সংঘাত দেখা দেয় তখনই, যখন ধর্ম বিজ্ঞানকে বাধা দিতে চায়, অথবা বিজ্ঞানীরা ধর্মকে অস্বীকার করতে চান।
কিন্তু ইতিহাস বলে জ্ঞান ও সত্যের অনুসন্ধানে উভয়ই গুরুত্বপূর্ণ।ইবনে সিনা, আল-বারুনি, ইবনে রুশদ,
নিউটন অনেকে একইসাথে ধর্মপ্রাণ এবং বৈজ্ঞানিক ছিলেন।
আমরা কোন দিকে যাবো? এ প্রশ্নের সরল জবাব হতে পারে আমাদের একদিকে নয়; দুই দিকেই যেতে হবে।
কিন্তু বিশদভাবে বলতে গেলে বলতে হয়-
১. ব্যক্তিগত জীবনের নৈতিকতা, শান্তি ও চরিত্রগঠনে আমরা ধর্মের দিকে যাবো।
কারণ ধর্ম ছাড়া মানুষের মনে নৈতিকতা দুর্বল হয়ে পড়ে।আধ্যাত্মিকতার অভাবে মানুষ যন্ত্রে পরিণত হয়।
২. বাস্তব সমস্যার সমাধান, প্রযুক্তি, চিকিৎসা, জাগতিক জ্ঞান বিস্তারে আমরা বিজ্ঞানের দিকে যাবো।কারণবিজ্ঞান ছাড়া মানবসভ্যতা স্থবির হয়ে যায়। জাগতিক বস্তুগত সমস্যা, রোগ, দুর্ভিক্ষ, পরিবেশ এসবের সমাধান বিজ্ঞানের হাতেই।
তারপরেও কিছু কিছু সমস্যা আছে যেগুলির নিয়ন্ত্রন কেবল শক্তিমান ্আল্লাহর হাতেই যেমন ভুমিকম্প রোধের
ক্ষমতা এখন পর্যন্ত বিজ্ঞান দিতে পারেনি বিজ্ঞান শুধু স্পল্প মাত্রার ভুমিকম্পের ক্ষযক্ষতির হাত হতে শুধুমাত্র
নির্মিত ভবনাদিকে ক্ষতির হাত হতে প্রতিরোধের প্রযুক্তি দিতে পেরেছে , তবে খোলা মাঠের ফাটল রোধের
ক্ষমতা এখনো প্রযুক্তি দিতে পারেনি । তবে সেটাও হয়ত একদিন দিতে পারে তবে ভুপৃস্টের ১০ কিলোমিটার
গভীরে ভুমিকম্পের উৎপত্তি স্থলে ভুমিকম্প জন্ম নেয়ার ক্ষমতা প্রতিরোধের ক্ষমতা প্রযুতি যে কবে দিতে পারবে
তা কেবল আল্লাই জানেন!!!!
যাহোক, আমার মতে দুইয়ের সমন্বয়ই মানবজীবনকে পূর্ণতা দেয়।ধর্ম-বিজ্ঞান সমন্বিত মানবজীবন
একটি উন্নত দৃষ্টিভঙ্গি , আমিউ এটাতে বিশ্বাসী । তাই আমি ধর্ম ও বিজ্ঞানকে পাশাপাশা রেখে
লেখা লেখি করছি । কারণ ধর্ম আমাদের বলে তোমার নৈতিকতা অটুট রাখো, স্রষ্টার সৃষ্টিকে ভালোবাসো,
অন্যায় করো না। আর বিজ্ঞান আমাদের বলে তোমার মস্তিষ্ক খোলা রাখো, পরীক্ষা করে দেখো, জাগতিক
বিষয়ে জ্ঞান বাড়াও। ধর্ম হৃদয়কে শুদ্ধ করে। বিজ্ঞান মস্তিষ্ককে জাগ্রত করে। আর এই দুয়ের সমন্বয়েই
মানুষ পূর্ণ মানুষ হয়ে ওঠে। তাই “ধর্ম একদিকে, বিজ্ঞান আরেক দিকে আমরা কোন দিকে যাবো?”
