নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্যাশন নিয়ে টুকটাক লিখা

আবুল হাসেম রায়হান

খুব আইলস্যা

আবুল হাসেম রায়হান › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিয়ে এবং স্বপ্ন

৩০ শে মার্চ, ২০১৫ রাত ১২:০১

বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করার জন্য তারা
বসলেন। আমিও বসে আছি। কন্যার অনুজ
এসে আমার পাশেই বসল। বসার ভঙ্গি
দেখে মনে হল কেউ শিখিয়ে
দিয়েছে। হাঁটু দিয়ে যে গুঁতো টা
দিয়েছে,ছোট বেলায় একবার গরু শিং
দিয়ে গুঁতো দেয়ার পর এমন ব্যথা
পেয়েছিলাম মনে করতে পারলাম।
আওয়াজ করতে পারলাম না।
বিয়ের আগে পাত্র,আর কুরবানির পশুর
মিল এখানেই। চুপ করে সহ্য করতে হবে সব
কিছু। যাই হোক,কন্যার সাথে অবশ্য
আমি আগেই বিয়ের দিন ঠিক করে
রেখেছিলাম। শুধু সবাইকে জানানোর
বাকি। জিজ্ঞেস করতেই জানিয়ে
দিলাম।
পরের কয়েকদিন ভালই রোমাঞ্চিত
ছিলাম। নতুন জীবন শুরু করার অপেক্ষায়,
জীবন্মৃতের মত কাটতে থাকল। ফতুর করার
নতুন উপায় নিয়ে হাজির হল সামাজিক
প্রচলন এর বিয়ের বাজার-সাজার।
বুঝলাম না আজও,বিয়ে তো একজন কেই
করব,তাহলে প্রসাধনী এত্ত গুলো দিতে
হবে কেন?
বিয়ের দিন সকালে উঠে কন্যাকে
ফোন দিয়ে বললাম, “আজ তো দেখা
হচ্ছে তাহলে!লাল পাড়ের সাদা
শাড়িটা পরে আসবা।আর বড় একটা লাল
টিপ,কপালের ঠিক মাঝখানটায়।
বাসার সামনের বেলিফুল গাছটায় এত্ত
ফুল দেখলাম।মালা গেঁথে আনবো।’’
--“মাথা মোটা, আজকে বিয়ে।’’
-“তো? কি হয়েছে?’’
--“বিয়ের শাড়ি পরবোনা!’’
-“দরকার নেই,আমরা আমরাই তো’’
--“ফোন রাখ,বিয়ের দিন কথা বলতে
নেই।মানুষজন দেখলে হাসবে।’’
-“ভালই তো,মানুষ হাসবে।কাউকে
নিখাদ হাসি হাসাতে কয়জন পারে?
আমরা পারলাম।’’
--টুঁ টুঁ টুঁ……
আজিব ধরনের গোসল করানো হল
আমাকে।প্রতিদিনের মত আরামে
গোসল করব,তা না।সবার সামনে দাড়
করিয়ে দুলাভাই মাথায় কয়েক বালতি
পানি ঢেলে দিলেন। সার্কাস এর সঙ
দেখার মত সবাই হা করে তাকিয়ে
আছে। অদ্ভূত ব্যাপার।
উঠোনে গাড়ি রাখা।ফুল দিয়ে
এমনভাবে সাজানো, যে কেউ হঠাৎ
উচ্ছিষ্ট ফুলের ভাগাড় ভেবে ভুল করবে।
আমার জন্য আনা হয়েছে।আবারো
আজিব চিন্তা মাথায় ঢুকল।বিয়ে কি
আমার,নাকি গাড়ি/গাড়িওয়ালার?
আমার গায়ে একটা ফুল ও নেই,আর গাড়ি
ফুলে ভর্তি!
গাড়ি এগিয়ে যাচ্ছে।হঠাৎ গাড়ি
টাকে আমার পালকি মনে হল।
অভিমানি কন্যা এক ভরদুপুরে কাঁধে
হেলান দিয়ে বায়না ধরেছিল
পালকি চড়ে স্বামীআলয়ে যাবে। তা
আর হচ্ছেনা।এ আমার ব্যর্থতা নয়,তারই
দুর্ভাগ্য।
আমার পাশে কন্যাকে বসনো হবে।
আমার ডানে বসানো হবে নাকি
বামে,এই নিয়ে দুটো পক্ষ ঝগড়া
বাধিয়ে দিল প্রায়।আমি মনে প্রানে
চাচ্ছিলাম আমার সামনেই বসিয়ে
দেয়া হোক।কন্যার দিকে চোখ পড়তেই
আমি ভড়কে গেলাম।এ কি!আমার আট
বছরের পরিচিত মুখ টাই তো!সব ই
আমাকে ফতুর বানানো প্রসাধনীর
কারসাঁঝি।অবশেষে আমার
ডানপাশেই কন্যাকে বসানো হল।বাম
হাতের মধ্যমায় কাটা দাগটা দেখে
হাঁফ ছাড়লাম।আমার কন্যাই আমাকে
দেয়া হয়েছে।
সন্ধ্যা নেমে আসলো। গাড়ি
ছাড়ল,এবার দুজন যাত্রী বেশি।কন্যার
সাথে কন্যার নানি ও পথ ধরেছে।
জানিনা এই দুজনের অতিরিক্ত ভাড়া
দেয়া হয়েছিল কিনা।
গাড়ি আবারও আমাদের উঠোনে।
নেমে দেখি কন্যার শখ পূরণ হয়েছে।
পালকি রাখা উঠোনে। সুঠামদেহি
চারজন আত্মীয় দাঁড়িয়ে আছে পালকি
তে কন্যাকে উঠাবে বলে।আমিও
দাঁড়িয়ে আছি।ভাবছিলাম আমাকেও
উঠানো হবে।শেষ পর্যন্ত দাঁড়িয়েই
ছিলাম,উঠানো হয়নি।আমাকে রেখেই
কন্যাকে পালকিতে করে ঘরে উঠানো
হল।
সারাদিন খেয়ে রাতে আর কিছু মুখে
ঢুকানোর সাহস পাইনি।ভাবতেই ভাল
লাগছিল যে এত সব আয়োজন আমার
জন্যই। মনে মনে একটাই আফসোস,বারবার
কেন বিয়ে করা যায়না?না
না...আসলে বলছিলাম কি একই
মানুষকেই বারবার বিয়ে করার সুযোগ
থাকলে মন্দ হতনা।
রুমে ঢুকতেই অবাক হলাম কিছুটা।কন্যা
ওপাশ ফিরে শুয়ে আছে,তাতে অবাক
হইনি।কিন্তু একটা চাপা আওয়াজ আমার
রুমের পরিবেশটা গম্ভীর করে তুলেছে।
কন্যার কাঁধে হাত রাখতেই আওয়াজ
দ্বিগুণ হল।আর ঘাঁটাইনি।অন্যপাশ ফিরে
শুয়ে গেলাম।
আজ রাতটা বিশাল...কাটছেই না।কিছু
কিছু সময় আসে,অনুভূতিহীন মন আর
পৃথিবীর সেরা অনুভূতি পাশাপাশি
থেকেই মানবমনকে অনুভূতিশুন্য করে
দেয়।আমারও তাই হয়েছে।
একদম ভোরেই ঘুম ভাঙলো। হাত
বাড়িয়ে চোখ না খুলেই কন্যাকে ছুঁয়ে
দিতে চেয়েছিলাম।হাতে পাইনি।
চোখ খুলেই ঘোর ভাঙলো।স্বপ্নটা ভালই
দেখা হল...
পূরণের অপেক্ষায়......।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.