| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কিরকুট
আমি মানুষ, আমি বাঙালি। আমার মানবিকতা, আমার সংস্কৃতির উপর আঘাত হানতে চাওয়া, ক্ষতিগ্রস্ত করতে চাওয়া প্রাণী মাত্রই আমার কাছে পিশাচ। আমার দেশের উপর আঘাত হানতে চাওয়া প্রাণীদের পালনকারী, প্রশ্রয়দানকারী মাত্রই আমার কাছে পিশাচ, রাক্ষস। হোক সে যে কোনো সাম্প্রদায়িক কিংবা ঢেঁড়স চাষ পরামর্শক।
১৯৭১ বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গভীর বৈপরীত্যের বছর। এটি যেমন ছিল অন্ধকার ও রক্তাক্ত, তেমনি ছিল সত্যের প্রতি অবিচল এক সময়কাল। এই বছরের গণহত্যা, শরণার্থী স্রোত ও মানবিক বিপর্যয়ের বিবরণ আমরা সাধারণত দেশীয় স্মৃতি ও নথিতে পাই। কিন্তু সেই বাস্তবতার এক শক্তিশালী আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি উঠে আসে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর এডওয়ার্ড এম. কেনেডির নেতৃত্বে প্রণীত ঐতিহাসিক দলিল Testimony of Sixty
এই রিপোর্ট কোনো আবেগপ্রবণ রাজনৈতিক ভাষণ নয়। এটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটের সাব কমিটির সামনে উপস্থাপিত প্রত্যক্ষ সাক্ষ্য, মাঠপর্যায়ের অনুসন্ধান এবং মানবিক পর্যবেক্ষণের সুসংগঠিত সংকলন যেখানে পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তানি সামরিক জান্তার চালানো সহিংসতার ভয়াবহ ও নিরেট চিত্র উঠে আসে।
পরিকল্পিত সহিংসতা: বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, রাষ্ট্রীয় কৌশল
Testimony of Sixty এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান হলো এটি স্পষ্টভাবে দেখায় যে ১৯৭১ সালের সহিংসতা ছিল পরিকল্পিত, কাঠামোবদ্ধ এবং রাষ্ট্রীয় নির্দেশনায় পরিচালিত। ২৫ মার্চের সামরিক অভিযান কোনো আকস্মিক প্রতিক্রিয়া নয় বরং এটি ছিল বাঙালির রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা ও সাংস্কৃতিক পরিচয় নির্মূলের একটি সুসংগঠিত প্রয়াস। রিপোর্ট অনুযায়ী, লক্ষ্যবস্তু ছিল নির্দিষ্ট-
• বুদ্ধিজীবী ও শিক্ষাবিদ
• ছাত্রসমাজ
• গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত রাজনৈতিক নেতা
• হিন্দু সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী
এই নির্বাচনভিত্তিক সহিংসতা আন্তর্জাতিক আইনের ভাষায় সুস্পষ্টভাবে গণহত্যার উপাদান বহন করে যা কোনো গৃহযুদ্ধ বা দুই পক্ষের সংঘর্ষ তত্ত্বকে সরাসরি নাকচ করে।
শরণার্থী স্রোতঃ মানবিক বিপর্যয়ের নীরব অথচ অকাট্য সাক্ষ্য
রিপোর্টে ভারত সীমান্তে আশ্রয় নেওয়া লক্ষ লক্ষ শরণার্থীর বাস্তবতা তুলে ধরা হয় গভীর মানবিক দৃষ্টিতে। Testimony of Sixty এই সংকটকে কেবল রাজনৈতিক সমস্যা হিসেবে দেখেনি বরং একে সমকালীন বিশ্বের জন্য এক ভয়াবহ নৈতিক ব্যর্থতা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। রিপোর্টে উঠে আসে-
• মানুষ দেশ ছাড়ছিল শুধুমাত্র প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে
• নারী ও শিশুরা ছিল সহিংসতার সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ শিকার
• শরণার্থী শিবিরগুলো ছিল খাদ্য, চিকিৎসা ও নিরাপত্তার মারাত্মক সংকটে
এই চিত্র স্পষ্ট করে দেয় যে, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ সংকট আর কোনো অভ্যন্তরীণ বিষয় ছিল না , তা রূপ নিয়েছিল এক আন্তর্জাতিক মানবিক বিপর্যয়ে।
মার্কিন নীতির প্রতি সংযত কিন্তু দৃঢ় প্রশ্ন
এই রিপোর্টের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো এটি পরোক্ষভাবে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন পররাষ্ট্রনীতিকেও কাঠগড়ায় দাঁড় করায়। পাকিস্তান সরকারকে সামরিক ও কূটনৈতিক সহায়তা প্রদানের ফলে কীভাবে একটি দমন পীড়নমূলক রাষ্ট্রযন্ত্র আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল সে প্রশ্নটি রিপোর্টে উঠে আসে সংযত, তথ্যভিত্তিক কিন্তু স্পষ্ট ভাষায়।