এর সরল উত্তর হল আমরা এমন পথে যাবো যেখানে ধর্ম আমাদের নৈতিক ভিত্তি গড়ে দেবে, আর বিজ্ঞান
আমাদের বাস্তব জীবনকে উন্নত করবে। মানুষের কল্যাণের জন্য ধর্ম ও বিজ্ঞান দুইই প্রয়োজন।
বিরোধের পথ নয়, সমন্বয়ের পথই মানব সভ্যতার অগ্রগতির মূল চাবিকাঠি।
তাই আসুন আমরা ধর্ম ও বিজ্ঞানকে নিয়ে সমন্বয়ের পথেই চলি যতদিন পর্যন্ত না কোনটাই মানব সভ্যতার
জন্য সত্যিকার অর্থে ক্ষতিকর বলে প্রমানিত হয় ।
শুভেচ্ছা রইল
১১|
২৩ শে নভেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৩৭
রাজীব নুর বলেছেন: আপনি হয়তো ভাববেন আপনার পোষ্ট টি না পড়েই মন্তব্য করেছি। দয়া কর এমনটা ভাববেন না। পুরো লেখাটি মন দিয়ে পড়েছি।
সুন্দর সাজিয়ে গুছিয়ে লিখেছেন।
২৪ শে নভেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:২৫
ডঃ এম এ আলী বলেছেন:
পুরা লেখাটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ ।
সুন্দর অনুভুত হয়েছে জেনে খুশী হলাম ।
শুভেচ্ছা রইল
১২|
২৪ শে নভেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৪১
এভো বলেছেন: সুরা আল আনাম আয়াত ৯৯
তিনিই আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন অতঃপর আমি এর দ্বারা সর্বপ্রকার উদ্ভিদ উৎপন্ন করেছি, অতঃপর আমি এ থেকে সবুজ ফসল নির্গত করেছি, যা থেকে যুগ্ম বীজ উৎপন্ন করি। খেজুরের কাঁদি থেকে গুচ্ছ বের করি, যা নুয়ে থাকে এবং আঙ্গুরের বাগান, যয়তুন, আনার পরস্পর সাদৃশ্যযুক্ত এবং সাদৃশ্যহীন। বিভিন্ন গাছের ফলের প্রতি লক্ষ্য কর যখন সেুগুলো ফলন্ত হয় এবং তার পরিপক্কতার প্রতি লক্ষ্য কর। নিশ্চয় এ গুলোতে নিদর্শন রয়েছে ঈমানদারদের জন্যে।
এই আয়াতে তিনি এবং আমিটা কে ?
২৫ শে নভেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:২৮
ডঃ এম এ আলী বলেছেন:
ধন্যাবাদ মুল্যবান একটি প্রশ্ন উত্থাপন করার জন্য
নীচে সুরা আল-আন’আম ৯৯-এ ব্যবহৃত “তিনি” (هُوَ) ও “আমি” (أَنزَلْنَا / أَخْرَجْنَا) এই দুটি সর্বনামের বিষয়ে
ধাপে ধাপে একটি যুক্তিনির্ভর, ভাষাতাত্ত্বিক ও তাফসীরভিত্তিক ব্যাখ্যা দেওয়া হলো, যাতে পরিষ্কার হয় এটি একক
সত্তা আল্লাহরই বাণী, এতে কোনো দ্বৈত বক্তার সমস্যা নেই।
অপনার মূল প্রশ্ন: আয়াতে “তিনি” (He) এবং “আমি” (We) কে। এপ্রসঙ্গে একটি বিষদ ব্যখা দেয়া প্রয়োজন
বোধ করছি কেননা এ পোস্টে দেখা য়ায় এখানে মন্তব্য ও প্রতিমন্তব্য গুলি পোস্টের লেখার চেয়ে বেশি আকর্ষনীয়
তাদের কাছে । তাই বিয়য়টি একটু বিষদভাবে তুলে ধরেছি । াআশা করি সেখান থেকে আপনি আপনার
প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন ।
১)কোরআনে কখনও কখনো আল্লাহ নিজেকে একবচনে (আমি / আমি-ই / তিনি), আবার কখনও বহুবচনে (
