নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি ঘুরে ফিরে আবার ছুটে আসি তোমার কাছে...

এবিএম বাকী

কে আমি? কোথায় থেকে এসেছি? কোথায় যাবো? আমি কি জন্য এসেছি? আর কি করছি??

এবিএম বাকী › বিস্তারিত পোস্টঃ

অভিমানি বউ

০৩ রা আগস্ট, ২০১৭ ভোর ৬:২৬

আমার হিটলার বাবার চাপে আমাকে একটা অপরিচিত মেয়েকে বিয়ে করতে হলো । একটা মেয়েকে চিনিনা , জানিনা তাকে নিয়ে কিভাবে সংসার করা যায় সে কথা আমার মাথায় ঢুকছেনা । এমনি এই বিয়ে তে আমার কোন মত ছিলো না তারপর মেয়েটা আমার যোগ্য না । আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি আর মেয়েটি কেবল ইন্টার পাশ করল । আমার মা আমার পক্ষে ছিলেন কিন্তু আব্বুর ভয়ে তিনিও কিছু করতে পারেন নি ।

ঠিক বিয়ের ঠিক দুদিন পর আমার মা সেই অচেনা মেয়েটির ভক্ত হয়ে গেল । আমার মা আমার কাছে এসে বলছে: 'বাবা, মেয়েটি অনেক ভালো , এমন মেয়ে পাওয়া কঠিন" । মায়ের মুখে এমন প্রশংসা শুনে আমার আরো রাগ হলো । কিছু না বলে ঘর থেকে বের হয়ে গেলাম । রাত ১০ টা পর্যন্ত বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে ১১ টায় বাসায় ফিরলাম । ভেবেছিলাম সে ঘুমিয়ে পড়েছে । না সে ঘুমায়নি , খাবার টেবিলে আমার জন্য অপেক্ষা করছে । অনেক রাত হয়ে গেছে তাই খাবারটা ঠান্ডা হয়ে গেছে । আমি খাবারগুলো সব ওর সামনে ছুঁড়ে মারলাম আর ভবিষ্যতে যেন ঠান্ডা ভাত না দেয় সে জন্য কড়া কথা বললাম ।

তারপরের দিন সকালে চা তে চিনি কম দেওয়ার জন্য চা'র কাপটাও ভেঙ্গে ফেললাম । আসলে আমি চাচ্ছি যাতে সে চলে যায় । তাকে খুব বিরক্ত লাগে আমার । আমি জানিনা তার মনে কি কোন জেদ কাজ করেনা? সে তো বাপের বাড়ি চলে গেলেই হয় ।
আরো কিছুদিন পর,আমি তাকে সরাসরি বলে দিলাম যে, তোমাকে ভালোলাগেনা । একথা শুনার পর সে আর আমার সামনে বেশি আসে না । আমার মায়ের সাথে সারাদিন থাকে , রাত বিছানার একপাশে ঘুমিয়ে থাকে ।

হঠাৎ তিনমাস পর একদিন মুচকি মুচকি হেসে পাশে এসে বসে আমাকে বলছে; 'আজ চাঁদটা অনেক সুন্দর, চলুন একটু বাইরে ঘুরি ।"
আমি ওর দিকে রাগান্বিত হয়ে তাকালাম তখন তার মুখটা চুপসে গেল । এই প্রথম তার চুপসে যাওয়া মুখ দেখে আমার মনে একটা খারাপ লাগা কাজ করল । আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রন করে বললাম: 'চল, ঘুরে আসি' । হাঁটতে হাঁটতে কলাবাগান পেরিয়ে নদীর তীরে চলে গেলাম । এই তিনমাস পর বউয়ের দিকে একবার ভাল করে তাকালাম । বউটার লজ্জা এখনো কাটেনি । চাঁদ আর নদী দেখতে দেখতে অনেক রাত হয়ে গেল । আমরা বাসায় ফিরে এলাম ।

