![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আজ ৫ই আগস্ট।
আমাদের দেশের রাজনীতি নিয়ে অনেক বেশি কিছু বলার কোন কারণ আছে বলে আমার মনে হয় না। আশাবাদী হতে চাই। আর সবার মতন আমিও চাই ভাল হোক। তবে প্রত্যাশার পারদ নামিয়ে রাখাই ভাল।
সবচেয়ে বড় সমস্যা হল, আমরা একে অপরের সাথে মিলেমিশে টিকে থাকতে চাইনা। যার শুরু হয়েছিল শেখ সাহেবের হাত ধরে। তিনি শুরুতেই চাইলেন, বিরোধীদের নিশ্চিহ্ন করে দিতে।
দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন নেই। অনেক ভাল’র শুরু উনি করেছিলেন। প্রথম নেতা হিসেবে উনাকে সেটা করতেই হত। তবে, অনেক খারাপের শুরুও উনার হাত ধরে – বিরোধী মতকে নির্বিচারে দমন করতে চেয়েছেন। হাজার হাজার বিরোধীকে হত্যা করেছেন। প্রথম নির্বাচনকেই প্রহসন বানিয়েছেন।
আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক নেতা তিনি। তবে, নিজের সেই অবস্থান হেলায় হারিয়েছেন। রাষ্ট্রপ্রতি হিসেবে অমার্জনীয় ব্যর্থ তিনি। ব্যর্থ যে হচ্ছেন, সেটা বোঝার সক্ষমতাও উনার ছিল না। শুন্য বুদবুদের মাঝে বাঁচতে চেয়েছেন। যার পরিনতি বিয়োগান্তক ১৫ আগস্ট। আমাদের পুরো জাতির জন্য একটা কলঙ্কের দিন।
সেই যে পতনের শুরু তার ধারাবাহিকতা চলেছে জিয়ার সময়। যদিও জিয়া নিজে সৎ ছিলেন। শেখ সাহেবের বহু আত্মীয়ের নাম আমরা জানি। জিয়া বেঁচে থাকার সময়, অথবা এখনো উনার কোন আত্মীয়ের নাম আমরা জানি না। এদেশের প্রেক্ষিতে এটা বিস্ময়কর! সামরিক বাহিনীর উপপ্রধান থাকা অবস্থায় জুনিয়র অফিসাদের ক্ষমতাসীন রাষ্ট্রপ্রতিকে সরিয়ে দেবার প্রচেষ্টাকে উনি যেভাবে সমর্থন দিয়েছেন, এটা ক্ষমার অযোগ্য ভুল। কোন বিবেচনাতেই উনার ঐ কাজ সমর্থন যোগ্য নয়। জিয়া রাজনীতিকে জটিল করেছেন। স্বাধীনতা বিরোধীদের অতি অসময়ে দেশে আসন গাড়তে দিয়েছেন। দুর্নীতি রুখতে পারেননি। নিজেও ক্ষমতা লোভী ছিলেন। উনার অকাল মৃত্যু আমাদের জন্য আরেকটা কালো অধ্যায়।
আওয়ামী দুঃশাসনের প্রবল ব্যর্থতা যেভাবে জিয়াকে ক্ষমতায় এনেছিল, সাত্তারের অযোগ্যতাও একইভাবে এরশাদের ক্ষমতায়নের পথ সুগম করে। তিনি দুর্নীতিকে ক্ষমতার বলয়ের ভিতরে নিয়ে আসেন। অর্থনীতিকে ফোকলা করে দেন। মাঠ পর্যায়ের দূর্বলতা ঢাকার জন্য ধর্মীয় অনুভুতিকে রাজনীতির সাথে মিশিয়ে ফেলেন। উনার সময় রাজনীতির প্রক্রিয়াগুলো আরো দূর্বল হয়। এক পর্যায়ে প্রবল আন্দোলনের মুখে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন।
খালেদা জিয়া দুই টার্ম ক্ষমতায় ছিলেন। জিয়ার মতন তিনিও স্বাধীনতা বিরোধীদের বন্ধু বানান। উনার জেদ ছিল। কিন্তু রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ছিল না। আর তাই, নিজে সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন না। বিভিন্ন সময়ে খাপ ছাড়া কাজ করেছেন। দূর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। অপ্রয়োজনে ভারতকে চটিয়েছেন। নিজের জন্মদিন পাল্টেছেন। উনার সময় বিরোধীদলীয় নেত্রীর উপর একাধিক হামলা এবং হামলার পরিকল্পনা হয়। ধর্মান্ধদের অবারিত স্পেস দিয়ে মন্সটার তৈরী করার পথ প্রশস্ত করেন। ধর্মীয় উগ্রবাদের উত্থান হয় উনার সময়। সরকারের ভিতর আরেক সরকারের জন্ম হয়।
শেখ হাসিনা এদেশের ইতিহাসের নিকৃষ্টতম স্বৈরশাসক। বিরোধীমতের প্রতি নির্দয় ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ এবং শেখ মুজিবকে চুড়ান্তভাবে বিতর্কিত করেছেন। সরকারের সকল বিভাগকে নগ্নভাবে দলীয়করণ করেছেন। নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছেন। ব্যাংক লুটপাট করেছেন। শিক্ষাব্যবস্থাকে অতল গহবরে ঠেলে দিয়েছেন। নিজের দলের ছাত্র সংগঠনকে ঠ্যাঙারে বাহিনীতে পরিনত করেন। ব্যক্তিস্বাধীনতার চরম অবমূল্যায়ন হয় উনার সময়। দেশকে আক্ষরিক অর্থেই মগের মুল্লুক বানিয়েছেন।