আমরা ) উল্লেখ করেন। এতে অনেকেই মনে করেন এতে বক্তার সংখ্যা বহু হয়ে যায়। কিন্তু আরবি সাহিত্য,
ব্যাকরণ এবং আরবি ভাষার রাজকীয় রীতিতে এটি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক, এবং এতে বক্তা একাধিক হওয়ার ধারণা
সৃষ্টি হয় না।
২)এখানে বুঝার সুবিধার জন্য আরবি ভাষায় তিনি ও আমি/আমরা ব্যবহারের প্রাকৃতিক নিয়ম সম্পর্কে প্রাসঙ্গিক
বিবেচনায় কিছু ব্যখা তুলে ধরেছি ।
(ক) হুয়া / তিনি আল্লাহর একত্ব ও বিশুদ্ধত্ব প্রকাশে ব্যবহৃত হয় যখন আল্লাহর সত্তাগত একত্ব, মহানত্ব, মহিমা বর্ণিত
হয়, তখন সাধারণত “তিনি” (هُوَ) ব্যবহৃত হয়। এই আয়াতটিতে প্রথম অংশে বলা হয়: "وَهُوَ الَّذِي أَنزَلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً"
আর তিনিই আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন... এটি আল্লাহর একক ক্ষমতা বোঝায়।
(খ) আমি বা আমরা (We) আরবদের Royal Plural বা ‘সম্মানসূচক বহুবচন’
অথবা বলা হয় plural of majesty। আরবিতে ক্ষমতা, কর্তৃত্ব ও মহিমা প্রকাশে একজন ব্যক্তি নিজেকে আমরা
বলে উল্লেখ করতে পারেন,যেমন রাজা বলেন: “আমরা আদেশ দিচ্ছি” যদিও তিনি একাই।
কোরআনে আল্লাহ যখন সৃজন,পরিচালনা, ফসল উৎপাদন,বিধান পাঠানো ইত্যাদিতে আপনার ক্ষমতা ও কর্মের
গাম্ভীর্য প্রকাশ করতে চান তখন আমি/আমরা (أَنزَلْنَا / أَخْرَجْنَا) ব্যবহার হয়। এটি সংখ্যাগত বহুবচন নয় বরং
মহিমার বহুবচন।
৩) এখন প্রশ্ন হলো একই আয়াতে দুই স্টাইল বদলানো কি ভাষাগতভাবে স্বাভাবিক? হ্যাঁ। আরবি অলঙ্কারের
একটি বিশেষ নীতি আছে:
التفات (ইলতিফাত) বক্তার রীতিগত পরিবর্তন এটি বাক্যের সৌন্দর্য, শক্তি ও গভীরতা বাড়ায়।
কোরআনের বহু আয়াতে এই শৈলী ব্যবহৃত হয়েছে: গায়েব থেকে প্রথম পুরুষে, প্রথম পুরুষ থেকে তৃতীয় পুরুষে
একবচন থেকে বহুবচনে বহুবচন থেকে একবচনে এটি বক্তা পরিবর্তন নয় বরং একই বক্তা ভিন্ন আবেগ, ভঙ্গি ও
বিষয়ের গুরুত্ব বোঝাতে ভঙ্গি পরিবর্তন করছেন।সুরা আল-আন’আম ৯৯ এ সেই শৈলীর একটি অপূর্ব উদাহরণ।
৪) আয়াতের তিনি ও আমি এ দুটোই আল্লাহর বক্তব্য হওয়ার ভাষাতাত্ত্বিক প্রমাণ
(১) আয়াতের পুরো বক্তব্য একটানা একই প্রসঙ্গের মধ্যে আল্লাহই বৃষ্টি বর্ষণ করেন, আল্লাহই উদ্ভিদ জন্মান,
তিনিই ফল পাকান। বক্তা ভিন্ন হলে প্রসঙ্গ ভেঙে যেত, অর্থও অস্বাভাবিক হতো।
(২) কোন স্থানে ফেরেশতা, নবী বা অন্য কেউ বক্তব্যে যোগ হয়েছে এমন কোনো ব্যাকরণিক ইঙ্গিত নেই, কোরআন
যেখানে নবী বা ফেরেশতার বক্তব্য আসে, সেখানে স্পষ্টভাবে তা উল্লেখ থাকে।
(৩) আরবি তাফসীর গ্রন্থসমূহে (তাবারী, কুরতুবি, ইবনে কাসির) একক বক্তা আল্লাহ স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে ,