এভাবে ধীরে ধীরে দিন যেতে লাগলো । আমি বউয়ের ধৈর্য দেখে অবাক হয়ে যাচ্ছি । একদিন রাত তিনটায় আমার ঘুম ভাঙল, পাশে দেখি স্ত্রী নেই । ভাবলাম বাথরুমে গেছে কিন্তু সেখানেও পেলাম না । আমার রুমের পাশের ছোট্ট কামড়ায় কে যেন ফুঁফিয়ে কাঁদছে । এটা তো আমার বউয়ের কান্না ! সে কাঁদে কেন? দেয়ালের পাশে কান লাগিয়ে শুনার পর আমিও কান্না থামাতে পারিনি । সে আল্লাহর কাছে বলছিলো: 'হে আল্লাহ , তুমি আমার স্বামীকে হেদায়াত দাও ,যেন একসাথে জান্নাতে থাকতে পারি । আমার স্বামীর হায়াত বাড়িয়ে দাও, সম্মান বাড়িয়ে দাও, আপদ বিপদ থেকে রক্ষা করো । আল্লাহ আমার পেটে অনাগত সন্তানের ভবিষ্যৎ উজ্জল করে দিও"।

সন্তানের কথা শুনে আমি বিস্মিত হলাম । সে একখা গোপন করেছে কেন? এই খুশির খবর কেন সে আগে দিলনা? সে রাতে আমি আবার শুয়ে পরলাম কিন্তু স্ত্রীর সুসংবাদ লুকানোর বিষয়টি তার উপর আমাকে রাগাতে বাধ্য করেছে । আমি কিছুদিন হলো তার সাথে ভাল ভাবে কথা বলছিনা । সে বারবার জিজ্ঞেস করছে যে, কোন কারনে আমার মন খারাপ কিনা?
আমি বিরক্ত হয়ে তার ওপর রাগ ঝাড়লাম । সে মন খারাপ করে ঘুমিয়ে পড়ল । বিনা কারনে তাকে গালি দিয়ে নিজেরই খারাপ লাগছে । লাইট জ্বালানোর পর দেখি সে ঘুমায়নি , চোখের পানি লুকানোর চেষ্টা করছে । আমি তার চোখের পানি মুছে দিলাম এবং ক্ষমা চাইলাম ।

পরদিন সকাল সকাল অফিসের বসের ফোন ।কম্পানির কাজে ১ মাস দেশের বাইরে থাকতে হবে । আমার মন সাঁয় দিল না । বউ বলল এই মাসের মধ্যে আমাদের নতুন অতিথী আসবে না গেলে কি হয়না? আমি বস কে অনেক অনুরোধ করলাম কিন্তু স্যার তার সিদ্ধান্তে অটল । অবঃশেষে বউ এর কাছে বিদায় নিতে আসলাম । আমি তার চোখের কোনে পানি দেখতে পেলাম, আমার দিকে তাকাতে পারছে না । আমার খুব কষ্ট হচ্ছে তবু বিদেশ চলে গেলাম ।

আমার বউ সুযোগ পেলেই ফোন দিয়ে আমার খোঁজ নেয়, নিজের প্রতি খেয়াল রাখতে বলে । একদিন কাজের চাপে ফোন ধরতে পারিনি । রাতে হোটেলে ফিরে ফোন করতেও মনে ছিলনা । পরের দিন আমার মা অনেক বার কল দিয়েছে , তখন একটা জরুরি মিটিংয়ে ছিলাম । ফোন না ধরায় আমার বউ একটা মেসেজ দিল "Ahsan, kmn acho? aj tibro betha shuru hoiyeche, hospital e ana hoice, Mone hocce ami ar bach bona, jibone ses barer moto tmr kotha shunte cheyechilam ta hoito ar hobena, amake khoma koro, Ahsan. Ar shontan jodi beche thake tahle take kokhono kosto debe na plZZ...."

এটা পড়ছিলাম আর অঝোরে কাঁদছিলাম । তখনই ফোন দিলাম এবং বাচ্চার কান্না শুনতে পেলাম, আমার বিশ্বাস মেসেজটি মিথ্যা হবেই কারন প্রসব ব্যাথা তো মৃত্যুর যন্ত্রনা থেকে কোন অংশে কম নয় । মা কে বললাম- 'মা, ফোনটা সুমির কাছে দিন!'
মা কিছু বলছে না । আমি বারবার অনুরোধ করছি কিন্তু মা দিচ্ছেনা । সবশেষে মা বলল: বাবা, সে আর কোনদিন তোমার সাথে কথা বলবে না,কখনো বলবেনা , সে তোমার ওপর অভিমান করেছে, অনেক বড় অভিমান.....

লেখা: আব্দুল্লাহ আল বাকী
২-৮-১৭.

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.