এডওয়ার্ড এম. কেনেডির অবস্থান ছিল দ্ব্যর্থহীনঃ
মানবাধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে কোনো কৌশলগত স্বার্থই নৈতিক অজুহাত হতে পারে না।
বাংলাদেশের ইতিহাসে Testimony of Sixty এর অপরিহার্যতা
আজ যখন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে বিকৃতি, অস্বীকার কিংবা উভয় পক্ষই দায়ী জাতীয় এমনকি আন্তর্জাতিক বয়ান হাজির করা হয়, তখন Testimony of Sixty একটি নির্ভরযোগ্য ও অকাট্য আন্তর্জাতিক দলিল হিসেবে দাঁড়িয়ে থাকে।
এই রিপোর্ট প্রমাণ করে-
• নির্যাতনের অভিযোগ কোনো কল্পনা নয়, ছিল নথিভুক্ত বাস্তবতা
• শরণার্থী সংকট ছিল বাস্তব, বিপুল এবং ভয়াবহ
• বাঙালির স্বাধীনতার সংগ্রাম ছিল নৈতিক ও মানবিকভাবে ন্যায়সংগত
Testimony of Sixty আমাদের মনে করিয়ে দেয় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ কেবল একটি জাতির স্বাধীনতার ইতিহাস নয়; এটি ছিল বিশ্ব বিবেকের এক পরীক্ষাক্ষণ। কেউ নীরব ছিল, কেউ সুবিধার হিসাব কষেছে, আর কেউ এডওয়ার্ড এম. কেনেডির মতো সাহস করে সত্য উচ্চারণ করেছেন।
এই রিপোর্ট আজও প্রাসঙ্গিক, কারণ ইতিহাস শুধু স্মরণ করার জন্য নয় , সত্যের পক্ষে দাঁড়ানোর দায় আমাদের মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য ।
সুত্রঃ
Testimony of Sixty was published by OXFAM-UK and introduced in the US Congressional Record by Senator Edward Kennedy in October 1971. Dhaka Tribune
The document compiled eyewitness accounts by notable individuals including Senator Kennedy, Mother Teresa, and various journalists. Dhaka Tribune
The Liberation War Museum later published facsimile editions to preserve and disseminate the original testimonies.
The Testimony of Sixty – Dhaka Tribune
• Testimony of Sixty একটি ১৯৭১ সালের দলিল যেটি কলকাতা ও অন্যান্য স্থানে OXFAM-UK-এর মাধ্যমে সংগ্রহ করা প্রত্যক্ষ সাক্ষ্য ও বর্ণনার সংকলন ছিল। Dhaka Tribune
• এতে বিভিন্ন পরিচিত ব্যক্তির (Mother Teresa, Edward Kennedy, journalists ইত্যাদি) লেখা ও মন্তব্য ছিল। Dhaka Tribune
• এটি ২১ অক্টোবর ১৯৭১-এ প্রথম প্রকাশিত হয় এবং পরের সপ্তাহে **২৮ অক্টোবর ১৯৭১-এ এই দলিলটি সম্পূর্ণরূপে “Congressional Record”-এ অন্তর্ভুক্ত হয়। Dhaka Tribune
Congressional Record (United States Senate)
• মার্কিন সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি ঐ দলিলটি সিনেটে উপস্থাপন করেন এবং সিনেটের রেকর্ডে এটি প্রকাশিত হয়। Dhaka Tribune
• এখানে তিনি বর্ণনা করেন—“The crisis in East Bengal is a story of systematic terror and military repression, of indiscriminate killing…” ইত্যাদি। Dhaka Tribune
Liberation War Museum (English & Bangla Facsimile Editions)
• পরে এই দলিলের ইংরেজি ও বাংলা উভয় ফ্যাসিমাইল সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে, যাতে ঐ সময়কার eyewitness accounts সংরক্ষিত রয়েছে। Dhaka Tribune
Testimony of Sixty publication history (Daily Star / Dhaka Tribune reportagem)
• তথ্য অনুযায়ী, দলিলটি বিভিন্ন দেশের সরকার ও জাতিসংঘে বিতরণ করা হয়েছিল, বিশেষ করে ১৯৭১ সালের UN General Assembly-তে। Dhaka Tribune
১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২৭
কিরকুট বলেছেন: বাংলাদেশে স্বাধীনতার পর ১৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২-এ তিনি ঢাকায় এসেছিলেন।
২|
১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৪৫
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: পড়লাম!
©somewhere in net ltd.
১|
১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৬
রাজীব নুর বলেছেন: উনি স্বাধীন বাংলাদেশে মোট ক'বার এসেছিলেন?? জানেন?? উনার ছেলেও বাংলাদেশে এসেছিলেন সেটা জানি।