প্রাচীন আরবি ভাষাবিদরা কখনও বলেননি যে এতে একাধিক বক্তার ধারণা আসে।
(৪) পুরো আয়াতে গতি, ঘটনা ও কর্ম সবই আল্লাহর ক্রিয়াপদে যুক্ত -বর্ষণ করেছি, উৎপন্ন করেছি, বের করেছি
এগুলো আল্লাহরই ক্রিয়া হিসেবে সর্বত্র ধারাবাহিক।
৫) যদি বক্তা একাধিক হতো, তবে আয়াতের অর্থ অপ্রাকৃতিক হয়ে যেত
যেমন: তিনি পানি বর্ষণ করলেন, তারপর আমরা ফসল উৎপন্ন করলাম।
যদি ‘তিনি’ আলাদা আর ‘আমরা’ আলাদা হয় তাহলে পানি এক সত্তা বর্ষণ করছে, আর ফসল অন্য সত্তা উৎপন্ন
করছে। এটি তো আল্লাহর একত্বের মূল শিক্ষার পরিপন্থী।কিন্তু ইসলাম, কোরআন এবং পুরো তাফসীর ঐতিহ্য এ
ধরনের কোনো সম্ভাবনাকে কখনো তিনি ও আমিকে ভিন্ন সত্তা হিসাবে ব্যখা করেন নি ।
৬) কোরআনে আমি ও তিনি এ দুটি মিলিয়ে ব্যবহার কেবল আল্লাহর বাণী হওয়াই প্রমাণ করে, যদি কোরআন
মানুষের লেখা হতো,এমন জটিল ভাষিক শিল্প (ইলতিফাত), এত নিখুঁতভাবে পুরো ২৩ বছরের নাযিল কোরানে ,
কখনও ভুল, কখনও গড়মিল থাকত।কিন্তু পুরো কোরআনে এরকম শত শত রূপান্তর রয়েছে, সবই ভাষাগতভাবে
যথাযথ, অর্থগতভাবে সুসংহত, আরবরা এর সৌন্দর্যের জন্যই কোরআনকে চ্যালেঞ্জ করতে পারেনি।
এটি বরং প্রমাণ করে বক্তা একজনই আল্লাহ। কেবল তাঁর ভাষা-শৈলী মানুষের ভাষা-শৈলী থেকে অনেক ঊর্ধ্বে।
সুতরাং, “তিনি” (হুয়া)আল্লাহর একক সত্তা বোঝাতে আর “আমরা/আমি” আল্লাহর মহিমা, ক্ষমতা ও কর্মকাণ্ডের
গাম্ভীর্য বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে।এতে বক্তার সংখ্যা বাড়ে না, ভাষার শৈলী বৈচিত্র্যময় হয় এবং আল্লাহর একত্ব,
সর্বশক্তিমানত্ব আরও স্পষ্ট হয়।
আবারো ধন্যবাদ সুন্দর একটি প্রশ্ন করার জন্য ।
শুভেচ্ছা রইল
১৩|
২৫ শে নভেম্বর, ২০২৫ ভোর ৬:০২
অগ্নিবাবা বলেছেন: জ্যাক স্মিথ বলেছেন: সত্যিই কোরানের বিস্ময়কর জ্ঞান দেখে অভিভূত না হয়ে পারা যায় না- আকাশ থেকে পানি পরে, মাটির নিচ থেকে বীজ অঙ্কুরিত হয়, বাতাস জলরাশিকে বয়ে নিয়ে যায়, সাগরের জল লবনাক্ত, সূর্য পশ্চিমে অস্ত যায় এবং পুর্বদিক হতে উদিত হয় ইত্যাদি জ্ঞানগুলো আমরা শুধুমাত্র কুরআন থেকেই জানিতে পারি, কুরাআন ব্যতিত এই জ্ঞান অর্জন করা অসম্ভব। ---- হা হা হা হা।
১৪|
২৫ শে নভেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:২২
এভো বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার সুন্দর বিশ্লেষনের জন্য । আপনি কি অত:পর, শব্দটি কি উপেক্ষা করেছেন ? আপনার ব্যাখাটা ভুল প্রমাণ করে অত:পর শব্দ টি ।
তিনিই আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন অতঃপর আমি এর দ্বারা সর্বপ্রকার উদ্ভিদ উৎপন্ন করেছি, অতঃপর আমি এ থেকে সবুজ ফসল নির্গত করেছি