জামায়াত কখনো দেশ শাসন করেনি। ৭১ সালের ভূমিকার জন্য এখনো তাদের মধ্যে যদি, কিন্তু’র প্যাঁচ-ঘোঁচ দেখা যায়। সত্যকে সত্য বলার, ভুলকে ভুল বলার সৎ সাহস তারা আজ পর্যন্ত দেখাতে পারেনি। এদেশের মাটিতে কোন দলের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হলে, প্রথম কাটা পরা দলের নাম হওয়া উচিৎ জামায়াত। দূর্ভাগ্যজনকভাবে সেটা হয়নি। বিরোধীদলে থাকার সময় তাদের কার্যকলাপ এখনো মনের গভীরে শিহরণ জাগায়। আওয়ামী লীগ এবং বি এন পি’র রাজনৈতিক ব্যর্থতা, তাদের কূপমন্ডুকতা এদের এক্সট্রা মাইলেজ দিয়েছে এবং দিচ্ছে। তাদের সফেদ সুফি ভাবার যথেষ্ট কারণ আছে বলে মনে করি না।
আজকের ছাত্রদের নিয়ে আমাদের অনেকেই স্বপ্ন দেখেছে। এক বছরের পুরোনো সেই বল্গাহীন স্বপ্নের সাথে বর্তমান বাস্তবতার অনেকক্ষেত্রেই মিল নেই। আমাদের যে সামাজিক কাঠামো, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার যেই ভিত – সেসব নিশ্চিতভাবেই তরুণদের আদর্শগতভাবে গড়ে তোলার জন্য সহায়ক নয়। আর তাই ছাত্রদের ‘ফেরেশতাতুল্য’ অথবা ‘মেসিয়াহ’ ভাবার দায় একান্তই আমাদের। ওদের সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে না পারার ব্যর্থতা শেখ মুজিব থেকে শুরু করে সদ্য বিদায়ী শেখ হাসিনা পর্যন্ত সকল রাষ্ট্রনেতার।
মন্দের ভাল বেছে নেবার যে চক্র বহুদিন ধরে চলছে, অত্যন্ত দূর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা এখনো সেই আবর্তেই ঘুরছি। এই চক্র থেকে বের হবার মতন বিশ্বাসযোগ্য আশার আলো এখনো চোখে পরেনি। ভবিষ্যতে হয়ত পরবে। হয়ত খুঁজে নিতে হবে।
খুশবন্ত সিং তার দিল্লি বইতে লিখেছেন, কিভাবে বিভিন্ন শাসক দিল্লির সাথে দেহাপসারনীর মতন ব্যবহার করেছে। আমাদের দেশের শাসকরাও ঠিক সেই কাজটাই করেছে। কাউকে ভাল বলার, কারো মাথার উপর ছাতা ধরার কোন কারণ দেখি না।
আমাদের দেশের গত ৫৪ বছরের বাস্তবতা হল, সকল রাষ্ট্রপ্রধান এবং তাদের রাজনৈতিক দলের ক্ষমতার আসন থেকে বিদায় হয়েছে অস্বাভাবিকভাবে। প্রায় সবাই ক্ষমতায় এসে ‘নিরংকুশ ক্ষমতা’ চেয়েছেন। বিরোধীদের নিশ্চিহ্ন করে দিতে চেয়েছেন। যার কোনটিই কেউ করতে পারেননি। বারবার এই বিপর্যয় দেখেও তারা শিক্ষা নেননি।
যেহেতু, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়েছে, তাদের উপর প্রত্যাশা ছিল সবচেয়ে বেশি। কিন্তু, তারাও বাকী সবার মতন স্বাধীনতার মূল্যবোধের সম্পূর্ণ সদগতি করে দিয়েছে। তারাও ইতিহাস বিকৃত করেছে আর বাকী সবার মতন। হালের ছাত্ররাও ইতিহাস বিকৃত করার, ভিন্নমতকে মুছে ফেলার সেই নীল চক্রের মধ্যে আবর্তিত।
বর্তমান নিয়ে খুব আশাবাদী হতে চাইলেও নিদারুণ বাস্তবতা স্বপ্নের ঘুড়িকে বেশিদূর যেতে দেয় না। আবার আনেক বেশি খারাপ বলার যথেষ্ট কারণও দেখি না (এর চেয়েও অনেক খারাপ দেখেছি তাই)।
এ এক অনির্বচনীয় বোধ। এ এক অদ্ভূত বিড়ম্বনা। দিন যায়। সময় কাটে। আশাহত হই। আবার আশায় বুক বাধি। ভাবি, কোন একদিন নিশ্চয়ই হবে। যেদিন হবে, সেদিন বলব হয়েছে।
দেশ ভাল থাকুক। সকলের মঙ্গল হোক।
(আপনার মতের সাথে আমার মতের মিল নাও হতে পারে। তবে, সকলের মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি আমার শ্রদ্ধা আছে।)
©somewhere in net ltd.
১|
০৬ ই আগস্ট, ২০২৫ সকাল ৯:০৮
রাজীব নুর বলেছেন: দেশপ্রেম বাঙালি জাতির কম।
১৯৭১ এ দেশপ্রেম ছিলো। এরপর কমতে কমতে, আজ তলানিতে এসে ঠেকেছে।