তিনির পরে অত:পর আমি লিখা হোলে একই সত্তা বা ব্যক্তিকে বোঝান হয় না , দুটো ভিন্ন সত্তা বুঝান হয় । তিনি করেছেন অত:পর আমি করেছি--- করেছেন এবং করেছি ভিতরে পার্থক্য আছে । করেছেন -- করেছি শব্দ দ্বয় দিয়ে একই সত্তা বোঝায় না । ধন্যবাদ
২৫ শে নভেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৪৪
ডঃ এম এ আলী বলেছেন:
আবার এসে কথা বলার জন্য ধন্যবাদ । এত উচ্চমাত্রার আরবী ব্যকরনের মারপ্যাচ বুঝার জ্ঞান এখনো অর্জন করতে পারিনি। তবে আরবীয়দের আরবী ভাষার ততকালিন সময়ের বচনভঙ্গীর গুঢ় দিকটি বাঙলায় অনুবাদ ভনেক সময় ঠিকমত হয়না ।
তাই অনেক ক্ষেত্রেই বিভান্তি সৃস্টি হয় । তাই গুরার দিকে অনেকেই বাংলায় কোরানের অনুবাদকে অনুৎসাহিত করেছেন ।
গীরিশ চন্দ্র প্রণিত কোরানের বাংলা অনুবাদটি দেখতে পারলে ভাল হত , কিন্ত সেটা সংগ্রহে নেই , লাইব্রেরীতে পাওয়াও
দুরুহ ।
যাহোক ,ঐ আয়াতে তিনি ও আমি ব্যবহারের আরবী ভাষার ব্যকরণগত দিকটি আমি উপরের প্রতি মন্তব্যে
তুলে ধরেছি । এখানে এই আয়াতটির একটি ইংরেজী অনুবাদ তুলে দিলাম । যেখানে অতঃপর এর জায়গায়
এবং ( and) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে । দেখেন এবার কিছুটা বোধগম্য হয় কিনা । তারপরেও যদি বোধগম্য
না হয় আমার আর কিছু বলার নেই । আমি সৃস্টিকর্তা আল্লাহর একত্বে বিশ্বাসী এটাই আমার শেষ কথা ।
আপনি, আপনার জিজ্ঞাসা কোন উপযুক্ত জায়গায় করতে পারেন । আমি কোন ইসলামিক স্কলার নই । আমি
আমার সীমাবদ্ধ জ্ঞানে জানার বিষয়গুলি ব্লগে লিখে শেযার করি, অন্যকে জানানোর চেয়ে পারস্পরিক মতামত
চালাচালির মাধ্যমে নীজের জানার পরিধিকে আরো সমৃদ্ধ করার জন্য । আপনার মুল্যবান প্রশ্নটি হতে বিষয়টি
ভাল করে জানার জন্য উদ্যোগী হয়েছি । আমি চেষ্টা করব আরো কোন বিজ্ঞ ইসলামী স্কলারের নিকট হতে
বিষয়টি আরো ভাল করে জানার। জানতে পারলে তা জানাব। ততদিন দয়া করে অপেক্ষা করবেন। যাহোক,
নীচে আয়াতটির ইংরেজি অনুবাদটি দেখতে পারেন, যেখানে অতঃপর এর পরিবর্তে এন্ড শব্দটি ব্যাবহৃত হয়েছে ।
English
And it is He who sends down rain from the sky, and We produce thereby the growth of
all things. We produce from it greenery from which We produce grains arranged in
layers. And from the palm trees - of its emerging fruit are clusters hanging low.
And [We produce] gardens of grapevines and olives and pomegranates, similar yet
varied. Look at [each of] its fruit when it yields and [at] its ripening. Indeed in that
are signs for a people who believe.
শুভেচ্ছা রইল
১৫|
২৬ শে নভেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৪৪
এভো বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার বিশ্লেষন মূলক উত্তরের জন্য --
আরো অনুবাদ দেখুন --- যেখানে অত:পরের সমক্ষ শব্দ ব্যবহার হয়েছে --
Pickthall: He it is Who sendeth down water from the sky, and therewith We bring forth buds of every kind; We bring forth the green blade from which We bring forth the thick-clustered grain; and from the date-palm, from the pollen thereof, spring pendant bunches; and (We bring forth) gardens of grapes, and the olive and the pomegranate, alike and unlike. Look upon the fruit thereof, when they bear fruit, and upon its ripening. Lo! herein verily are portents for a people who believe.
Yusuf Ali: It is He Who sendeth down rain from the skies: with it We produce vegetation of all kinds: from some We produce green (crops), out of which We produce grain, heaped up (at harvest); out of the date-palm and its sheaths (or spathes) (come) clusters of dates hanging low and near: and (then there are) gardens of grapes, and olives, and pomegranates, each similar (in kind) yet different (in variety): when they begin to bear fruit, feast your eyes with the fruit and the ripeness thereof. Behold! in these things there are signs for people who believe.
Shakir: And He it is Who sends down water from the cloud, then We bring forth with it buds of all (plants), then We bring forth from it green (foliage) from which We produce grain piled up (in the ear); and of the palm-tree, of the sheaths of it, come forth clusters (of dates) within reach, and gardens of grapes and olives and pomegranates, alike and unlike; behold the fruit of it when it yields the fruit and the ripening of it; most surely there are signs in this for a people who believe.
Mohsin Khan: It is He Who sends down water (rain) from the sky, and with it We bring forth vegetation of all kinds, and out of it We bring forth green stalks, from which We bring forth thick clustered grain. And out of the datepalm and its spathe come forth clusters of dates hanging low and near, and gardens of grapes, olives and pomegranates, each similar (in kind) yet different (in variety and taste). Look at their fruits when they begin to bear, and the ripeness thereof. Verily! In these things there are signs for people who believe.
Arberry: It is He who sent down out of heaven water, and thereby We have brought forth the shoot of every plant, and then We have brought forth the green leaf of it, bringing forth from it close-compounded grain, and out of the palm-tree, from the spathe of it, dates thick-lustered, ready to the hand, and gardens of vines, olives, pomegranates, like each to each, and each unlike to each. Look upon their fruits when they fructify and ripen! Surely, in all this are signs for a people who do believe.
فَأَخْرَجْنَا ---then We bring forth (৬:৯৯:৭)
Put together: فَأَخْرَجْنَا means “So We brought forth” or “Then We caused to come out”, usually referring to something Allah caused to emerge (like plants, fruits, or results of creation).
১৬|
২৬ শে নভেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০১
ডঃ এম এ আলী বলেছেন:
মুল্যবান তথ্য পরিবেশনের জন্য ধন্যবাদ ।
পারস্পরিক মিথক্রিয়ায় জ্ঞানভান্ডার সমৃদ্ধ হয় ।
শুভেচ্ছা রইল
১৭|
৩০ শে নভেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৪
খায়রুল আহসান বলেছেন: অজস্র তথ্যবহুল সূত্রের লিঙ্ক এবং পবিত্র ক্বুর'আন থেকে প্রাসঙ্গিক আয়াতসমূহের উল্লেখপূর্বক আপনার এ আলোচনাটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হয়েছে। আশাকরি এটা দেশের কৃষি উৎপাদন সংক্রান্ত নীতি নির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এ ব্যাপারে তাদেরকে আরও তৎপর হতে উৎসাহিত করবে।
আরও কিছু কথা নিয়ে এ পোস্টে আবারও আসছি।
১৮|
৩০ শে নভেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:১৬
খায়রুল আহসান বলেছেন: মূল পোস্টে তো বটেই, পাঠকের মন্তব্যের জবাবে প্রতিমন্তব্যগুলোতেও অনেক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ এসেছে। এগুলো পোস্টকে আরও সমৃদ্ধ করেছে।
©somewhere in net ltd.
১|
২২ শে নভেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২৩
নতুন নকিব বলেছেন:
দীর্ঘ এবং মূল্যবান পোস্টটি সময় নিয়ে পড়ার ইচ্ছে থাকলো। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কুরআন হাদিসের আলোকে তুলে ধরার জন্য ধন্যবাদ।